খােলা বাজার২৪, রবিবার, ২২ জানুয়ারি ২০১৭: কিশোরদের অপরাধে জড়ানো সামাজিক অসুস্থতারই লক্ষণ। পরিবারে ভাঙন, ছাত্ররাজনীতির প্রশ্রয়, দারিদ্র্য, শিক্ষার সুযোগের অভাব, মাদকের সহজলভ্যতা, মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেটের অপব্যবহারসহ অনেক কারণেই অল্পবয়সীরা অপরাধে জড়াচ্ছে। পরিবার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তাদের নৈতিক শিক্ষা দিতে হবে। ঘরে সন্তানকে মমতায় বড় করতে হবে, চোখে চোখেও রাখতে হবে। কালের কণ্ঠ’র পাঠকরা ফোন ও ই-মেইলে এমন অভিমত ব্যক্ত করেছেন
► আপনার সন্তান কোথায় যায়, কী করে, কাদের সঙ্গে মেশে—এসব গভীরভাবে প্রত্যক্ষ করা প্রত্যেক অভিভাবকের কর্তব্য। রাত করে বাসায় ফিরলে তাদের শাস্তি দেওয়া যেতে পারে। অনেক অভিভাবক সন্তানের চাওয়াকে গুরুত্ব দেন না বলেও তারা সামাজিক অপরাধে জড়িয়ে পড়ে।
জোবায়ের রাজু
আমিশাপাড়া, নোয়াখালী।
► পরিবারগুলো সন্তানের প্রতি দায়িত্ব পালনে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। তারা অর্থ উপার্জনের দিকেই বেশি ব্যস্ত। হারিয়ে যাওয়া পারিবারিক শৃঙ্খলা ও মানবিক মূল্যবোধ সমন্বিত শিক্ষা ফিরিয়ে আনতে হবে।
বিপ্লব
ফরিদপুর।
► কিশোর অপরাধ প্রতিরোধ করতে হলে সমাজের উন্নয়ন করতে হবে।
এস এম রওনক রহমান আনন্দ
স্কুলপাড়া, ঈশ্বরদী, পাবনা।
► ছাত্রদের সঙ্গে শিক্ষকদের আপন সন্তানের মতো ব্যবহার করতে হবে। শাসনের পাশাপাশি আদরও করতে হবে। কোনটা ভালো কোনটা মন্দ তা বোঝাতে হবে।
ফোরকান আক্তার চৌধুরী
আরজতপাড়া, তেজগাঁও, ঢাকা।
► কিশোর অপরাধ বন্ধ করতে রাজনীতিবিদদের নীতি ঠিক করতে হবে। কিশোরদের বাস্তববাদী কাজে উদ্যোগী করতে হবে। তাদের সংস্কৃতি ও খেলাধুলায় মনোনিবেশ করতে হবে।
রহিমা আক্তার মৌ
চাটখিল, নোয়াখালী।
► ইলেকট্রনিক মিডিয়ার খারাপ দিকগুলো তুলে ধরতে হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিরপেক্ষ ও সচেতন ভূমিকা থাকতে হবে। অভিভাবকদের উদাসীনতা প্রচণ্ডভাবে দায়ী। অতিমাত্রায় আদর-স্নেহ কিংবা অবজ্ঞা উভয়ই কিশোর-কিশোরীদের উগ্র করে তোলে। অভিভাবকদের সচেতন করার লক্ষ্যে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ নিতে হবে। পাড়া-মহল্লায় মুরব্বিদের নিয়ে সাপ্তাহিক পরামর্শ সভা করতে হবে।
হুমায়ুন কবির
হাজারীবাগ, ঢাকা।
► কিশোর অপরাধপ্রবণতা রোধে আইনের প্রয়োগের চেয়েও অনেক বেশি প্রয়োজন সমাজ সচেতনতা। শাসনহীনতা এবং অতিশাসন দুটিই শিশুর ভুল পথে ধাবিত হওয়ার কারণ। স্থান, কাল, পাত্র বুঝে পরিমাণমতো সার দিলেই ভালো ফসল আশা করা যায়।
সোলায়মান শিপন
সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, ঢাকা।
