গাজীউল হাসান খান।।খোলা বাজার২৪, বৃহস্পতিবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০১৬: ডোনাল্ড ট্রাম্প আগে যেহেতু সরাসরি কোনো রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন না এবং সরকারি কোনো দায়দায়িত্বও পালন করেননি, তাঁর ভবিষ্যৎ কর্মপদ্ধতি কিংবা কর্মধারা সম্পর্কে কমবেশি সবাই সন্দিহান। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে বর্ণবাদ ও উগ্র জাতীয়তাবাদের অভিযোগ থেকে শুরু করে যুক্তরাষ্ট্রসহ বর্তমান বিশ্বের ক্ষমতার ভারসাম্য, বাণিজ্য ও প্রতিরক্ষাব্যবস্থা—সবই ছুড়ে ফেলে দেওয়ার আশঙ্কা ব্যক্ত হয়েছে।
যদি বাস্তবে তা-ই ঘটে, তবে সে উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলা করার ক্ষমতা ট্রাম্পের রয়েছে কি না, নাকি শেষ পর্যন্ত তিনি তাঁর কল্পিত (হিটলারের মতো) ‘এক মহান ও শক্তিধর আমেরিকা’ প্রতিষ্ঠার তাগিদে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ বাধিয়ে বসবেন—এ ধরনের উদ্বেগ ও আশঙ্কার দোলাচলে এখন শুধু যুক্তরাষ্ট্রের নয়, পৃথিবীর রাজনীতি সচেতন সব মানুষই কমবেশি দুলছেন। এক দ্বিখণ্ডিত কিংবা বিভক্ত আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁর চেয়ে ২২ লাখ জনপ্রিয় ভোট বেশি পেয়েও ইলেকটোরাল কলেজের ভোট কম পাওয়ার কারণে চূড়ান্তভাবে বিজয়ী হতে পারেননি হিলারি ক্লিনটন। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা হাতের নাগালের মধ্যে এসেও শেষ পর্যন্ত ফসকে গেল। যুক্তরাষ্ট্রব্যাপী এ দুর্ভাগ্য, ব্যর্থতা ও হতাশাকে কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছে না হিলারির সমর্থকরা। তারা ডোনাল্ড ট্রাম্পকে তাদের প্রেসিডেন্ট বলে স্বীকার করছে না। এ সুযোগে কেউ কেউ গুজব ছড়িয়ে দেওয়ার প্রয়াস পাচ্ছে যে দোদুল্যমান রাজ্যগুলোয় ইলেকট্রনিক ভোট প্রদান পদ্ধতিতে ব্যাপক কারচুপি করা হয়েছে। ভোট বা ফলাফল হ্যাকিংয়ের পেছনে অনেকে রাশিয়ার অদৃশ্য ‘সাইবার হাত’ দেখতে পাচ্ছে। এর পাশাপাশি তাঁর ভবিষ্যৎ প্রশাসনে অর্থাৎ ক্যাবিনেটে ট্রাম্প একের পর এক নিয়োগ দিয়ে যাচ্ছেন দক্ষিণপন্থী প্রতিক্রিয়াশীল ব্যক্তিদের, যাঁদের বেশির ভাগই জনস্বার্থ, পরিবেশ কিংবা বিশ্ব শান্তির ব্যাপারে কোনো দীর্ঘ পরীক্ষিত নিয়মনীতির তোয়াক্কা করেন না অথবা ধার ধারেন না। তাঁর বিভিন্ন কথাবার্তা কিংবা কার্যকলাপে ট্রাম্প এ মুহূর্তে অর্থাৎ প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার আগেই যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বব্যাপী এমন এক অনিশ্চিত ও উদ্বেগজনক পরিবেশ সৃষ্টি করছেন, যা অতীতে কখনো দেখা যায়নি।
এমন অবস্থায় কী ঘটতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বাণিজ্য, প্রতিরক্ষা, ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষা কিংবা আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও কূটনীতির ক্ষেত্রে? ১০টি উল্লিখিত পন্থায় ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বর্তমান ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আনতে চান। তিনি যুক্তরাষ্ট্র ও মেক্সিকো সীমান্তজুড়ে তিন হাজার কিলোমিটারেরও বেশি এলাকায় সুউচ্চ প্রাচীর