Wed. Apr 30th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

18kমনজুরুল হক / খোলা বাজার২৪, বুধবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৬:  শিক্ষা-দীক্ষায় পিছিয়ে পড়া গ্রামের মানুষরা তাদের ঐতিহ্য এবং পরম্পরায় এমন অনেক যুক্তিসঙ্গত এবং বৈজ্ঞানিক কাজ করেন যা সচরাচর উচ্চ শিক্ষিতদের করার কথা। ধরা যাক টিনের চাল। সিম্পল একটা ব্যাপার। দোচালা বা চারচালা কাঠামো পিরামিড আকারে খাড়া করে সেই ফ্রেমের ওপর স্ক্রু দিয়ে টিন আটকে দেয়া। হয়ে গেল টিনের ঘর। হ্যাঁ, তা হলো বটে, তবে সেই টিনের চালার ওপর বৃষ্টির পানি পড়ে সেই পানি যখন উঠানে পড়বে তখন উঠানের মাটি কেটে পানির সঙ্গে ভেসে যাবে, মাটি ফুটো হয়ে যাবে, সর্বোপরি বৃষ্টির পানি হাঁড়ি-কলসিতে ধরা যাবে না ভেবে তারা পুরো চালের ধার বরাবর টিনের একটা ডোঙ্গা বানিয়ে বেঁধে দেন বা আটকে দেন। তাতে করে ঘরের দু’কোণা দিয়ে পানি পড়ে। এই অতি সাধারণ কারিগরি দক্ষতাটির মতো সাধারণ কিছু সাবধানতা যদি শহুরে শিল্পপতিরা গ্রহণ করতেন তাহলে এ দেশে এতো বেশি শিল্প দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটতো না। সারা পৃথিবীতে গত নয় বছরে যতগুলো শিল্প দুর্ঘটনা ঘটেছে, শত শত মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে তার তিনটিই বাংলাদেশে! অথচ কোনো বিচারেই বাংলাদেশ ভারী শিল্পঘন দেশ নয়। কোনো বিচারেই বাংলাদেশে একটি শিল্পপ্রধান দেশ নয়। তাহলে কেন এমন ঘটছে?
মোটা দাগে দু’টি মাত্র কারণ, আর তা হলো যেনতেনভাবে অতি মুনাফা আর শ্রমিক তথা সাধারণ মানুষের প্রাণকে তুচ্ছজ্ঞান করা। ‘মানবিক মূল্যবোধ’ শব্দটিও এই দেশে খুব বেশি প্রচারিত হয় না। যেখানে দেশের কোথাও কোনো শিল্প কারখানাতেই মানবিকতা, মানবিক মূল্যবোধ কিংবা মানুষের প্রতি সহানুভূতিশীল থাকার রেকর্ড নেই, সেখানে ওই বিষয়গুলো খুব বেশি করে প্রচার হওয়ার কথা। প্রচার হওয়ার দরকার। কিন্তু পরিতাপের বিষয়, তার কোনোটিই হয় না। হচ্ছে না। অদূর ভবিষ্যতে হবে বলেও আশা করা যায় না।
সর্বশেষ ১০ সেপ্টেম্বর ঘটে আরো একটি বড় শিল্প দুর্ঘটনা। এটিও ঘটে বাংলাদেশে টাম্পাকো ফয়লস নামে একটি প্যাকেজিং কারখানায়। বয়লার বিস্ফোরণের পর সৃষ্ট আগুনে ৪০ বছরের পুরনো ভবনটি ধসে পড়ে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা জানা গেছে ৩৬। আরো অন্তত পাঁচটি মরদেহ উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি বলে জানা গেছে। এখনো নিখোঁজ ১০ জন। এই দুর্ঘটনাটির আগে ছোট-বড় মিলিয়ে আরো বেশ কয়েকটি দুর্ঘটনা ঘটেছে। তবে সবচেয়ে বড় দুর্ঘটনাটি ঘটে ২০১২ সালে। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে বাংলাদেশের পোশাক কারখানা তাজরীন ফ্যাশনসে। আশুলিয়ায় তোবা গ্রুপের ওই কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে মারা যান ১১২ জন। স্থাপত্য নকশায় বড় ধরনের ত্রুটি ছিল ভবনটিতে। বহির্গমনের সিঁড়িও ছিল না নিয়ম অনুযায়ী। এর পরের বছর ঘটে সবচেয়ে ভয়াবহতম শিল্প দুর্ঘটনাটি। ২০১৩ সালে সাভারে রানা প্লাজা ধসে প্রাণ হারান ১ হাজার ১০০ জনের বেশি মানুষ। ভবনটিতে ছিল পাঁচটি পোশাক শিল্পকারখানা। ভবনের অনুমোদন প্রক্রিয়া থেকে শুরু করে নির্মাণ-পরবর্তী তদারকির প্রতিটি পর্যায়েই নিয়মনীতির তোয়াক্কা করা হয়নি। এই ঘটনার পর দেশে-বিদেশে প্রবল সমালোচনার মুখে সরকার এবং বিদেশি গার্মেন্ট ক্রেতাদের উদ্যোগে কিছু সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়া হয় বটে, তবে তা পর্যাপ্ত নয়। মূল কথা হলো মালিকের মানবিকতাবোধ। সেটির অনুপস্থিতিতে যতই টেকনিক্যাল রিফর্মেশন করা হোক না কেন ফলাফল শূন্য হতে বাধ্য।
এর পর পরই আছে আইনের দুর্বলতা এবং সেই দুর্বল আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে চরম অবহেলা, দুর্নীতি এবং অব্যবস্থা। একটি কারখানা প্রতিষ্ঠা করতে অন্তত ২৭টি সরকারি দপ্তর, অধিদপ্তরের সনদের প্রয়োজন হয়। এর একটি সনদও যদি যথাযথভাবে দেয়া হতো এবং সনদ দেয়া পরবর্তী তদারকি করা হতো তাহলে শিল্প দুর্ঘটনা অর্ধেকে নেমে আসত। আমলাতান্ত্রিক শয়তানিতে ত্যক্ত-বিরক্ত হয়ে মালিকরা ওই ২৭টি বা কম-বেশি সনদ গ্রহণ করেন মোটা অঙ্কের ঘুষ দিয়ে। যে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ঘুষ খেয়ে সদন দেন তাদের প্রত্যেকেই ওই শিল্পকারখানায় দুর্ঘটনায় মারা যাওয়া মানুষের হত্যাকারী। এখন আইনের দায়িত্ব কি? আইনের দায়িত্ব হলো ওই সনদ প্রদানকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া। আর সেখানেই চলে নির্বিচার প্রকাশ্য বে আইনি কারবার। পুলিশ তাদের ধরে না। ধরতে পারে মনে করে তারা তদবির করে খালাস পেয়ে যান। কখনো কখনো কোনো মালিককে অনিয়ম, অবহেলা, অব্যবস্থা, চরম মুনাফাখোরির জন্য গ্রেপ্তার করা হলে সারা দেশের মালিকশ্রেণি, ধনিকশ্রেণি, আইনের লোকজন, প্রশাসনের লোকজন, নির্বাহী বিভাগের