Sat. Jun 21st, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

image_708_160748.gifখোলা বাজার২৪, শনিবার, ৫ মার্চ ২০১৬ : শুরু হয়েছে বাংলাদেশের প্রায় সাড়ে চার হাজারের মতো ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন। নির্বাচন কমিশন অফিসের তফসিল ঘোষনা অনুযায়ী ছয় ধাপে ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন সর্ম্পন হবে। নির্বাচন হলো জনগনের পছন্দ অনুযায়ী নেতা নির্ধারন। কিন্তু ক্ষমতাশীল আওয়ামীলীগ সরকারের অধীনে ২০১৪ সালের ০৫ জানুয়ারীর নির্বাচন থেকে শুরু হয়েছে গাঁয়ের জোরের নির্বাচন, শুরু হয়েছে অধিক সংখ্যক আওয়ামী ঘরনার প্রার্থীদের বিনা প্রতিদন্দিতায় নির্বাচিত হওয়ার হিরিক। যা স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে ২০১৪ সালের আগে (একমাত্র এক দল এক মত ব্যাতিক্রমী বাকশাল ছাড়া) বিনা প্রতিদন্দিতায় এতো অধিক সংখ্যক কোন নির্দিষ্ট দল থেকে প্রার্থী নির্বাচিত হয় নি। ০৫ জানুয়ারীর নির্বাচনের পরেও এদেশের জনগণ দেখেছে তিন সিটি নির্বাচন, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আ.লীগ দলের প্রশাসন সহযোগে ক্ষমতার অপব্যাবহার, বিরোধীদলের প্রার্থীদের নমিনেশন পেপার সাবমিটে জোরপূর্বক বাধা প্রদান করা ও ভয়-ভীতি দেখিয়ে বিরত রাখা। আবার প্রচারণা করতে না দেওয়া ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা, সাধারণ ভোটারদের ভোট প্রদানে বাধা, ভোট চুরির মহোৎসব ইত্যাদি ………….ইত্যাদি অনিয়ম। এই ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ক্ষমতানীনরা এতো সব অনিয়ম বহাল রেখেই তার সাথে আরো নতুন নতুন অনিয়ম যুক্ত করছে।  ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে ৭৩৮ টি ইউনিয়নের মধ্যে প্রায় ১০০টিরও বেশীতে ক্ষমতাসীনরা প্রভাব খাটিয়ে, ভয়-ভীতি দেখিয়ে বিরোধী দল বিএনপি’র প্রার্থীদের নমিনেশন পেপার সাবমিট করতে দেয় নি। ফলে, প্রথম ধাপে ‘বিনা ভোটে আ.লীগের ৬৬ চেয়ারম্যান’ নির্বাচিত হযেছে এবং এক জেলা শুধু বাগেরহাটেই ৩৪ টি ইউনিয়নে সরকারী দলের প্রার্থীর বিরুদ্ধে কোন প্রার্থী নেই (সুত্র: প্রথম আলো-০৩-০৩-২০১৬)।
বিএনপি’র স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের নেতারা এবং কেন্দ্র থেকেও বারবার নমিনেশন পেপার সাবমিটে ক্ষমতাসীনদের বাধা প্রদানের কথা নির্বাচন কমিশনে জানানো হলেও নির্বাচন কমিশন ছিলেন মনেহয় একবারে কালা, বোবা, বয়রার মতো। তারা কোনো পদক্ষেপই নেন নি। বরং ব্রিফিং-এ বরাবরের মতো বলেছেন-পরিবেশ ভালো, দু’এক জায়গায় কিছু ঘটনা ঘটেছে। তবে কোন আভিযোগ পরে নি। বিএনপি অভিযোগ দিলেও বলা হয়েছে সুনির্দিষ্টভাবে লিখিত নেই, তাই পদক্ষেপ নেওয়া যাচ্ছে না। নির্বাচন কমিশনের এমন ভূমিকার কারনেই দ্বিতীয় পর্যায়ে ৬৪৭ টি ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে ৬৩ টি ইউনিয়ন পরিষদে বিএনপি প্রার্থী দিতে পারে নি (সুত্র: প্র: আলো ০৪-০৩-১৬)। বিএনপি থেকে ভয়-ভীতি দেখানো, মামলা-হামলার অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।
……………………………………ক্ষমতাসীনদের সময়ে নির্বাচনী পরিবেশের এই পর্যায়ে এসে তরুন প্রজন্ম ও সচেতন ভোটাররা ভাবছে-‘বিএনপি’র মতো বিশাল এই দলে যেখানে এক পদের জন্য অসংখ্য নেতা প্রার্থী, পদ দিয়েও যেখানে নেতাদের জায়গা দেওয়া যায় না, পদবিহীন অবস্থায় বিএনপি’তে আজোও অনেক অনেক অনেক নেতা বিদ্যামান-সেখানে নির্বাচনে এসে ক্ষমতাসীনদের ভয়-ভীতি, অযাচিত মামলা-হামলার কারনে তারা নমিনেশন পেপার সাবমিট করতে পারছে না। আর এ নির্বাচনের অবিভাবক নির্বাচন কমিমন কেনো নিশ্চুপ, ক্ষেত্রবিশেষে পুলিশ-প্রশাসনও নিরপেক্ষ ভূমিকায় না থেকে সরকারী দলের কর্মীর মতো বিরোধী দলের সাথে আচরন করে। এতে সরকারী দলের লোকজন ও ক্যাডাররা আরো অপরাধ করার সাহস পায়। এমনি পেক্ষিতে