নির্মাণ করতে চান, যাতে ব্যয় হবে প্রায় ২৫ বিলিয়ন ডলার। বের করে দিতে চান দুই কোটিরও বেশি অনিবন্ধিত অর্থাৎ বে আইনিভাবে আসা অভিবাসীকে। বাতিল করে দিতে চান ইরানের সঙ্গে স্বাক্ষরিত পারমাণবিক চুক্তি। দরিদ্র মানুষের জন্য প্রণীত ‘ওবামা কেয়ার’ নামে স্বাস্থ্যসেবা বাতিল করতে চান ক্ষমতায় গিয়েই। তা ছাড়া চীনের সঙ্গে বাণিজ্য ও সামরিক ক্ষেত্রে সম্পর্ক সম্পূর্ণ অকার্যকর করে নতুন ব্যবস্থা চালু করতে চান। ১৯৪৯ সালে প্রতিষ্ঠিত পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোকে ট্রাম্প বর্তমান সময়ের উপযোগী মনে করেন না। রাশিয়ার প্রতিবেশী মুক্তবিশ্বের অর্থাৎ ইউরোপীয় দেশগুলোর প্রতিরক্ষার দায়িত্ব সেভাবে আগের মতো আর যুক্তরাষ্ট্র নিতে চায় না। প্রয়োজন হলে সেসব দেশের হাতে পারমাণবিক অস্ত্র তুলে দেওয়া কিংবা তাদের পারমাণবিক ক্ষমতায় শক্তিশালী করতে চান ট্রাম্প। তিনি এমনকি উত্তর কোরিয়ার হুমকির মুখে জাপানকেও পারমাণবিক শক্তিতে ক্ষমতাবান করতে চান। সে ক্ষেত্রে সৌদি আরব, তুরস্ক ও মিসরকেও শিয়াপন্থী ইরানের বিরুদ্ধে পারমাণবিক ক্ষমতার অধিকারী করতে চান। তাতে মধ্যপ্রাচ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে বলে ট্রাম্পের ধারণা। ট্রান্স প্যাসিফিক প্যাক্টসহ (টিপিপি) বিভিন্ন আঞ্চলিক বাণিজ্য চুক্তি বাতিল করতে বদ্ধপরিকর ট্রাম্প। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে তাঁর ভবিষ্যৎ প্রশাসন দ্বিপক্ষীয়ভাবে দর-কষাকষি ও ব্যবসা-বাণিজ্যের ব্যাপারে বিশেষ আগ্রহী। চীনের মুদ্রামান ও বাণিজ্যের ক্ষেত্রে কর নির্ধারণ নিয়েও ট্রাম্পের ব্যাপক আপত্তি রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তার স্বার্থে তিনি সিরিয়া কিংবা অন্যান্য মুসলিম রাষ্ট্র থেকে আগত উদ্বাস্তুদের (প্রায় ১০ হাজার) ঠাঁই দিতে রাজি নন। তাঁর ধারণা, এরা যুক্তরাষ্ট্রে একপর্যায়ে সন্ত্রাসী হামলা ও মৌলবাদী কার্যকলাপ চালু করতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের শ্বেতাঙ্গ ও সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের জীবনাচরণের সঙ্গে মুসলিম রাষ্ট্র থেকে আগত উদ্বাস্তুদের পাশাপাশি বসবাস অত্যন্ত প্রতিহিংসামূলক হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। পক্ষান্তরে রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে এক ‘নবযুগের’ সূচনা করবেন বলে ট্রাম্প উল্লেখ করেছেন। ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রেও অভাবিত পরিবর্তন আনবেন বলে ট্রাম্প ইঙ্গিত করেছেন। ইউক্রেন ও জর্জিয়ার সঙ্গে রাশিয়ার বর্তমান সম্পর্ক নিয়ে মুক্তবিশ্বের নেতৃত্বদানকারী দেশের নেতা হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প মোটেও বিব্রত নন। রাশিয়ার ক্রিমিয়া দখলকে কেন্দ্র করে তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেননি ট্রাম্প। আর সর্বশেষ হচ্ছে আন্তর্জাতিক পরিবেশ চুক্তি। সেটাও মানেন না ট্রাম্প। তাঁর ধারণা, মানুষ কিংবা শিল্পায়ন পরিবেশের জন্য তেমন ধরনের ক্ষতি বয়ে আনতে পারে না। সুতরাং প্যারিসে স্বাক্ষরিত আন্তর্জাতিক পরিবেশ চুক্তিটিও তিনি মানেন না। অর্থাৎ তাঁকে ছাড়া এ পর্যন্ত