Sat. Mar 15th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

ravisankar-moitree-nbsরবিশঙ্কর মৈত্রী: খোলা বাজার২৪, মঙ্গলবার, ২২ মার্চ ২০১৬ : বিষের সঙ্গেও আমাদের ঠিক ঠিক পরিচয় নেই। সাপ মানেই বিষধর নয়, বিষমুক্ত নিরীহ সাপও নির্বিচারে তাই মারা পড়ে শেষ হয়ে যায়। বিষ চিনতে সমস্যা হয় বলেই হয়তো বাংলা সিনেমায় দেখানো হয় নায়িকা পান করার পর বালিশের পাশে পড়ে থাকে যে শিশিটি, তার গায়ে লেখা থাকবেই বিষ। আহারে নায়িকাও বিষ লেখা না দেখে নিশ্চিত না-হয়ে বিষ পান করতে পারেন না।
রবীন্দ্রনাথও বলেন, ‘আমি জেনেশুনে বিষ করেছি পান’। সে না-হয় প্রেমবেদনাঘনবিষ জেনেশুনেই পান করা যায়; কিন্তু জেনেশুনে বিষখাদ্য কীভাবে আমরা আহার করি?
বোতলের বিষ পান করে মানুষ মরে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে; কিন্তু খাদ্যের বিষ হজম করে মরতে মাস বছর লেগে যায় বলে সে-বিষ আমরা সহজে চিনতে পারি না। খাদ্যবিষ হজম করে মরার জন্য একটা প্রকল্প নেয়াই যেতে পারে। এখন বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু ষাট বছর। এই আয়ুকে চল্লিশ বছরে নামিয়ে আনলেই তো জনসংখ্যার চাপ তাপ কমে যায়। আমাদের দেশে জš§নিয়ন্ত্রণে অনেক অনেক বাধা আছে, মরতে কোনো মানা বাধা নেই বলেই মনে হয়।
যে কথা বলছিলাম- আসলে আমরা অমৃতও চিনি না, বিষও না। আমরা চিনি টাকা। টাকা টাকা করে আমরা ছাগল হতে পারি, পাগল হতে পারি, শয়তান বদমাস ইতর অভদ্র হতে পারি। কিন্তু কম টাকায় কীভাবে শুদ্ধ সুন্দর জীবন যাপন করা যায় তা আমরা জানতে মানতে চাই না। ভালোটা আমরা জানব মানবই বা কী করে? চারিদিকে এখন কেবলই মন্দগন্ধ ছড়ানো ছিটানো-পটানো রটানো রয়েছে। ফরাসি দেশেও একসময় উ”চফলনশীল ফল ফসল সবজি আবাদের চল ছিল। দিনে দিনে এ-দেশে উ”চ গতি বেড়েছে অনেককিছুতেই; কিন্তু ফল ফসল সবজি ফলনে ফরাসিরা ফিরে গেছেন সনাতন পদ্ধতিতে। এবং এদেশের মানুষ কাজের গতি বাড়ালেও আহারে বিহারে একেবারে স্থির, প্রায় নিশ্চল।
আমরা যেমন কোথাও বেড়াতে গিয়ে নতুন বউদেখার মতো একনজর পাহাড় পর্বত নদীনালা দেখেই আবার ছুট দিই; ফরাসিরা কিন্তু তা করেন না। এঁরা বেড়াতে গেলে খুঁটে খুঁটে দেখেন; অবাক হয়ে স্থির পাহাড়ের দিকে চেয়েই থাকেন। একটি নদীর ভোর সকাল দুপুর সন্ধে রাত না-দেখলে ভ্রমণে গমনই বৃথা।
আহারেও ফরাসিরা খুব আরামজারি মানুষ। বিশেষ করে রাতের খাবারে বসে ফরাসিরা কতো হাসি ঠাট্টা সুখ দুঃখের গল্পে মেতে একটু একটু করে দু-তিন ঘণ্টা ধরে খান। আর আমরা? আমরা দাওয়াত কবুল করে খালি পেটে গিয়ে উপুড় হয়ে বসি। যেন খাবার জন্যই দাওয়াত। দাওয়াত খাওয়া শেষ হলে পারলে বাড়ি ফিরে হাত ধুতে পারলেই বাঁচি। এসবই আমাদের, মানে বাঙালির বদ অভ্যাস।
বাঙালির অনেক গুণ আছে। সে-সব গুণবৃত্তান্ত আমরা সবাই জানি। আমরা বড়োই অতিথিপরায়ণ, তাও মানি। কিন্তু আমন্ত্রিত অতিথিরা কে কী খাবেন, কার কী খাওয়া মানা সেগুলো কি জানতে চাই?