► মা-বাবার উচিত ছোটবেলায় সন্তানদের স্নেহময় পারিবারিক বন্ধনে ভালোমন্দ, ন্যায়-অন্যায় ও নৈতিক-অনৈতিক বিষয়ে স্বচ্ছ ধারণা দেওয়া। এ ছাড়া কিশোরদের গঠনমূলক কাজে ব্যস্ত রাখার জন্য এলাকাভিত্তিক বিনোদন ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড বাড়াতে হবে। লাইব্রেরি, শরীরচর্চা, স্কাউটিং ইত্যাদি কাজে ব্যস্ত রাখতে হবে।
রাকিবুল প্রিয়
রূপসা, সিরাজগঞ্জ।
► আমরা নিজেদের উন্নয়নের চিন্তা করে মাঠ ভরাট করে অট্টালিকা বানাব, নিজেদের ব্যবসার চিন্তা করে দিনরাত ব্যস্ত থাকব, সমাজের ভুলগুলো শুধরে দেওয়ার কোনো ব্যবস্থা করব না, বিদেশি শিক্ষার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ব, নিজেরাও কেউ কেউ অনিয়ন্ত্রিত চলাফেরা করব, কিশোরদের হাতে দামি দামি সাইকেল, মোটরসাইকেল দেব আর চেঁচিয়ে বেড়াব উচ্ছন্নে গেল বলে? তাদের ভালো করতে হলে আমাদের সবাইকে ভালোভাবে চলতে হবে, ভালো চিন্তা করতে হবে।
হাবিবুল ইসলাম রুবেল
খিলগাঁও, ঢাকা।
► অভিভাবকরা সন্তানদের ওপর নজরদারি রাখলে, শিক্ষকরা ছাত্রছাত্রীদের নৈতিকতা গঠনে মনোযোগী হলে অল্পবয়সে বখে যাওয়ার প্রবণতা কমে আসবে।
মো. বজলুর রহমান
সেকারা, বহরপুর, রাজবাড়ী।
► অভিভাবকদের সচেতনতা বৃদ্ধি প্রয়োজন। শিশু-কিশোরদের চলাফেরায় নজর রাখতে হবে। খারাপ বন্ধুদের সঙ্গে মিশতে দেওয়া যাবে না। শিশু-কিশোরদের হাতে তুলে দিতে হবে শিক্ষামূলক ও উদ্দীপনামূলক বই। মানসিক বিকাশে পাড়া-মহল্লায় চিত্তবিনোদনের সুযোগ রাখতে হবে—যেমন চলচ্চিত্র প্রদর্শন। দারিদ্র্যও অপরাধের বড় কারণ। তাই অভিভাবকদের কর্মসংস্থান বাড়াতে রাষ্ট্রীয় নীতিমালা দরকার।
মো. জামরুল ইসলাম
দক্ষিণগাঁও, সবুজবাগ, ঢাকা।
► কিশোরদের অপরাধপ্রবণতার মূলে রয়েছে সামাজিক অবক্ষয় ও রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন। ছোটরা নৈতিক মূল্যবোধ হারিয়ে একদিন বেপরোয়া হয়ে ওঠে। কিশোর অপরাধ সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ক্যান্সারের মতো ছড়িয়ে পড়ছে। তাই এখনো যদি তাদের ব্যাপারে আমরা যথার্থ পদক্ষেপ আমরা না নিই, ভবিষ্যতে একটি বড় ধরনের হুমকি আমাদের মোকাবিলা করতে হবে। পাশাপাশি পরিবার ও সমাজকে তার দায়িত্ব থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলে চলবে না।
এম এ শাক্কুর আলম
জিনজিরা, ঢাকা।
► পরিবার থেকেই মূল শিক্ষাটা শিশু-কিশোররা পেয়ে থাকে। অনেক সময় পরিবারে বড়দের ঝগড়াঝাঁটি, অনৈক্য শিশুদের হতাশ করে তোলে। সামাজিক পারিপার্শ্বিক কারণ, রাজনৈতিক প্রশ্রয়, ছাত্ররাজনীতির উসকানিতেও কিশোররা বিপথে চলে যায়।
জুয়েল বৈদ্য
কুসুমবাগ, মৌলভীবাজার।
► সঠিক পরিচর্যার অভাবেই শিশু-কিশোররা নষ্ট হচ্ছে। পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্রকে নিজ নিজ ভূমিকা পালন করতে হবে।
আবদুল্লাহ আল ইসলাম
বাগেরহাট সদর।
