Thu. Mar 13th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

Gulshan-attack-by-24-Augustমোজাফফর হোসেন । । খোলা বাজার২৪, বুধবার, ১৩ জুলাই ২০১৬: একবিংশ শতকে এসে মুসলিম-অমুসলিম উভয় সম্প্রদায়ের জন্যই প্রধান সংকট হয়ে দেখা দিয়েছে ধর্মীয় সন্ত্রাসবাদ। আরো নির্দিষ্ট করে বললে তথাকথিত ইসলামিক জঙ্গি সংগঠন—সে আইএস, তালেবান, বোকো হারাম, আনসারুল্লাহ বাংলা টিম যে নামেই যে দেশে কাজ করুক না কেন। সম্প্রতি বাংলাদেশে কথিত নাস্তিক ব্লগার হত্যার মধ্য দিয়ে সেই আতঙ্ক আরো তীব্র আকার ধারণ করে। একে একে নির্মমভাবে ধর্মীয় সন্ত্রাসবাদের শিকার হন দেশের সংস্কৃতিকর্মী, পুরোহিতসহ ভিন্নধর্ম ও মতাদর্শের অনুসারীরা। বড় ধাক্কাটা আসে গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার মধ্য দিয়ে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এটি একেবারে নতুন ধরনের জঙ্গি হামলা। এর কয়েকদিনই পরেই দেশের সর্ববৃহৎ ঈদগায়ে জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটে।
পরপর এই দুটি হামলায় সামরিক ও বেসামরিক বেশ কয়েকজন নাগরিক প্রাণ হারায়। প্রাণ হারায় কয়েকজন সন্ত্রাসীও। ধরাও পড়ে কয়েকজন। এতে করে এসব সন্ত্রাসীর পরিচয় আমাদের সামনে উঠে আসে। এতদিন কেবল মাদ্রাসার ছেলেরা ইসলামী সশস্ত্র জেহাদি আন্দোলনে জড়িয়ে পড়ছিল বলে আমরা মনে করেছি। এবার দেখা গেল ভিন্ন চিত্র। দেশের সবচেয়ে আধুনিক প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ও ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশুনা করা তরুণ ছেলেরাও এসব আন্দোলনে যুক্ত হচ্ছে। সাথে মাদ্রাসার ছেলেরা তো আছেই। অর্থাৎ হিসেবটা গোলমেলে হয়ে গেল। দেশের এসব তরুণ কেন, কোন মন্ত্রে এমন মৃত্যু মৃত্যু খেলায় মত্ত? নানাজনের সঙ্গে কথা বলে, তাদের লেখা পড়ে দেখছি এর নানাকারণ তারা চিহ্নিত করছেন। আমি তাদের মতামতকে গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করে কয়েকটি সম্ভাব্য কারণ এখানে উপস্থাপন করছি।

সাধারণ শিক্ষা ব্যবস্থার সমস্যা
দেশের সিনিয়র সিটিজেনদের বেশিরভাগই প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থাকে দায়ী করছেন। আমি তাদের সঙ্গে একমত। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা—সে মাদ্রাসা হোক আর প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ই হোক—এখানে কোনো সৃজনশীলতার স্থান নেই। শিক্ষা হয়ে উঠেছে পুরোপুরি বৈষয়িক জায়গা থেকে। এখানে আমরা প্রজ্ঞা বা জ্ঞানের আলো প্রত্যাশা করতে পারি না। বাণিজ্যিক শিক্ষা বা বাণিজ্যমুখী শিক্ষা জাতি গঠনে বা জাতির মনন গঠনে কাজ করবে এটা প্রত্যাশা করা ভুল। কেবল ফলাফল ভিত্তিক শিক্ষার চাপে শিশু তার শৈশব হারিয়ে ভুলপথে পা ফেলছে।

