আহমদ রফিক ।। খোলা বাজার২৪, রবিবার, ১৯ জুন ২০১৬: তনু হত্যার তদন্ত নিয়ে এত দিন যা আশঙ্কা করা হচ্ছিল শেষ পর্যন্ত তাই বুঝি সত্য হতে যাচ্ছে। অর্থাৎ মেধাবী ছাত্রী, সাংস্কৃতিককর্মী তনু হত্যার সুবিচার বোধ হয় অনিশ্চয়তায় ঘুরপাক খেতে চলেছে। এ বিষয়ে পুলিশের সিআইডি বিভাগ কী তদন্ত করেছে, কতটা তাদের কাজের অগ্রগতি এ সম্পর্কে আমরা অবহিত নই। তবে আপ্তবাক্য স্মরণ করে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হতে পারি এই ভেবে যে ‘সুবিচার বিলম্বিত হওয়ার অর্থ সুবিচার না পাওয়া’। কোনো কোনো ঘটনায় হত্যাকাণ্ডের এমন পরিণতি আমরা এর আগে দেখেছি, যেমন সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ড, দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হওয়ার পরও যে রহস্যের কোনো ফয়সালা হলো না। সোহাগী জাহান তনুর ভাগ্যেও কি এমন পরিণতি অপেক্ষা করছে?
প্রথম থেকেই কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ছাত্রী, নাট্যকর্মী, স্মার্ট তরুণী সোহাগী জাহান তনুর হত্যাকাণ্ড ঘিরে মনে হয় একটি অশুভ আবহ তৈরি হয়েছিল। অন্তত আমার তাই মনে হয়েছে ঘটনার কয়েক দিন পর থেকে। বিশেষ করে ঘটনার অকুস্থল যখন সুরক্ষিত, তখন এমন নিরাপদ জায়গায় এক বিকেলে প্রাইভেট পড়াতে গিয়ে ফিরে এলো না তনু, তার ধর্ষিত প্রাণহীন দেহের গতি হলো সেই সুরক্ষিত এলাকার পাশেই ঝোপের আড়ালে! কারো তা চোখে পড়েনি।
ঘরে ফেরেনি মেয়ে। তাই খোঁজ, খোঁজ, অবশেষে ধর্ষিত মৃতদেহের সন্ধান পাওয়া গেল ঝোপের আড়ালে। এমন একটি শিহরণ জাগানো ঘটনার ময়নাতদন্ত ও পুলিশি তদন্ত দ্রুততার সঙ্গে হওয়ার কথা। কিন্তু কোথায় যেন একটি বিপরীত প্রভাব কাজ করছিল। যে জন্য ‘তদন্ত নিয়ে র্যাব-পুলিশ টানাটানি!’
এ ছাড়া তনু হত্যা নিয়ে ঘটেছে অদ্ভুত ঘটনা। যেমন ঘটনাস্থলের ছয় ফুট মাটি ও ঘাস কেটে নিয়ে যায় র্যাব, পুলিশ তদন্ত কর্মকর্তাদের অজান্তে। ‘বিস্মিত ও ক্ষুব্ধ স্থানীয় তদন্ত কর্মকর্তারা।’ কে জানে কেন ওই কেটে নিয়ে যাওয়া! এই হত্যাকাণ্ডে দেশব্যাপী সংঘটিত প্রবল প্রতিক্রিয়ার প্রভাব কতটা পুলিশি তদন্তে, কতটা ময়নাতদন্তে পড়েছে বলা কঠিন। তদন্তের দায়িত্ব বদল সত্ত্বেও কোনো সুখবর মেলেনি।
তাই এমন মনে হওয়া অস্বাভাবিক নয় যে ডাল মে কুছ কালা হ্যায়’, তা হোক না হোক এটা তো সত্য যে প্রায় তিন মাসেও এ হত্যাকাণ্ড ঘিরে নানা ঘটনায় লক্ষ্য অর্জনের চেয়ে অস্পষ্টতাই বড় হয়ে উঠেছে। তা কি এ কারণে যে তনুর বাবা বা পরিবার যথেষ্ট বিত্তবান, প্রভাবশালী বা উচ্চ শ্রেণিভুক্ত নয়। তাদের ক্ষমতা সীমিত। তাই জঘন্য একটি কৌশল ধামাচাপা দেওয়া সহজ। গোটা ঘটনার গতি তেমন পথই ধরেছে। তদন্ত কর্মকর্তাদের মনে হচ্ছে অসহায়, সঠিক সূত্র খুঁজে পাচ্ছেন না। অবস্থাদৃষ্টে এমন সন্দেহের পক্ষে যথেষ্ট কারণ রয়েছে যে এ ঘটনার পেছনে সম্ভবত কোনো প্রভাবশালী ব্যক্তি বা মহলের কারসাজি রয়েছে। এমন সন্দেহের পেছনে আলামত মৃতদেহের প্রথম ময়নাতদন্তের (পোস্টমর্টেমের) রিপোর্ট, যা নিয়ে প্রবল আলোড়ন, প্রতিবাদ ও সন্দেহ সত্ত্বেও ময়নাতদন্তকারী ডাক্তার নির্বিকার।
