Wed. Apr 30th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খোলা বাজার২৪, শনিবার, ২০ আগস্ট ২০১৬: 49d87be6d1060982c174f9b21b55d737আলী সাহেব এক অদ্ভুত প্রকৃতির লোক। তিনি কোনো কিছুতেই মোহিত (Impressed) হন না। আবার কোনো কিছুতে হতাশ (Dissapointed) হন না। সব কিছুকে তিনি স্বাভাবিকভাবে নেন। মনে হয় পৃথিবীতে আশ্চর্যান্বিত হওয়ার মতো, উত্ফুল্ল বা অভিভূত হওয়ার মতো কিছু নেই। যা কিছু ঘটে সবই স্বাভাবিক। নিজের জীবন, পৃথিবীর সব মানুষ ও ঘটনাকে তিনি গাণিতিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখেন। মানুষরা সব এক্স, ওয়াই, জেড, আর  অন্যান্য ঘটনা ও বিষয়াবলি আলফা, বিটা, গামা, থিটা। যেমন—একজন লোক তাঁর কৃতিত্বের জন্য প্রথম পুরস্কার পেয়েছেন। আলী সাহেবের বক্তব্য হবে মি. ী-এর পারফরম্যান্স অন্যসব এস, টি, ওয়াই, জেডের তুলনায় ভালো। এ জন্য তাকে স্বীকৃতিসূচক পুরস্কার দেওয়া যেতে পারে, না দেওয়া গেলেও কোনো অসুবিধা নেই।

আলী সাহেব মনে করেন, প্রাকৃতিক নিয়মে মানুষের জন্ম হয়, আবার প্রাকৃতিক নিয়মে তার বিনাশ ঘটে। মধ্যে কিছু সময় সে বেঁচে থাকে। অন্যান্য জীবের মতোই প্রথম কয় বছর আকারে বড় হতে থাকে, তারপর বড় হওয়া থেমে যায়, একসময় মারা যায়। আলী সাহেবের মতে, ‘জীবন মানে জন্ম থেকে সময় গড়ানো/ধীরে ধীরে বড় হয়ে ওঠা/রূপ, রস, বর্ণ, গন্ধ, স্বাদ উপভোগ করা/নয়তোবা চির জ্বালায় অঙ্গার হওয়া/অবশেষে হারিয়ে যাওয়া।’ পরকাল সম্পর্কে আলী সাহেব নির্লিপ্ত। তিনি মনে করেন, যে যার ধর্ম বিশ্বাস অনুযায়ী পরকাল সম্পর্কে ধারণা করে নেয়। আপাতত বেঁচে থাকা দরকার। তাই তিনি বেঁচে আছেন। একসময় মরে যাবেন। তাঁর নিকটজনের একই পরিণতি হবে। এ জন্য তার কোনো দুুঃখ-আক্ষেপ নেই।

তার মতে মানুষ পাড়া-মহল্লায় বাস করে। একের সঙ্গে অন্যে কথাবার্তা বলে, মেলামেশা করে আনন্দ পায়। একটা বড় জায়গা নিয়ে অনেক মানুষ যখন তাদের নিজস্ব রীতিনীতি নিয়ে চলাফেরা করতে চায়, তখন ওই বড় জায়গার একটি চৌহদ্দি বা সীমারেখা টেনে তাকে দেশ বলে ঘোষণা করে। সে জায়গায় বাইরের লোককে হস্তক্ষেপ করতে দেওয়া হয় না| ‘A country is a comity of individuals defined over a geographical region’. দেশপ্রেম আসলে পরিচিতজনের জন্য ভালোবাসা, নিজের দেখা বাড়িঘর, গাছপালা, নদীনালা, পথঘাটের প্রতি আকর্ষণ। দূরে গেলে এটি হয় নিজের চেনা পারিপার্শ্বিকতার প্রতি স্মৃতি জাগানিয়া টান। বিমূর্ত দেশপ্রেম বলে কিছু নেই, মূর্ত অভিজ্ঞতার আবছা ধারণাই আসলে বিমূর্ত দেশপ্রেম।

