খোলা বাজার২৪,
মঙ্গলবার, ৪ অক্টোবর, ২০১৬: আমরা যারা কলম নিয়ে যুদ্ধ করি তাদের যুগ এখন শেষের পথে। ডিজিটাল যুগে এখন কলম খানিকটা অচল পয়সার মতোই। তবুও এখনও “অসি’র চেয়ে মসি’র শক্তি বেশি”। আমাদের সকলের অত্যন্ত প্রিয় একজন সাহসী কলমযোদ্ধা জীবনযুদ্ধে পরাজিত হয়ে না ফেরার দেশে চলে গেলেন। সবকিছু ঠিকঠাকই চলছিল। ঢাকার পুরানা পল্টনের কমিউনিস্ট পার্টির পঞ্চম তলায় দৈনিক মুক্ততথ্য পত্রিকা নিয়ে সততার সাথে পথ চলছিলেন এই প্রিয় মানুষটি। তাঁর অফিসে অনেকগুলো কম্পিউটার, ইন্টারনেটের সংযোগ থাকলেও প্রিয় বস্তুটি ছিল সেকালের একটি রেডিও। এখনও বিবিসি এবং ভয়েস অব অ্যামেরিকা’র খবরের সময় এলে সব কাজ ফেলে তাঁর মূল মনযোগ ছিলো সেখানে। দক্ষিণ অঞ্চলের খুলনা বিভাগের সাতক্ষীরা জেলায় এই মানুষটি জন্মগ্রহণ করেছিলেন। সেখানকার মানুষের প্রতি তাঁর ছিল অকৃত্রিম শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। তাদের জন্য কিছু করতে পারলে নিজেকে গর্বিত মনে করতেন। হঠাৎ একদিন অসুস্থ হয়ে পড়লে জানা গেল তিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত। একজন সাহসী মানুষ এই সংবাদে নিজেকে খুব বেশি সামলাতে পারলেন না। সততার কারণে অর্থনৈতিকভাবে খুব বেশি সচ্ছ্বলও ছিলেন না। তবুও কারো কাছে কখনও হাত পাততে দেখিনি। কিছু তরুণদের সাথে নিয়ে তাঁর প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে নেয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন এই সাহসী কলমযোদ্ধা। যখন বেশি অসুস্থ হয়ে পড়লেন তখন তাকে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হলো। কাছের কিছু প্রিয় মানুষ নিজেদের উদ্যোগে তাঁর চিকিৎসার জন্য সকলের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করেছিলেন। সেভাবে এই মানুষটির পাশে কেউই এগিয়ে আসেনি। অবশেষে মৃত্যুকেই জয় করলেন। তাঁর স্ত্রী ও দুই সন্তান প্রিয় মানুষকে হারিয়ে এখন দিশেহারা। তালা উপজেলার খলিলনগর ইউনিয়নের নলতা গ্রামে প্রিয় আঙিনায় দাফন করা হয়েছে প্রিয় মাজেদ ভাইকে। তিনি আর কখনো ফিরে আসবেন না। পরিশ্রমী, সৎ ও সাহসী এই মানুষটির জন্য বুকের ভেতর এক অজানা শূন্যতা থেকেই গেল। তাঁর জন্য কিছু না করার যন্ত্রণা হয়তো আমার আমিত্ব পর্যন্ত কষ্ট দেবে। প্রিয় মাজেদ ভাই, পারলে আপনি আমাদের ক্ষমা করুন। আপনি সমাজের জন্য, দেশের মানুষের জন্য, এলাকার মানুষের জন্য নিজের অবস্থান থেকে অনেক কিছু করার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু আপনার শেষ সময়ে আমাদের সেই চেষ্টার কিঞ্চিৎ অংশও ছিলো না। সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলার কৃতী সন্তান ও ঢাকা থেকে প্রকাশিত দৈনিক মুক্ততথ্য পত্রিকার সম্পাদক আব্দুল মাজেদ গত রোববার রাতে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তিনি দুরারোগ্য ক্যান্সার রোগে ভুগছিলেন। খুলনা থেকে