তালেবররা, সুশীল সমাজ থেকে শুরু করে প্রায় সবাই ওই খুনি মালিকের পক্ষাবলম্বন করে। অর্থাৎ নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার শ্রমিক শ্রেণি বাদে সমাজের সব স্টেক হোল্ডার খুনি মালিক শ্রেণির পক্ষ নেয়। সেক্ষেত্রে ধরে নেয়া যায় সমাজের প্রায় প্রত্যেকের হাতেই শ্রমিক হত্যার রক্ত লেগে রয়েছে।
একটি রিপোর্টে নজর দেয়া যাক :
‘আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) ও নানা সংস্থার তথ্য বলছে, ২০০৭ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী ম্যানুফ্যাকচারিং শিল্পে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটেছে ছয়টি। এর তিনটিই বাংলাদেশে। সংখ্যার বিচারেই শুধু নয়, এসব দুর্ঘটনার ভয়াবহতাও সবচেয়ে বেশি ছিল বাংলাদেশে। ২০০৭ থেকে ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শিল্প দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ১ হাজার ৬০০ জনের বেশি। এর মধ্যে শুধু বাংলাদেশেই প্রাণ হারিয়েছেন ১ হাজার ২০০ জনের বেশি। এ হিসেবে সারা বিশ্বে শিল্প দুর্ঘটনায় প্রাণহানির প্রায় ৮০ শতাংশই হয়েছে বাংলাদেশে। তবে গত এক দশকে বাংলাদেশ ছাড়াও ভয়াবহ শিল্প দুর্ঘটনা ঘটেছে চীন, তুরস্ক ও পাকিস্তানে।
অপরিকল্পিত শিল্পায়নকেই এ দুর্ঘটনার মূল কারণ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, শিল্প বিকাশে উদ্যোক্তারা যতটা মনোযোগী, ততটাই উদাসীন এর নিরাপত্তা নিশ্চিতে। এ উদাসীনতার ছাপ পড়ে শিল্প রক্ষণাবেক্ষণেও। পাশাপাশি রয়েছে সরকারি সংস্থার দুর্নীতি, সামর্থ্যে ঘাটতি ও সমন্বয়হীনতা। সর্বোপরি স্বল্প পুঁজিতে বেশি মুনাফা করার প্রবণতার ফলে বাংলাদেশে ধারাবাহিকভাবে ঘটছে ভয়াবহ শিল্প দুর্ঘটনা (বণিকবার্তা, ১৭.০৯.২০১৬)।’
অর্থাৎ আমরা কোনো তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ-টিশ্লেষণ ছাড়াই যে অন্যতম দু’টি কারণ উল্লেখ করেছিলাম সে দুটোই অন্যতম কারণ বলে দেখাচ্ছে আইএলও।
এসব ক্ষেত্রে সরকারি লোকরাও একটা ধারাবাহিক নিয়ম মেনে চলেন! তারা অভিযোগ স্বীকার করে নিয়ে বলেন, ‘হ্যাঁ এসব ক্ষেত্রে যথেষ্ট গাফিলতি হয়েছে, মালিকরা নিরাপত্তা নিয়ে অবহেলা করেছেন, তবে এখন পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। আগের সরকার এসব কিছুই করেনি। আমাদের সরকার এসে অনেক প্রতিশেধকমূলক ব্যবস্থা নিয়েছে। এখন মালিক-শ্রমিক সুখে শান্তিতে বসবাস করছেৃ’!
