Wed. Apr 30th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খোলা বাজার২৪, শুক্রবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০১৬:  বর্তমান পেক্ষাপট-এ নতুন প্রজন্মের ” বিজয় দিবসের ভাবনা” কি  ? এ প্রশ্ন রেখেই লেখাটা শুরু করলাম। এই দেশ স্বাধীন বা বিজয় হওয়ার পটভূমিতে আছে সু-র্দীঘ ইতিহাস। ১৯৪৭-এ দেশ ভাগ হলো। এরপর আইয়ুব এর সেনা শাসন চলল এবং সেই সাথে চলল পশ্চিম পাকিস্থানী র্কতৃক আমাদের অর্থাৎ পূর্ব পাকিস্থানীদের প্রতিটি ক্ষেত্রে বৈষম্য, শোষণ  আর লাঞ্ছনা-বঞ্চনার শিকার। এর মধ্যে ১৯৬৫-তে পাক-ভারত ‘কারগিল’ যুদ্ধ হলো, সে যুদ্ধে তৎকালীন সেনা জিয়াউর রহমান এর নেতৃত্বে সেই অংশে বা ইউনিটে পাকিস্থান বিজয় লাভ করলো। ১৯৬৬ তে ছয় দফা এলো। ১৯৬৯-এ গণঅভ্যুন্থান হলো। ১৯৭০-এ নির্বাচন হলো। আওয়ামীলীগ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেল। শেখ মুজিব প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্য দেন-দরবার চালাতে লাগল। পাকিস্থান তথা ইয়াহিয়া-ভূট্টো’রা শেখ মুজিবকে প্রেসিডেন্সি না দেওয়ার জন্য তাল-বাহানা করতে থাকল। শেখ মুজিব প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্য নিজ সিদ্ধান্তেই অনড় রইল। গোপনে গোপনে পাকিস্থান এ দেশে যুদ্ধের রশদ যোগান দিতে থাকল। শেখ মুজিব নিজে প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্য ছাড় না দিতে অটল রইল। ১৯৭১-এর ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্থানী হানাদার বাহিনী ঢাকার নিরীহ মানুষের উপর ট্যাঙ্ক-কামান-গুলিবর্ষণ চালিয়ে র্নিবিচারে হত্যাযঙ্গ চালাতে থাকল এবং সেই সাথে শেখ মুজিবকে বন্দী করে পাকিস্থানে নিয়ে গেল। সাথে সাথে তৎকালীন বহু নেতা জাতিকে ফেলে ভারতে আশ্রয় নিল। জাতির আকাশে যেনো অমানিশার ঘোর আধার নেমে এল। ছিল না তখন জাতির কোন কান্ডারী। অন্ধকার-শুন্য-বিভীষিকাময় সময় তখন। চারদিকে থমথমে পরিবেশ। ঠিক এমনি সময় ‘মেজর জিয়াউর রহমান’ চট্টগ্রামে প্রথম ‘রিভল্ট’ ঘোষণা করলেন এবং চট্টগ্রাম এর কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে ১৯৭১ এর ২৬ শে মার্চ বাংলাদেশ এর “স্বাধীনতা ঘোষণা” করলেন। যা সারাদেশে তো বটেই; বিদেশেও ছড়িয়ে গেল। এই মেজর জিয়াউর রহমান-ই ছিলেন ১৯৬৫-তে পাক-ভারত ‘কারগিল’ যুদ্ধের বিজয়ী সেনা। যিনি “হিলাল-ই-জুরাত” খেতাব প্রাপ্ত। এছাড়াও তৎকালীন সময়ে (১৯৬৫ সালে কারগিল যুদ্ধের সময়) জিয়াউর রহমান এর ইউনিট এই যুদ্ধে বীরত্বের জন্য দুটি “সিতারা-ই-জুরাত” এবং নয়টি “তামঘা-ই-জুরাত” মেডেল লাভ করেন । সেই মেজর জিয়াউর রহমান র্কতৃক ‘স্বাধীনতা ঘোষণা’র সাথে সাথে সারা দেশে ‘আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা-কৃষক-শ্রমিকসহ সকল জনতা’ লাঠি হাতে-পাকিস্থানী অস্ত্র ছিনিয়ে নিয়ে-প্রশিক্ষন নিয়ে মুক্তিবাহিনীসহ বিভিন্ন গেরিলা বাহিনী গঠন করে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে থাকে। মেজর জিয়াউর রহমান “স্বাধীনতার ঘোষণা” দিয়ে জনমত গঠনসহ নিজেও ১নং সেক্টর কমান্ডারের দ্বয়িত্ব নিয়ে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে থাকেন। চুড়ান্ত বিজয় অর্জনের জন্য যুদ্ধকে আরো বেগবান করার লক্ষ্যে মেজর জিয়াউর রহমান ‘জেড র্ফোস’ এর নেতৃত্ব দিয়ে অবিরত যুদ্ধ চালিয়ে যেতে থাকেন। যুদ্ধে তিরিশ লক্ষ শহীদ আর দেড় লক্ষ মা-বোনদের ইজ্জতের বিনিময়ে ১৯৭১ এর ১৬ ই ডিসেম্বর তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) বিকালে এ কে খন্দকার ও জেনারেল নিয়াজী’র মধ্যে এক স্বাক্ষরের মাধ্যমে অর্জিত হয় লাল-সবুজ পতাকার বাংলাদেশের চুড়ান্ত বিজয় এবং ১৯৭২ সাল থেকে ১৬ ডিসেম্বর জাতীয়ভাবে বিজয় দিবস পালন করা হয়। (মেজর জিয়াউর রহমান দেশ স্বাধীনের পর স্বাধীন দেশে স্ব-পদে চাকুরি করেন। আর শেখ মুজিব বন্দীদশা থেকে মুক্তি পেয়ে ক্ষমতায় বসেন। )
বৈষম্য, শাসন-শোষন, লাঞ্ছনা-বঞ্চনা’র বিরুদ্ধে আর জনগণের রায়ের চুড়ান্ত রুপ দিতেই অর্থাৎ গণতন্ত্রের বিজয় হতেই সৃষ্ট ইয়াহিয়-ভূট্টো-মুজিব এর মধ্যে আলাপ-আলোচনা চলাকালে উদ্ভুত পরিস্থিতিতে মেজর জিয়াউর রহমান কর্তৃক স্বাধীনতা ঘোষণা’র মাধ্যমে সে সময় সু-র্দীঘ নয় মাসে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে বিজয় অর্জিত হয়েছিল।