বিশ্বব্যবস্থায় যত কিছু নীতিগত ও শান্তিপূর্ণভাবে বসবাসের জন্য প্রণয়ন বা গ্রহণ করা হয়েছে, ডোনাল্ড ট্রাম্প তার কিছুই মানেন না। দুটি বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে দীর্ঘদিন ধরে বিশ্বনেতারা যে ব্যবস্থায় উপনীত হয়েছেন, ট্রাম্প তা সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাখ্যান করে নতুন বিশ্বব্যবস্থা চালু করতে চান। সে কারণেই যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের রাজনীতি সচেতন মানুষ ট্রাম্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে স্পষ্টতই অনেক উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন।
ট্রাম্পের ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা এবং তার সাফল্য নিয়ে সন্দিহান মানুষ তাই বর্তমানে যথেষ্ট উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছে। নারীদের প্রতি দুর্বলতা, কেলেঙ্কারি, দুর্নীতি ও বিভিন্ন অনিয়মের কথা ছাড়া ডোনাল্ড ট্রাম্পের কর্মপন্থা সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্ববাসী তেমন আর কিছুই জানে না। তাই ট্রাম্পের বিভিন্ন ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে তাঁর কর্মক্ষমতা নিয়ে সন্দিহান মানুষ। সাধারণ মানুষের ধারণা, প্রচলিত সব কিছু ওলটপালট করে দিয়ে শেষ পর্যন্ত একটি বিশ্বযুদ্ধ বাধিয়ে দিতে পারেন ট্রাম্প, যা থেকে এ বিশ্ব সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। হয়তো বা সেসব ভয়ভীতি কিংবা আশঙ্কা থেকেই বিভ্রান্ত মানুষ এখন ট্রাম্পের ভবিষ্যৎ ও তাঁর শাসনের পরিণতি সম্পর্কে জানতে অত্যন্ত আগ্রহী হয়ে উঠেছে। আর সে কারণেই এখন ‘ইউটিউব’সহ বিভিন্ন মাধ্যমে পাওয়া যাচ্ছে ট্রাম্প সম্পর্কে বিভিন্ন ভবিষ্যদ্বাণী। ষোড়শ শতাব্দীর ফরাসি সন্ন্যাসী মাইকেল নস্ট্রাডামাস থেকে শুরু করে পরলোকগত ক্যাথলিক ধর্মগুরু এল্ডার সেইন্ট পাইসিয়াস ও সেইন্ট অ্যারিস্টো ক্লিসের বিভিন্ন ভবিষ্যদ্বাণী নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রব্যাপী অনেকেই এখন অত্যন্ত উৎসাহী হয়ে উঠেছে। প্রখ্যাত ফরাসি সন্ন্যাসী নস্ট্রাডামাসের জন্ম ১৫০৩ খ্রিস্টাব্দে এবং তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন ১৫৫৬ ক্রিস্টাব্দে। যুত্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বে ঘটে যাওয়া বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা নিয়ে নস্ট্রাডামাস ভবিষ্যদ্বাণী দিয়ে গিয়েছিলেন, যা সত্য প্রমাণিত হয়েছে বলে প্রচার করা হচ্ছে। এর মধ্যে প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এবং জাপানে আণবিক বোমা বিস্ফোরণ, ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার আক্রমণ ও ধ্বংস, সোভিয়েত পদ্ধতির অবসান, চীনের উত্থান, প্রিন্সেস ডায়ানার মৃত্যু, কৃষ্ণাঙ্গ আফ্রিকান-আমেরিকান রাজনীতিক বারাক ওবামার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়া এবং এমনকি পবর্তপ্রমাণ বিরোধিতা ও সমালোচনার মুখেও অরাজনৈতিক ব্যক্তি ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচনে জয়লাভ করার আভাস তাঁরা দিয়ে গেছেন বলে দাবি করা হচ্ছে।