দেখুন, কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হকও কিন্তু সে রকমই বলেছেন। অপরিকল্পিত শিল্পায়নকে ধারাবাহিক দুর্ঘটনার কারণ বলে মনে করেন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হকও। তিনি বলেন, বাংলাদেশের শিল্পে শুরুতে পরিদর্শনের কার্যকর কোনো ব্যবস্থা ছিল না। মালিকরাও যেখানে সেখানে শিল্প গড়ে তোলেন। পরিদর্শন সংস্থার সামর্থ্য বাড়লেও এখন পর্যন্ত দেশের সব শিল্প এর আওতায় আনা সম্ভব হয়নি। তবে রানা প্লাজা দুর্ঘটনার পর এ অবস্থার উন্নয়ন হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে শিল্প দুর্ঘটনার ব্যাপ্তি কমিয়ে আনা সম্ভব হবে। তবে গত এক দশকে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি শিল্প দুর্ঘটনা ঘটেছে, এমন তথ্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করেন শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী।
গত এক দশকে শিল্প দুর্ঘটনার তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০০৭ সালে ভয়াবহ শিল্প দুর্ঘটনা ঘটে চীনে। দেশটির কুইংহে স্পেশাল স্টিল করপোরেশন লিমিটেডের ওই দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান ৩২ জন। দুর্ঘটনা তদন্তে দেখা যায়, কারখানাটির নিরাপত্তা মান ছিল খুবই দুর্বল। ঘাটতি ছিল নিয়ন্ত্রণ ও তদারকি ব্যবস্থায়ও। আর দুর্ঘটনার পর নেতিবাচক প্রভাবের মুখোমুখি হতে হয় চীনের পুরো ইস্পাত শিল্পকেই।
২০০৮ সালে আরেকটি বড় শিল্প দুর্ঘটনা ঘটে তুরস্কের ইস্তাম্বুলে। এটি ঘটে একটি আতশবাজি তৈরির কারখানায়; সরকারি নিবন্ধন ছাড়াই যা চলছিল। পর পর দু’টি বিস্ফোরণ ঘটে বহুতল কারখানা ভবনটিতে। প্রথমটি ঘটে ভবনের সর্বোচ্চ তলায় আতশবাজির কারখানায়। পরেরটি ঘটে বেজমেন্টে থাকা রঙ কারখানার বয়লারে। এ দুর্ঘটনায় মারা যান ২২ জন কর্মী। আহত হন প্রায় ১০০ জন। এ ঘটনায় আংশিকভাবে ধসে যায় ভবনটি। পাকিস্তানের করাচিতে একটি পোশাক কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে ২০১২ সালে। পশ্চিম ইউরোপের জন্য পোশাক প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানটির নাম আলি এন্টারপ্রাইজ। ওই দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান ২৮৯ জন শ্রমিক-কর্মচারী। আহত হন ৬০০ জনের বেশি। পাকিস্তানের ইতিহাসে এটিই এখন পর্যন্ত সবচেয়ে ভয়াবহ শিল্প দুর্ঘটনা।
দেখা যাচ্ছে চীন, তুরস্ক, পাকিস্তানে যেসব দুর্ঘটনা ঘটেছে তার কোনোটিতেই ২৮৯ জনের বেশি প্রাণ হারায়নি। এই দুর্ঘটনাগুলোকে বলা হচ্ছে ‘ভয়াবহ’ শিল্প দুর্ঘটনা! তাহলে সে বিচারে বাংলাদেশের রানা প্লাজায় যে ১১শ জনের বেশি মানুষের করুণ মৃত্যু হলো সেটা শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহতম শিল্প দুর্ঘটনা! এই বিশ্ব ইতিহাসের ভয়াবহতম এবং নৃশংসতম মনুষ্যসৃষ্ট দুর্ঘটনার পর দেশের শিল্প মহলে, সরকারি মহলে, সামাজিক শ্রেণিবিন্যাসের ক্ষেত্রে, ব্যবসা-বাণিজ্য ক্ষেত্রে, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার ক্ষেত্রে যে আমূল পরিবর্তন হওয়া উচিত ছিল তা হয়নি। গার্মেন্ট সেক্টরে ‘অ্যাকর্ড’ নিরীক্ষার নামে কিছু প্রি-কোশন ছাড়া কার্যত নিরাপত্তা নিয়ে বড় কোনো অগ্রগতি হয়নি। তার মধ্যে এবার হলো ফয়েল কারখানায়। এবার এই ধরনের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার নিয়ম-টিয়ম করার পর দুর্ঘটনা ঘটবে ইস্পাত কারখানায়। সেখানে ‘টাইট’ দিলে ঘটবে চামড়া কারখানায়। সেখানে প্রটেকশন দিলে ঘটতে পারে টেক্সটাইল-স্পিনিং কারখানায়। অর্থাৎ কোনো না কোনোভাবে প্রতিটি শিল্পক্ষেত্রে চরম অব্যবস্থা, অনিয়ম, নিরাপত্তাহীন বিরাজ করছে। কোনো না কোনোভাবে এসব শিল্পকারখানাগুলো বহু আগে মনুষ্য ব্যবহারের যোগ্যতা হারিয়েছে। তার পরও চলছে! এটা কেবলমাত্র বাংলাদেশ বলেই সম্ভব। এই দেশেই সম্ভব মেয়াদ পার হওয়া সেতুর দুই পাশে ‘ধীরে চলুন, মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত সেতু’ সাইনবোর্ড লিখে দায়-দায়িত্বহীনভাবে চলাচল করতে দেয়া। তার মানে সরকারিভাবে নির্বিকার মানুষ হত্যা করতে দেয়া! এবার দেখুন এই বিষয়ে দায়িত্বশীল কর্তব্যক্তিরা কি বলছেন?