…………………কেন আজ রাজনীতিতে বৈষম্য ? সরকারী দল বা জোটের জন্য এক নীতি। সরকারী দল বা জোটের বাহিরের দল বা জোটের জন্য অন্য নীতি। সরকারী দলের নেতা-কর্মীরা শত শত অপরাধ করলেও কোন মামলা হয় না বা থানায় মামলা নেয় না বরং আগের মামলা থাকলে তা তুলে নেওয়া হয়। সরকারী দল বা জোটের বাহিরের দল বা জোটের নেতা-কর্মীদের মামলা তুলে নেওয়া তো দুরের কথা বরঞ্চে কোন অপরাধ না করলেও তাদের নামে বা বে-নামে হাজার হাজার মামলা-হামলা-জেল-জুলুম-রিমান্ড-নির্যাতন-অপহরন-গুম-পঙ্গু-খুন হতে হয়। এক দল দেদারসে সভা-সমাবেশ, মিছিল-মিটিং করতে পারে। অপরদল সভা-সমাবেশ করতে চাইলে দেওয়া হয় বাধা-প্রশাসনিক নিষেধাক্কা।

সরকারী চাকুরীর ক্ষেত্রে লাগে সরকার দলীয় সমর্থকের  সমর্থন। না হলে ধরা হয় বিরোধী দলের লোক অতএব তাদের চাকুরি নেই। অথচ বর্তমান আ’লীগ সরকারের ইস্তেহার ছিল ঘরে ঘরে চাকুরি দেওয়ার। আজ কোথায় সে প্রতিশ্রুতি ? ………………………এগুলো কি ১৯৭১ সালের বিজয়ের তাৎপর্য বহন করে ?