ইউটিউবের স্বল্পদৈর্ঘ্য অসংখ্য সচিত্র প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রায় ৪০০ বছরেরও আগে নস্ট্রাডামাসের দেওয়া ভবিষ্যদ্বাণীতে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে (বর্ণনা অনুযায়ী) ২০১৬ সালে শ্বেতাঙ্গ জাতীয়তাবাদী এক অরাজনৈতিক ব্যক্তি প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হবেন। ধরে নেওয়া হয়েছে, এটিই ডোনাল্ড ট্রাম্প। এবং ২০১৭ সাল বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার কারণে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতে মহামন্দা দেখা দেবে। তিনিই শুরু করবেন তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ, যা এ পৃথিবীর পরিসমাপ্তি ঘটাতে পারে। শুধু তা-ই নয়, এর মধ্যে উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়া এক রাষ্ট্রে পরিণত হতে পারে। এর আগেই উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম ঝংয়ের মৃত্যু হতে পারে অথবা ক্ষমতা থেকে তিনি অপসারিত হতে পারেন। ইতালির অর্থনৈতিক ব্যবস্থা চরম সংকটে পড়বে। তা ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে ‘অ্যান্টি ক্রাইস্ট’ নামে এক মহাশক্তিশালী ব্যক্তির আগমন ঘটবে বলেও ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে তার সঠিক বর্ণনা পাওয়া যায়নি। তবে সন্ন্যাসী পাইসিয়াস হুঁশিয়ার করে বারবার বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের অন্যতম প্রধান পরাশক্তির ক্ষমতা হারাবে। যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ না হলেই বিশ্বে শান্তি বহাল থাকবে। তিনি আরো বলেছেন, রাশিয়া একনায়কতান্ত্রিক শাসন থেকে মুক্ত হবে এবং ধর্ম (সম্ভবত খ্রিস্টীয় মতবাদ) প্রচারে বিভিন্ন রাষ্ট্র তৎপর হবে। রাশিয়া হবে বিশ্বের নতুন সভ্যতার কেন্দ্র। তবে এর আগে শিয়া অধ্যুষিত ইরান ও সুন্নি মুসলিমদের নেতৃত্বদানকারী তুরস্কের মধ্যে এক বিরাট যুদ্ধ সংঘটিত হতে পারে। তুরস্ক একের পর এক মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার বিভিন্ন বিশৃঙ্খলাপূর্ণ রাষ্ট্র দখল করে নিতে পারে। মুসলিম বিশ্বের সঙ্গে চীনের বিশেষ সম্পর্ক গড়ে ওঠার পূর্বাভাসও বহুবার দেওয়া হয়েছে। তবে নস্ট্রাডামাস, পাইসিয়াস কিংবা অ্যারোস্টোক্লিসের ভবিষ্যদ্বাণীর সঠিক ইংরেজি তর্জমা বা অনুবাদ হয়েছে কি না তা নিয়েও অনেকের যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। কারণ ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার পর তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের শুরুর কথা বিভিন্ন ভবিষ্যৎ দ্রষ্টা বললেও ডোনাল্ড ট্রাম্পের নিহত হওয়ার কথা কোথাও আভাস দেওয়া হয়েছে, আবার কোথাও মোটেও উল্লেখ করা হয়নি। নস্ট্রাডামাস ২২ জানুয়ারি ২০১৭ সালকে একটি বিশেষ দিন হিসেবে উল্লেখ করেছেন। অন্যদিকে সন্ন্যাসী পাইসিয়াস তুরস্ক ভেঙে যাওয়া এবং ইস্তাম্বুল নগরী গ্রিসের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কথা বলেছেন বলে উল্লেখ করা হলেও অনেকে এটাকে একটি মহলের ‘ষড়যন্ত্রমূলক প্রচার’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