‘বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার আলী আহাম্মেদ খান বলেন, শিল্পায়নের শুরুতে নিরাপত্তার বিষয়ে মালিকদের উদাসীনতাই বর্তমান দুর্ঘটনাগুলোর মূল কারণ। তবে রানা প্লাজা ও তাজরীন ঘটনার পর দেশের শিল্পগুলোর মধ্যে পোশাক খাতের সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা অনেক উন্নত হয়েছে। তার পরও অনেক খাতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। সময় এসেছে দেশের সব শিল্প খাতে সমান মনোযোগী হওয়ার। তবে লোকবলসহ সরকারি সংস্থার সামর্থ্য ও ক্ষমতায়নের ঘাটতি আছে (বণিকবার্তা, ১৭, ০৯,২০১৬)।’
খেয়াল করুন শেষের লাইনটি- ‘লোকবলসহ সরকারি সংস্থার সামর্থ্য ও ক্ষমতায়নের ঘাটতি আছে’! যে দেশে প্রায় সাড়ে তিন থেকে চার কোটি আধা শিক্ষিত বেকার, যে দেশে মানুষের আধিক্যে রাস্তার পাশে একটি কুকুর মূত্র ত্যাগ করার ফুরসত পায় না, সেই দেশে যদি বলা হয় লোকবল ঘাটতি রয়েছে, তাহলে কী বুঝে নিতে হবে? হয় খুনি মানসিকতা, নয়ত দায় এড়ানো অথবা এই ক্ষেত্রে লোকবল নিয়োগের প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার, না হয় অনাবশ্যক খাতে নিয়োগের জন্য এই খাতকে কাটছাঁট করা কিংবা সামগ্রিকভাবে মানুষের নিরাপত্তা, মানুষের জীবন, মানুষের বাঁচার অধিকারকে অবহেলা করা, অস্বীকার করা। কার্যত এই ধরনের মনুষ্যসৃষ্ট দুর্ঘটনা নামের হত্যাযজ্ঞকে ঠারে-ঠোরে জায়েজ করা! এভাবে যদি দেশের প্রত্যেকটি দায়িত্বপ্রাপ্ত দপ্তরের প্রধানের স্বাক্ষাৎকার নেয়া হয়, যদি প্রত্যেকের মতামত নেয়া হয় দেখা যাবে সবাই ঘুরেফিরে ওই ‘লোকবলসহ সরকারি সংস্থার সামর্থ্য ও ক্ষমতায়নের ঘাটতি আছে’ মার্কা চামড়া বাঁচানো এবং নির্লজ্জ দায় এড়ানো কথাবার্তা বলে দায়-দায়িত্ব এড়িয়ে সাধের চাকরিটা নিরুদ্বেগ রাখবেন, নিজের স্বার্থটাও অটুট রাখবেন। দাম যা দেয়ার তা দেবে ওই শ্রমিক-কৃষক হা-ভাতে লোকগুলো!
মনজুরুল হক : কলাম লেখক।