খোলা বাজার২৪, শুক্রবার, ৪ মার্চ ২০১৬: থামতে বললেই পৃথিবী থামবে? কথনো নয়! কারণ পৃথিবী যে বেঁচে আছে, তা সে তো ওর ঘুর্ণনের কারণেই। কোনোভাবে যদি এই ঘূর্ণন থেমে যায় তবে সে সোজা গিয়ে হুমড়ি খেয়ে পড়বে সূর্যের বুকের ওপর। তখন কী হবে ভাবে যায়। যাকে বলে কেয়ামত!
এখানে পৃথিবীর ঘোরা বা এর গতি নিয়ে আলোচনা করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়। পৃথিবীকে থামানো যাবে না, একথা আমরা সবাই জানি। জানি পৃথিবী যে ঘুরছে, সেটা ঠিক খালি চোখে বোঝা যায় না। আমরা যেটা বলতে চাচ্ছি সেটা হচ্ছে পৃথিবীর মানুষ আর নানা প্রাণির কর্মচাঞ্চল্যের কথা। এটাকে কি থামিয়ে দেয়া যায় না?
ভাবছেন, এ-তো ভারি সোজা! রাত হলে মানুষ আর জীব জন্তুগুলো যখন ঘুমিয়ে পড়ে তখন তো পৃথিবী এক প্রকার থেমেই যায়। আপনার যুক্তি অবশ্য ঠিক। কিন্তু আমি ব্যাপারটাকে একটু ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখার কথা বলা হচ্ছে। মনে করুন একটা ট্রেন চলছে। সেই চলন্ত ট্রেনকে দেখে যদি মনে হয় থেমে আছে, তাহলে ব্যাপরাটা কেমন হয়? কী মনে হচ্ছে, তাই কখনো হয় নাকি।
যারা একটু চিন্তশীল তারা হয়তো বলবেন, যাদের মাথার স্ক্রু একটু ঢিলা আছে তারা দেখলেও দেখতে পারে, আমরা নই।
আমরা বলি কী, চলন্ত ট্রেনকে স্থির দেখার জন্য মাথার স্ক্রু ঢিলা করার দরকার নেই। ঝড় বৃষ্টির রাতে একটু কষ্ট করে গিয়ে অন্ধকার ট্রেন লাইনের পাশে গিয়ে দাঁড়াবেন।
মনে করুন, তখন তুমুল বৃষ্টিপাত হচ্ছে। নিকষ কালো অন্ধকার রাত। সেই মুহূর্তে ঢক ঢক ঢক ঢক ছন্দ তুলে আপনাকে পাশ কাটিয়ে একটা ট্রেন বেরিয়ে গেল। ট্রেনের হেডলাইটের আলোর কারণে হয়তে বুঝতে পারবেন ট্রেনটা চলছে। কিন্তু সেই সময় আচমকা বিদ্যুতের ঝলকানিতে হঠাৎ আলোকিত হয়ে উঠল আপনার চারপাশ। সেই আলোর ঝর্ণায় ধুয়ে গেল ট্রেনের গা। খুব অল্প সময়ের জন্য।
এখন ওই স্বল্প সময়ে কী দেখলেন? ট্রেনটা কি চলছে? মিথ্যা যদি না বলেন, তো আপনার উত্তর হবে ট্রেনটা থেমে ছিল।
এই রকম পরীক্ষা আপনি ঘরে বসেও করতে পারে। মেঘলা দিনে ঘরের অন্ধকার বারান্দায় আপনার দুষ্টু মেয়েটিকে বলুন একটু লাফালাফি করতে। অন্ধকারে আপনি তাকে দেখতে পাচ্ছেন না কিন্তু শব্দ শুনে বুঝতে পারছেন সে লাফাচ্ছে। ঠিক সেই সময় বিদ্যুৎ চমকালো। ক্ষণিকের সেই আলোয় দেখলেন আপনার বোনটি লাফাতে গিয়ে শূন্যে স্থির হয়ে ভেসে রয়েছে!
আমাদের কথা হয়তো বিশ্বাস না হয়, ওপরের পরীক্ষা দুটো করে দেখতে পারেন।
এখন হয়তো বলবেন, বিশ্বাস না হয় করলাম কিন্তু এটা কেন হচ্ছে? একটু চিন্তা করা যাক। গতিশীল বস্তুকেই বা আমরা গতিশীল দেখছি কেন। এর পেছনে বড় ভূমিকা আমাদের দৈনন্দিন জীবনে যেসব উৎসগুলো আলো সরবরাহ করে তাদের।
যেমন দিনের বেলা বৈদ্যুতিক বাতি, রাতের বেলা তেল বা মোমের বাতি। এসব উৎসগুলো অবিরাম আলো ছড়িয়ে যায়। একটা বস্তুর ওপরও আলো পড়ে অবিরাম। আবার বস্তুর গায়ে একের পর এক সেই আলোক রাশ্মি প্রতিফলিত হয়ে আমাদের চোখে ধরা দেয়। তাই এই অবিরাম আলোর সমুদ্রের ভেতরে কোনো বস্তু যদি স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে তবে সেটা আমরা স্থিরই দেখব। আবার গিতিশীল হলে গতিশীল দেখব।
কিন্তু বজ্রবিদ্যুতের আলো নির্গত হয় এক মুহূর্তের জন্য। তাই যে বস্তুর ওপর সেই আলো পড়ে সেটা ওই একমুহূর্তের জন্য। প্রতিফলিত আলোও এক মুহূর্তের। তাই বস্তুটিকে শুধু এক মুহূর্তের জন্য দেখতে পাবো। আর একমুহূর্তের জন্য দেখতে পাওয়া মানে বস্তুটির স্থির রূপ দেখতে পাওয়া। তার মানে বিদ্যুৎ চমকের সময় ট্রেন গতিশীল থাকলেও স্থির দেখতে পাবো। আবার স্থির থাকলেও স্থির দেখতে পাবো। সেটাই স্বভাবিক নয় কি