একটি সুস্পষ্ট হত্যাকাণ্ড, ঘটনা শেষে লাশ অন্যত্র ফেলে রাখা, মৃতের মা-বাবা তার দেহে, মাথায় সুস্পষ্ট আঘাতের চিহ্ন দেখতে পেয়েছেন, সে ক্ষেত্রে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে তা প্রকাশ পায় না কেন? স্বভাবতই যেকোনো মানুষের মনে হবে, এ অস্বাভাবিক প্রতিবেদনের পেছনে রয়েছে হয়তো ভয়ভীতি বা অর্থের প্রভাব। একদা চিকিৎসকদের পেশায় তৎপর হওয়ার আগে একাধিক বিধানমাফিক সদাচরণের শপথ নেওয়ার রীতি ছিল, যা আধুনিক চিকিৎসাশাস্ত্রের জনক গ্রিক চিকিৎসাবিদ হিপোক্র্যাটিসের নামে প্রচলিত ছিল, পরে তা আর চালু থাকেনি। কিন্তু এর নৈতিক নির্দেশটি প্রচ্ছন্নভাবে হলেও চিকিৎসাবিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের দেওয়া হতো। আমাদের অভিজ্ঞতা তাই বলে। কিন্তু সমাজের অবক্ষয় এমনই এক স্তরে পৌঁছেছে যে তা জীবনরক্ষক হিসেবে পরিচিত চিকিৎসক সমাজকেও স্পর্শ করেছে। তা না হলে একটি হত্যাকাণ্ডের ময়নাতদন্তে এমন পরিণতি সম্ভব?
দুই.
তনু হত্যার ঘটনায় সংবাদপত্র মহল যখন প্রবলভাবে সোচ্চার, প্রতিদিন প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ দৈনিকে নানা খবরের প্রতিবেদন প্রকাশ পাচ্ছে, লেখা হচ্ছে প্রতিবাদী বিশ্লেষণধর্মী কলাম, তখন আমি তাৎক্ষণিক আবেগে কলম তুলে নিইনি মূলত এর ঘোলাটে চরিত্রের কারণে, বিশেষত প্রথম ময়নাতদন্তের অবিশ্বাস্য প্রতিবেদন ও দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন প্রকাশ পাওয়ার অপেক্ষায়।
আর এ জন্য এত দিনের অপেক্ষা। আজ কাগজের প্রতিবেদনে সন্দেহটাই সত্য হয়ে দাঁড়াল। এরই মধ্যে অনেক চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে। সংবাদপত্রের খবরে প্রকাশ পেয়েছে পাঠকের জন্য উৎকণ্ঠা, অনিশ্চয়তা, ঘটনা নিয়ে দোদুল্যমানতা সৃষ্টি করে। সবশেষে আজকে প্রত্যাশিত বিস্ময়। বিস্ময় নয়, বলা যায় এমন কিছু ঘটার আশঙ্কা। আর সেটাই প্রকাশ পেয়েছে দুটি জনপ্রিয় দৈনিকের প্রথম পাতার শিরোনামে।
একটিতে লেখা হয়েছে, ‘বিলম্বিত প্রতিবেদনে বিভ্রান্তি আরো বাড়ল’। দ্বিতীয় দৈনিকে লেখা হয়েছে, ‘দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনও প্রশ্নবিদ্ধ’। বলার অপেক্ষা রাখে না যে এ ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করেছেন তনুর মা-বাবা। আমার বিশ্বাস, প্রত্যাখ্যান করবে দেশের সচেতন মানুষ মাত্রই। কারণ তনু হত্যায় বিক্ষুব্ধ মানুষের প্রতিবাদের চাপে ও নতুন করে ময়নাতদন্তের জন্য উচ্চ আদালতের নির্দেশে মানুষের মনে আশা জেগেছিল যে এবার হয়তো সত্য প্রকাশ পাবে।
