Thu. Mar 13th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

বাস-অটো না পেয়ে গাড়িতে উঠছেন, সাবধান
বাস-অটো না পেয়ে গাড়িতে উঠছেন, সাবধান
খোলা বাজার২৪, বুধবার, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ : রাজধানীতে দীর্ঘক্ষণ স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে থেকে বাস-অটোরিকশা না পেয়ে প্রাইভেটকার/মাইক্রোতে চড়ে বসেন অনেকে; যা থেকে ভয়ানক অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে কাউকে কাউকে।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় এভাবে ছিনতাইকারীদের খপ্পরে পড়ে এক লাখ টাকা দিয়ে মুক্তি পেয়েছেন এক কর্মকর্তা।
এর সপ্তাহখানেক আগেই একই পরিস্থিতির শিকার হন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান প্রবাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির এক কর্মকর্তা। গাড়িতে ওঠার পর তার কাছ থেকে ৮০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেওয়া হয়। মারধরের পর চোখ বাঁধা অবস্থায় তাকে ফেলে যাওয়া হয় ধামরাইয়ের এক জায়গায়।
এই ছিনতাইকারীদের খপ্পরে পড়েছেন রিকশাচালকও। গ্রামের বাড়ি বগুড়ায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে কারওয়ানবাজার থেকে ট্রাকে উঠে মোবাইল-টাকা খুইয়ে তিনি সংজ্ঞাহীন অবস্থায় উদ্ধার হন টাঙ্গাইলে।
গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে প্রাইভেট গাড়িতে তুলে ছিনতাই, অপরহণের কথা বলে মুক্তিপণ দাবির বেশ কিছু অভিযোগের তদন্ত চলছে বলে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনার যায়েদ শাহরিয়ার জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, “এই জাতীয় ঘটনার তদন্ত অনেক ক্ষেত্রেই সময় লাগে। কারণ ভুক্তভোগী অনেক সময় কার বিরুদ্ধে অভিযোগ করবেন, তা বুঝে উঠতে পারেন না।
“তবে পুলিশ তার সাধ্যমতো উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে, গুপ্তচর নিয়োগ করে ঘটনা তদন্ত করে থাকে। এই ধরনের ঘটনা তদন্তে গোয়েন্দাদের সফলতা রয়েছে।”
এসব ঘটনার তদন্ত করে আসামিও ধরা হয়েছে বলে সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মীর্জা আবদুল্লাহ হেল বাকী জানিয়েছেন।
গত দুই/এক বছরে এই জাতীয় বেশ কিছু অভিযোগ সিআইডিতে এসেছে বলে জানান তিনি।
সিস্টেম অ্যাডমিনিস্ট্রেটর ইমতিয়াজ রায়হানুল হক জানান, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কার্যালয় থেকে বের হয়ে উত্তরায় যেতে মহাখালীর আমতলীতে বাসের অপেক্ষায় ছিলেন। এই সময় হঠাৎ করে সোনালী রঙের একটি টয়োটা প্রাইভেটকার তার পাশে থামে। তারা ডাক দিলে তিনি এগিয়ে গেলে ভেতরে থাকা ব্যক্তিরা তাকে জোর করে গাড়িতে তুলে নেয়।
গাড়ির ভেতরে চারজন ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, “তুলেই তারা আমার হাত-পা বেঁধে ফেলে, চোখে একটি কালো চশমা বেঁধে দেয়। এরপর মোবাইল, মানিব্যাগ, ব্যাগ নিয়ে নেয়।”