যাক সে কথা- এবার কাজের কথাটা বলে ফেলি। হাইব্রিড বীজ থেকে শাক সবজি ধান গম ফল ইত্যাদি ফলাবার জন্য সার আর কীটনাশক ব্যবহার করা হয়। এমনকি ছাগল গোরু মাছ মুরগি বড়ো করার জন্যও ব্যবহার করা হয় কৃত্রিম খাবার। ফলে আমরা এইসব খাবার থেকে শরীরে অকৃত্রিম মেদ পাই আর বিষের আছর পাই।
বিষযুক্ত খাবার গ্রহণ করে আমাদের রক্ত দূষিত হচ্ছে, হাড়ে হাড়ে গিটে গিটে বেদনাবিষ জড়ো হচ্ছে; পেটও বিষমগ্ন হয়ে পড়ছে। শরীরের মধ্যে ক্যান্সার ঘনীভূত হচ্ছে এবং হার্টও দুর্বল হয়ে পড়ছে। কিন্তু না-দেখা অদেখা বিষ প্রতিদিন আমরা পরোক্ষভাবে পান করেই চলেছি। ফলে হাসপাতালে ক্লিনিকে ডাক্তারের চেম্বারের দিনে দিনে রোগীর লাইন লম্বাই হচ্ছে। ফলে সকলের সৎ-অসৎ অর্থ চলে যাচ্ছে পাতালে হাসপাতালে।
এই বিষক্রিয়া থেকে আমরা কি মুক্ত হতে পারব না?
বাংলাদেশেও এখন বিচ্ছিন্নভাবে শুরু হয়েছে বিষমুক্ত খাদ্য উৎপাদন। কিছু সচেতন মানুষ দাগদুগওয়ালা শাক সবজি ফল কিনছেন স্বস্তি নিয়ে। মেশিন থেকে ছাঁটা মেদহীন কেমিকাল গন্ধযুক্ত সরু চাউল কেনা থেকে বিরত হয়েছেন কেউ কেউ। ফকফকে সাদা আটা যে স্বাস্থ্যকর নয় তাও জেনে গেছেন অনেকেই। কেউ কেউ মানছেন ভেজাল তেল খাওয়ার চেয়ে না খাওয়াই ভালো। অনেকেই এরই মধ্যে জেনে গেছেন সাদা মেঘের মতো শুভ্র সুন্দর বিষযুক্ত চিনি নয়; বরং আখের গুড়ই নিরাপদ।
মানুষ ঠেকে ঠেকেই শেখে। আমরাও নিশ্চয়ই শিখছি। কী খাব, কেন খাব, কতোটুকু খাব এবং কী কী খাব না, অকালে রোগেভুগে মরার আগেই তা জানতে হবে মানতে হবে।
গোবরই মাটির জন্য সবচেয়ে বড়ো বর। পাতা পচিয়ে, ময়লা জমিয়ে সার তৈরি করে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিলেই আমরা শুদ্ধ মানের ফল ফসল শাক সবজি উৎপাদন করতে পারি। এক ঘনফুট মাটির দশটা টবেই চাষ করতে পারি কাঁচা মরিচ পেঁয়াজ লাল শাক টমেটো বেগুন করলা থানকুনি পুদিনা। ছোটো ছোটো সংসারের একচিলতে বারান্দায়ও দারুণ একটা স্বস্তিকর পরিবেশ রচিত হতে পারে।
আমরা যদি বাজার থেকে চকচকে ঝকঝকে চাল ডাল ফল তরকারি কেনা বাদ দিই তাহলে হয়তো অসৎ ব্যবসায়ীরাও সচেতন হয়ে উঠবেন।
আসুন আমরা নিজেদেরকে সুন্দর ও নিরাপদ জীবনে ফিরিয়ে নিয়ে যাই; আসুন আমরা একটু কম খেলেও বিষমুক্ত খাবার খাই এবং রোগমুক্ত জীবন লাভ করি।