তেমন সম্ভাবনা দেখা গেল যখন বিলম্বিত হওয়া সত্ত্বেও তনু হত্যার এক মাসের মাথায় তদন্তকারী সিআইডির সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা জানান যে ‘কলেজ ছাত্রী তনুকে পরিকল্পিতভাবেই হত্যা করা হয়েছে।’ কর্মকর্তাদের মতে, ‘তনুকে সেনানিবাসের ভেতরেই হত্যা করা হয়েছে। পরে তার লাশ ঝোপের মধ্যে ফেলে রাখা হয়। এ ঘটনায় তিন থেকে চারজন জড়িত থাকতে পারে। তনুর পরনে থাকা কাপড়ে ডিএনএ টেস্ট করে তিনজনের আঙুলের ছাপ পাওয়া গেছে।’
এ সংবাদ প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হয়েছে ২০ এপ্রিল (২০১৬) একটি দৈনিকে। শিরোনাম ‘এটি পরিকল্পিত হত্যা, জড়িত তিন থেকে চারজন।’ বলার অপেক্ষা রাখে না যে ‘এ হত্যাকাণ্ডের মামলার জন্য ময়নাতদন্তের রিপোর্ট গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।’ দীর্ঘ সময় পর এখন দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, মৃত্যুর আগে তনুর সঙ্গে যৌন সংসর্গের আলামত মিলেছে, তা ধর্ষণ কি না ঠিকঠাক বল যাচ্ছে না। পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে বুঝতে বাকি থাকে না যে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের মতামত ‘ধরি মাছ না ছুঁই পানি’ গোছের।
অর্থাৎ তনু হত্যার ঘটনায় সুবিচারের সম্ভাবনা বা প্রত্যাশা অনেকটা ঝুলে পড়ল। এর দায় অনেকটা ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনের। কারণ মৃত্যুর দিনেই (২০ মার্চ, ২০১৬) লাশ দেখে তনুর মা-বাবা উল্লেখ করেছিলেন যে তার মাথার পেছনে, কানের নিচে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এ ক্ষেত্রে আমাদের প্রশ্ন, এই আঘাতের চিহ্ন প্রথম ময়নাতদন্তে উল্লিখিত হলো না কেন? তখন তো মৃতদেহে পচাগলা ছিল না যে কিছু বোঝা যাবে না, যে কথা বলা হয়েছে দ্বিতীয় প্রতিবেদনে। তারা যে যৌন সংসর্গের কথা উল্লেখ করে দাবি করেছেন যে এত দিন পর তা ধর্ষণ কি না নিশ্চিত করে বলা যাবে না, সে যুক্তি তো প্রথম প্রতিবেদনের বেলায় খাটে না। তা ছাড়া প্রথম প্রতিবেদনে যৌন সংসর্গ তথা ধর্ষণের কথা কোনোটাই উল্লেখ করা হয়নি। দুই রিপোর্টের এ তফাত স্বভাবতই মনে যুক্তিসংগত সন্দেহ তৈরি করে যে অন্তত প্রথম রিপোর্ট সঠিক ছিল না। কিন্তু কেন? এ প্রশ্নের জবাব সিআইডি প্রথম ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসককে জিজ্ঞেস করতেই পারে। এ বিষয়ে আর কী করতে পারে তা নির্ভর করছে আইনি বিধিবিধানের ওপর।
তিন.