আলী সাহেবের এই এক্স, ওয়াই, জেড মার্কা কথাবার্তা মেনে নেওয়া যায় না। আবার একে সহজে উড়িয়ে দেওয়া যায় না, বলা যায় উড়িয়ে দিতে ইচ্ছা বা সাহস হয় না। আমাদের আড্ডায় তাঁর উপস্থিতি অতীব পছন্দনীয় না হলেও তাঁর অনুপস্থিতি আমরা বুঝতে পারি। তখন আড্ডাটা একটু পানসে হয়ে যায়। তাঁর উল্টাপাল্টা কথায় আড্ডাটা জমে ওঠে বলে মনে হয়। আলী সাহেব এসেই বলবেন, ‘যতক্ষণ শ্বাস, ততক্ষণ আশ। আমরা নিজেদের পছন্দমতো আশা করি। কিন্তু তা তো সব সময় হওয়ার কথা নয়। ক্ষমতাবানদের পছন্দমতো সব হবে। আমাদের মেনে নিতে হবে। এতে দুঃখ পাওয়ার বা হতবাক হওয়ার কিছু নেই।’

খবরের কাগজের হেডিংগুলোকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করার ক্ষেত্রে আলী সাহেবের জুড়ি পাওয়া মুশকিল। প্রায় ৯০ শতাংশ খবরের হেডিং দেখেই তিনি বলবেন, এটা তো স্বাভাবিক ব্যাপার, এতে নতুনত্ব কী আছে? এ আবার খবর হলো কিভাবে? বন্যায় বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে। আলী সাহেব বলবেন, বন্যায় কিছু কিছু বাঁধ ভেঙে যাবে, এটাই তো স্বাভাবিক। আজ এক্স বাঁধ ভেঙেছে, কাল ওয়াই বাঁধ ভাঙবে, এক্স-ওয়াই না ভাঙলে কোনো একসময় জেড বাঁধ ভাঙবে। এতে আশ্চর্য হওয়ার কী আছে! বন্যায় তো এমনটি ঘটবেই। বন্যার পানি ঘরের জানালা পর্যন্ত উঠেছে শুনেও আলী সাহেবের কোনো বিকার নেই। বললেন, ঘরের জানালা পর্যন্ত পানি উঠেছে বলেই একে বন্যা বলা হয়। বন্যায় এমনটি ঘটেই থাকে। এখন দরকার নৌকা ও পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট। এ দুটি পেলেই মানুষ বেঁচে যাবে। চিন্তার কোনো কারণ নেই। এ খবরকে লাল কালিতে বোমা হেডিং বানানোর কোনো প্রয়োজন ছিল না। পত্রিকাওয়ালাদের সব বাড়াবাড়ি। আদিখ্যেতা। আমাদের দেশের লোক বন্যা নিয়ে বেঁচেছে, এবারও ভালোভাবেই বাঁচবে। কোনো অসুবিধা হবে না। বাঁচার জন্য কিছু ত্রাণসামগ্রী ও ছোট ছোট নৌকা পাঠিয়ে দিতে পারলেই চলবে। বর্ষা আসার সঙ্গে সঙ্গেই প্রথমে সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও সংস্থাগুলোকে পর্যাপ্তসংখ্যক নৌকা বানিয়ে রাখতে হবে। আতঙ্কজনক খবর না ছাপিয়ে পত্রিকাগুলো এ পরামর্শ দিলে জনগণ বেশি উপকৃত হবে। তিনি জোরেশোরে বলেন, বন্যাকে বা পানিকে কখনো খারাপ বলবেন না। বন্যা আশীর্বাদ হিসেবে আসে, বন্যার পানিতে জমি উর্বর হয়, ফসল ভালো হয়, মাছের উৎপাদন বাড়ে। বন্যার বিপরীতে খরা ভয়ংকর। আমাদের প্রার্থনা থাকবে খরা যাতে না হয়। খরা হলে দেশ জ্বলেপুড়ে ছারখার হয়ে যায়।