মাদ্রাসা ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ব্যবস্থার সমস্যা
জঙ্গি বলতে এখন আর কেবল মাদ্রাসা পড়ুয়া ছাত্র নয়। ইংরেজি মাধ্যম ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করা মেধাবী তরুণরাও জঙ্গি খাতায় নাম লেখাচ্ছে। এই দুই মাধ্যমে পড়াশুনা করা ছাত্রদের সঙ্গে মূল ধারার ছাত্রদের পার্থক্য থাকে। মাদ্রাসার মধ্যে কওমি মাদ্রাসার ওপর সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। তারা সরকারের কাছ থেকে অনুদান পায় না। তারা কী পড়ায় না-পড়ায়, সেটাও সরকার দেখে না। ইংরেজি মাধ্যমের ব্যাপারেও সরকারের বিশেষ ভূমিকা নেই। মাদ্রাসা এবং প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় বা ইংরেজি মিডিয়াম স্কুলে যা পড়ানো হয়, তার সঙ্গে এ দেশের মাটির সংযোগ নেই। তারা দেশিয় ঐতিহ্য-ইতিহাস বোধের ক্ষেত্রে মোটামুটি নির্বোধ। মাদ্রাসাতে বলা হয় এদেশের সংস্কৃতি ‘হিন্দুয়ানী’ বা ‘বিদাতি’। ইংরেজি মাধ্যমে বলা হয়, বাংলা সংস্কৃতি ‘খ্যাত’ টাইপের। পশ্চিমা সংস্কৃতিই আধুনিক সংস্কৃতি। ফলে দেশিয় শিল্প-সংস্কৃতি বোধ হারিয়ে কনফিউজড্ এই জেনারেশনকে সহজেই বিভ্রান্ত করা যায়। পাশাপাশি আরও একটা কারণ হল : মাদ্রাসার ছাত্রদের ধর্মাসক্তিকে কাজে লাগানো যায় সহজেই; অন্যদিকে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় বা ইংরেজি মিডিয়াম স্কুলে ছাত্রদের বেসিক ধর্মজ্ঞান দেয়া হয় না বা ধর্মবিষয়ক বই পড়ানো হয় না বলে তাদেরও সহজেই বিভ্রান্ত করা যায়। ফলে এই দুই ধরনের প্রতিষ্ঠানের ছাত্রদের ভুল পথে টেনে আনা সহজ হয়।

মূল্যবোধে ঘাটতি ও পরিবারে বিচ্ছিন্নতা
শিক্ষা সব রোগের মহৌষধ না। মূল্যবোধের চর্চাটাও এক্ষেত্রে প্রয়োজন। নীতি-নৈতিকতা বা মানবিক মূল্যবোধের বেশির ভাগ তৈরি হয় বাড়ি থেকে। আমাদের দেশের পরিবারগুলো এখন খুবই সংকটের মধ্যে আছে। বাবা হয়ত ঢাকায় চাকরি করে বা রিকশা চালায়, বিদেশে কাজ করে, মাও হয়ত কর্মজীবী, ছেলে স্কুলে পড়ছে, নিজের মতো করে বেড়ে উঠছে। গ্রামাঞ্চলে শিক্ষিত পরিবারগুলো সন্তানদের ছোট থাকতেই শহরের স্কুলে পড়ার জন্যে পাঠিয়ে দিচ্ছে। অন্যদিকে শহরে ধনীঘরের সন্তানরা কোচিং-গাইডবুক মুখস্থ নিয়েই ব্যস্ত। ফলে শিশুর মানবিক বোধ তৈরিতে পরিবারের কোনো ভূমিকা থাকছে না। শিশু সমাজের কাছ থেকে মানবিক আচরণ না পেলে, তারা সমাজের প্রতি মানবিক হবে না।
আর একটা বিষয় হলো, সুবচন নির্বাসনে গেছে। এখনকার শিশুদের ‘সকালে উঠিয়া আমি মনে মনে বলি, সারাদিন আমি যেন ভালো হয়ে চলি’- এইসব সুবচন পড়ানো হচ্ছে না। পড়ানো হচ্ছে পাশ্চাত্যের ননসেন্স রাইম।

রোল মডেলের অভাব
তরুণদের বিপথগামী হওয়ার আর একটা কারণ হলো, ছাত্রদের সামনে রোল মডেল না থাকা। আমাদের সমাজে রোল মডেল হওয়ার মতো অনেক মানুষ এখনো বেঁচে আছেন। কিন্তু নানাকারণে আমরা তাদের তুলে ধরতে পারছি না। উল্টো তাদের বিতর্কিত করা হচ্ছে রাজনৈতিক কিংবা সামাজিকভাবে।

