Wed. Apr 30th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

16খোলা বাজার২৪, রবিবার, ৭ আগস্ট ২০১৬: সাম্প্রতিক সময়ে দেশে সংঘটিত জঙ্গী ও সন্ত্রাসী হামলার পর নিরাপত্তা নিয়ে জনমনে যে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে তার ছাপ পড়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেও। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষককে হত্যা, গুলসান ও শোলাকিয়ায় জঙ্গীদের হামলাসহ বিভিন্ন সময়ে জঙ্গী ও সন্ত্রাসী হামলার ঘটনার পর দেশের অন্যান্য স্থানের মতো জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেরও নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। ক্যাম্পাসে প্রবেশের প্রধান প্রবেশদ্বারগুলোতে এবং বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণস্থানে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশের প্রধান গেট ও অন্যান্য ফটকগুলো নিরাপত্তা কর্মীদের কঠোর নজরদারিতে রয়েছে। বহিরাগতদের ক্যাম্পাসে প্রবেশের ক্ষেত্রে কঠোর নজরদারি করা হচ্ছে। পাশাপাশি তাদের ব্যাগ চেক করা হচ্ছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান গেট এবং জয় বাংলা গেট বাদে অন্য সব গেটগুলো বন্ধ রাখার সিদ্দান্ত নেওয়া হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান গেট এবং জয়বাংলা গেটে নিরাপত্তারক্ষীরা নিয়মিত টহল দিচ্ছে। বহিরাগতদেও প্রবেশে রয়েছে নিরাপত্তারক্ষীদের সর্তক দৃষ্টি। বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশের প্রধান গেট দিয়ে যানবাহন চলাচলও সীমিত করা হয়েছে। কোথাও কোন অপরিচিত সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে দেখলে ব্যাগ তল্লাশিসহ জানতে চাওয়া হচ্ছে পরিচয়। ক্যাম্পাসের অন্যতম খাবার জায়গা হিসেবে পরিচিত বটতলা। এখানে প্রতিদিন প্রায় কয়েকহাজার শিক্ষার্থী খাওয়া-দাওয়া করে। সেখানেও নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
আবাসিক হলগুলোতে বাড়ানো হয়েছে কঠোর নজরদারি। আবাসিক হলগুলোর সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে হল প্রভোস্টদের কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আবু বকর সিদ্দিক স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে সকল ছাত্র-ছাত্রীদের পরিচয়পত্র সাথে রাখতে বলা হয়েছে। যাদের পরিচয়পত্র নাই তাদেরকে অবিলম্বে স্ব-স্ব হল অফিস থেকে পরিচয়পত্র সংগ্রহ করতে বলা হয়েছে।
তবে ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিভিন্ন পদক্ষেপ নিলেও সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এই পদক্ষেপ পর্যাপ্ত নয় বলে মনে করছেন অনেকে। নিরাপত্তারক্ষীদের সংখ্যা বাড়ানো, তাদের প্রশিক্ষণ এবং আধুনিকায়নের পাশাপাশি বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন তারা।
এ বিষয়ে আইন ও বিচার বিভাগের এক শিক্ষার্থী হাসনাত বলেন,‘ সারাদেশে যেহেতু জঙ্গী ও সন্ত্রাসী হামলা হচ্ছে। সেদিক থেকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের বাহিরে নয়। জাবি হলো প্রগতিশীল ও মুক্তচিন্তা বিকাশের একটি উন্মক্ত জায়গা। আর জঙ্গীদের মূল লক্ষ্য হলো সেসব ব্যক্তিদের শেষ করে দেওয়া। সুতারাং এখানেও জঙ্গী হামলার আশংঙ্কাকে বাদ দেওয়া যায় না। তাই প্রশাসনকে ক্যাম্পাসের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ব্যপারে অবিলম্বে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে মনে করছি।
এদিকে খবর নিয়ে জানা গেছে প্রায় ৭০০ একরের এই ক্যাম্পাসের নিরাপত্তার জন্য যেখানে ৩০০ জন নিরাপত্তারক্ষী প্রয়োজন সেখানে ক্যাম্পাসে মাত্র ৯৪ জন নিরাপত্তারক্ষী রয়েছেন বলে নিরাপত্তা অফিস সূত্রে জানা গেছে। এদের মধ্যে ১০ জন প্যারালাইজডসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ রয়েছেন। ২০-২৫ জন গার্ড বয়স্ক হওয়ায় তারা যথাযথ দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না বলে জানা গেছে। ফলে ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হিমশিম খাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। নিরাপত্তা