Fri. May 2nd, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

29kখোলা বাজার২৪, সোমবার, ১৪ মার্চ ২০১৬ : আপনার ভাইটাকে মনে হয় খুব স্বার্থপর? সে কি শুধুই নিজের কথা ভাবে? ভাইটাকে বদলাতে চান? চিন্তা নেই। যেমনটি চাইছেন, এবার ঠিক তেমন ভাবেই বদলে নিতে পারবেন আপনার ভাইকে! খুব দান-ধ্যান করেন বলে পাড়ায় আপনার যে প্রতিবেশীর দারুণ সুখ্যাতি, চান, তাকেও সকলে বলুক, ‘কী স্বার্থপর লোক রে বাবা’? চাইলে, সেটাও পারবেন এবার! স্বার্থপরও ভাববেন অন্যের কথা? এমনটাই জানাচ্ছে নিউরো-সায়েন্সের সাম্প্রতিক গবেষণার ফলাফল।
এও জানাচ্ছে, আমরা যে সব কাজ করি, তার লক্ষ্য বা উদ্দেশ্যগুলোকে (মোটিভ) নিয়ন্ত্রণ করার জন্য আমাদের মস্তিষ্কে আলাদা আলাদা এলাকা বা ‘রিজিওন’ রয়েছে। আর কৃত্রিম ভাবে সেই এলাকাগুলোর ওপর আমরা খবরদারি করতে পারি। চাইলে, সেই এলাকাগুলো দিয়ে আমাদের ইচ্ছে মতো কাজ করিয়ে নিতে পারি। যার মানেটা হল, কেউই জীবনভর ‘স্বার্থপর’ বা ‘নিঃস্বার্থ পরোপকারী’ হয়ে থাকতে পারেন না।
যাঁকে সবাই স্বার্থপর বলে জানেন, তিনিও কোনও কোনও সময় হয়ে উঠতে পারেন নিঃস্বার্থ পরোপকারী! আর যাঁর পরোপকারের কথা মানুষের মুখে মুখে ঘোরে, তিনিও কখনও কখনও হয়ে পড়েন দারুণ স্বার্থপর! জানেন কি, আমার-আপনার এই আচার-আচরণ, স্বভাব-টভাবগুলোকে, চাইলে কৃত্রিম ভাবে পুরোপুরি বদলে ফেলা যায়? যাতে এক জন চরম ‘স্বার্থপর’ মানুষও অন্যের জন্য হয়ে ওঠেন দারুণ সংবেদনশীল? উল্টোটাও সম্ভব! ‘দ্য ব্রেনস’ ফাংশনাল নেটওয়ার্ক আর্কিটেকচার রিভিলস্ হিউম্যান মোটিভস্’ শীর্ষক ওই গবেষণাপত্রটি ছাপা হয়েছে বিজ্ঞান-জার্নাল ‘সায়েন্স’-এর সাম্প্রতিক সংখ্যায়। গবেষক দলটির নেতৃত্বে রয়েছেন জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরো-সায়েন্টিস্ট ও মনস্তত্ত্ববিদ গ্রিট হেন, আর্নেস্ট ফের ও ইওসুকে মোরিশিমা।
গবেষণাটির অভিনবত্ব কোথায়? সহযোগী গবেষক নেদারল্যান্ডসের রাবাউন্ড ইউনিভার্সিটি নিমেজেনের নিউরো-সায়েন্স বিভাগের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর ঊর্মিমালা মিশ্র জানাচ্ছেন, ‘দিনভর, মাসভর, বছরভর আর জীবনভর আমরা যে সব কাজকর্ম করে থাকি, সে সবের ‘মোটিভ’গুলোকে নিয়ন্ত্রণ করে মস্তিষ্কের কোন কোন এলাকা, আর তা কী ভাবে করে, তা জানা গেল, এই প্রথম। মাথায় রাখবেন, আমরা বেশির ভাগ কাজকর্মই করি আমাদের অজান্তে। আমরা নিজেরাই জানি না, বুঝি না কাজটা কেন করছি বা কেন করব বলে ঠিক করেছি। শিশুরা এটা বেশি করে। বয়স বাড়লে সেই প্রবণতা কিছুটা কমে। আবার বৃদ্ধাবস্থায় সেই প্রবণতা বেড়ে যায়। ‘ডায়নামিক কজাল মডেলিং’ (ডিসিএম) পদ্ধতিতে আমরা মস্তিষ্কের বিভিন্ন এলাকার কাজকর্মের আলাদা আলাদা ধরন দেখতে পেয়েছি।
