খােলা বাজার২৪, বুধবার, ১৮ জানুয়ারি ২০১৭: বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলে-মেয়েরা স্বাধীন বাংলার পতাকা ওড়িয়েছে,যারা ইটের উপর ইট বসিয়ে শহীদদের সম্মানে শহীদ মিনার তৈরি করেছে। বুকের রক্তে এনেছে আমাদের ভাষা “বাংলা”, যে আত্মদান ইতিহাসে আজও বিরল। সেসব মেধাবীদের আনাগোনা যে বিশ্ববিদ্যালয়ে,সেখানে পড়ার স্বপ্ন দেখাটাই স্বাভাবিক। আর সেই স্বপ্ন পূরণেই হাজারো শিক্ষার্থীর পথচলা শুরু হয় প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। মানুষ গড়ার কারখানা,যেখান থেকে দেশের কর্নধার সৃষ্টি হয়। নিজেকে পরিপূর্ণ ভাবে গড়ে তোলে দেশের জন্য জাতির জন্য। সেই জাতির কর্নধার শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে কি খায় তা দেখলে হতবাক হবে যে কেউই।
প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন আবাসিক হল এবং বাইরের দোকানগুলোতে ভয়াবহ আকার ধারন করেছে এমনই খাবারের মান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি হলের ক্যান্টিন ও খাবারের মান নিয়ে রয়েছে ছাত্রছাত্রীদের বিস্তর অভিযোগ। বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকটি ক্যান্টিন ঘুরে দেখা যায় রান্নাবান্না করা হচ্ছে নিম্নমানের পরিবেশে। রান্নাঘরটা স্যাঁতসেঁতে, ঢাকনাবিহীন খাবারের ওপর ভন ভন করছে মাছি, খাবারের প্লেটও স্যাঁতসেঁতে । খাবারের টেবিলগুলো পরিষ্কার করা হচ্ছে দুর্গন্ধযুক্ত অপরিচ্ছন্ন-স্যাঁতস্যাঁতে ন্যাকড়া দিয়ে। খাবার জন্য ক্যান্টিনে ঢুকতেই নাকে আসবে উৎকট গন্ধ। এরপরেও যদি কেউ অসীম সহ্যশক্তি নিয়ে ভেতরটা পরখ করতে যায় তবে দেখা যাবে ধুলোয় প্রায় অন্ধকারাচ্ছন্ন চারপাশে বর্জ্য-ময়লা ছড়ানো-ছিটানো । ভালোমতো হাঁড়ি, ডেকচি না ধুয়েই পরের বেলার খাবার হচ্ছে রান্না।
এছাড়া খাবারের মধ্যে পাথর-কণা, রশি, পোকামাকড় স্বাভাবিক ঘটনা। বাসি ডাল, তরকারি, ভাতও নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। কয়েকটি হলে দেখা গেল, বাজার থেকে নিম্নমানের মাছ এনে ভাজা হচ্ছে কড়া করে। চালের বস্তাগুলো দিনের পর দিন অযত্নে পড়ে থাকায় কোনোটিতে শেওলাও জমেছে। এককথায় রান্না, খাবার সংরক্ষণ ও পরিবেশন সবটাই অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে।
নোংরা আর এমন অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি খাবার খেয়ে এসিডিটি ও অপুষ্টিসহ নানা রোগ যেনো সঙ্গী হয়েছে শিক্ষার্থীদের। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কোন হস্তক্ষেপ না থাকায় খাবার দোকান মালিক চক্রের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে শিক্ষার্থীরা।
অবিশ্বাস্য হলেও এমন অবস্থা প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যান্টিনগুলোতে ।
ঢাবি শিক্ষার্থী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ছাত্র জাহিজ হাসান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সবগুলো ক্যান্টিনে খাবারের পরিবেশতো অস্বাস্থ্যকর সাথে মানও খুবই নিম্নমানের। সবচেয়ে বড় কথা একজন শিক্ষার্থীর একবেলা খাবার থেকে যে পরিমান ক্যালরি দরকার তার কিছুই এসব খাবারে নেই। তিনি আরো বলেন, ক্যান্টিনগুলোতো আছেই সেইসাথে বাইরে যে ক্যাফেটেরিয়াল গুলো আছে সে গুলোর খাবারের মান ও পরিবেশেরও করুন অবস্থা। তিনি হতাশ হয়েই বলেন, এই গুলো নিয়ে এ পর্যন্ত অনেক সংবাদ হয়েছে কিন্তু কোনো ফল পাওয়া যায়নি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের হল ক্যান্টিনগুলোর খাবার নিম্নমানের স্বীকার করে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ফাহমিদুল হক আমাদের সময় ডটকমকে বলেন, হলের কর্তৃপক্ষ যদি ক্যান্টিনগুলো মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা রাখেন, তবে মানসম্মত ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পরিবেশে খাবার খেতে পারবে শিক্ষার্থীরা। এ অধ্যাপক এ সময় আরো বলেন,যখন তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তেন তখন হল থেকে নীলক্ষেতে মোড়ে যেতেই খুব দুর্বল লাগত। এখন তিনি বুঝতে পারে যে সেটা এই খাবারের কারনেই হতো। তাই তিনি মনে করেন খাবারের দাম কিছুটা বাড়িয়ে হলেও এর পরিচ্ছন্নতা ও মানের দিকে নজর দেয়া উচিত কর্তৃপক্ষের। আমাদের সময়.কম