আদর্শিক আন্দোলন না থাকা
স্বভাবগতভাবে তরুণরা সবসময় একটা আদর্শিক আন্দোলনে লিপ্ত থাকতে চায়। আমরা দেখেছি ’৫২ এবং ’৭১-এ এদেশের তরুণ সমাজ একটা আদর্শিক প্রেরণায় উদ্দীপ্ত হয়ে রাজনীতির মাঠে বা আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েছে। বর্তমানে যে ছাত্র রাজনীতি তার সঙ্গে সমাজ বদলের কোনো আদর্শ জড়িয়ে নেই। এই রাজনীতি জবর-দখলের। ফলে ইসলামী জঙ্গি হোতারা তরুণদের সামনে একটা একটা আদর্শকে খাড়া করে (যদিও ভুল আদর্শ) তাদের আদর্শিক আন্দোলনকর্মী হিসেবে গড়ে তুলছে। একারণে আমাদের ছাত্র রাজনীতির বেহাল দশা কোনো কারণেই কম দায়ী নয়।

রাজনৈতিক ব্লেম গেইম
আমরা দেখি একটি ঘটনা ঘটেছে, সাথে সাথে যে দলই ক্ষমতায় থাকুক তারা একটা ব্লেম গেইমের মধ্যে চলে যায়। এই দোষারোপের সংস্কৃতি আমাদের ক্ষতি করছে। আমরা কেউ দায়িত্ব নিতে চাচ্ছি না। রাষ্ট্রীয় দায়বদ্ধতার জায়গাটা নড়বড়ে হয়ে গেছে। ফলে সেটি তরুণদের একটা অংশকে আক্রান্ত করছে। তারা এই সিস্টেম বদলের জন্য ভুল পথ বেছে নিচ্ছে। এছাড়াও এই ব্লেম গেমের ফলে সুশাসন সমাজে প্রতিষ্ঠা হচ্ছে না বলে অপরাধী সহজে ছাড় পেয়ে যাচ্ছে দেখে তারাও সুযোগটা নিতে চাচ্ছে।

সুশাসনের অভাব
আমাদের সমাজে আজ সবচেয়ে বেশি প্রশ্নবিদ্ধ হলো, সুশাসন বা গুড গভর্নেন্স। সমাজে যে কোনো প্রকারের অপরাধ প্রবণতা বেড়ে গেলে মোটা দাগে আমরা বলতে পারি সুশাসন না থাকার কারণে সেটি হচ্ছে। সুশাসন থাকলে অপরাধী অপরাধ করার আগে কয়েকবার ভাববে। একজন অপরাধীর পক্ষে ধারাবাহিকভাবে অপরাধ করে যাওয়া সম্ভব হবে না। অপরাধীর পরিণতি দেখে নতুন করে কেউ অপরাধীর খাতায় নাম লেখাতে চাইবে না। শুরুতে ব্লগার হত্যার সময় যদি খুনিদের ধরা হত তাহলে সেই খুনিরা আর পুরোহিতের গলায় চাকু চালাতে পারত না। পারত না গুলশান হামলায় অংশ নিতে। তাই এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্র সুশাসনের বিষয়টি কোনোভাবেই এড়িয়ে যেতে পারে না। রাষ্ট্র যদি মতলববাজি হয়ে ক্ষেত্রবিশেষ সুশাসনের বিষয়টি এড়িয়ে যায়, তাহলে তার প্রভাব বৃহৎপরিসরে ঘটবে।

ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু প্রধানমন্ত্রী ভাবা ও জনগণের দায় এড়িয়ে চলা
আমরা দেশের সাধারণ নাগরিক দেশের সব ক্ষমতার উৎস বলে প্রধানমন্ত্রীকে মনে করি। ফলে দেশে যত খারাপ, অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে তার জন্যে প্রধানমন্ত্রীকে দায়ী করি। এতে আমরা নিজেদের দায়বদ্ধতা থেকে মুক্তিও পায়। দেশের যেহেতু নব্বই ভাগ মানুষ মুসলিম। কাজেই দেশে ইসলামী জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠলে এই বৃহৎ জনগোষ্ঠী তাদের দায় এড়াতে পারে না। এসব ঘর থেকেই ছেলেরা সন্ত্রাসের খাতায় নাম লেখাচ্ছে। তাই সব দায় রাষ্ট্রব্যবস্থার ওপর না চাপিয়ে জনগণকেও নিজ নিজ দায়িত্ব নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কথা বলতে হবে। এটা যে প্রকৃত ইসলাম নয় সেটা আরো বেশি প্রচার করতে হবে। একটা সামাজিক আন্দোলন জনগণকেই গড়ে তুলতে হবে।

মুসলমান এবং অমুসলমান উভয়ের ভেতর ইসলাম সম্পর্কে সঠিক ধারণার অভাব
বিশ্বজুড়েই ইসলাম সম্পর্কে ভুল ধারণা তৈরি হচ্ছে এসব সন্ত্রাসী আক্রমণের কারণে। অমুসলিমরা মুসলমান মানেই সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত করছে বা সন্দেহের চোখে দেখছে। অমুসলিম তো বটেই মুসলিম দেশেও ধর্মীয় লেবাসধারী মানুষদের নিরাপত্তাকর্মীরা বেশি করে পর্যবেক্ষণ করছেন। এর ফলে মুসলিম সমাজে একটা দ্রোহ তৈরি হচ্ছে পশ্চিমের বিরুদ্ধে। সাধারণ মুসলমানও কখনো কখনো গলা উঁচিয়ে বলছে, মুসলমানদের এই অপমান সহ্য করা যায় না। এই প্রবণতা থেকেও কেউ কেউ সন্ত্রাসী খাতায় নাম লেখাচ্ছে। যারা সন্ত্রাসী খাতায় নাম লেখাচ্ছে তাদের ভেতরও ইসলাম সম্পর্কে সঠিক ধারণা তৈরি হয়নি। দেখা গেছে, বেশিরভাগ আইএস কর্মী নিজে পবিত্র আল-কুরআন পড়েনি। সহী হাদিস সম্পর্কে তাদের জানাশুনা নেই বললেই চলে। ফলে তাদের সশস্ত্র জেহাদি ইসলামে টেনে আনা সহজ হয়েছে। যে ইসলাম আত্মহত্যাকে অমার্জনীয় পাপ বলে গণ্য করে সেই ইসলামের নামেই আত্মঘাতী হামলায় শরিক হয়ে জান্নাতের কথা ভাবা হচ্ছে। মুসলিম দেশগুলোর অধিকাংশ মাদ্রাসাতেও ধর্মীয় শিক্ষাটা এজেন্ডাভিত্তিক হয়ে পড়েছে, প্রকৃত ধর্মশিক্ষা খোদ ধর্মশিক্ষার প্রতিষ্ঠানেও মিলছে না।

ইন্টারফেইথ ডায়লগ ও মানবতাবাদের অভাব
বিশ্বে মুসলিম এবং অমুসলিম উভয়ের ভেতর ইসলাম সম্পর্কে সঠিক ধারণার তৈরি হতে পারে ইন্টারফেইথ ডায়লগের দ্বারা। বিশ্বে কয়েকটি দেশে এর ব্যবস্থা তৈরি হলেও বাংলাদেশে ইন্টারফেইথ ডায়লগের অবস্থান এখনো তৈরি হয়নি। ইন্টারফেইথ ডায়লগ সম্পর্কে সুফিবাদি তুরস্কের মুসলিম দার্শনিক ফায়াতুল্লা গুলেন বলেছেন, ‘dialogue is not a superfluous endeavor, but an imperative….that the dialogue is among the duties of Muslims to make our world a more peaceful and safer place.’ এই ইন্টারফেইথ ডায়লগের ভেতর দিয়ে ইসলাম ধর্মের মূলভিত্তি যে মানবতাবাদ, সেটি প্রতিষ্ঠিত করা যাবে। ইসলামে একজনকে হত্যা করা মানেই সমগ্র মানবতাকে হত্যা করা। এক্ষেত্রেও আমি গুলেনের একটি উক্তি ব্যবহার করছি : ‘In the Islamic view: A human being, be they man or woman, young or old, white or black, is respected, protected and inviolated. Their belongings can not be taken away nor their chastity be touched. They cannot be driven away from their native land, and their independence cannot be denied. they cannot be prevented from living in accordance with their own principles, either.’
অর্থাৎ ইসলামকে একটি মহলের সশস্ত্র জেহাদি আন্দোলনের জায়গা থেকে সরাতে হলে এটিকে মানবতাবাদের ওপর প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। ইসলামে সহিষ্ণুতার জায়গাটা আরো স্পষ্ট করে চিহ্নিত করার প্রয়োজন আছে।

