Wed. Apr 30th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

24kখোলা বাজার২৪, সোমবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০১৬: গ্রামের বাড়িতে বাড়িয়ে গিয়ে বয়স্ক ছাত্র সংগ্রহ, তাদের হাতে বই,সিলেট,চক তুলে দেওয়া,বাড়ির পরিত্যক্ত জমিতে ফলজ ও ওষুধী গাছ লাগাতে উৎসাহিত করা, ফ্রি রক্ত,ডায়াবেটিক পরীক্ষা, বিভিন্ন উৎসবে জামা-কাপড়, সেমায় চিনি বিতরন করে তাদের লেখাপাড়ার উদ্বুদ্ধর কাজ করে চলেছে কাজী এমদাদ হোসেন। কৃষক,ভ্যানচালক, শ্রমজীবিসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ তার ছাত্র। ২০০৮ সাল থেকে এমদাদ হোসেন নিজে টিউশনি করে যে টাকা আয় করেন সেই টাকা থেকে বয়স্ক শিক্ষার্থীদের পেছনে ব্যয় করেন। তার প্রতিষ্টিত নৈশ বিদ্যালয়ে পাঠদান করিয়ে তাদের স্বাক্ষরজ্ঞান অর্জন ভুমিকা রেখে যাচ্ছেন। এমদাদ হোসেন ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার কোলা ইউনিয়নের দৌলতপুর গ্রামের ওয়াজেদ আলীর ছেলে।বর্তমানে তিনি দুটি গ্রামে তিনটি নৈশ বিদ্যালয় পরিচালনা করছেন। যেখানে প্রায় শতাধিক ব্যক্তি পড়াশোনা করছে।

কাজী এমদাদ হোসেন জানান, গ্রামের সুনিল দাস নামের এক প্রতিবেশী বৃদ্ধ ব্যাংক হিসাব খুলতে যান। কিন্তু অসুবিধা হলো সে নিজে লিখতে পারেন না পড়তেও পারেন না। তাই ব্যাংক কর্মকর্তারা তাকে টিপসই দিতে বলেন। ব্যাংকে টাকা জমা ও উঠানো উভয়ই ক্ষেত্রেই ঝামেলা টিপসই দিয়ে। ব্যাংক কর্মকর্তা জানান আপনি স্বাক্ষর শিখে নিবেন। বিষয়টি জানার পর কাজী এমদাদ হোসেনের মনে দাগ কাটলো। সুনিলের মতো অনেক বয়স্ক মানুষ আছে যারা স্বাক্ষর করতে পারে না। পড়তে পারে না। সেই থেকে উদ্যোগ নেন নৈশ্য বিদ্যালয়ের মাধ্যমে এদের স্বাক্ষরজ্ঞান সম্পন্ন ও পড়ার উপযোগ করে তোলার। পেশায় প্রাইভেট শিক্ষক এমদাদ হোসেন আরো জানান, লেখাপড়া শেষ খরে খুলনায় একটি ওষুধ কোম্পানীতে চাকুরি নেন। পরে চাকুরি ছেড়ে চলে আসে। বাড়িতে এসে একটি কোচিং সেন্টারে শিক্ষকতা শুরু করেন। প্রতিদিন ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রাইভেট পড়ানোর কাজ। এ সময়ে তিনি গ্রামের বিভিন্ন মানুষ তার কাছে পরামর্শ নিতে আসতেন। অজ্ঞরজ্ঞানহীণ মানুষের কথা ভেবে তিনি নৈশ্য বিদ্যালয় স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়। প্রথমে দৌলতপুর গ্রামের একটি গাছের নিচে এই স্কুল শুরু করেন। সেখানে এক এক করে ৩২জন বয়স্ক শিক্ষার্থী আসে। বর্তমানে এর পর চাহিদার কারনে কাদিডাঙ্গা গ্রামে আরো ২টি স্কুল তৈরি করা হয়। সেখানে দুটি কেন্দ্রে প্রায় ৫৭জন শিক্ষার্থী নৈশ্য বিদ্যালয়ে আসে। বাবুল ও রইস নামের দুজন ভলেন্টিয়ার আছে এই কেন্দ্র দুটি দেখার। সপ্তাহে ৫দিন সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত তিনি এই বিদ্যালয় চালান। নৈশ্য বিদ্যালয়ে শুধু স্বাক্ষরজ্ঞান করা হয় না। এদের ধমীয় ও স্বাস্থ্য সচেতনতামুলক,কৃষিসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এই কেন্দ্র গুলোতে বছরে ৩ বার ফ্রি রক্ত পরীক্ষা,ডায়াবেটিস পরীক্ষা করানো হয়। ঢাকার একজনের সহযোগিতায় প্রতিটি শিক্ষার্থীকে শীতে কম্বল কিনে দেওয়া হয় যাতে তারা লেখাপড়ায় উদ্বুদ্ধ হয়। তবে শিক্ষার্থীদের নিজ খরচে বই খাতা, স্লেট চক, কলম, হারিকেন,চার্জার ক্রয় করে দেন তিনি।এমদাদ হোসেন জানান, তিনি চান তার পুরো কোলা ইউনিয়নে প্রতিটি গ্রামে একটি বয়স্ক নৈশ বিদ্যালয় স্থাপন করার। যে সকল লোক সারাদিন কাজ করে সন্ধ্যায় কিছু টা সময় ব্যয় করে নিজে স্বাক্ষরজ্ঞান সম্পন্ন অথবা বিভিন্ন তথ্য নিজে পড়ে জানতে পারবে। তিনি স্বপ্ন দেখেন আগামী ৫ বছরের মধ্যে কোলা ইউনিয়ন শতভাগ মানুষ স্বাক্ষরজ্ঞান সম্পন্ন হবে।

কোলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আয়ুব হোসেন জানান, এমদাদ একজন ভালো মানুষ। তার সুনাম রয়েছে এলাকায়। সে ধর্ম-বর্ণ সবাইকে স্বাক্ষরজ্ঞান সম্পন্ন করার যে উদ্যোগ নিয়েছে। তাকে সাধুবাদ জানাই। তিনি আশা করেন আগামী কয়েক বছরের মধ্যে এই ইউনিয়নের সকলে স্বাক্ষরজ্ঞান সম্পন্ন হবে। সরকারের পাশাপাশি তার নিজের সার্বিক সহযোগিতা থাকবে এমদাদের জন্য।

কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ ছাদেকুর রহমান প্রতিবেদক কে জানান, তার বিষয়ে আমি শুনেছি। সমাজে এমন যদি কিছু শিক্ষিত বেকার যুবক এগিয়ে আসে তাহলে আমাদের দেশ সত্যিই একদিন নিরক্ষরমুক্ত হবে।