► রাজনৈতিক সংগঠন, বিশেষ করে ছাত্রসংগঠনগুলো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। স্কুল পর্যায় পর্যন্ত ছাত্ররাজনীতি ঢুকে পড়েছে। উপজেলা পর্যায়ে প্রাথমিক স্কুল পর্যায়েও ছাত্ররাজনীতির কথা আমি জানি। কোন পর্যায় পর্যন্ত ছাত্ররাজনীতি করা যাবে—নির্ধারণ করে দিন। সামাজিক সচেতনতাও বাড়াতে হবে। পারিবারিক ভূমিকাও দায়িত্বশীল হওয়া দরকার। সন্তান কোথায় যাচ্ছে, কার সঙ্গে মিশছে মা-বাবা খেয়াল রাখলে বখাটে হওয়ার সুযোগ কমে আসবে। রাষ্ট্রেরও বড় দায়িত্ব হচ্ছে যেসব কারণে কিশোররা অপরাধে জড়াচ্ছে সেগুলো বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া। বিশেষ করে ছাত্রসংগঠনগুলোকে নজরদারিতে আনতে হবে। আকাশ সংস্কৃতির মাধ্যমেও অনেক অপরাধমূলক অনুষ্ঠান সহিংসতার কৌশল নিয়ে আমাদের ড্রয়িং রুমে ঢুকে পড়ছে। ইন্টারনেটের মাধ্যমেও অল্পবয়সীরা ক্ষতিকর তথ্য হাতের নাগালে পেয়ে যাচ্ছে। বড়দের উপযোগী অনুষ্ঠান তিন বয়সী মানুষরাই দেখছে। হয়তো দেখা যাবে অনুষ্ঠানটি শুধু বড়দের উপযোগী। শিশু বা কিশোররা যেহেতু ভালোমন্দ ফিল্টার করতে জানে না, তারা এমন অনুষ্ঠানে সহিংসতা বা হিরোইজমের দিকে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে।
মো. নাজিম আদি
সাতকানিয়া, চট্টগ্রাম।
► আমরা কিশোরদের ঠিকমতো যতœ করি না। ঠিকমতো যতœ মানে তার জন্য যা দরকার, তা বুঝে তার প্রতি আচরণ করা। আর এই ঠিকমতো যতœ না নেওয়ার কারণে অনেক পরিবার থেকে তারা অবহেলার শিকার হয়। তাদের এই অবহেলার সুযোগ নিয়ে কিশোরদের মনের গোপন ইচ্ছাকে উসকে দেয় সমাজের কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি। তারা কিশোরদের দিয়ে মাদক চোরাচালানসহ নানা অপরাধমূলক কাজ করায়। পরে আইনের আওতায় অপরাধী এসব কিশোর ধরা পড়লে কিশোর বলে তাদের সাজা কম হয়। আর মূল অপরাধীরা আড়ালেই থেকে যায়। সুতরাং সব দিক থেকে কিশোরদের দিয়ে অপরাধমূলক কাজ করানো তাদের জন্য বেশি নিরাপদ। তাই প্রথমে সমাজের এসব প্রভাবশালী ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। পরিবারের অভিভাবকদেরও সন্তানদের প্রতি যথেষ্ট খেয়াল রাখতে হবে। তাদের আবদার যুক্তিসংগতভাবে মেটাতে হবে। সব আবদার যেমন মেটানো যাবে না, তেমনি সবটা না মিটিয়েও রাখা যাবে না। পরস্পর পরস্পরের সঙ্গে ভালো ও প্রাণখোলা সম্পর্ক রাখতে হবে।
নাদিম খান
ভাইজোড়া, পিরোজপুর।
► কিশোর অপরাধপ্রবণতা রোধে মা-বাবার ভূমিকাটাই বড়। ছেলে-মেয়ে কোথায় যাচ্ছে, কার সঙ্গে মিশছে, টিভিতে, মোবাইল ফোনে, কম্পিউটারে কী দেখছে, পড়ালেখা করছে কি না—এসব দেখার দায়িত্ব বড়দের। সবাই কি তা পালন করছেন? মা-বাবাকে সন্তানের স্কুলেও মাঝেমধ্যে গিয়ে দেখতে হবে তারা ক্লাস ফাঁকি দিচ্ছে কি না। বাসায় ফেরার পর সন্তান কেমন আচরণ করছে তা-ও খেয়াল করলে সন্তানের গতিবিধি আঁচ করা যায়। অভিভাবক সাবধান থাকলে কিশোর অপরাধ অবশ্যই রোধ করা সম্ভব।