মুক্তিপণ হিসেবে পাঁচ লাখ টাকা দিতে ইমতিয়াজকে বাড়িতে ও বন্ধুর কাছে ফোন করাতে বাধ্য করা হয়েছিল। অত টাকা দিতে না পারায় প্রথমে ইমতিয়াজকে নানা হুমকি দেওয়া হয়। পরে এক লাখ টাকা পেলে ছেড়ে দিতে রাজি হয় তারা।
ইমতিয়াজের এক বন্ধু টাকা দিতে চাইলে তাকে টঙ্গী কলেজ গেইটে যেতে বলা হয়। সেখানে ইমতিয়াজকে নিয়ে গাড়িটি যায় এবং একজন টাকা নিতে গাড়ি থেকে নামে। টাকা নেওয়ার পর ঢাকায় ফিরে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার প্রবেশ পথের কাছে ইমতিয়াজকে গাড়ি থেকে নামিয়ে দিয়ে চলে যায় দুর্বৃত্তরা।
ইমতিয়াজের মতো একই ঘটনা ঘটেছে প্রবাস ডিস্ট্রিবিউশনের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আমজাদ হোসেন হারুনের ক্ষেত্রে।
গত ২৭ জানুয়ারি বিকালে পল্টনের অফিস থেকে বেরিয়ে গুলশানে ভারতীয় ভিসা সেন্টারে যেতে একটি সাদা রঙের প্রাইভেটকারে চড়েন তিনি।
তার ছেলে সারিক বলেন, “গাড়িতে চালক ছাড়া আরও দুজন ছিল। বাবা গাড়িতে ওঠার পরই তারা উনার মুখ চেপে ধরে। চোখে কালো চশমা পরিয়ে হাত-পা বেঁধে ব্যাপক মারধর করে।
“ওরা বাবার কাছে থাকা প্রায় ৮০ হাজার টাকা কেড়ে নেয়। বাবার মোবাইল থেকে বাসায় ফোন করে আরও ২০ হাজার টাকা বিকাশ করতে বলে।”
পরে ওই রাতেই চোখ বাঁধা অবস্থায় তার বাবাকে ধামরাইয়ের একটা বালুর মাঠে ফেলে যায় বলে জানান সারিক।
“বাবার কাছে কোনো টাকা ছিল না। ট্রাকে করে রাতে ঢাকায় ফেরেন তিনি।”
পরদিন রমনা থানায় এ বিষয়ে একটি জিডি করেছেন আমজাদ হোসেন।
এরইমধ্যে গত ৩১ জানুয়ারি দুর্বৃত্তদের খপ্পরে পড়েন রিকশাচালক জুয়েল।
বগুড়ায় গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে কারওয়ানবাজার থেকে একটি ট্রাকে উঠেছিলেন তিনি। পথে ট্রাকচালক ও তার সহযোগীদের দেওয়া কোমল পানীয় খাওয়ার পর ধীরে ধীরে নিস্তেজ হতে থাকেন তিনি।
এরপর তার সঙ্গে থাকা টাকা ও মোবাইল ফোন নিয়ে রাতের কোনো এক সময়ে জুয়েলকে টাঙ্গাইলের মীর্জাপুরে একটি মুদি দোকানের সামনে ফেলে যায় দুর্বৃত্তরা।
পরদিন ভোরে জুয়েলের মোবাইল থেকে তার ভাইকে ফোন করে ৩০ হাজার টাকা দাবি করা হয় বলে তার গ্যারেজমালিক মো. শাহীন জানান।
টাকা দিতে না পারলে জুয়েলকে মেরে ফেলা হবে বলেও হুমকি দেয়া হয় বলে জানান তিনি।
শাহিন বলেন, পরে ফোনে জুয়েলকে টাঙ্গাইলে ফেলে রাখার কথা জানতে পেরে সেখান থেকে প্রায় সংজ্ঞাহীন অবস্থায় তাকে উদ্ধার করা হয়।
“ওরা বিকাশে টাকা চাইলেও আমরা ওদের কোনো টাকা দিইনি।”
এ ঘটনায় তেঁজগাও থানায় একটি জিডি করা হয়েছে বলে ওসি মাজহারুল ইসলাম জানিয়েছেন।
এ পরিস্থিতি এড়াতে অপরিচিত কোনো প্রাইভেটকার/মাইক্রোবাস বা অন্য কোনো গাড়িতে না চড়ার পরামর্শ দেন সিআইডি কর্মকর্তা আবদুল্লাহ হেল বাকী।
“তারপরও যদি কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে তাহলে পুলিশের কাছে আসতে হবে। পুলিশ তাদের প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহযোগিতা দেবে।