মানুষের কৃতিত্বকে আলী সাহেব দেখেন এক্স, ওয়াই, জেড কর্তৃক সম্পাদিত কাজ হিসেবে। সব কিছুই ‘জিনের’ খেলা অথবা দ্রব্যগুণ। তাঁর মতে, একজন মানুষের শরীরে বা মগজে কোষের পরিমাণ, আকৃতি=প্রকৃতি, হরমোন ও নিঃসরিত রসের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া নির্ধারণ করে ওই ব্যক্তির শক্তি-সামর্থ্য, এমনকি উপলব্ধি অনুভূতি। সক্রেটিস, প্লেটো, এরিস্টটল, নিউটন, আইনস্টাইনরা জন্মগতভাবেই মেধাসম্পন্ন। শেকসপিয়ার, রবীন্দ্রনাথ, নজরুল অসাধারণ প্রতিভার অধিকারী। তাঁদের ব্র্রেনের গড়ন অন্য রকম, সাধারণ মানুষের চেয়ে আলাদা। মস্তিষ্কের গড়ন ও কোষের কারণে তাঁরা এত অসাধারণভাবে লিখতে পারেন। অভ্যাস করে, অনুশীলন করে তাঁদের সমান কাজ করা যায় না। কাছাকাছিও যাওয়া যায় না। জিন ও দ্রব্যগুণ তাঁদের অসাধারণ করে তুলেছে।

বড় মাপের খেলোয়াড়, ক্রীড়াবিদের শরীরের গড়ন, মাংসপেশি ও কোষের প্রকৃতি তাঁদের পারফরম্যান্সের মূল সহায়ক। তাঁদের পেশি, কোষ, হাড়, সন্ধি, হৃপিণ্ড ও অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মধ্যে এমন কিছু গোপন স্বাতন্ত্র্য লুক্কায়িত থাকে যে ক্রীড়া ক্ষেত্রে অত্যুচ্চমানের পারফরম্যান্স করা তাঁদের পক্ষে অতীব কষ্টসাধ্য হয় না। অনুশীলন ও প্রশিক্ষণ তাঁদের পারফরম্যান্সকে শাণিত করে। কিন্তু একজন সাধারণ মানুষ শুধু প্রশিক্ষণ ও অনুশীলনের জোরে পারফরম্যান্সের অতি উচ্চমানে পৌঁছাতে পারবে না। দরিদ্র পরিবারে জন্ম নিয়ে, প্রতিকূল-নোংরা পরিবেশে বস্তিতে বড় হয়েও কোনো কোনো যুবক-যুবতী বিশ্বমানের খেলোয়াড় বা ক্রীড়াবিদ হতে পেরেছে। অলিম্পিকে বিশ্বরেকর্ড করেছে। আলী সাহেব বলেন, এসবই হয়েছে জিনের বদৌলতে এবং দ্রব্যগুণে। ব্যক্তির এতে তেমন কোনো বাহাদুরি নেই।