আজোও কেনো ভয়-ভীতিহীন নির্বাচনের পরিবেশ নির্বাচন কমিশন সৃষ্টি করতে পারছে না। বিএনপি যদিও তাদের কথা রেখে চলছে- তারা শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রেখে চলছে। তাহলে কেনো বার বার নির্বাচন কমিশন কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ নিচ্ছেন না। কোথায় তাদের সমস্যা ? কে তাদের কলকাঠি নাড়াচ্ছে ? কেনই বা তারা বরাবরের মতো গতানুগতিক বিবৃতি দিয়ে দায়সারাভাবে কাজ করে যাচ্ছে। কেনো নির্বাচন কমিশন সাধারণ ভোটারদের নির্বিঘেœ ভোটদানের ব্যাবস্থা করতে পারছে না। কোথায় নির্বাচন কমিশনের সমস্যা এবং কেনোই বা  তা নির্বাচন কমিশন জনগণের মাঝে তুলে ধরে না ? তাই আজ তরুন প্রজন্ম ও সচেতন ভোটাররা ভাবছে- নির্বাচন কমিশন কি মুখ খুলবে না। না-কি তারা এভাবেই সরকারের একান্ত আজ্ঞাবহ ক্রীতদাস হয়ে থাকবে।
কিন্তু এই ভূখন্ডের এই জাতির ইতিহাসে কখনও কোনো কিছু চাপিয়ে দীর্ঘদিন দমিয়ে রাখা যায় নি।
আজকে সৃষ্ট এই ভয়-ভীতি, নিরাপত্তাহীন পরিবেশও দীর্ঘদিন চাপিয়ে রাখা যাবে না। তরুন প্রজন্ম ও সচেতন লোকজনরা ভয়-ভীতি ও নিরাপত্তাহীন শৃঙ্খলিত পরিবেশের বেড়াজাল ভেদ করে মুক্ত, সুষ্ঠ, স্বাভাবিক পরিবেশ এই ভূখন্ডে  ফিরিয়ে আনবেই। তারা অপেক্ষায় আছে এক সঠিক কান্ডারীর -যে বা যারা ভয়-ভীতি ও নিরাপত্তাহীন পরিবেশ অপেক্ষা করে ঠিকই মুখ খুলবে। এই যেমন গত জানুয়ারীতে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা  তার প্রধান বিচারপতি হিসেবে এক বছরের পথচলা উপলক্ষে বলেছেন, “অবসরের পর রায় লেখা সংবিধান পরিপন্থী” (সুত্র: প্র: আ: ২০ জানু:২০১৬) । আবারও বলেছেন,“আমি প্রধনি বিচারপতি থাকা অবস্থায় অসাংবিধানিক কাজ করতে দিব না। অবসরের পর আর কাউকে রায় লিখতে দিব না।” (সুত্র: দিনকাল-২৩ জানু:২০১৬)। আরো বলেছেন,“আপিল বিভাগের বিধি অনুযায়ী রায় দিতে হবে প্রকাশ্য আদালতে। অবসরের পর রায় লেখার সুযোগ নেই।” (সুত্র: প্র: আ: ১৩ ফেব্রু:২০১৬)। তার এই সত্য বাণীটুকু বচনের পর সরকারী দলের সংসদ সদস্যরা যেনো মুখে যা আসে-কোন বাচ-বিচার না করে তার সর্ম্পকে যা খুশি তাই বলে গেছেন বা যাচ্ছেন। এমকি প্রধান বিচারপতিকে বিএনপি’র এজেন্টও বলেছেন। তার পরও  প্রধান বিচারপতি সত্যের পথের পথিক হয়ে, তার শপতে বলীয়ান হয়ে, সাহসে ভর করে, দেশ ও জাতির কথা চিন্তা করে ঠিকই মুখ খুলেছেন। ফলে, দেশের আপামর জনসাধারণের ঠিকই তিনি সমর্থন পেয়েছেন, পেয়ে যাচ্ছেন। দেশ ও জাতির কথা চিন্তা করে এভাবেই সবার মুখ খোলা দরকার। সত্যের পথের পথিক হয়ে, শপতে বলীয়ান হয়ে, সাহসে ভর করে, দেশ ও জাতির কথা চিন্তা করে এভাবেই দেশের ও জাতির কর্ণধার মূল মূল প্রতিষ্ঠানের বা প্রতিষ্ঠানের দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যাক্তিদের মুখ খোলা দরকার। বিশেষ করে নির্বাচনের এই সময়ে নির্বাচন কমিশনারদের সকল ভয়-ভীতি অপেক্ষা করে সাংবিধানিক ক্ষমতা বলে- সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া খুবই দরকার, মুখ খোলা দরকার। শুধু বিচারবিভাগ বা বিচারপতি নয়, নির্বাচন কমিশন, পুলিশ-প্রশাসন, দূর্নীতি-দমণ কমিশন, সেনা-বিমান-নৌ বাহিনী, আনসার বাহিনী, বি ডি আর বাহিনীসহ সায়ত্ত্বশাসিত ও সাংবিধানিক সকল প্রতিষ্ঠানের তীরহারা দেশ ও জাতির জন্য, প্রকৃত গণতন্ত্রের জন্য, ভোটারদের নায্য ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য, মানুষ-মানুষের সোর্হাদ্র-সম্প্রীতি ও অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য, সর্বোপরি উন্নতি ও সমৃদ্ধির জন্য এভাবেই সবার মুখ খোলা দরকার। যে বা যারা দেশ ও জাতির এই দু:সময়ে বা সংকটকালে মুখ খুলে সাহসী ভূমিকা রাখবে তারা দেশ ও জাতির কাছে ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। এর মাঝেই দেশ ও জাতি ফিরে পাবে মঙ্গল বা কল্যাণ।
লেখক: কবি ও কলামিষ্ট।