Wed. Apr 30th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

images

খোলা বাজার২৪, বৃহস্পতিবার, ১৯ জানুয়ারি ২০১৭:  ডাক নাম তাঁর ‘কমল’। পুরো নাম “জিয়াউর রহমান”। বগুড়া জেলার গাবতলী থানার বাগবাড়ী নশিপুর গ্রামে ১৯৩৬ সালে ১৯ জানুয়ারী জন্ম গ্রহন করেন। তাঁর বাবার নাম মনসুর রহমান, মাতার নাম জাহানারা খাতুন (রানী)। বাবা ছিলেন একজন কেমিস্ট, মা ছিলেন গৃহিণী ও সংগীত শিল্পী। পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে তিনি ছিলেন দ্বিতীয়। পাঁচ ভাই হলেন রেজাউর রহমান, জিয়াউর রহমান, মিজানুর রহমান, খলিলুর রহমান ও আহমদ কামাল। তাঁর কোন বোন নেই। তাঁর দাদার নাম মৌলভী কামাল উদ্দিন, দাদীর নাম মিসিরন নেসা, নানার নাম আবুল কাসেম, নানীর নাম রহিমা খাতুন। জিয়াউর রহমান এর এক স্ত্রী ও দুই ছেলে। স্ত্রী বাংলাদেশের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া (বর্তমান বিএনপি’র চেয়ারপার্সন)। বড় ছেলে বিএনপি’র সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান। ডাক নাম পিনু। ছোট ছেলে মরহুম আরাফাত রহমান। ডাক নাম কোকো ( মৃত্যু ২৪ জানুয়ারী ২০১৫ মালএশিয়াতে)। বর্তমানে জিয়াউর রহমান এর তিন নাতনি। তারা হলেন- জায়মা রহমান, জাফিয়া রহামন, জাহিয়া রহমান।