সুকুমার শিল্পের বেলায়ও আলী সাহেবের বক্তব্য একই রকমের উদ্ভট। তিনি মনে করেন, বিশ্ববিখ্যাত গায়ক-গায়িকার কণ্ঠ, জিহ্বা, ব্রংকাস, ল্যারিংস, নাক, হৃপিণ্ড, ফুসফুস এমনকি মুখমণ্ডলের স্থ্থূল ও ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র পেশিতে এমন কিছুু শক্তি ও রাসায়নিক দ্র্রব্য অন্তর্বিদ্ধ থাকে যে তাঁদের জন্য সুরচর্চা, গান ও আবৃত্তিতে অত্যুচ্চমানের পারফরম্যান্স সহজ হয়ে যায়। শত চেষ্টা করেও অন্যরা এ স্তরে উঠতে পারে না। এখানেও পারফরম্যান্সের মূলশক্তি প্রকৃতি প্রদত্ত। জিন ও দ্রব্যগুণের খেলা। আলী সাহেবের অদ্ভুত মন্তব্য : ‘ব্যক্তিকে নিয়ে এত হইচই করার কিছু নেই। বড়জোর বলা যায়, কতিপয় ব্যক্তি ভাগ্যবান। জিন ও দ্রব্যগুণের বদৌলতে তারা উচ্চমানের পারফরম্যান্স করতে পারে; এই যা। ফেলপস, মেসি, বোল্ট, রোনাল্ডো, সাকিব, তেন্ডুলকার, মোস্তাফিজ, সেরেনা, আগাসি—সবার জন্য এটি প্রযোজ্য।’

পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে সন্ত্রাসী হামলা সম্পর্কে আলী সাহেবের কোনো বিকার নেই। আমরা সবাই যখন এসব হামলার নিন্দায় সোচ্চার, আলী সাহেব তখন পটেটো চিপসের সঙ্গে নিরুদ্বেগে কফি খাচ্ছেন। আমরা কাছে গিয়ে আরো সোচ্চার হলে তিনি বললেন, ‘তোমরা অযথা আতঙ্কিত হচ্ছ, উত্তেজিত হচ্ছ। আসলে এতে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। মাঝেমধ্যে এসব হয়ে থাকে। তবে এসব সন্ত্রাসী দল শেষ পর্যন্ত টিকতে পারে না। একটি প্রতিষ্ঠিত সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী শেষ অব্দি ওদের কাবুু করে ফেলে। চারু মজুমদারের নকশাল বাহিনী সরকারের বাহিনীর কাছে পরাভূত হয়েছে। লাতিন আমেরিকার শাইনিং পাথ, চেচনিয়ার দুদায়েভ বাহিনী কিংবা ইউরোপের ‘রেড ব্রিগেড’ রণে ভঙ্গ দিয়েছে। তবে লম্বা সময় পরে মাঝেমধ্যে এরা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। কিছুদিনের জন্য দেশে চাঞ্চল্য ও অস্থিরতার সৃষ্টি হয়। এর ফলে সরকার পরিবর্তন হয় না। বড়জোর সরকারের মধ্যে তোলপাড় হয়। সরকার কঠোর অবস্থান গ্রহণ করে। সাধারণ মানুষের ভোগান্তি বাড়ে। সবচেয়ে পোয়াবারো হয় পত্রিকাওয়ালাদের। রংবেরঙের হেডিং-সাবহেডিং দিয়ে সত্যাসত্যের সঙ্গে মনের মাধুরী মিশিয়ে তারা খবর পরিবেশন করে। পত্রিকার কাটতি বাড়িয়ে দুই পয়সা বাড়তি কামাই করে। তোমরা ভয় পেয়ো না। আপাতত আর কিছুই ঘটবে না। ছয় মাস-নয় মাস কিংবা বৎসরাধিক কাল পরে সবাই ঝিমিয়ে পড়লে আবার কিছু ঘটতে পারে। নিরন্তর প্রহরা হচ্ছে সুনিরাপত্তার রক্ষাকবচ।’