তনু হত্যাকাণ্ডের বর্বরতা নিয়ে সংবাদপত্র কতটা উদ্বেল হয়েছিল তার প্রমাণ মিলবে পত্রিকাগুলোর প্রতিবেদনে। অন্তত দু-চারটির উল্লেখ ঘটনার গুরুত্ব বুঝতে পাঠককে সাহায্য করবে। যেমন—হত্যাকাণ্ডের প্রথম প্রতিক্রিয়ায় বড় বড় শিরোনাম প্রকাশের ১০ দিন পরও এ বিষয়ে দেশবাসীর ক্ষোভ প্রকাশ সম্পর্কে একটি দৈনিকে লেখা হয়েছে, ‘তনু হত্যার বিচার দাবিতে সোচ্চার সারা দেশ’।
ঘটনার সুবিচারের দাবিতে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজসহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রতিবাদী ধর্মঘট পালিত হয়। একই কারণে ঢাকার শাহবাগ হয়ে ওঠে উত্তাল, ‘অবরোধে যান চলাচল বন্ধ শাহবাগে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হয় বিক্ষোভ মিছিল।’ একই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘সারা দেশে প্রতিবাদের আগুন’। সে আগুন ছড়িয়ে যায় ঢাকাসহ বরিশাল, সিলেট, ফরিদপুর, কুমিল্লা, নোয়াখালী, শরীয়তপুর, নাটোর, জয়পুরহাট, ঠাকুরগাঁও, গাইবান্ধা, নীলফামারী, চাঁদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ভোলা, কুড়িগ্রাম, পিরোজপুর প্রভৃতি স্থানে।
তা সত্ত্বেও কেন এত দিনেও তনু হত্যাকাণ্ডে আলোর রেখা দেখা যাচ্ছে না? সেটা কি হত্যাকাণ্ডের নায়কদের কৌশলী পরিকল্পনার কারণে, নাকি ঘটনাটি সেনানিবাসে ঘটার কারণে? সংগত কারণে ১৬ মে (২০১৬) একটি দৈনিকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘তনু হত্যার তদন্ত নিয়ে শঙ্কা ড. মিজানের’। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমান এ বিষয়ে সিআইডি ও কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের টানপড়েনের কথা উল্লেখ করে এ-জাতীয় মন্তব্য করেন।
এ বিষয়ে আমরাও পড়েছি সংবাদপত্রে দিনের পর দিন সিআইডি ও সংশ্লিষ্ট মেডিক্যাল বোর্ডের টানাটানি নিয়ে খবর। এ ব্যাপারে ফরেনসিক বিভাগও ধোয়া তুলসীপাতা নয় বলেই ১৪ মে একটি দৈনিকে শিরোনাম, ‘৪৪ দিনেও দেওয়া হয়নি ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন’। স্বভাবত আবারও আমাদের প্রশ্ন, কেন? কী কারণে দুই বিভাগের এ-জাতীয় টানাটানি? এবং একটি ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেশ করতে প্রায় তিন মাস সময় লাগবে কেন? বিশেষ করে ঘটনাটি যখন যথেষ্ট স্পর্শকাতর ও গোটা দেশবাসীর ক্ষুব্ধ আবেগ ও প্রতিক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত? এই বিলম্বের কী জবাব দেবেন চিকিৎসকরা?