তাহলে আজ  কোথায়-ই বা বিজয়ের তাৎপর্য ? আজো কেন এই দেশে একসাথে সাত-সাতটি খুন হয়-যার সুবিচার হয় না ? অজো কেন মেধাবী ছাত্র ত্বকী হত্যার বিচার হয় না ? আজো কেন সিলেটের রাজন, খুলনার রাকিব, বরগুনার রবিউল-এর মতো শিশুরা নির্মমভাবে হত্যার শিকার হয় ? আজো কেন র্গামেন্ট’স নারী কর্মীরা কাজ শেষে ঘরে ফেরার পথে বা স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পড়–য়া মেয়েরা ( যেমন- কুমিল্লা’র তনু) পড়া শেষে বাড়ী ফেরার পথে নির্যাতন-ধর্ষণের শিকার হয়। আজো কেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ কর্তৃক নিরীহ দর্জি হত্যা হয়-যার চুড়ান্ত সাজা হয় না ? আজো কেন এই দেশে ‘রানা প্লাজা’র মতো ট্র্যাজেডী ঘটে- সরকারী দল করার জন্য অপরাধীর বিচার হয় না। আজো কেন হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট হলেও ‘সোনালী ব্যাংক-হলমার্ক কেলেংকারী বা বাংলাদেশ ব্যাংকের মতো রিজার্ভ চুরি হোতাদের ধরা হয় না, বিচার হয় না। আজো কেন শেয়ার বাজারের টাকা লুটকারীদের হুদিস দেওয়া হয় না বা এ বিষয়ে কোন তথ্য প্রকাশ করা হয় না ? আজো কেন সংখ্যালঘুদের উপর হামরা চলে ? আজো কেন এ দেশে কেউ কেউ জাতি-উপজাতি বলে বিভেত তোলে ? আজো কেন ইয়াবা বা মাদক নামক মরণ নেশার ব্যাবসা চলে ? আজো কেন সাংবাদিক দম্পতি ‘সাগর-রুনি’ হত্যার কোন কুল-কিনারা বের করা হয় না-বিচার হয় না। আজো কেন সাংবাদিকদের স্বাধীনভাবে কলম ধরতে আসে বাধা ?…………….. তাহলে এই কি  আজ বিজয়ের তাৎপর্য ?

আজো কেন পথে-ঘাটে রাতে বা দিনে নিরীহ মানুষের গুলি খেতে হয় ? এমনকি মায়ের পেটেও নিষ্পাপ শিশুর গুলি খেতে হয়-যার বিচার হয় না। আজো কেন এই দেশে হয় বোমা হামলা-মরে মানুষ। অফিসে যেতে বা পথে-ঘাটে এমনকি ঘরের ভিতরে হতে হয় খুন। আজো কেন মানুষের জীবন যাপিত করতে হয় ভয়-ভীতির মধ্যে ? আজো কেন অস্ত্রের মুখে সন্ত্রাসীরা টাকা লুটে ? আজো কেন মানুষের জান-মালের কোন নিরাপত্তা নেই ?

