Wed. Apr 30th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

5ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ ।। খোলা বাজার২৪, সোমবার, ২৮ নভেম্বর ২০১৬ : বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া নির্বাচন কমিশন নিয়ে তাঁর প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেছেন। আমাদের সবার প্রত্যাশা ছিল তিনি হয়তো নির্বাচন কমিশন আইন তৈরির ব্যাপারে জোরালো অবস্থান ব্যক্ত করবেন। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে তিনি সে বিষয়ে আলোচনা এড়িয়ে গেছেন। গতবার সার্চ কমিটির মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির সুপারিশক্রমে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য কমিশনার নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। খালেদা জিয়ার বক্তব্যেও সেই একই প্রক্রিয়ায় নির্বাচন কমিশন নিয়োগের কথা বলা হয়েছে। সুতরাং সেদিক থেকে বলা যায়, ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে তাদের একধরনের ঐকমত্য আছে।

সার্চ কমিটি গঠনের ব্যাপারে খালেদা জিয়া সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে একটি ঐকমত্যে আসার কথা বলেছেন। এখানে খালেদা জিয়া একটি কৌশল প্রয়োগ করেছেন। কারণ দীর্ঘদিন থেকে বিএনপিকে জামায়াতের সঙ্গ ছাড়ার পরামর্শ দিয়ে আসছিল সরকারি দল ও সুধীসমাজ। খালেদা জিয়া তাঁর নির্বাচনী প্রস্তাবনায় প্রচ্ছন্নভাবে জামায়াতকে রাখার কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, স্বাধীনতার পর থেকে যে রাজনৈতিক দলগুলো সংসদে প্রতিনিধিত্ব করেছে তাদের নিয়ে আলোচনায় বসতে হবে। সুতরাং এখানে জামায়াতকে রাখার কথা বলা হয়েছে। আবার তাঁরা নিয়মানুযায়ী সার্চ কমিটি করার জন্য রাষ্ট্রপতির সুপারিশে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণে আলোচনার কথা বলেছেন। এখানে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল নয় বলে জামায়াতের নাম বাদ পড়বে। এখন দেখার বিষয় যে শেষ পর্যন্ত কোনটা হয়।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের ব্যাপারে আমরা বরাবরই দেখে আসছি, যাঁরা নিয়োগ পেয়েছেন তাঁরা সবাই পুরুষ। আর এই নিয়োগপ্রক্রিয়াগুলো হয়েছে মোটামুটি সরকারের তিনটি বিভাগ থেকে। বিচার বিভাগ, সিভিল সার্ভিস ও সবশেষ সামরিক আমলা। এই তিন ক্যাটাগরির বাইরে আর কোনো বিভাগ থেকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বা কমিশনার হিসেবে কেউ নিয়োগ পাননি। তাই এই তিন বিভাগের বাইরে অন্য কোনো বিভাগ থেকে নিয়োগ দেওয়া যায় কি না সেটা ভেবে দেখা যেতে পারে। আমরা প্রস্তাব করেছিলাম, যেটা পৃথিবীর অনেক দেশেই আছে যে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, নির্বাচনসংক্রান্ত কাজে জড়িত কোনো নির্বাচনী বিশ্লেষক, পর্যবেক্ষক বা অ্যাকটিভিস্ট নির্বাচন কমিশনার বা প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ পেতে পারেন। এটা সরকার ভেবে দেখতে পারে। এ ছাড়া পাঁচজন নির্বাচন কমিশনারের মধ্যে একজন নারী রাখা যায় কি না সে বিষয়েও সরকার ভাববে বলে আশা করি। কারণ গতবার সুপারিশের সময় একজন নারীর নাম এসেছিল। কিন্তু পরে চূড়ান্ত বিবেচনায় তিনি বাদ পড়েন। তই এবারও আমাদের প্রস্তাব থাকবে যেন নির্বাচন কমিশনারদের মধ্যে একজন নারী থাকেন।
সার্চ কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে সবার যেমন মতামত নিতে হবে তেমনি সার্চ কমিটির ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে সবাই যেন সুপারিশ করতে পারেন—এমন রীতি রাখা যেতে পারে। প্রাথমিক সুপারিশ থেকে পরে বাছাই হতে পারে। আর যাঁদের নাম সুপারিশ করা হচ্ছে তাঁরা কেন, কোন বিবেচনার ভিত্তিতে আসছেন সেটা অবশ্যই সাধারণ মানুষকে জানাতে হবে। প্রয়োজনে গণমাধ্যমকে ডেকে তা উপস্থাপন করা যেতে পারে।
খালেদা জিয়ার পুরো প্রস্তাবনা যদি বিশ্লেষণ করি তা হলে দেখব, তিনি তিন ধরনের নির্বাচনকালীন পরিস্থিতির কথা বলেছেন। গতবার যেমন তিনি প্রধানভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কথা বলেছিলেন, এবার সেটা আসেনি। এসেছে—১. তত্ত্বাবধায়ক সরকার; ২. সবার কাছে গ্রহণযোগ্য সরকার এবং ৩. নির্বাচনসহায়ক সরকার—এখানে আমরা একটি নতুন ব্যবস্থা বা পদ্ধতি পেলাম তা হলো, নির্বাচনসহায়ক সরকার। বলা যায়, বিএনপি এখন অনেক বেশি নমনীয়। তারা একটি অন্তর্র্বতীকালীন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাওয়ার কারণে তাদের চিন্তনশক্তির অবস্থান পরিবর্তন হয়েছে। এটাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখাই রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য ইতিবাচক হবে।
খালেদা জিয়া তাঁর বক্তব্য উপস্থাপনের পরপরই শাসক দলের পক্ষ থেকে বিশেষত আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এটাকে অন্তঃসারশূন্য বলে অভিহিত করেছেন। এটা অত্যন্ত নেতিবাচক মনোভাব বলে মনে করি। নিয়মানুযায়ী প্রতিটি দলেরই যেমন প্রস্তাব উত্থাপনের অধিকার রয়েছে, তেমনি সরকারের দিক থেকে দায়িত্ব রয়েছে সেই প্রস্তাবনাকে আলোচনায় আনার। দর-কষাকষির একটা নিয়ম আছে। প্রথমে সেই নিয়মে আসতে হবে, তারপর তর্ক-বিতর্কের মধ্য দিয়ে সেটা টিকল কী খারিজ হলো তা অন্য বিষয়। তাই শাসক দল বিএনপির প্রস্তাবনার পক্ষে ইতিবাচক মনোভাব দেখাবে, তা আলোচনা করবে—এটাই আমাদের প্রত্যাশা। ‘কমন আন্ডারস্ট্যান্ডিং’-এর মাধ্যমেই অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে । আর নির্বাচনকালীন সরকার যেন নির্বাচনের পক্ষে সহায়তা হয়, কোনো পক্ষাপাতমূলক আচরণ না করে, সেটাও আমরা প্রত্যাশা করি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রশাসন, দলীয় ব্যক্তিরা যেন নিরপেক্ষ থাকেন, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।
লেখক : চেয়ারম্যান, জানিপপ, উপ-উপাচার্য, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বিইউপি) ও এডিটিং চার্জ, দ্য এশিয়ান এজ