সুবল রায়, দিনাজপুর : শিক্ষা যে বয়সকেও হার মানায়-তার প্রমান দিনাজপুরের বোচাগঞ্জ উপজেলার ৬২ বছর বয়স্ক আব্দুর রশিদ। জীবনে নিরক্ষরতা যে কত বড় অভিশাপ আর পুথিগত শিক্ষার যে কি প্রয়োজনীয়তা- তা বার্ধক্যের দ্বারপ্রান্তে এসে বুঝেছেন তিনি। তাইতো বয়সের শেষ প্রান্তে এসেও প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে শিশুদের সাথে তিনি নিয়মিত ক্লাস করে তৃতীয় শ্রেনীতে উঠেছেন। আর এই বয়সে বার্ধক্যকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে আব্দুর রশিদের লেখাপড়ার অদম্য ইচ্ছা ও মানসিকতা সাড়া পড়েছে গোটা এলাকায়।
আব্দুর রশিদ। ৫২’র ভাষা আন্দোলনের দু অথবা তিন বছর পরেই তার জন্ম। আশেপাশে কোন বিদ্যালয় না থাকায় বাবা-মা লেখাপড়া শেখায়নি তাকে। আর স্বাক্ষর জ্ঞান না থাকায় অনেক ঘাত-প্রতিঘাতের মুখে পড়েছেন তিনি। লেখা-পড়া না জানার সুযোগ নিয়ে তার জমিও লিখে নেন আস্থাভাজন মানুষেরা। আর এসব ঘাত-প্রতিঘাতের মুখে পড়ে তিনি বুঝতে পেরেছেন নিরক্ষরতাই তার জীবনের সবচেয়ে বড় অভিশাপ। তাই বয়সের শেষ প্রান্তে এতে ২০১৪ সালে তিনি দৃঢ় সংকল্প এঁটেছেন যে কোন মুল্যেই হোক এই অভিশাপ থেকে মুক্ত হতেই হবে তাকে। এই সংকল্প নিয়ে তিনি ভর্তি হতে যান স্থানীয় যশোর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।
২০১৪ সালে প্রথম শ্রেনীতে ভর্তি হওয়ার পর বর্তমানে তৃতীয় শ্রেনীতে উঠেছেন তিনি। আর বেশ আনন্দ নিয়েই তিনি শিশুদের সাথে তাল মিলিয়ে নিয়মিত ক্লাস করছেন।
বয়সের বিশাল পার্থক্য থাকলেও সহপাঠিরাও তাকে মেনে নিয়েছেন নিজেদের ক্লাসের বন্ধু হিসেবেই। আর এমন সম্পর্ক গড়ে ওঠায় আব্দুর রশিদ একদিন স্কুল না আসলেও ভালো লাগেনা তাদের।
শ্রেনী শিক্ষকও জানান, বয়সে বৃদ্ধ হলেও আব্দুর রশিদ ক্লাসে খুব মনযোগী।
প্রচন্ড আগ্রহের কারনে নিয়ম-নীতির বাইরে এসে তাকে লেখাপড়ার সুযোগ করে দেন বলে জানালেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক। ভর্তির পর নিয়মিত স্কুলে আসেন বলে জানালেন তিনি।
স্কুলে পড়ার সুযোগ করে দেয়ায় এলাকাবাসীও স্কুল কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, আব্দুর রশিদের এই বয়সে লেখা-পড়া এলাকায় দৃষ্টান্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং শিক্ষাক্ষেত্রে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে গোটা এলাকায়।
বয়স যাই হোক-তার অদম্য লেখা-পড়ার ইচ্ছাকে সাধুবাদ জানিয়েছেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা। প্রাথমিক স্তরের পাবলিক পরীক্ষায় অংশ নেয়ার ব্যাপারে সর্বাত্মক সহযোগিতা করবেন বলে জানালেন শিক্ষা বিভাগের এই কর্মকর্তা।
বয়সের শেষ প্রান্তে চলে আসলেও আব্দুর রশিদের এই শিক্ষার আগ্রহ দেশে শিক্ষাক্ষেত্রে যেমন অনুকরনীয় হয়ে থাকবে। তেমনি দেশকে নিরক্ষরমুক্ত করতে নিরক্ষর মানুষের চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করবে।