Wed. Jun 18th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

18মুমিতুল মিম্মা

খোলা বাজার২৪, শনিবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০১৬:
আমাদের দেশের প্রচলিত সমস্ত গালিই নারীকেন্দ্রিক। বলা ভালো, মেয়েদের যোনিকেন্দ্রিক অথবা মেয়েদের আচরণকেন্দ্রিক। বালিকা বিদ্যালয় এবং মেয়েদের কলেজ থেকে একান্তই মেয়েবান্ধব পরিবেশ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে উঠেই যে গালির সাথে প্রায় প্রতিদিন পরিচয় ঘটলো, সেটা হলো ‘হাফ লেডিস’।

আহা সুমধুর একটা শব্দ! মেয়ে কিন্তু সবটা নয়, আধা মেয়েমানুষ! ছেলেরা ন্যাকা ন্যাকা কথা কইলেই নাকি মেয়েমানুষ হয়ে যায়। একটা ছেলে যে ন্যাকা ন্যাকা কথা কয় কিংবা একটু নরম গোছের তাকেই হাফ লেডিস তকমা দেয়া যায়। হাফ লেডিস শব্দটাতে নাকি নারী-পুরুষের কোন বিদ্বেষই নেই। নারী পুরুষের বিদ্বেষটা নাকি মেয়েরা (স্পষ্ট করে বললে নারীবাদীরা) টেনে আনছে শব্দটার ভেতরে। এটা একটা ‘ফানি’ শব্দ। এটা শুনে আমার নিজের কাছেই মনে হচ্ছে- ‘হাউ ফানি!’
সেদিন একটা মেমে দেখলাম অ্যাপল এর। মেমেতে একটা মেয়ের পেছনভাগ ‘অ্যাপল’ এর লোগোর খাঁজটাতে বসিয়ে বলা হয়েছে আপেলের বাকি অংশ খুঁজে পাওয়া গেছে। কী অসাধারণ চিন্তা! এই মেমের হাজার হাজার শেয়ার দেখলাম ফেসবুকে। বমি চেপে এখানে কিছু বলতে গিয়েই দেখি অনেকেই বলছেন, “বিনোদনের সাথে নারী-পুরুষ বিদ্বেষ মেশাবেন না, মাননীয় স্পিকার”। আমি সবখানেই নারী-পুরুষের এতো বিদ্বেষ খুঁজি কেন স্পিকারকে পেলে একটু জিজ্ঞেস করতাম।
একটা মেয়ের চরিত্রের অনেকখানি জায়গা বলা ভালো সবটা জুড়েই থাকে তার যোনি। সেখানে কেবলমাত্র একজনেরই প্রবেশাধিকার আছে। এর বাইরে পান থেকে চুন খসলেই তিনি বেশ্যা। সেখানে কারও প্রবেশ হোক আর না হোক, মেয়ে হয়ে জন্মালে জীবনের বেশিরভাগ সময় কোন না কোন অজুহাতে আপনাকে বেশ্যা, ম*, খ** (আঞ্চলিক ভাষায় আরও কত কী) হতেই হবে।
ওড়না না পরলে আপনি বেশ্যা। ছেলেদের মতের বিরুদ্ধে কিছু বলেছেন, আপনি বেশ্যা। অন্যায়ের বিরুদ্ধে কিছু বলেছেন, আপনি বেশ্যা। আপনি রক্তদানের মত মহৎ কাজ করে রাত বারোটায় বাসায় ফিরছেন, আপনি বেশ্যা। যে ছেলেটাকে ভালোবেসে পানচিনি করবার পরে বুঝলেন তিনি আপনার ঘাড়ে চেপে বসতে চাইছেন, তার সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করলে আপনি বেশ্যা। বিচ্ছেদের পরে অন্য কারও সাথে আপনার একটু ভালো সম্পর্ক হলেই আপনি বেশ্যা। পড়াশোনা কিংবা চাকরির জন্যে সন্তানধারণে কিঞ্চিৎ অনীহা দেখলেই আপনি ফিগার ঠিক রাখতে চাওয়া বেশ্যা। মেয়েদের জীবনভর চলে ‘বেশ্যা সমাচার’।
এত কিছুর পরও আমাদের প্রচলিত সব কৌতুক কিংবা চুটকি বেশিরভাগেই মেয়েদের হেয় করে তৃতীয় শ্রেণীর আনন্দ দেয়া হয়। আনন্দ পান পুরুষেরা এবং ঝাণ্ডাধারী মেয়েরাও। সচেতনে অথবা অবচেতনে তারা বলেন, “আমরা এখানে মেয়েদের নিয়ে বাজে কিছুই বলিনি। অবশ্যই আমরা নারীদের সম্মান করি, নারী আমার মা, নারী আমার বোন, নারী আমার প্রেমিকা। তাদের বাদ দিয়ে আমরা কিছুই করতে পারবো না”। কী মহান উক্তি! গালি দিয়ে, বাকি অংশ খুঁজে – নারী আমার মা-বোন-প্রেমিকা! কী সম্মান! এতো সম্মান আমি কোথায় রাখি?!
বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে তো বিদ্বেষের শুরু। আরও যে কত কী দেখতে হয় বাকি জীবনে গিয়ে কে জানে! এতো দিন আমি খুব করে চাইতাম আমার একটা মেয়ে হোক, এখন খুব করে চাই একটা ছেলে হোক। আমি তাকে হাত ধরে শেখাবো বিপরীত লিঙ্গের মানুষকে শ্রদ্ধা কীভাবে করতে হয়! কথায় কথায় প্রতি মুহূর্তে ‘মাদারচোদ’ গালি দিয়ে মা-বোন-প্রেমিকা হিসেবে সম্মানের এই দ্বিচারিতার অবসান হোক এটাই কাম্য!
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়