বিষয়টা সত্যি আমাদের মতো সাধারণ মানুষের কাছে শুধু বিস্ময়করই নয়, ন্যায়বিচারের প্রশ্নে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠারও। কারণ তদন্ত প্রতিবেদনই যদি সঠিক না হয়, যদি ডিএনএ প্রতিবেদন নিয়ে ‘রশি টানাটানি’ চলে, চলে ‘তদন্ত নিয়ে র্যাব-পুলিশ টানাটানি’ কিংবা ‘ডাক্তারদের টালবাহানায় প্রশ্নবিদ্ধ’ হয় ময়নাতদন্ত, তাহলে সুতদন্তের সম্ভাবনা কি পিছিয়ে পড়ে না? প্রসঙ্গত, ১৯ মে একটি দৈনিকের রিপোর্ট, ‘সন্দেহভাজনদের ডিএনএ পরীক্ষা করাবে সিআইডি’।
এ বিষয়টি হত্যাকাণ্ডের ধর্ষণের ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ সংবাদ ছাপার পর তিন সপ্তাহ কেটে গেছে। আমাদের জানতে ইচ্ছা করে, এ কাজটি কি সিআইডি আদৌ করেছে বা করতে পেরেছে? করতে পারলে কিন্তু অনেক প্রশ্নের জবাব মিলত। সব কিছু মিলিয়ে গোটা বিষয়টি এখন এক ধোঁয়াশার মধ্যে রয়েছে। যদি কোনো সত্য এর মধ্যেই উদ্ঘাটিত না হয়, তাহলে গোটা ঘটনার স্বাভাবিক মৃত্যু ঘটবে। অপরাধীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে মহানন্দে বিচরণ করবে।
চার.
তনু হত্যা নিয়ে যা চলছে তাতে আমরা হতবাক। দ্বিতীয় ময়নাতদন্তের প্রশ্নবিদ্ধ প্রতিবেদনের জবাবে একটি দৈনিক ঠিকই লিখেছে, ‘তাহলে কি খুন হননি তনু?’ ঝোপের আড়ালে ধর্ষিত তনু আব্র“ রক্ষার চেষ্টা করছিলেন?’ না, হিজাব তার সম্ভ্রম বা প্রাণ কোনোটাই রক্ষা করতে পারেনি। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট সত্য উদ্ঘাটন করতে না পারলেও নিষ্পাপ তনুর চরিত্র হনন ঠিকই করতে পেরেছে। অভিনন্দন জানাতে হয় সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকদের!
আচ্ছা, এমনটা কি ভাবা যায়, সুদর্শনা তরুণী, নাট্যকর্মী, ভালো গান গায়, কোনো প্রভাবশালী দুর্বৃত্তের কুনজরে পড়েছিল, তাই এ অবাঞ্ছিত ঘটনা! আর তার মা-বাবার সাক্ষ্য মতে যারা তাকে গান গাওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়ে প্রত্যাখ্যাত হয়েছিল, তাদের সম্পর্কে কি তদন্ত করেছে সিআইড়ি এ-জাতীয় কোনো খবর তো কোনো কাগজে নেই। আমরা কি তাহলে আইজিপিকে অনুরোধ জানাতে পারি না, খুনের এ দিকটি নিয়ে তদন্ত করতে? তনুর মা-বাবা কাতর আহ্বান জানিয়েছেন আইজিপির কাছে, যাতে তনুর হত্যাকারীদের বিচার হয়।
বাংলাদেশে ইদানীং এমন কিছু ঘটনা ঘটছে, যা চরম সামাজিক দূষণ ও অবক্ষয়ের পরিচায়ক। এর মধ্যেই পর পর কয়েকটি হত্যাকাণ্ড ঘটে গেল একই কায়দায়, যার রাজনৈতিক তাৎপর্যে গুরুত্বপূর্ণ। সেগুলো নিয়ে টিভি চ্যানেলের টক শোতে অনেক চিৎকার চলছে। তনুর ঘটনাটি অবশ্য একান্তই ব্যক্তিগত ও শোকাবহ। দুর্বৃত্তদের থাবায় একটি তরুণীর নাটক ও গানের জগতে বিশিষ্ট হয়ে ওঠার স্বপ্ন পুড়ে ছাই হয়ে গেল। আমরা তাই পুলিশ প্রশাসনই নয়, আমাদের নারী প্রধানমন্ত্রীকে আহ্বান জানাই, তনুর ইজ্জত ও প্রাণনাশ করার জন্য দায়ী দুর্বৃত্তদের শাস্তি নিশ্চিত করতে তিনি যেন তাঁর ব্যক্তিগত প্রভাবও কাজে লাগান।
লেখক : কবি, গবেষক ও ভাষাসংগ্রামী