বাবার চাকরি সুত্রে জিয়াউর রহমান এর শৈশবের বেশিরভাগ কাটে পার্ক সার্কাস, কলকাতায় । তাঁর স্কুল জীবন শুরু ‘হেয়ার স্কুল, কলকাতায়। এরপর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে বগুড়ার গাবতলীর বাগবাড়ীতে ফিরে আসেন এবং দু’বছর সেখানেই লেখাপড়া করেন। পরে বাবা-মা’র ইচ্ছায় ১৯৪৪ সালের দিকে কলকাতায় ফিরে যান এবং সেখানেই আবার লেখাপড়া শুরু করেন। ১৯৪৭ এ দেশ ভাগ হলে বাবা’র চাকরি সুত্রে পরিবারের সাথে পাকিস্থানের করাচিতে যান। ১৯৪৮ সালে ০১ জুলাই তিঁনি ‘করাচি একাডেমী স্কুল’-এ (বর্তমানে তাইয়েব আলী খালভী একাডেমী) সপ্তম শ্রেণীতে ভর্তি হন এবং এই স্কুল থেকেই ১৯৫২ সালে ম্যাট্রিক পাশ করেন। ম্যাট্রিক পাশের পর তিঁনি ভর্তি হন করাচির ডি. জে. কলেজে। স্বপ্ন ছিল তাঁর ডাক্তার হওয়ার। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্য হতে যুদ্ধ ফেরত চাচা ক্যাপ্টেন মনতাজুর রহমান এর ‘সামরিক বাহিনীর নিয়ম-শৃঙ্খলা, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব’ রক্ষা তাঁকে ভীষণভাবে অনুপ্রাণিত করে। তাই তিঁনি এই আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে ১৯৫৩ সালে পাকিস্থান সামরিক একাডেমীতে ‘অফিসার ক্যাডেট’ হিসেবে যোগদান করে কর্মজীবন শুরু করেন এবং এই বছরেই ‘কমান্ডো ট্রেনিং’ লাভ করেন। ১৯৫৫ সালে তিঁনি ‘সেকে- লেফটেন্যান্ট’ পদে কমিশন পান। তিঁনি একজন দক্ষ ‘প্যারাট্রুপার’ ছিলেন। তিঁনি ১৯৬৩ সালে ‘ডিএফআই অর্থাৎ সামরিক গোয়েন্দা বিভাগ’-এ কয়েক মাস চাকরি করেন। ১৯৬৫ সালে ‘পাক-ভারতযুদ্ধ’ শুরু হলে জিয়াউর রহমান ‘খেমকারান’ রণাঙ্গনের বেদীয়ান-এ যুদ্ধরত ‘ইস্ট বেঙ্গর রেজিমেন্টে’ এর একটি ব্যাটালিয়ান কোম্পানি-‘আলফা কোম্পানি’র “কমান্ডার” এর দ্বায়িত্ব প্রাপ্ত হন। তিঁনি একজন তেজী, বুদ্ধিমান, বীর হিসেবে যুদ্ধে জয়লাভ করে পাক-সেনা বাহিনীর মধ্যে দ্বিতীয় সর্বাধিক বীরত্ব পদক লাভ করেন। ১৯৬৬ সালে পাকিস্থানের মিলিটারী একাডেমীতে পেশাদার ‘ইনস্ট্রাকটর’ হিসেবে নিয়োগ পান এবং একই বছরে পশ্চিম পাকিস্থান স্টাফ কোয়াটার কলেজে কমা-ো কোর্সে যোগ দেন। অতঃপর ১৯৬৯ সালে এপ্রিল মাসে সেনাবাহিনীতে ‘মেজর পদ’-এ পদোন্নতি পেয়ে জয়দেবপুর সাব-ক্যান্টনমেন্টে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের দ্বিতীয় ব্যাটালিয়নে ‘সেকেন্ড-ইন-কমা-’ হিসেবে যোগদান করেন এবং একই বছরে এডভান্সড মিলিটারী এন্ড কমান্ড ট্রেনিং কোর্সে উচ্চতর প্রশিক্ষনের জন্য পশ্চিম জার্মানিতে যান। সেখানে কয়েকমাস বৃটিশ আর্মির সাথেও কাজ করেন। তিঁনি ১৯৭০ সালে ফিরে আসেন এবং সেপ্টেম্বরে চট্টগ্রামে বদলি করা হয়। নিযুক্ত হন ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অষ্টম ব্যাটালিয়নের ‘সেকেন্ড-ইন-কমান্ড’ হিসেবে।
……………………………………………………………..এরপর ঘটনাবহুল ঐতিহাসিক ১৯৭১ সাল মার্চ মাস। ২৫ মার্চ রাতে জাতির জীবনে নেমে আসে ঘনঘটা আধার। সেই আধারের মাঝে আলো হয়ে আসে মেজর জিয়াউর রহমান। তিনি দিশাহারা-নেতৃত্বহীন জাতির মাঝে তাঁর অতীত দিনের অভিজ্ঞতার আলোকে ‘পাক-ভারতযুদ্ধ’ জয়ের স্মৃতি নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের ভিত স্থাপন করেন অর্থাৎ ২৬ মার্চ কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন এবং নিজে ১নং সেক্টরে যুদ্ধ করেন। পরে ০৭ জুলাই হতে ‘জেড ফোর্স’-এ নের্তৃত্ব দিয়ে যুদ্ধ করেন। যুদ্ধে বিজয় হলে তিঁনি স্ব-পদে চাকরি করেন এবং তৎকালীন (আওয়ামীলীগ) রাজনতিবিদরা দেশ পরিচালনা করেন। মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য জিয়াউর রহমানকে “বীরউত্তম” খেতাবে ভূষিত করা হয় এবং দেশ স্বাধীনের পর কুমিল্লায় ‘ব্রিগেড কমান্ডার’ হিসেবে নিযুক্ত হন। অতঃপর ১৯৭২ সালে ফেব্রুয়ারী মাসে তিঁনি ‘কর্নেল’ পদে এবং এই বছরেই জুন মাসে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ‘ডেপুটি-চীফ অব স্টাফ’ হিসেবে নিযুক্ত হন। ১৯৭৩ সালের মাঝামাঝিতে ‘বিগ্রেডিয়ার’ এবং পরে একই বছরে ‘মেজর জেনারেল’ হিসেবে পদোন্নতি প্রাপ্ত হন।

