Tue. Apr 29th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

15kএম. আমান উল্লাহ । । খোলা বাজার২৪, মঙ্গলবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০১৬: শত বাধাবিপত্তি পেরিয়ে, পরাধীনতার শিকল ছিঁড়ে কুসংস্কার দুই পায়ে মাড়িয়ে জরাজীর্ণতা অপসারণ করে দারিদ্রতাকে জয় করে নারীরাও যে সুষ্ঠু ও উন্নত সমাজ গঠন করতে পারে তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত কক্সবাজার জেলার রামু উপজেলার মধ্যম কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের হিন্দুপাড়া গ্রামে জন্ম নেয়া এক আলোকিত নারী শিউলী শর্মা। স্বপ্ন আর কাজের মাধ্যমেই তৈরি হয় মেধা। ধৈর্য, ইচ্ছা আর কঠোর অধ্যবসায়ের মাধ্যমে তৈরি হয় যোগ্যতা। সেই যোগ্যতাই জীবনের পরিবর্তন ঘটায়। জীবনকে আলোকিত করে। এ সত্য শিউলী শর্মা নামের এক নারীর জীবন প্রতিষ্ঠিত করেছেন। যেখানে নারীর মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হয়, সেখানেই নারীর জীবন হয় সার্থক। যেখানে নারীর মর্যাদা সেখানেই সুখের ঠিকানা। নারীর অধিকারই নারীর মর্যাদা এ সত্যকে সামনে রেখেই শিউলী শর্মা কাজ শুরু করছেন। শিউলী শর্মার জন্ম মধ্যবিত্ত এক শিক্ষিত হিন্দু পরিবারে। সে সমাজের কাছে ছিল অবহেলিত। সমাজ সংসারের অনাচার, অবহেলা, কুসংস্কার একপর্যায়ে শিউলীকে বিষিয়ে তুলল।

কঠোর অধ্যবসায়, দৃঢ় প্রত্যয়ী মন, মেধা, একাগ্রতা ও সৃজনশীল কর্মকান্ড বদলে দিয়েছে শিউলী শর্মার জীবন চিত্র। চিন্তা-চেতনায় উজ্জীবিত শিউলী দরিদ্রতাকে জয় করার জন্য যখন দৃঢ় সংকল্প নেন ঠিক তখন ২০০৯ সাল। নিজের পিতার বাড়ীর আঙ্গিনায় বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কার্যক্রম-প্রশিক্ষণ, পুঁজি গঠন, আয়বৃদ্ধিমূলক কর্মকান্ড নিয়ে ৩০ জন স্বামী পরিত্যাক্ত ও বেকার যুবতীদের নিয়ে দিলোয়ারা বেগম নামের এক প্রশিক্ষককে সাথে করে তিনি নিজেই শুরু করে দেন বয়ষ্ক শিক্ষা ও সেলাই প্রশিক্ষণ কার্যক্রম। তারপর রামু উপজেলার কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের হিন্দু পাড়ায় একটি সংগঠন গড়ে তোলেন। সংগঠনের নাম দেওয়া হয় জাগো নারী উন্নয়ন সংগঠন। ধীরে ধীরে এ সংগঠনের ব্যাপকতা বৃদ্ধি পায়। চর্তুদিকে ছড়িয়ে পড়ে শিউলী শর্মার সুনাম। এ সংগঠন অনুমোদনের জন্য মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরে কার্যক্রম শুরু করে দেন শিউলী। অনেক বাঁধা পেরিয়ে ২০১০ সালে মহিলা বিষয়ক অধিদপ্ত কর্র্তৃক অনুমোদন হয় শিউলী শর্মার জাগো নারী উন্নয়ন সংগঠন।

তিনি বর্তমানে এ সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক। তারপর থেকে শুরু হয় এ সংগঠনের ব্যাপক কার্যক্রম। রামু উপজেলার ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের মন্ডল পাড়ায় সংগঠনের কার্যালয়। দশটি প্রকল্প নিয়ে বর্তমানে জাগো নারী উন্নয়ন সংগঠনের কার্যক্রম কক্সবাজার জেলাসহ আশ-পাশের কয়েকটি জেলায় সচল রয়েছে। বর্তমানে এসব প্রকল্পের আওতায় ২২’শ নারী প্রশিক্ষনার্থী ও ৪২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছে। জাগো নারী উন্নয়ন সংস্থায় উল্লেখযোগ্য প্রকল্প হচ্ছে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন, সমাজে অবহেলিত নারীদের কর্ম সৃষ্টি ও প্রশিক্ষণ অন্যতম। তার এসব সমাজ উন্নয়ন ও শিক্ষামুলক কর্মকান্ডের জন্য অনেক পুরুষ্কারে ভুষিত হয়েছেন তিনি।

শিউলী শর্মা জানান, আমার এখন একটাই স্বপ্ন দরিদ্র মহিলাদের জন্য কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করা। যেদিন এ অঞ্চলের মহিলাদের দরিদ্রতা থাকবে না, যেদিন নারীর অধিকার ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হবে সেদিনই আমি নিজেকে সফল মনে করব। নারী নির্যাতন, যৌতুক, বাল্যবিবাহ রোধে সোচ্চার শিউলী শর্মা। যেখানেই শিউলী শর্মা শুনতে পান নারী নির্যাতন, যৌতুকের শিকার হচ্ছে সেখানেই ছুটে যান তিনি।

এ ব্যাপারে শিউলী শর্মা তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, প্রতিনিয়ত কোনো না কোনোভাবে নারীরা নানা বঞ্চনা, লাঞ্ছনা, নির্যাতন, বিড়ম্বনা ও বৈষম্যের শিকার হলেও তারা সুবিচার পায় না। কোনো ক্ষেত্রে নারীরা প্রতিবাদী হলেও সুবিচার থেকে বঞ্চিত হয় তারা। এমনকি সালিশ-বৈঠকে মোড়লদের কাছ থেকেও সুবিচার পায় না। গ্রাম্য সালিশ-বৈঠকে কোনো নারী প্রতিনিধি রাখা হয় না, এমনকি সালিশ-বৈঠকে কোনো নারীকে বলা হয় না।

একতরফাভাবেই বিচার করা হয়। নারীদের পক্ষে কেউ কথা বলে না। আমি দেখেছি গ্রামের অনেক সমাজপতি ও মোড়লরা টাকার বিনিময়ে বিচারের নামে অবিচার করছেন। তখন আমার রক্ত মাথায় উঠে যায়। আমি দাবি করে আসছি নারীসংক্রান্ত বিষয়ে যে কোনো সালিশ-বৈঠকে যেন নারীদেরও রাখা হয়। অন্তত একজন নারী প্রতিনিধির উপস্থিতি যেন নিশ্চিত করা হয়। তখনই নারীরা সুবিচার পাবে। আমাদের এলাকায় আমি নিজ উদ্যোগে আইনের সহযোগিতায় নির্যাতন, যৌতুক ও বাল্যবিবাহ থেকে এ পর্যন্ত অনেক নারীকে মুক্ত করতে পেরেছি। তিনি বলেন, যতদিন বেঁচে থাকি ততদিনই এ কাজ করে যাব।