মাদক ও বৈষম্যমূলক অর্থনীতি
মূল্যবোধের অবক্ষয় সব সমাজেই কমবেশি ঘটছে। কারণগুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, একটা হচ্ছে মনস্তাত্ত্বিক কারণ। এর অন্যতম একটা কারণ হলো, মাদক। পূর্বে মাদকের উপদ্রব এত বেশি ছিল না। আর একটা কারণ হলো, বৈষম্যমূলক অর্থনীতি। একদিকে একটা শ্রেণি উন্নতি করছে, অন্যদিকে একটা শ্রেণি পিছিয়ে পড়ছে। বৈষম্য তো হচ্ছে। যতই বলা হোক আমরা মধ্যআয়ের দেশ হবো, সুষম সামাজিক উন্নয়ন কিন্তু হচ্ছে না।

মানসিক বিকৃতি
অপরাধীদের পেছনের ইতিহাস আমরা জানি না। অপরাধী নিজে হয়ত ছোটকালে নির্যাতনের শিকার হয়েছে। মনস্তাত্ত্বিকরা বলে থাকেন : নির্যাতিতরা সুযোগ পেলেই আর একজনকে নির্যাতন করে। বিকৃত মানসিকতাটা এভাবেই গড়ে ওঠে। এটা একটা কারণ হতে পারে।

ভায়োলেন্স আসক্তি
বাচ্চারা প্রতিদিন সংবাদের কাগজে কিংবা টেলিভিশনে ভায়োলেন্সের খবর পড়ছে। তথ্য-প্রযুক্তির মাধ্যমেও বাচ্চারা ভায়োলেন্সের মধ্যে পড়ছে। আইপেড-মোবাইলে খেলছে অ্যাকশন গেমস। যত মানুষ মারা যাবে তত পয়েন্টস। টেলিভিশনে বিদেশী অ্যাকশন মুভিগুলো দেখছে। এগুলো দেখে বাচ্চাদের মনে হতে পারে, পৃথিবীজুড়েই বোধহয় মারামারি। কেউ কেউ আবার অতি অ্যাডভেঞ্চার প্রিয় হয়ে উঠে এসব সন্ত্রাসী হামলায় নাম লেখাতে চাইতে পারে। গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলায় জড়িত তরুণদের ভেতর যে অ্যাডভেঞ্চার প্রিয়তা কাজ করেনি সেটা বলা যাবে না।

তথ্যপ্রযুক্তির সহজলভ্যতা ও আন্তর্জাতিক প্রভাব
বর্তমানে বাংলাদেশে যে জঙ্গী তৎপরতা সেটি কেবল মাত্র অভ্যন্তরীণ বিষয় নয়। এর সঙ্গে আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক জড়িত। বিশ্বের প্রায় প্রতিটা মুসলিম দেশ এখন এই নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত। এটি সম্ভব হচ্ছে তথ্য-প্রযুক্তি অবাদ ব্যবহারের ফলে। তথ্য-প্রযুক্তিগত সুযোগ সুবিধা ব্যবহার করে সন্ত্রাসীরা আন্তর্জাতিকভাবে প্রসারিত হচ্ছে, শক্তি সঞ্চয় করছে। তরুণদের তথ্য-প্রযুক্তিগত জ্ঞানকে তারা কাজে লাগাতে পারছে।

মোজাফফর হোসেন
লেখক।