সে সময় তৎকালীন সরকারের মন্ত্রী-এমপি, নেতাকর্মীদের দুর্নীতি-লুটপাটের কারনে দেশে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ নেমে আসে এবং তৎকালীন আওয়ামীলীগ সরকার স্বাধীনতা যুদ্ধের মুল চেতনা থেকে সরে এসে র্কতৃত্ববাদী শাসন ব্যাবস্থা পাকাপোক্ত করতে তাদের নিজ দলসহ সকল রাজনৈতিক দল বিলুপ্ত করে এবং তাদের অনুগত ০৪ টি পত্রিকা ছাড়া সব পত্রিকা বন্ধ করে দেয়। সেইসাথে ০৭ জুন ১৯৭৫ সালে সংবিধানের ১১৭ (ক) আর্টিকেল সংশোধনপূর্বক দেশে শুধুমাত্র একটি রাজনৈতিক দল ‘বাকশাল গঠন করে এবং ‘বাকশাল’ এর মাধ্যমে দেশ শাসন কায়েম করে। এরপর নেমে আসে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্টের ভয়াবহতা এবং এই আগষ্টের ২৫ তারিখে জিয়াউর রহমানকে সেনাবাহিনীর প্রধান হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। শেখ মুজিব পরবর্তী দেশ শাসনে অস্তিতিশীলতা দেখা যায় এবং জিয়াউর রহমানকে ক্যান্টনমেন্টে গৃহবন্দী করে রাখে। এরপর ০৭ নভেম্বরে বিপ্লবের মাধ্যমে সিপাহী-জনতা খালেদ মোশাররফ নেতৃত্বাধীনদের পরাভূত করে জিয়াউর রহমানকে বন্দীত্ব থেকে মুক্ত করে এবং তাকে ‘উপ-প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক’ হিসেব ঘোষণা করা হয়। তারপর ১৯৭৬ সালে ২৯ নভেম্বর জিয়াউর রহমান ‘প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক’ হিসেবে নিযুক্ত হন। ১৯৭৭ সালে ২১ এপ্রিল বিচারপতি আবু সাদাত মোহাম্মদ সায়েম এর কাছ থেকে তিঁনি প্রেসিডেন্টের দ্বায়িত্ব ভার গ্রহন করেন। এর পর থেকে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান গণতন্ত্রায়ন ও উন্নয়নের একের পর এক ভিত গড়ে দিয়েছেন। কৃষি, শিল্প, শিক্ষা, বাণিজ্য, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, কারিগরি, রাজনীতি, অর্থনীতি, আর্ন্তজাতিক এমন কোন সেক্টর নেই যে, অল্প সময়ের মধ্যেই সেখানে জিয়াউর রহমান এর হাত লাগে নি।

# জিয়াউর রহমান ছিলেন বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের ঘোষক এবং একমাত্র মুক্তিযোদ্ধা রাষ্ট্রনায়ক।

# ১৯৭৭ সালে ২১ এপ্রিলে রাষ্ট্রপতির দ্বায়িত্ব নেওয়ার ৪০ দিন পর জিয়াউর রহমান স্বাধীন দেশে প্রথম ‘হ্যাঁ / না’ ভোট করেন-যা ছিল গণতন্ত্রের বীজ বপন এবং ৯৯% হ্যাঁ ভোট পেয়ে তিঁনি বিজয়ী হন।

# রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমান শেখ মুজিবের রেখে যাওয়া রাষ্ট্র-যেখানে মানুষের অধিকার, মর্যাদা ভূলুণ্ঠিত, গণতন্ত্র নির্বাসিত, বিশৃঙ্খলাপূর্ণ ও শান্তিশৃংঙ্খলাহীন এবং একদলীয় শাসন ব্যবস্থা ‘বাকশাল’ বিলুপ্ত করে বহুদলীয় গণতন্ত্র এর প্রবর্তন করেন অর্থাৎ গণতন্ত্রের ভিত গড়েন এবং নতুন যুগোপযোগী রাজনীতির সুচনা করেন। যার ফলে আওয়ামীলীগও আবার নতুনভাবে আওয়ামী রাজনীতি করার সুযোগ পায়।

# ১৯৭৮ সালে ০৩ জুন প্রত্যক্ষ ভোটের ভিত্তিতে নির্বাচনের মাধ্যমে জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের নির্বাচিত প্রথম প্রেসিডেন্ট হন।

# ১৯৭৮ সালে ০১ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমান বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) গঠন করেন-যার মূল চেতনা ছিল বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ। তিঁনি বাংলাদেশের বাঙ্গালী-অবাঙ্গালী, সাঁওতাল, চাকমা, মুণিপুরী, খাসিয়া প্রভৃতি জাতি-উপজাতির জনগোষ্ঠীকে ভাষা, সংস্কৃতি, ধর্ম-বর্ণ, জাত-পাত এর সব কিছুর উর্দ্ধে সকল নাগরিকের প্রথম রাষ্ট্রীয় পরিচয় “বাংলাদেশী” পরিচয়কে তুলে ধরেন এবং মানুষের আশা-আকাঙ্খা ও প্রত্যাশাকে সন্মান করে “বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ” সংবিধানে প্রতিস্থাপন করেন-যেখানে আমাদের নৃ-তাত্ত্বিক পরিচয় অক্ষুন্ন থাকে।

# তিঁনি বিচার বিভাগ এর স্বাধীনতা অর্থাৎ আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করেন এবং বাক-ব্যক্তি-সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ও মৌলিক অধিকার ফিরিয়ে দেন। তিঁনি ‘বাংলাদেশ প্রেস ইন্সটিটিউট’ এবং সাংবাদিকতা ঘটিত অভিযোগ বিচারের জন্য ‘বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল’ প্রথম গঠন করেন ।

#রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমান’ই প্রথম জাতীয় প্রেসক্লাব এর ভিত্তি স্থাপন করেন এবং মিরপুরে সাংবাদিকদের জন্য ২২ বিঘা জমি বরাদ্দ দেন।

# তিঁনি কৃষিক্ষেত্রে বিপ্লব আনায়নের লক্ষে স্বল্পমুল্যে সেচ ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন এবং ‘খাল কাটা ও পুন:খনন’ কর্মসুচী চালু করেন। খামারে বিদ্যুতায়ন ও সার বিতরন এর ব্যবস্থা করেন-যার ফলে এক ফসলি জমি দুই ফসল বা তিন ফসল এর জমি হয়ে ওঠে। সেই সাথে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি ও দেশকে প্রথম খাদ্যে সয়ংসর্ম্পূন করে খাদ্য রপ্তানী পর্যায়ে উন্নীতকরন করেন।

# তিঁনি পাটশিল্প, টেক্সটাইল মিল, কাগজ মিল, সার কারখানা, চিনিকল প্রভৃতি নতুন নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠা করেন এবং প্রতিষ্ঠার উদ্যেগ নেন। কলকারখানায় তিন শিফ্ট চালু করে শিল্প উৎপাদন বৃদ্ধি করেন এবং এ ক্ষেত্রে উত্তরোত্তর বৃদ্ধির জন্য ঢাকার মতিঝিলে বহুতল শিল্পভবন স্থাপন করেন। ফলে দেশের অর্থনৈতিক বন্ধ্যাত্ব দূর হয়।

# রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমান গণশিক্ষা কার্যক্রম প্রবর্তন করে অল্প সময়ে ৪০ লক্ষ মানুষকে অক্ষরদান করে গণশিক্ষার বিপ্লব ঘটান। দেশ গঠন ও ছাত্র-ছাত্রীদের নিরাপত্তায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বাংলাদেশ ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর (বিএনসিসি) গঠন করেন। মাদ্রাসা শিক্ষাকে সময়োপোযোগী করতে সিলেবাসে সায়েন্স, ইংরেজী, সমাজবিজ্ঞানের অর্ন্তভূক্ত করেন। অস্ত্রের ভয়-ভীতি, খুন, হল-দখল, সেশনজট, লাঞ্ছনা প্রভৃতির বিপরীতে শিক্ষঙ্গনে শিক্ষার পরিবেশ ফিরে এনে মেধা ও মুক্তবুদ্ধি চর্চা এবং বিকাশের নতুন যুগের সুচনা করেন।

# তিঁনি চিকিৎসার ক্ষেত্রে ২৭৫০০ পল্লী চিকিৎসক নিযোগ করে গ্রামীণ জনগণের চিকিৎসার সুযোগ বৃদ্ধি করেন। তিঁনিই ডায়াবেটিক হাসপাতাল স্থাপনে উৎসাহ প্রদান ও মহাখালীতে কলেরা হাসপাতার প্রতিষ্ঠা করেন। এছাড়াও হৃদরোগ ইন্সটিটিউট ও হাসপাতাল, শিশু হাসপাতাল ও মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স প্রতিষ্ঠা করেন।

# তিঁনি চুরি-ডাকাতি-রাহাজানি বন্ধ করতে ও স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি দিতে , শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় সহায়তা প্রদান ও গ্রামোন্নয়ন কার্যক্রমে অংশগ্রহনের জন্য গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী (ভিডিপি) গঠন করেন।

# তিঁনি একেবারে গ্রামীণ পর্যায়ের জনগণকে স্থানীয় প্রশাসন ব্যবস্থা ও উন্নয়ন কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত করেন এবং তৃনমূল পর্যায় থেকে দেশ গড়ার কাজে নের্তৃত্ব সৃষ্টির লক্ষে ‘স্ব-নির্ভর গ্রাম সরকার ব্যবস্থা’ প্রবর্তন করেন।

# দেশে উৎপাদন ও সমৃদ্ধি আনায়নে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের লক্ষে হাজার হাজার মাইল রাস্তাঘাট নির্মাণ করেন।

# দেশের জাতীয় আয়ের সবচেয়ে বড় খাত তৈরি পোশাক শিল্প। রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমান’ই প্রথম এই তৈরি পোশাক শিল্প’কে রপ্তানীমুখী শিল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন এবং অর্থনীতির নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত করেন।

# রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমান’ই প্রথম ১৯৭৬ সালে মধ্যপ্রাচ্যের ০৬ টি দেশে মাত্র ৮৫০০ জনের কর্মসংস্থানের মধ্যে দিয়ে বিদেশে শ্রমশক্তি রপ্তানীর যাত্রা শুরু করেন।

# বাংলাদেশ নদীমাতৃক হওয়ায় তিঁনিই ‘নদী গবেষণা ইন্সটিটিউট’ প্রতিষ্ঠা করেন।

# তিঁনিই প্রথম সরকারী সহায়তায় ট্রলার কিনে সমুদ্রে মাছ ধরার ও তা বিদেশে রপ্তানী করার ব্যবস্থা করেন। ফলে আজকে এই ক্ষেত্রে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন ও কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে।

# তিঁনিই প্রথম গ্রামীণ ও শহর অঞ্চলের নি¤œ আয়ের ও নিঃস্ব মানুষের জন্য বিনা জামানতে সরকারী ্্্্্্্্্্্্্্্্্্্্্্্্্্্্্্্্্্্্্্্্্্্্্্্্্্্্্্্ঋণ প্রাপ্তি’র ব্যবস্থা করেন।

