Tue. Sep 16th, 2025
Advertisements

nawgaখোলা বাজার২৪, মঙ্গলবার, ২৮ জুন ২০১৬: কাজী কামাল হোসেন, নওগাঁ : ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই নওগাঁর মার্কেটগুলোতে কেনাবেচা জমে উঠছে। ঈদে ক্রেতার চাহিদার কথা মাথায় রেখে আগে থেকেই বিক্রেতারাও পণ্যের পসরা সাজিয়েছেন। অন্যান্য বছর রমজানের মাঝামাঝি সময় থেকে ঈদের কেনাকাটা জমলেও এবার দশ রমজানের পর থেকেই নওগাঁর বিভিন্ন বিপণিবিতানে ক্রেতাদের ভীড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
বরাবরের মতো এবারেও ছেলেদের চাহিদা অনুযায়ী পাজামা-পাঞ্জাবি ও স্যান্ডেল, মেয়েদের জন্য বিভিন্ন ধরণের থ্রি পিস এবং শিশুদের রকমারি পোশাক পাওয়া যাচ্ছে। এবার ঈদে বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে বাজারে এসেছে মেয়েদের ‘বাজেরাও মাস্তানি’ জামা। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মেয়েদের মধ্যে এবার বাজেরাও মাস্তানি পোশাকের চাহিদা বেশি। এখন পর্যন্ত এবারের ঈদের বেচাকেনা নিয়ে সন্তুষ্ট বিক্রেতারা। তবে দোকানদাররা জিনিসপত্রের দাম অনেক বেশি চাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন ক্রেতারা।
গত মঙ্গলবার সরেজমিনে নওগাঁর কাপড়পট্টি, গীতাঞ্চলী শপিং প¬াজা, জহির প¬াজা, হাসনাহেনা মক্কা মার্কেট, শুভ প¬াজা, ইসলাম মার্কেট, সৌদিয়া সুপার প¬াজা, মাজেদা সুপার মার্কেটসহ বিভিন্ন বিপণিবিতানে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভীড় চোখে পড়েছে। তার মধ্যে আয়োজনের ভিন্নতার কারণে শিলা মনি, শিপলু বুটিকস, বাঁকুড়া বস্ত্রালয়, কুমাড়খালী বস্ত্রালয়, পালকী বুটিকস, প্রিয়া ফ্যাশনসহ বেশ কিছু দোকানে ক্রেতারা সবচেয়ে বেশি ভীড় জমাচ্ছেন। বিপণিবিতানগুলোতে নারী ও শিশুদের ভীড় ছিল লক্ষ্যনীয়।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মেয়েদের বিভিন্ন ধরণের থ্রি পিস ১০০০ থেকে শুরু করে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। মেয়েদের হাল ফ্যাশনের ‘বাজেরাও মাস্তানি’ জামা বিক্রি হচ্ছে ৬ হাজার ৫০০ থেকে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। আর ৮০০ টাকা থেকে ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত শাড়ি বিক্রি হচ্ছে। আর ছেলেদের সুতি পাজামা-পাঞ্জাবি ১ হাজার ২০০ থেকে ৭ হাজার টাকা পর্যন্ত পাওয়া যাচ্ছে। শেরওয়ানি বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত।
