Wed. Mar 12th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

40খোলা বাজার২৪,বৃহস্পতিবার, ২১ জুলাই ২০১৬: কলকাতার শোভাবাজার মেট্রো স্টেশন। বেশ গতি নিয়েই শোভাবাজারে ঢুকছিল মেট্রোরেল। চারটি কামরা প্ল্যাটফর্মে ঢুকেও গেছে। তখনই চালক দেখেন, প্ল্যাটফর্মে দাঁড়ানো যাত্রীদের মধ্যে থেকে এক নারী লাইনে ঝাঁপ দিলেন। সজোরে ইমার্জেন্সি ব্রেকের হাতল টেনে ট্রেন দাঁড় করিয়ে দেন তিনি।
কয়েক মিনিটের মধ্যেই কন্ট্রোলে এবং স্টেশনমাস্টারকে ফোনে ঘটনার কথা জানিয়ে চালক নিজেই নেমে পড়েন প্ল্যাটফর্মে। উদ্ধারকারী দলকে জানান, ট্রেনটি আগুপিছু করা যাবে না। কারণ, তখনও বেঁচে আছেন ওই নারী। এর পরে তৃতীয় লাইনে বিদ্যুৎ বন্ধ করে ওই নারীকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়। এই ঘটনা বুধবারের।

এর আগের দিন মঙ্গলবারও সন্ধ্যাতেও রবীন্দ্রসরোবর স্টেশনে লাইনে ঝাঁপ দিয়েছিলেন এক ব্যক্তি। চালকের তৎপরতায় তাকেও জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।
কলকাতার মেট্রোলাইনে ঝাঁপ দেওয়ার এই সমস্যাটি অনেক দিনের। মানুষের সব কষ্ট-যন্ত্রণার নিষ্কৃতি যেন এই রেলের তলায়। যিনি ঝাঁপ দেন, তিনি কিছুক্ষণের জন্য পুরো রেল ব্যবস্থাপনাকেই সমস্যার মধ্যে ফেলেন। সবচেয়ে বেশি সমস্যায় ফেলেন জরুরি গন্তব্যে ফেরা যাত্রীদের। কারণ, মেট্রোর লাইনে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যার এই চেষ্টা দিনের ব্যস্ত সময়েই বেশি ঘটতে দেখা যায়। তার জেরে পরিষেবায় চরম বিঘœতার সৃষ্টি হয় এবং কয়েক শ অফিস যাত্রীকে চূড়ান্ত হয়রানিতে পড়তে হয়।
বুধবারের ঘটনায় প্ল্যাটফর্মে সিসিটিভির নজরদারি আরো কড়া করতে নির্দেশ দিয়েছেন জেনারেল ম্যানেজার। পাশাপাশি, প্ল্যাটফর্মে আরপিএফকেও আরো সতর্ক থাকতে বলা হয়।
নিত্যদিন এভাবে মেট্রোয় ঝাঁপ দেওয়ার ঘটনায় যাত্রীরাও মহাবিরক্ত। বিরক্ত মেট্রো কর্তা থেকে চালকেরাও। এদিন শোভাবাজারে মেট্রো কর্তৃপক্ষ বারবার ঘোষণা করার পরেও প্রথমে কোনো যাত্রীই ট্রেন থেকে নামতে চাননি। কারণ, তারা রোজ অফিস, আদালত, স্কুল-কলেজের ব্যস্ত সময় নষ্ট করতে চান না। শেষমেশ অনেক অনুরোধ-উপরোধের পরে তারা ট্রেনটি খালি করে দেন।
লাইনে ঝাঁপ ঠেকাতে এর আগেও প্ল্যাটফর্মের টিভিতে বিজ্ঞাপন, সিনেমা, নাটক, মাইকে ঘোষণা— বিভিন্ন পন্থা নেওয়া হয়েছে। কিন্তু তা বন্ধ হয়নি। পাশাপাশি, এই প্রবণতা আটকাতে প্রতি স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে স্বয়ংক্রিয় গেট বসানোরও পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। নানা কারণে তা-ও বাস্তবায়িত হয়নি।
দিল্লি মেট্রোয় ঝাঁপ দেওয়ার ঘটনা কার্যত নেই। কারণ, সেখানে গোটা প্ল্যাটফর্মের ধার স্টিলের গার্ডরেল দিয়ে আটকানো। যেখানে যেখানে কাটা আছে, ট্রেনের দরজাগুলো তার সামনেই পড়ে। ফলে নজরদারি এড়িয়ে ওই ফাঁকা জায়গা দিয়ে কেউ গলতে পারেন না। কলকাতা মেট্রোতেও সেই পদ্ধতি নেওয়া যায় কি না, তা নিয়ে চিন্তা-ভাবনা চলছে বলে জানিয়েছে মেট্রো কর্তৃপক্ষ।
কলকাতা মেট্রো সূত্রের খবর, এ বছর এখন পর্যন্ত মোট ১২ জন মেট্রোর লাইনে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করার চেষ্টা করেছেন। তার মধ্যে মৃত্যু হয়েছে চারজনের। বাঁচানো হয়েছে আটজনকে।