আলী সাহেব এবার আঁতেলের ভঙ্গিতে বললেন, ‘তবে শোনো, সন্ত্রাসী বাহিনী তখনই দেশের শাসনব্যবস্থাকে নড়বড়ে করে ফেলে যখন ক্ষমতাধর দেশি কিংবা বিদেশি শক্তি সন্ত্রাসীদের সমর্থন ও মদদ জোগায়। আল-কায়েদা, তালেবান ও আইএসকে মহা ক্ষমতাধর রাষ্ট্র সৃষ্টি করেছে। অস্ত্র দিয়ে, অর্থ দিয়ে তারা এদের লালন-পালন করেছে, ক্ষমতায় আরোহণ করতে সরাসরি সাহায্য করেছে। ফ্রাংকেনস্টাইন হয়ে যাওয়ায় ওদের বিরুদ্ধে এখন তারা উঠেপড়ে লেগেছে। দেশ-বিদেশে লড়াকু আন্দোলনের মাধ্যমে যতবার সরকার পতন হয়েছে তার নেপথ্যে প্রায় সব ক্ষেত্রে ক্ষমতাধর দেশি অথবা বিদেশি শক্তির প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সমর্থন ছিল। এখানে-ওখানে সশস্ত্র আক্রমণ করে, নিরস্ত্র মানুষ খুন করে সন্ত্রাসীরা শেষ পর্যন্ত জয়ী হওয়া তো দূরের কথা, নিজেরাই টিকে থাকতে পারবে না। তোমরা এখন নিশ্চিন্তে কফি খাও, পরে অন্য কিছু খেয়ো।’

একটু থেমে আলী সাহেব গম্ভীর গলায় বললেন, ‘রাজা-বাদশাহরা হচ্ছে সবচেয়ে বড় সন্ত্রাসী শক্তি। সেই প্রাচীনকাল থেকে আলেকজান্ডার, সিজার, হ্যানিবল, অশোক, চেঙ্গিস খান, হালাকু খান, সুলতান মাহমুদ, নাদির শাহ, আওরঙ্গজেব রাজ্য জয়ের অভিযানকালে কত লোক খুন করেছে, কত শহর-জনপদ জ্বালিয়ে দিয়েছে তার ইয়ত্তা নেই। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধে দুই পক্ষের সব নায়ক অগুনতি মানুষ খুুন করেছে। আমরা জয়ী পক্ষের খুনি-সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারিনি। পক্ষান্তরে তাদের জয়গান গেয়েছি। আজ তাই আমাদের নিজেদের জিজ্ঞাসা করতে হবে, আমরা প্রকৃতই সন্ত্রাসকে ঘৃণা করি কি না।’

আলী সাহেবের সঙ্গে আমরা পুরোপুরি একমত হতে পারিনি। তাঁকে স্পষ্টভাবে বলেছি, ‘দেশের মধ্যে এখন যে সন্ত্রাস হচ্ছে আমরা তার নিন্দা করছি। কারণ এ সন্ত্রাস আমাদেরও ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে।’  আলী সাহেব এর কোনো জবাব দেননি।

সেই আলী সাহেব একদিন ভয়ানক বিমর্ষ অবস্থায় আড্ডায় এলেন। কিছু জিজ্ঞেস করতেই হাউমাউ করে কেঁদে ফেললেন। জানালেন তার নাতি অর্ণভ বিদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় মারাত্মকভাবে আহত হয়েছে। বর্তমানে হাসপাতালে  আছে। কবে সুস্থ হবে তার কোনো ঠিক নেই। আমরা বললাম, ‘আলী সাহেব, আপনার নিজের বিপদে, এমনকি আমার স্ত্রী বা ছেলেমেয়ের অসুখে-বিসুখে, বিপদে-আপদে আপনাকে কোনো দিন বিমর্ষ হতে দেখিনি, কাঁদতে দেখিনি। আজ এ কী হলো? নাতির বিপদে আপনি কাঁদছেন! একবারও বলছেন না, এটি একটি স্বাভাবিক ঘটনা, রাস্তাঘাটে দুর্ঘটনা তো হবেই।’

আলী সাহেব শুধু বললেন, ‘বাকিরা তো পরিচিত-অপরিচিত মানুষ; স্ত্রী, ছেলেমেয়ে। ও যে আমার বংশধর। তাও আবার ভাইবোনদের মধ্যে সবার বড়।’ বুঝলাম ‘বংশধর’ একটা বড় জিনিস, যা আলী সাহেবকেও কাঁদায়।

লেখক : সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও পিএসসির সাবেক চেয়ারম্যান