আমাদের দৈনন্দিন কাজকর্মের পিছনে যে ‘মোটিভ’গুলো থাকে, তাদের নিয়ন্ত্রণ করার এলাকাগুলোকে খুঁজে বের করতে পেরেছি। তাতে দেখেছি, আমাদের ‘স্বার্থপরতা’ বা ‘নিঃস্বার্থ পরোপকারে’র মতো প্রবণতাগুলো আসলে একেবারেই আপেক্ষিক। কেউ যেমন জীবনভর স্বার্থপর থাকেন না, তেমনই কেউ সারাটা জীবন নিঃস্বার্থে পরোপকার করেন না। তারা সময় সময় বদলে যান, নিজেরই অজান্তে সেই পরিবর্তনটা আরও দ্রুত করে তোলা যায়। সেই পরিবর্তনটাকে আরও ঘন ঘন করানো যায়।’ তাই কেউ আপনাকে ‘চরম স্বার্থপর’ বললে এ বার প্রতিবাদ করুন! আর আমার-আপনার চার পাশে যে ‘নিঃস্বার্থ’ মানুষটার গুণগান গাওয়া হচ্ছে, তা পুরোপুরি ঠিক হচ্ছে কি না, এবার ভেবে দেখুন! কোন কোন ‘বোধ’ কাজ করে? আরও এক সহযোগী গবেষক, জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরো-সায়েন্টিস্ট মেঘনা শ্রীবাস্তবের ব্যাখ্যায়, ‘আমরা দেখেছি, আমাদের মস্তিষ্কের দু’টি এলাকা আমাদের কাজকর্মের দু’টি অন্যতম প্রধান ‘মোটিভ’কে নিয়ন্ত্রণ করে।
আমরা অন্যের জন্য কাজ করি হয় সংবেদনশীলতা বা ‘এমপ্যাথি’ থেকে, না হলে তা করি ‘রেসিপ্রোসিটি’ থেকে। ‘রেসিপ্রোসিটি’ খুব অদ্ভুত জিনিস। এটা দু’রকমের হয়। আমি আপনার উপকার করব, কিন্তু তার বদলে আমি কী পাব? এই যে হিসেব কষে কখনও কখনও আমরা কারও উপকার করি, সেটা এক রকমের ‘রেসিপ্রোসিটি’। আরও একটা ধরন রয়েছে। তা হল, উনি আমাকে ওই ভয়ঙ্কর বিপদের সময় এক কথায় অনেকগুলো টাকা ধার দিয়ে খুব উপকার করেছিলেন। আজ ওঁর ছেলের চাকরির জন্য আমার একটা সুপারিশ করা উচিত। এই ভেবে উপকারটা করে বসলে, সেটাও হয়ে দাঁড়ায় ‘রেসিপ্রোসিটি’।
মানে, কারও আগের উপকারের প্রতিদান দিতে গিয়ে আমি-আপনি পরোপকারী হয়ে যাচ্ছি, দু’শোটা লোক আমাকে ‘স্বার্থপর’ ভাবার পরেও!’ মানুষকে বদলে দিতে পারি? আজীবন স্বার্থপর একটা মানুষকে দিয়ে কি তা হলে, চাইলে, আমরা সমাজের অনেক মানুষের স্বার্থেও ভাল কাজ করিয়ে নিতে পারি? আশা করতে পারি, স্বার্থপর মানুষটাও আগ বড়িয়ে অন্যের উপকার করে দিচ্ছেন, নিজের লাভালাভের অঙ্ক না কষেই? ঊর্মিমালা জানাচ্ছেন, ‘আমাদের গবেষণা দেখাচ্ছে, খুব ভাল ভাবেই আমরা সেটা করতে পারি। ‘এমপ্যাথি’ বা সংবেদনশীলতাকে নিয়ন্ত্রণ করে মস্তিষ্কের যে এলাকা, কৃত্রিম ভাবে তাকে আরও বেশি সক্রিয় করে তুলে এক জন স্বার্থপর মানুষকেও আমরা বদলে দিতে পারি নিঃস্বার্থ পরোপকারী ব্যক্তিত্বে।’