ব্যবসায়ীরা জানান, এবার দশ রমজানের পর থেকেই ঈদের কেনাকাটার ক্রেতারা আসতে শুরু করেছেন। বেচাকেনা ভালই হচ্ছে। তবে ঈদের আগে ক্রেতাদের ভীড় আরও বাড়বে বলে আশা বিক্রেতাদের।
নওগাঁয় তৈরি পোশাক কাপড়ের অভিজাত দোকান হিসেবে পরিচিতি ‘শিলা মনি’র মালিক নেপাল চন্দ্র ঘোষ বলেন, ‘দশ রমজানের পর থেকেই এবার ঈদের কেনাকেটা পুরো দমে জমে উঠেছে। ঈদকে কেন্দ্র করে ব্যবসা ভালই হবে বলে মনে হচ্ছে।’
শিপলু বুটিকসের মালিক জাহান আলম জানান, মেয়েদের পছন্দের শীর্ষে রয়েছে ‘বাজেরাও মাস্তানি’ পোশাক। এছাড়া বিভিন্ন ধরণের টপস, ক্যাটটক, রাজিবা, জিপসি, ফ্লোর টাচ পোশাকের চাহিদাও মোটামুটি রয়েছে। ঈদ উপলক্ষে ক্রেতাদের হাল ফ্যাশনের কথা মাথায় রেখে দোকানে বিভিন্ন ধরণ ও দামের শাড়ি ও পাঞ্জাবির সমাহার রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
ঈদের কেনাকাটা করতে পত্মীতলা থেকে তিন মেয়েকে সঙ্গে করে নওগাঁ শহরে এসেছেন রওশনআরা বেগম। তিনি বলেন, ‘তিন মেয়েই বায়না ধরেছে, এবার ঈদে তাদের ‘বাজেরাও মাস্তানি’ জামা দিতে হবে। তিনটে জামা কিনতে ২৫ হাজারের মতো টাকা খরচ হলো। মেয়েদের আবদার পূরণ করতে ফতুর (দেওলিয়া) অবস্থা আমার।’
কাপড়পট্টি মার্কেটের থান কাপড় ও ছিট কাপড় ব্যবসায়ী শাপলা ক্লথ স্টোরের মালিক জিহাদ আলম বলেন, ‘সাধারণত রোজার শুরু থেকেই থানা বা ছিট কাপড়ের দোকানগুলোতে ক্রেতাদের আনাগোনা থাকে। এবারেও তার ব্যতয় হয়নি। কারণ, কাপড়ের ছিট কিনে সেগুলো তৈরি করতে সময় লাগে, এজন্য ক্রেতারা ঈদকে কেন্দ্র করে একটু আগেভাগেই কেনাকাটা সেরে থাকেন। তবে ঈদ যত ঘনিয়ে আসবে আমাদের বেচাকেনা ততই কমবে। অন্যদিকে তৈরি পোশাক বিক্রেতা দোকানগুলোতে ক্রেতাদের ভীড় বাড়বে।’
রওশনআরা বেগমের মতো ঈদের কেনাকাটা করতে সপরিবারে নওগাঁ শহরে এসেছেন পোরশার আব্দুল মতিন মন্ডল, নিয়ামতপুরের চাঁন মোহাম্মদ ও আলেমারা বেগম। তাঁদের কথায়, ‘প্রতি বছর জিনিসের দাম তো বাড়েই। তবে এবার পোশাকের দাম মাত্রাতিরিক্ত বেশি মনে হচ্ছে। তবে উৎসবেতো নতুন পোশাক কিনতেই হবে। তাই সব দিক সামলেই কেনাকাটা করতে হচ্ছে।’
নওগাঁ পোশাক মালিক সমিতির সভাপতি সাজাহান আলী বলেন, ‘নওগাঁয় বেশ কিছু ভাল মানের তৈরি পোশাক বিক্রির দোকান গড়ে উঠেছে। দোকানগুলোতে ক্রেতাদের রুচি এবং ফ্যাশনের কথা মাথায় রেখে বিক্রেতারা পণ্যের সমাহার রাখছেন। আর থান বা ছিট কাপড়ের জন্য আগে থেকেই নওগাঁর একটা সুনাম রয়েছে। ফলে নওগাঁর লোকজনকে কেনাকাটার জন্য বাইরের শহরে যেতে হয় না। নওগাঁ ছাড়াও বর্তমানে আশপাশের জয়পুরহাট, বগুড়া ও রাজশাহী জেলার লোকজন নওগাঁয় কেনাকাটা করতে আসছে।’