খোলা বাজার২৪, শুক্রবার, ২৬ আগস্ট ২০১৬: সাইবার হামলা নিয়ে বেশ বড়সড় বোমা ফাটাল যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান মেনডিয়েন্ট। বছরব্যাপী তদন্তের পর চলতি মাসে প্রকাশিত প্রতিষ্ঠানটির সাইবার সিকিউরিটি রিপোর্টে বলা হয়েছে, এশিয়ার বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দেশ রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় অন্য দেশে নীরব সাইবার হামলা চালাচ্ছে। প্রতিবেদনে আরও আশঙ্কা করা হয়েছে, এশিয়ার অনেক দেশের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, গণমাধ্যম এমনকি রাষ্ট্রীয় সংস্থার ওয়েবসাইট এবং সার্ভার গোপনে নিয়ন্ত্রণে রেখেছে প্রভাবশালী কিছু রাষ্ট্র। নিয়মিত তথ্য চুরি করে নিজেদের সার্ভারে জমা করছে। তথ্য চুরি করা হচ্ছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কিংবা নিয়ন্ত্রকদের নজর এড়িয়ে। প্রতি হামলায় গড়ে এ তথ্য চুরির পরিমাণ ৩ দশমিক ৭ গিগাবাইট। প্রতিদিনই বিভিন্ন লক্ষ্যে একাধিক হামলা চালিয়ে যাচ্ছে তারা।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বিশ্বের হ্যাকারদের ৮০ শতাংশ হামলার লক্ষ্যবস্তু এখন এশিয়ার দেশগুলো। সবচেয়ে বেশি লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হচ্ছে বাণিজ্যিক, আর্থিক এবং উচ্চতর প্রযুক্তি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সার্ভার। এর পরই রয়েছে রাষ্ট্রীয় সংস্থা এবং গণমাধ্যমের ওয়েবসাইট ও সার্ভার। প্রতিবেদনে সাইবার হামলা প্রতিরোধে তথ্যপ্রযুক্তির নিরাপত্তা-সংক্রান্ত ডিজিটাল অবকাঠামো শক্তিশালী করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
যেভাবে নিয়ন্ত্রণে আরেক দেশের তথ্য ভাণ্ডার :প্রতিবেদনে বলা হয়, এশিয়ার কয়েকটি প্রভাবশালী দেশ যারা অর্থনীতি এবং প্রযুক্তি উৎকর্ষতায় বিশ্বে অন্যতম সেরা অবস্থানে আছে সেসব দেশই রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় অপেক্ষাকৃত দুর্বল দেশগুলোর গুরুত্বপূর্ণ সার্ভারে নীরব হামলা চালিয়ে তথ্য চুরি করছে। যেসব দেশের সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থা এখন পর্যন্ত শক্তিশালী নয়, সেসব দেশের পক্ষে এই নীরব হামলার বিষয়টি আবিষ্কার করাই সম্ভব হয় না। প্রতিবেদনে বলা হয়, হামলায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভেঙে পড়লে তা শনাক্তে দুর্বল সাইবার নিরাপত্তা অবকাঠামোর দেশগুলোর সময় লাগে গড়ে ৫২০ দিন। অর্থাৎ, হামলার পর তা শনাক্ত করতেই সময় লেগে যায় প্রায় দেড় বছর। এই দেড় বছরে কী বিপুল পরিমাণ তথ্য চুরি হতে পারে, তা সহজেই অনুমান করা যায়।
প্রভাবশালী দেশগুলো নীরব সাইবার হামলার জন্য বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নিজেদের নেটওয়ার্ক যন্ত্রপাতি, সফটওয়্যার সিস্টেম এবং নিজেদের উৎপাদিত ডিভাইস যেমন কম্পিউটার, ট্যাব, স্মার্টফোন প্রভৃতি ব্যবহার করছে। অর্থাৎ, উন্নত দেশগুলো প্রযুক্তি পণ্য উৎপাদনের শুরু থেকেই তাদের লক্ষ্যবস্তুতে সাইবার হামলা ও গোপন নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্র প্রস্তুত করছে।
ইউরোপ-আমেরিকায় হামলা কমছে : প্রতিবেদনে বলা হয়, ইউরোপ কিংবা আমেরিকার দেশগুলোতে সাইবার হামলার সংখ্যা এবং ঝুঁকি আগের তুলনায় পঞ্চাশ শতাংশের বেশি কমেছে। কয়েক বছর আগেও ইউরোপ ও আমেরিকার প্রভাবশালী দেশগুলোর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় হামলার জোরালো অভিযোগ ছিল। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এক দেশ আরেক দেশের সরকার কিংবা রাষ্ট্রপ্রধানের ব্যক্তিগত ই-মেইল পর্যন্ত হ্যাক করেছে, এমন অভিযোগও ছিল। কিন্তু গত পাঁচ বছরে ইউরোপ-আমেরিকার অধিকাংশ দেশই সাইবার সুরক্ষার বিষয়টি অত্যন্ত দৃঢ় করেছে। একেক দেশে একেক ধরনের নকশায় ডিজিটাল নিরাপত্তা অবকাঠামো গড়ে তোলা হয়েছে। ফলে এ অঞ্চলগুলোর অনেক দেশ এখন রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতার মাধ্যমে আরেক দেশে হামলার চেষ্টা করেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সফল হচ্ছে না।
এশিয়ায় সাইবার নিরাপত্তা দুর্বল কেন : প্রতিবেদনের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, এশিয়ার বেশিরভাগ দেশে তথ্যপ্রযুক্তিগত ডিজিটাল নিরাপত্তা অবকাঠামো দুর্বল এবং এই দুর্বল অবকাঠামোর ওপরেই সাইবার নিরাপত্তার কাঠামো গড়ে তোলা হচ্ছে। ফলে আপাতদৃষ্টিতে শক্তিশালী সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থা মনে হলেও প্রযুক্তিগত অবকাঠামোর দুর্বলতার কারণে পুরো সাইবার নিরাপত্তা ব্যবস্থায় বড় ফাঁক থেকে যাচ্ছে। এ ছাড়া অপেক্ষাকৃত অনুন্নত দেশগুলো তথ্যপ্রযুক্তি পণ্যের জন্য উন্নত দেশগুলোর ওপর নির্ভরশীল। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নেটওয়ার্ক ও ডিভাইস ব্যবহারের ক্ষেত্রে ডিজিটাল নিরাপত্তা সুরক্ষার বিষয়টিও যাচাই করে নেওয়া হয় না কিংবা সক্ষমতা নেই অনেক দেশের। এ কারণে এসব দেশের সার্বিক প্রযুক্তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা অন্য দেশের নিয়ন্ত্রণে থাকলেও তা প্রতিরোধ করা সম্ভব হয় না।
প্রতিবেদনে কার্যকর সাইবার নিরাপত্তার জন্য তথ্যপ্রযুক্তিগতভাবে দৃঢ় ডিজিটাল অবকাঠামো গড়ে তোলার পরামর্শ দেওয়া হয়।