নস্ট্রাডামাস খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বী ছিলেন না। সম্ভবত তিনি ছিলেন ইহুদি ধর্মের অনুসারী। তাঁর বিভিন্ন ভবিষ্যদ্বাণীকে কেন্দ্র করে নিউ ইয়র্ক ও জেরুজালেমের একটি ইহুদিবাদী গোষ্ঠী বিভিন্ন ষড়যন্ত্রমূলক তত্ত্ব ও তথ্য দিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তাদের ধারণা, ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ইসরায়েল রাষ্ট্রের ইহুদিবাদীরা সন্তোষজনকভাবে কাজ করতে পারবেন। তাতে ইহুদি রাষ্ট্রের অস্তিত্ব সুরক্ষিত ও সুনিশ্চিত হবে। তাই তারা মুসলিম অধ্যুষিত রাষ্ট্রগুলোকে টুকরো টুকরো করে দুর্বল রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায়। সে কারণেই নাকি ইহুদিবাদীদের বিভিন্ন ষড়যন্ত্রমূলক অপপ্রচার। এ অভিযোগ কোনো কোনো মহল থেকে উঠেছে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্পর্কে যেসব ভবিষ্যদ্বাণী পাওয়া গেছে, তাতে যুক্তরাষ্ট্রে দেশব্যাপী নানা গল্প-গুজবের জন্ম হয়েছে। মনস্তাত্ত্বিক দিক দিয়ে ট্রাম্পের চরিত্রগত অস্থিরতা, একগুঁয়েমি ও দুনিয়াকে বদলে দেওয়ার তাঁর যে একতরফা ঝোঁক, সেগুলোর সঙ্গে বিভিন্ন ভবিষ্যদ্বাণীর কিছু কিছু মিল খুঁজে পাওয়া যায়। এ অবস্থায় অনেকে মনে করে, এককভাবে বিশ্বের নেতৃত্ব দিতে গিয়ে ট্রাম্প বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আগের সম্পর্ক ছিন্ন করে ফেলতে পারেন। তা ছাড়া চীনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় তাঁর বিভিন্ন বিষোদ্গার কোনো কল্যাণ বয়ে আনতে পারে না। তা ছাড়া চীনের আরো উত্থান অর্থাৎ বিশ্বের এক নম্বর পরাশক্তিতে পরিণত হওয়া কিংবা বিশ্বের এক নম্বর অর্থনীতিতে পরিণত হওয়াকে ট্রাম্প কোনোভাবেই ঠেকিয়ে রাখতে পারবেন না। এটা কোনো ভবিষ্যদ্বাণী নয়, এটা হচ্ছে চরম বাস্তবতা। তা ছাড়া ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তি কিংবা কিউবার সঙ্গে সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের চুক্তি বাতিল করে ট্রাম্প বর্তমান অস্থির বিশ্বে শান্তি ত্বরান্বিত করতে পারবেন না। এ ছাড়া হিস্পানিকদের জগৎ কিংবা মুসলিম বিশ্ব অনেক বড়। তাদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ পোষণ করে ট্রাম্প বেশি দূর এগোতে পারবেন বলে মনে হয় না। এসব কারণেই যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বব্যাপী ট্রাম্পের নেতৃত্বের প্রতি একটি অবিশ্বাস ও অনির্ভরশীলতার ভাব সৃষ্টি হয়েছে। আর তার সঙ্গে সঙ্গে জন্ম নিচ্ছে সীমাহীন গুজব। মানুষ মনে করছে, যুক্তরাষ্ট্র আর কখনোই হয়তো ট্রাম্প-পূর্ববর্তী অবস্থায় ফিরে যেতে পারবে না। সে ছিল ইতিহাসের এক অধ্যায়, যা শেষ হয়েছে। বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে, ট্রাম্পের শাসনকাল শুরু হওয়ার আগেই এসব নিয়ে এত বিতর্ক হচ্ছে, যা এর আগে যুক্তরাষ্ট্রে আর কখনোই দেখা যায়নি। সুতরাং এ অবস্থায় যে যা বলছে, অন্যরা তা অত্যন্ত আগ্রহ নিয়ে শুনছে। পশ্চিমা জগতের মুক্ত গণমাধ্যমের আঙিনায় এমন একটি পরিবেশ বা পরিস্থিতি কল্পনাও করা যায় না।
লেখক : বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) , সাবেক প্রধান সম্পাদক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক
[সংকলিত]