রক্ষী কম থাকায় দীর্ঘ সময় ধরে দায়িত্বপালন করতে হচ্ছে নিরাপত্তাকর্মীদের। এতে মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ছেন তারা। অপর্যাপ্ত নিরাপত্তাকর্মীর পাশাপাশি তাদের নেই পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা। ফলে নিরাপত্তারক্ষীদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা জেফরুল হাসান চৌধুরীর সাথে কথা বললে তিনি দৈনিক বর্তমানকে জানান, ‘গেটে দায়িতরত্ব নিরাপত্তাকর্মীদের হাতে লাঠি ছাড়া অন্য কোন অস্ত্র না থাকায়, তাদের কিছুই করার থাকে না। দেশে একের পর এক হামলার ঘটনা ঘটছে। ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে নিরাপত্তাকর্মীদের নজরদারি বাড়ানো ও ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে পুলিশের সংখ্যা বাড়ানো উচিত বলে আমি মনে করি’।
তবে ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা সবচেয়ে ঝুকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে পেছনের অংশের অবৈধ পকেট রাস্তাগুলোর কারণো। এসব পথে নিরাপত্তা চৌকি তো দূরের কথা, সীমানা প্রাচীর অসম্পূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। ফলে এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে সহজেই ক্যাম্পাসে ঢুকে মাদক ছড়িয়ে দিচ্ছে বহিরাগতরা। পাশাপাশি বাড়ছে চুরি ছিনতাই এর ঘটনাও।
এদিকে এখন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ-পশ্চিম পাশ্ববর্তী, রেডিও কলোনি ও গেরুয়া বাজার এলাকায় প্রাচীরের নির্মাণ কাজ শেষ হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তার স্বার্থ বিবেচনায় রেখে সিন্ডিকেট বৈঠকে পশ্চিম পাশ্ববর্তী গেরুয়া বাজার ও বিশমাইল এলাকায় দুটি ফটক রাখার অনুমোদন দেয়। কিন্তুু কয়েকজন শিক্ষক-কর্মকর্তা ও তাদেও আতœীয়স্বজনদের ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পশ্চিম পাশে প্রায় ৭ টি পকেট গেট উন্মক্ত রাখা হয়েছে। ফলে ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা ব্যবস্থা হুমকীর মুখে পড়েছে।
নিরাপত্তা প্রসঙ্গ বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্নালিজম এন্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শেখ আদনান ফাহাদ বলেন, বর্তমান দেশে চলমান জঙ্গী ও সন্ত্রাসী হামলা অনবরত চলছে। এ অবস্থায় আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জোরালো ভূমিকা পালন করছে। এরকম নতুন পরিস্থিতি মোকাবেলায় ক্যাম্পাসের সার্বিক নিরাপত্তা প্রদানের জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে আধুনিকায়ণ করা যায় কিনা সে ব্যাপারে প্রশাসনকে নতুন করে ভাবতে হবে। ক্যাম্পাসের চারপাশে যে অবৈধ প্রবেশপথ আছে তা বন্ধ করে দিতে হবে। নিরাপত্তার দায়িত্বে যারা আছে তাদের আধুনিক প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। নিরাপত্তারক্ষীদের কাছে “ওয়াকিটকির” ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এর ফলে ক্যাম্পাসে কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটার আশংঙ্কা থাকলে ওয়াকিটকির মাধ্যমে তাড়াতাড়ি প্রশাসনকে জানাতে পারবে। এছাড়া প্রশাসনিক ভবনগুলোতে এবং বিভিন্ন বিভাগ ও একাডেমিক ভবনে সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো ইত্যাদি ব্যপারে তিনি তার পরামর্শ তুলে ধরেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক তপন কুমার সাহা বলেন, পুলিশ কৃর্তপক্ষ কেন্দ্রীয় নির্দেশে ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। প্রান্তিক গেইটে পুলিশ সার্বক্ষণিক অবস্থান করছে। এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশের মূল গেইট ( ডেইরি গেট) ও ক্যাম্পাসজুড়ে নিরাপত্তারক্ষীদের কঠোর অবস্থানে থাকার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মো. আবুল হোসেন বলেন দৈনিক বর্তমানকে বলেন, পুরো প্রাচীরের নিমার্ণ কাজ প্রায় শেষের দিকে। কাজ শেষ হল্ইে মূল প্রবেশ গেইট রেখে বাকি ফটকগুলো (পকেটগেট) বন্ধ করে ক্যাম্পাসের সার্বিক নিরাপত্তার দিকটি বিবেচনায় আনা হবে।