আজো কেন এই দেশে উন্নয়ন প্রকল্পে দফায় দফায় বাজেট বাড়িয়ে টাকা লুটপাট করে ? আজো কেন সংসদে মিথ্যা কথার ফুলঝুড়ি ঝড়ে ? বিচারের বানী আজো কেন আদালতে কেঁদে মরে ? আজো কেন এ দেশে বিচারহীনতার সংস্কৃতি চলে ? আজো কেন আফিসে ফাইল চলে ঘুষের বলে ? আজো কেন এই দেশে কালো টাকার খেলা চলে ? আজো কেন এই দেশে ভাই দুর্নীতি চলে ? আজো কেন চাঁদাবাজি-ছিনতাই আর রাহাজানি চলে ? আজো কেন সন্ত্রাসীদের গডফাদাররা দম্ভভরে মাথা উচে চলে ? আজো কেন সীমান্তে ফেলানী’দের লাশ ঝোলে ? আজো কেন চুক্তিগুলো জনসন্মুখে প্রকাশ করা হয় না কোন ভয়ে ? আজো কেন তিস্তার পানির ন্যায্য পাওনা আদায় হয় না ? ১৯৭১-এর ১৬ ডিসেম্বরে পিন্ডির জিঞ্জির ছিড়লেও দিল্লির দাসত্বের জিঞ্জির আজো কেন চলছে ?……………..এসব প্রশ্ন থেকে কি সহসাই এই জাতির মুক্তি মিলছে ?

এদেশে কেন এখনও চলে ভোটের নামে তামাশা ? ভোটের দিন জনগণ ভোট দিতে গেলে বলা হয় ভোট দেওয়া হয়েছে, বাড়ী যাও। ভোটের আগেই কেন ব্যালট বাক্স ভরা থাকে ? দলীয় ক্যাডার দ্বারা কেন আগেই ভোটকেন্দ্র দখল করা হয়ে যায় ? পোলিং অফিসার কেন একাই একাধিক ছিল মেরে ব্যালট বাক্স ভরায় ? রক্ষক কেন ভক্ষক হয়ে ফলাফল দেয় পাল্টে ? নির্বাচন কমিশন কেন কোনো দ্বায়-দ্বায়িত্ব না নিয়ে দায় সারা বক্তব্য দিয়ে যায় পার পেয়ে ? কেন-ই বা নির্বাচন কমিশন অথৈব, ইতর, মেরুদন্ডহীন উপাধি পায় ? পুলিশ-প্রশাসন কেন নীরবে পক্ষপাতিত্ব দেখিয়ে সব শয়ে যায় ? পুলিশ-প্রশাসন কেন আজ নির্বিকার ? কেন তারা নিরপেক্ষতা বজায় রাখছে না ? ভোটের আগেই কেন একদল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় বা কূট-কৌশলে বিনা প্রতিদন্দিতায় নির্বাচিত হয় ? মন্ত্রী-এমপি’রা নিজের ভোটটা পর্যন্ত না দিয়ে কিভাবে সংসদে যায় ? “আজব-বিচিত্র এ দেশ যেনো আশ্চর্য এক সেলুকাস”।

১৯৭১ এর রণাঙ্গণের জীবিত বীরযোদ্ধারা আজ চুপ কেন ? এ সব বৈষম্য বা দুর্নীতি-লুটপাট-অনিয়মের বিষয়ে মুখ খুলতে বা কথা বলতে কোথায় তাদের বাধা ? তাঁরা তো ১৯৭১-এ পাক-হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে অসীম সাহসিকতার সাথে লড়ে দেশ ও জাতিকে পরাধীনতা, বৈষম্য, শাসন-শোষন, লাঞ্ছনা-বঞ্চনা থেকে মুক্তি দিয়ে বিজয় উপহার দিয়েছিল।। তবে আজ কেন তাঁরা হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকার মতো আছে ? নতুন প্রজন্মের কাছে তাঁরা-ই এর কি-ই বা জবাব দিবে ? প্রায় সাড়ে চার দশক পরে এই কি আজ  বিজয় দিবসের  ভাবনা বা তাৎপর্য ।
লেখক: সাংবাদিক, কবি ও কলামিস্ট।