খোলা বাজার২৪, বুধবার, ৯ নভেম্বর ২০১৬ :
মোহাম্মদ সোহেল, নোয়াখালী : “দুপুুরের খাবার স্কুলে খাবো, রোগ মুক্ত জীবন গড়বো” এ শ্লোগানটি এখন নোয়াখালীর প্রতিটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পরিচিত একটি শ্লোগান। জেলা প্রশাসক বদরে মুনির ফেরদৌস জেলার প্রতিটি উপজেলায় “মিড ডে মিল” প্রতিষ্ঠিত করতে বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকা, শিক্ষার্থী, অভিবাবক ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সাথে আলোচনা সভা, মতবিনিময় সভা, অভিভাবক সমাবেশ, মা সমাবেশ করেছেন।
জেলার সূবর্ণচরে “মিড ডে মিল” প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় বদলে গিয়েছে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জীবন। উপজেলার কোমলমতি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সুস্বাস্থ্য ও মানসন্মত শিক্ষার পরিবেশ গড়ে তুলতে উপজেলার ৯০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মিড ডে মিল চালু করায় শিক্ষার্থীদের মাঝে পরিবর্তন ও ব্যাপক উৎসাহ সৃষ্টি হয়েছে।
জেলা প্রশাসক বদরে মুনির ফেরদৌস বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শনকালে ছাত্র ছাত্রীদের দুপুরের খাবার না খাওয়ায় শিক্ষার্থীদের দুর্বল হয়ে পড়ার দৃশ্য তার নজরে আসলে তিনি “মিড ডে মিল” কার্যকরের পদক্ষেপ নেন।
জেলা প্রশাসকের নির্দেশে সূবণচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উপজেলার ৯০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণী থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত ১৭৪৪০জন শিক্ষার্থীর মাঝে মিড ডে মিল চালু করেন। এ কর্মসূচীতে সরকারী বা ব্যক্তি উদ্যোগে কোন অর্থ বরাদ্ধ দেওয়া হয়নি। মিড ডে মিল কর্মসচীূকে বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে শুরু থেকে ৯০টি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের নিয়ে আলোচনা সভা, মতবিনিময় সভা, অভিভাবক সমাবেশ, মা সমাবেশ অব্যাহত রাখেন। এসব কর্মসূচী থেকে অভিভাবক, শিক্ষক, শিক্ষার্থীরা একযোগে প্রতিদিন নিজ নিজ বাড়ি থেকে দুপুরের খাবার স্কুলে নিয়ে আসার বিষয়ে নিশ্চিত করেন এবং তা অব্যাহত আছে।
এদিকে মিড ডে মিল কর্মসূচীকে গ্রহনযোগ্য করে তুলতে উপজেলা পর্যায়ে তিন সদস্যের একটি তদারকী কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটি প্রতিদিন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের মুঠো ফোনে খাবারের বিষয়ে খোঁজ খবর নিচ্ছেন।
সরেজমিন, উপজেলার চর জুবলী অলি উল্যা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ বেশ কয়েকটি প্রাথমিক বিদ্যালয় এলাকায় ঘুরে দেখা যায় সকালের রাস্তায় অন্যরকম চিত্র। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের কাঁধে ব্যাগ আর হাতে বাড়ি থেকে নিয়ে আসা মায়ের হাতের দুপুরের খাবার। সবার চোখে মুখে আনন্দের ঝলকানী। প্রতিটি শিক্ষার্থী যেন ভোরের শীষ দেওয়া দোয়েল পাখি। তারা দল বেঁধে হাতে খাবার ঝুলিয়ে হাসতে হাসতে যাচ্ছে বিদ্যালয়ে। এ যেন এক অন্যরকম দিন বদলের বর্ণাঢ্য প্রতিচ্ছবি।
উপজেলার চর জুবলী অলি উল্যা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দেখা যায় প্রতিটি শ্রেণী কক্ষে শিক্ষার্থীরা যার যার পরিবাবের সামর্থ্য অনুযায়ী মায়ের হাতে রান্না করা খাবার টিফিন বাটি করে এনে যার যার আসনের পাশে রেখেছে। ঠিক যখন মধ্যাহ্ন বিরতি হয় তখন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা এক সঙ্গে বসে খাবার খায় প্রতিদিন। আবার যে শিক্ষার্থী খাবার নিয়ে আসেনি অন্য শিক্ষার্থীরা তাকে সঙ্গে নিয়ে একে অপরের সাথে খাবার ভাগাভাগি করে খায়। এতে পরস্পরের সাথে সহযোগিতার মনোভাব ও সহনশীলতা লক্ষনীয়।
উপজেলার কাটাবুনিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানায়, এখন আমরা আর বিরতির সময় বিদ্যালয় থেকে পালিয়ে যায় না। বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকিনা। আমাদের এখন বিরতির সময়ে ফুটপাতের খাবার না খাবার ফলে অসুস্থ্য থাকি না। মিড ডে মিল আমাদের বদলে দিয়েছে। বিদ্যালয়ে প্রতিদিন মায়ের হাতে খাবার খাওয়া যেন প্রতিদিন বনভোজনের আনন্দ। শিক্ষার্থীরা বলে সুস্থ্য সবল দেহ গড়ে তুলবো আমরা আগামীর বাংলাদেশ এটাই আমাদের মিড ডে মিল এর প্রকৃত শিক্ষা।
শিক্ষকরা জানান, মিড ডে মিল চালু করার ফলে শিশুদের নান্দনিক মননশীলতার পাশাপাশি তাদের মধ্যে আতœনির্ভরশীলতা ও পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা বৃদ্ধি পেয়েছে। তাদের দৃষ্টি ভঙ্গি সক্ষমতার লক্ষে সকল বিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে অভিন্ন পোশাক সরবরাহ করা হয়েছে। তারা বলেন, মি ডে মিল এ উপজেলায় পরিবর্তনের একটি অন্যরকম কর্মসূচী।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: হারুন অর রশীদ বলেন- কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীরা সময়মত দুপুরের খাবার না খেতে পারলে তাদের শারীরিক ও মানসিক গঠনে ব্যাপক ক্ষতি হয়। এ ছাড়া তারা ফুটপাতের বিভিন্ন ধরনের অস্বাস্থ্যকর খাবার খেয়ে প্রায় অসুস্থ হয়ে যায়। তাই একটি সুস্থ জাতি গঠনে মিড ডে মিল এর কোন বিকল্প নেই। মায়ের হাতের খাবারই গড়ে তুলতে পারে আগামী দিনের সুস্থ জাতি।
তিনি বলেন, জেলা প্রশাসক বদরে মুনির ফেরদৌস স্যারের নির্দেশনায় মিড ডে মিল কর্মসূচী চালু করার ফলে বিদ্যালয় পালানোর প্রবনতা কমে শুন্যের কোটায় নেমে এসেছে। ঝরে পড়ার হার ১৩ ভাগ থেকে ৪ ভাগে নেমে এসেছে। পাঠে শিক্ষার্থীদের মনোযোগ বাড়ায় পাশের হার বেড়ে ৯৫ ভাগে উন্নীত হয়েছে । এ কর্মসূচী শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষার পরিবেশকে বদলে দিয়ে গড়ে তুলবে উন্নত দেশ।