Wed. Mar 19th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

50খোলা বাজার২৪,বৃহস্পতিবার, ২৮ এপ্রিল ২০১৬: আপনার যেকোন ধরণের নড়াচড়া যেমন- দাঁড়ানো, হাঁটা, দৌড়ানো, লাফানো, উঠা, বসা, এমনকি শোয়া পর্যন্ত নিয়ন্ত্রিত হয় জয়েন্ট বা অস্থিসন্ধির দ্বারা। সুস্থ জয়েন্ট এই কাজ গুলোকে অনেক সহজ করে দেয়। দুটি হাড়ের বা অস্থির সংযোগস্থলকেই জয়েন্ট বলে। হাড়ের শেষপ্রান্তে মসৃণ সংযোগ কলা বা কার্টিলেজ বা তরুণাস্থি থাকে যা জয়েন্টকে সুরক্ষিত রাখার পাশাপাশি সহজে নড়াচড়া করতে সাহায্য করে। কিছু জয়েন্ট অনমনীয় থাকে যেমন- মাথার তালুর জয়েন্টগুলো। আমাদের প্রতি মুহূর্তের প্রতিটা চলনের জন্যই জয়েন্টের প্রয়োজন রয়েছে। এই জয়েন্টে যখন ব্যথা হয় বা ফুলে যায় তখনই আপনি এর প্রতি মনযোগী হন। কিন্তু ততদিনে আপনি ভুগতে শুরু করেছেন। আপনার শরীরের অত্যন্ত প্রয়োজনীয় এই জয়েন্টগুলোকে সুস্থ রাখার জন্য এবং জয়েন্টের যেকোন রোগ থেকে মুক্ত থাকার জন্য ছোটবেলা থেকেই জয়েন্টের যতœ নেয়া প্রয়োজন। সুস্থ জীবনধারা মেনে চলা এবং সঠিক খাদ্য গ্রহণের মাধ্যমে আপনার শরীরের জয়েন্টকে সুস্থ রাখতে পারেন বছরের পর বছর যাবত। জয়েন্টকে সুস্থ রাখার কয়েকটি টিপস জেনে নিই চলুন।

১। ওজন ঠিক রাখা
জয়েন্ট সুস্থ রাখার প্রধান উপায় হচ্ছে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা। যদি আপনার ওজন ক্রমশ বাড়তে থাকে তাহলে অচিরেই আপনি জয়েন্টের সমস্যায় ভুগবেন বলা যায়। ওজন অত্যধিক বৃদ্ধি পেলে শরীরের ভারবহনকারী জয়েন্টগুলোতে বেশি চাপ পড়ে। যার ফলে জয়েন্ট ক্ষয় হতে থাকে। এতে জয়েন্টের সাধারণ ব্যধি অষ্টিওআরথ্রাইটিস হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়। অতিরিক্ত ওজন দেহে প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে যা জয়েন্টের ব্যথা ও অন্যান্য সমস্যা তৈরি করে। যদি আপনার ওজন বেশি হয়ে থাকে তাহলে ধীরে ধীরে ওজন কমানোর চেষ্টা করুন।
২। জয়েন্টকে শক্তিশালী করুন
নিয়মিত ব্যায়াম করলে জয়েন্টের চারপাশের মাংসপেশী ও লিগামেন্ট শক্তিশালী হয় ও ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে। এমনকি এর ফলে আপনার হাড়ও শক্তিশালী হয়। তাছাড়া ব্যায়াম করলে ওজন কমে এবং অস্থির জয়েন্টের টান ও চাপ কমে। বিভিন্ন ধরণের কার্ডিও এক্সারসাইজ যেমন- হাঁটা, সাঁতার কাটা ও সাইকেল চালানো হাড় ও জয়েন্টকে শক্তিশালী করে। সপ্তাহে ৫ দিন ৩০ মিনিট করে এই ব্যায়াম গুলো করতে পারেন।
৩। জয়েন্টের চারপাশের পেশী শক্তিশালী করুন
জয়েন্টকে সুস্থ রাখার জন্য এর চারপাশের মাংসপেশী সুস্থ থাকা প্রয়োজন। হাত ও পায়ের শক্তিশালী মাসেল সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত এই অঙ্গগুলোর স্ট্রেস ও চাপ কমাতে পারে। শক্তিশালী মাসেল জয়েন্টকে ভালো সাপোর্ট দিতে পারে। উরুর মাসেল যদি শক্তিশালী হয় তাহলে হাঁটুর অষ্টিওআরথ্রাইটিস হওয়ার ঝুঁকি কমে। এছাড়াও পেটের ও পিঠের শক্তিশালী মাসেল ভারসাম্য রক্ষায় সাহায্য করে। ২০১২ সালে স্পোর্টস হেলথ জার্নালে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয় যে, যাদের হাঁটুর অষ্টিওআরথ্রাইটিস আছে তাদের মধ্যে মাংসপেশীর সমস্যা থাকতে দেখা যায়। এর ফলে শারীরিক কার্যক্রম বাঁধাগ্রস্থ হয় এবং তাদের থেরাপি দেয়ার প্রয়োজন হয়। এর থেকে মুক্ত থাকার জন্য ভারোত্তলনের ব্যায়াম করুন যা পায়ের মাসেল তৈরিতে সাহায্য করবে। মাসেল গঠনের জন্য সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে ইয়োগা করা।
৪। ওয়ার্ম আপ করুন
ব্যায়াম শুরু করার পূর্বে ১০ মিনিট ওয়ার্ম আপ করে নিন। এতে রক্ত সংবহন বৃদ্ধি
পায়, জয়েন্টকে নমনীয় করে, জয়েন্টের চারপাশের লিগামেন্ট ও টেন্ডনকে ঢিলা করে। অর্থাৎ ওয়ার্ম আপ শরীরের মাসেল ও জয়েন্টকে ব্যায়ামের জন্য প্রস্তুত করে। তাই ব্যায়ামের পূর্বে ওয়ার্ম আপ ভুলবেন না।
৫। দেহের ভঙ্গি ঠিক রাখুন
দাঁড়ানো, বসা বা শোয়ার সময় সঠিক দেহভঙ্গি বজায় রাখুন। সঠিক দেহভঙ্গি মাসেল ও লিগামেন্টের চাপ কমায়। ২০১৪ সালে ফিজিক্যাল থেরাপি সাইন্স নামক জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনের মাধ্যমে জানা যায় যে, দৈনিক ৩ ঘন্টার বেশি সময় পায়ের উপর পা তুলে বসলে কাঁধ, কোমর ও পিঠের জয়েন্টে পরিবর্তন ও ব্যথা সৃষ্টি হয়। তাই হাঁটা, বসা ও শোয়ার সময় দেহের ভঙ্গি ঠিক রাখুন। জুবোথুবো হয়ে বসবেন না।
৬। অবস্থান পরিবর্তন করুন
ঘন্টার পর ঘন্টা একভাবে দাঁড়িয়ে থাকা বা বসে থাকার ফলে জয়েন্টের সমস্যা দেখা দিতে পারে। তাই ১ ঘন্টার বেশি সময় দাঁড়িয়ে বা বসে থাকবেন না। দাঁড়িয়ে বা বসে থাকার সময় যত বেশি আপনার অবস্থানের পরিবর্তন করবেন তত আপনার মাসেল কম শক্ত হবে। প্রতি ঘন্টা কাজের পর ১০ মিনিটের বিরতি নিন।
উপরোক্ত নিয়মগুলো মেনে চললে যে কেউই সুস্থ ও শক্তিশালী জয়েন্ট নিয়ে দীর্ঘদিন ভালো থাকতে পারেন।