# দেশের উৎপাদন ও উন্নয়নে তিঁনিই তাঁত ও ক্ষদ্র কুটির শিল্পের উন্নয়নে ভূমিকা রাখেন।

# দেশের উন্নয়নে যুবকরা যেন ভূমিকা রাখতে পারে এবং বিপথে না যায় তাই তিঁনিই প্রথম যুবকদের কার্যপোযোগী প্রশিক্ষন ও যুগোপযোগী উন্নয়নের লক্ষে ‘যুব উন্নয়ন মন্ত্রণালয়’ গঠন করেন।

# দেশের প্রায় অর্ধেক জনসংখ্যা নারী। তাই তাদেরকে উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডের সাথে সম্পৃক্ত করতে তিঁনিই প্রথম ‘মহিলা বিষয়ক মন্ত্রণালয়’ গঠন করেন এবং জাতীয় আসনে নারী আসন বৃদ্ধি ও চাকরিতে নারী কোটা বৃদ্ধি তাঁরই অবদান।

# রাষ্ট্রের শান্তি ও স্থিতিশীলতায় দেশের প্রতিটি নাগরিকের স্ব-স্ব ধর্ম নির্বিঘেœ পালনের জন্য তিঁনিই প্রথম ‘ধর্ম মন্ত্রণালয়’ প্রতিষ্ঠা করেন। বহু ধর্মীয় মুল্যবোধের নিদর্শন স্বরুপ তিঁনি চীন থেকে অতীশ দ্বীপঙ্কর ও শ্রীজ্ঞানের দেহভস্ম বাংলাদেশে আনেন এবং একটি স্মৃতিসৌধ স্থাপন করে রক্ষণাবেক্ষণ করেন।

# দেশকে আধুনিকায়নে প্রযুক্তির ক্ষেত্রে অগ্রগতি সাধনে তিঁনিই প্রথম ‘বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়’ সৃষ্টি করেন।

# তাঁর সময়ে দেশে প্রথম বিটিভি’তে রঙ্গিন ট্রান্সমিশন প্রচার চালু হয় এবং এফডিসিতে ক্যালার ল্যাব স্থাপন করা হয়। নিজস্ব সংস্কৃতি বিকাশে ্এবং অপসংস্কৃতি থেকে বিরত রাখতে রাষ্ট্রীয় অনুদানে সুস্থ্য ধারার চলচ্চিত্র নির্মাণ করার বিষয়টি জিয়াউর রহমান’ই প্রথম চালু করেন। গাজীপুরে এফডিসি স্থাপনের জন্য তিঁনিই প্রথম জমি বরাদ্দ দিয়েছিলেন। দেশীয় সংস্কৃতিকে আর্ন্তজাতিক পরিমন্ডলে তুলে ধরার জন্য তিঁনিই শিল্পি, সাহিত্যিক, কবিদের বিদেশ সফরের ব্যবস্থা করেছিলেন।

# তিঁনিই শিশুদের সুষ্ঠ বিকাশ ও বিনোদনের জন্য সত্তর দশকের শেষের দিকে ‘শিশু পার্ক’ স্থাপন করেন। শিশুদের প্রতিভা বিকাশ ও প্রশিক্ষনের জন্য ‘শিশু একাডেমী’ এবং নিজস্ব সংস্কৃতিতে শিশুদের ভবিষ্যৎ গড়ার লক্ষে বাংলাদেশ টেলিভিশনে ‘নতুন কুড়ি’ প্রতিযোগিতার সৃষ্টি করেন।

# ১৯৭৯ সালে তিঁনিই একুশে বইমেলাকে বাংলা একাডেমীর দ্বায়িত্বে নিয়ে আসেন এবং সে সময় থেকেই একুশে বইমেলা রাষ্ট্রীয়ভাবে পালিত হচ্ছে।