প্রকাশিত দৈনিক পূর্বাঞ্চলের তালা উপজেলা প্রতিনিধি হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। যশোরের দৈনিক রানারের সঙ্গেও সংশ্লিষ্ট ছিলেন। ঢাকার বিভিন্ন পত্রিকায় লেখালেখি করতেন। এরপর দৈনিক মুক্ততথ্য পত্রিকা প্রকাশ শুরু করেন। তালা উপজেলার ইতিহাস, ঐতিহ্য, বৃহত্তর খুলনার ইতিহাস ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তার কয়েকটি গ্রন্থ আছে। সাংবাদিকতার পাশাপাশি তিনি সাতক্ষীরা, বিশেষ করে তালার উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন সংগঠন ও কর্মকা-ে জড়িত ছিলেন। মোঃ আব্দুল মাজেদ আশির দশকের লেখালেখি শুরু করেন। এরপর তিনি দক্ষতার সাথে দৈনিক বাংলা, দৈনিক বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় নিয়মিত লেখালেখি করতেন। পেশাগত কারণে বারবার নির্যাতন ও নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। তাই, সাহসী দৈনিক মুক্ততথ্য তারই সম্পাদনা প্রকাশনার ফসল। তিনি সাংবাদিকতায় অসাধারণ অবদানের জন্য বাংলাদেশ জাতীয় মানবাধিকার সমিতি কর্তৃক ‘নেলসন ম্যান্ডেলা সম্মাননা-২০১৩’ ও জাগো বাংলাদেশ শিশু কিশোর ফেডারেশন-২০১৩ কর্তৃক পুরস্কার লাভ করেন। জীবনযুদ্ধে হেরে এই সৎ ও সাহসী কলমযোদ্ধা শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর অকাল মৃত্যুতে এনডিপি সহ বিভিন্ন সংগঠন শোক প্রকাশ করেছেন এবং শোকাহত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করেছেন। শোক প্রকাশ করে ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬ বিবৃতি দিয়েছেন ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এনডিপি’র চেয়ারম্যান খন্দকার গোলাম মর্তুজা, প্রেসিডিয়াম সদস্য মো. মঞ্জুর হোসেন ঈসা, তৃণমূল নাগরিক আন্দোলনের সভাপতি মোহাম্মদ মফিজুর রহমান লিটন, বাংলাদেশ ইউনাইটেড জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের আহ্বায়ক আবদুল মুগনী নিরো, বাংলাদেশ উন্মুক্ত গণতান্ত্রিক পরিষদের সভাপতি মো. রমিজউদ্দিন রুমি, সাবেক ছাত্রনেতা রবিউল ইসলাম রবি, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক একাডেমীর মহাসচিব হুমায়ুন কবির বেপারী, এশিয়া হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের মহাসচিব আর. কে. রিপন, মানবাধিকার জোটের মহাসচিব মিলন মল্লিক, বন্ধু দলের সভাপতি শরীফ মোস্তফা জামান লিটু সহ বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ। নেতৃবৃন্দ বলেন, একজন সৎ, দেশপ্রেমিক, নির্লোভ লেখক ও কলমসৈনিককে আমরা অকালে হারালাম। তিনি সবসময় অসহায় নির্যাতিত মানুষের কথা ভাবতেন। নেতৃবৃন্দ আরও বলেন, এখন সৎ সাংবাদিক পাওয়া দুষ্কর। আসুন, আমরা যারা তাঁর অতি প্রিয় এবং পরিচিত, সকলে মিলে তাঁর স্বপ্নের পত্রিকা দৈনিক মুক্ততথ্যকে বাঁচিয়ে রাখি এবং তাঁর পরিবারের পাশে দাঁড়াই। তাহলেই তাঁর আত্মা শান্তি পাবে।