# স্ব-স্ব ক্ষেত্রে অবদানের জন্য স্বাধীনতা পদক, একুশে পদক, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রদান জিয়াউর রহমান’ই চালু করেন।

# জিয়াউর রহমান’ই কবি কাজী নজরুল ইসলামকে নিজ হাতে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদান করেন এবং ১৯৭৬ সালে জাতীয় কবি হিসেবে ঘোষণা করেন। কবি মারা গেলে তার মরদেহ কাঁধে নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের পাশে দাফন করেন এবং নিজে লাশ নিয়ে কবরে নামেন। এছাড়াও ফার্মগেট থেকে শাহবাগ কবির মাজার পর্যন্ত পায়ে হেটে এসে তিঁনিই এই রোডের নামকরন করেন ‘কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ’।

# তিঁনিই বিশ্ববিখ্যাত মুষ্ঠিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলীকে বাংলাদেশে আনেন এবং সন্মানজনক ‘নাগরিকত্ব’ প্রদান করেন।

# রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমান এর অবদানের ফলে জাতিসংঘের সদস্যলাভের মাত্র চার বছর পর অর্থাৎ বাংলাদেশের মাত্র ০৭ বছর বয়সে জাপানকে হারিয়ে ‘নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যপদ’ লাভ করে।

# রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমান এর কল্যাণে ‘তিন সদস্যবিশিষ্ট আল-কুদস কমিটি’তে বাংলাদেশের অন্তর্ভূক্তি।

# দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের সার্বিক উন্নয়নের লক্ষে তিঁনিই সর্বপ্রথস ‘সার্ক’ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ গ্রহন করেন।

এছাড়াও রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমান স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি অনুসরণ, ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরন, সমবায়ের মাধ্যমে জাতীয় উন্নয়ন, শক্তিশালী স্বশস্ত্র বাহিনী গঠন, মুক্তিযোদ্ধাদের মূল্যায়ন ও পুনর্বাসন, সাহিত্য-সংস্কৃতি ও ক্রীড়ার বিকাশ ও পৃষ্ঠপোষকতাদানে অবদান অনস্বীকার্য। তিঁনি যর্থাথভাবে উৎপাদন বাড়িয়ে খাদ্যে সয়ংসম্পূর্ণতা এনেছিলেন এবং উন্নয়ন স্বরুপ ভিক্ষুকের হাতকে কর্মীর হাতে পরিনত করেছিলেন।

রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমান দেশের সার্বিক উন্নয়নে যে “১৯ দফা” পেশ করেছিলেন-যা এদেশের গণমানুষের মুক্তির সনদ ; দেশে আজ অবধি যতো উন্নয়ন বা উন্নতিই হোক না কেন তা আজো মনেহয় সেই “১৯ দফা’রই বহিঃপ্রকাশ ? রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমান’ই একটি আধুনিক উদার গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনে অনন্য ভূমিকা রেখেছিলেন। রাজনৈতিক অস্থিরতা কাটিয়ে একটি সমন্বিত সমাজ গঠন করেছিলেন। শিল্পায়ন, শিক্ষায়ন, উৎপাদন ………………………প্রায় সব ক্ষেত্রেই রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমান সফলতার স্বাক্ষর রেখে ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’র অপবাদ ঘুচিয়ে একটি সম্ভাবনাময় উদীয়মান রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের নবজন্ম রুপায়ন করেছিলেন এবং উন্নয়নকামী এ দেশকে সার্বিক উন্নয়নের রাজপথে পরিচালিত করতে পেরেছিলেন। অতএব এ কথা অবশ্যই স্বীকার্য যে, দেশ গঠনে-রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমান- গণতন্ত্রায়ন ও উন্নয়নের ভিত গড়ে দিয়েছেন।

লেখকঃ সাংবাদিক, কবি ও কলামিস্ট।