শিবুপ্রসাদ মজুমদার
লেকসার্কাস, কলাবাগান, ঢাকা।
► মা-বাবা ছেলে-মেয়েদের সঠিক পথে চালিত করতে পারলেই কিশোর অপরাধ কমে আসবে। মা-বাবার পাশাপাশি সমাজেরও দায়িত্ব কার সন্তান কাদের সঙ্গে মিশছে তা খেয়াল রাখা। ছোটদের চিত্তবিনোদন, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণও তাদের মানসিক সুস্থতা নিশ্চিত করবে। তাই শহরে খেলাধুলার মাঠ পর্যাপ্ত সংখ্যায় রাখতে হবে। কিশোররা মাদকাসক্ত হয়ে নানা অপরাধে জড়াচ্ছে। তাই মাদক নিয়ন্ত্রণে নীতিনির্ধারকদের কঠোর পদক্ষেপের দিকে যেতে হবে। ছেলে-মেয়েদের হাতে মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ-জাতীয় ডিভাইস দেওয়ার আগে দ্বিতীয়বার ভাবতে হবে।
মোহাম্মদ আলী
বোরহানপুর, হাজারীবাগ রোড, ঢাকা।
► কিশোরদের অপরাধপ্রবণতা রোধ করতে হলে তাদের স্নেহ-ভালোবাসার ডোরে বেঁধে রাখতে হবে। তাদের পর্যাপ্ত সময় দিতে হবে। বন্ধুসুলভ আচরণ করতে হবে। বিশেষ করে তাদের বয়ঃসন্ধিক্ষণে ভুল পথে যাওয়া ঠেকাতে হবে। অর্থও অনেক সময় অনর্থের কারণ হচ্ছে। তাই ছোটদের হাতে বেশি পয়সা দেওয়া যাবে না। বড়রা নিজেরা সুশৃঙ্খল জীবন যাপন করলেও ছোটরা সহজে খারাপ পথে যায় না।
হরেন্দ্রকুমার নাথ
পাহাড়তলী, চট্টগ্রাম।
► কিশোরদের পাশাপাশি কিশোরীরাও জড়িয়ে পড়ছে অনেক অপরাধে। সামাজিক সচেতনতার পাশাপাশি সংশোধনমূলক কর্মকাণ্ডও বাড়াতে হবে।
ফারুক আহমেদ
বাগমারা, রাজশাহী।
► পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে সমাজ—সবারই ভূমিকা রাখতে হবে কিশোর অপরাধ নিয়ন্ত্রণে। স্মার্টফোনের অপব্যবহারও অল্পবয়সীদের খারাপ করছে। শুধু কিশোর কেন, তরুণ, যুবক সবার মূল্যবোধে অধঃপতন ঘটছে। উন্নয়ন উন্নয়ন বলে চিৎকার করছি, অনেক কিছুতে যে ধস নামছে খেয়াল করছি না।
আসাদুল্লাহ মুক্তা
উল্লাপাড়া, সিরাজগঞ্জ।
► দুর্নীতিগ্রস্ত, অযোগ্য শিক্ষকদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে সরান। সন্তান অন্যায় করলে কঠোর শাস্তি দিন। তবেই কিশোর অপরাধ কমে আসবে।
মো. ফয়সাল ইসলাম সরকার
চৌরাস্তা, গাজীপুর।
► মাদকের রমরমা বাণিজ্য আগে বন্ধ করুন। নিজেদের মানবিক মূল্যবোধও বাড়ান। বড়রা ভালো হয়ে গেলে কিশোররাও সুপথে চলতে উদ্বুদ্ধ হবে। কিশোরদের অধঃপতন না ঠেকাতে পারলে বাংলাদেশ ভয়ংকর পরিণতির দিকে এগিয়ে যাবে। ভালো শিক্ষক, ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যদি আমরা নিশ্চিত করতে না পারি, অল্প বয়সীরা কোথায় ভালো হওয়ার শিক্ষা পাবে? শিশু-কিশোরদের নষ্ট হওয়া থেকে রক্ষা করতে পারলেই আমরা জাতি হিসেবে এগিয়ে যাব। তা না হলে পতন অনিবার্য।
কুমারেশ চন্দ্র
বাস শ্রমিক, ঝিনাইদহ টার্মিনাল।
► আগে কারণগুলো জানতে হবে। ছিন্নমূল পথশিশু তৈরি হওয়া কি আমরা বন্ধ করতে পারব?
সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্য নিরসন করতে পারলেই শিশুরা উদ্বাস্তু হয়ে জন্মাবে না, বড় হয়ে জড়াবে না অপরাধেও।
আনোয়ারুল ইসলাম
উখিয়া, কক্সবাজার।
► সামাজিক হয়ে উঠতে কিশোরদের মিলেমিশে চলার শিক্ষা দিতে হবে। প্রয়োজন ছাড়া মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে দেওয়া যাবে না। কিশোরদের আকাশ সংস্কৃতি থেকে দূরে রাখতে হবে। বন্ধু হয়ে মিলেমিশে কিশোরদের প্রতি সার্বক্ষণিক নজর দিতে হবে। নিজ নিজ ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলতে হবে। কিশোরদের শিক্ষার ওপর বেশি জোর দিতে হবে। মাদকের নেশা যেন কিশোরদের পেয়ে না বসে সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। ক্রীড়ামোদী, সংস্কৃতিমনা করে কিশোরদের গড়তে হবে। ভারতীয় সিরিয়াল এ দেশ থেকে উৎখাত করতে হবে।
কামরুজ্জামান
কলাবাগান, ঝিনাইদহ সদর।
► আজকে দেশে ১৭ কোটি জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক কিশোর। তারা বাস্তবে যা দেখে তা-ই শেখে। পাড়ায়, মহল্লায়, গ্রামে এখন প্রতিনিয়ত মারামারি হয়। এ ছাড়া টিভি সিরিয়াল, ইন্টারনেট, ভিডিও গেমস তো আছেই। আজ কিশোর ও কিশোরীদের মা-বাবা কিছু বলতে গেলেই তারা রিঅ্যাক্ট করে। বিশেষ করে ১৩ থেকে ১৬ বা ১৭ বছরের কিশোর, সে মেয়ে বা ছেলে হোক, তাদের মধ্যে এ প্রবণতা দেখা যায়। বয়ঃসন্ধিকালে মানুষের আচরণ পরিবর্তিত হবে—এটাই স্বাভাবিক। তাই কিশোরদের সচেতন করার জন্য মা-বাবার চেষ্টা অবিরত রাখতে হবে। এ ছাড়া গণমাধ্যমে যদি কিশোরদের সচেতন করার জন্য কোনো প্রামাণ্যচিত্র বা নাটকের মতো চমৎকার করে প্রগ্রাম চালু করা যেত, তাহলে খুব ভালো হতো। আশা করি, সরকার ও মিডিয়া কর্তৃপক্ষ বিষয়টি ভেবে দেখবে।
মো. মহসীন সরকার
নয়নপুর, কসবা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া।
► কিশোর বয়সে যাতে কেউ বিপথগামী না হয় সেদিকে পরিবারের অভিভাবকদের লক্ষ রাখতে হবে। তাদের বোঝাতে হবে, আবার খুব শক্তভাবেও বলা যাবে না। যে যেভাবে বোঝে তাকে সেভাবেই বোঝাতে হবে।
শেখ মোহাম্মদ আলী
তালতলা বাজার, সিরাজদিখান, মুন্সীগঞ্জ।
► প্রতিটি শিশু-কিশোর ও তরুণ যেন তাদের পরিবার থেকে নৈতিক, সামাজিক ও ধর্মীয় শিক্ষা নিয়ে বেড়ে উঠতে পারে সেই দায়িত্ব গ্রামের মাতব্বর এবং প্রত্যেক মা-বাবাকেই গ্রহণ করতে হবে।
মো. মোকাদ্দেস হোসাইন সোহান
গ্রামপাঙ্গাসী, চানপাড়া, রায়গঞ্জ, সিরাজগঞ্জ।
► কিশোরদের মধ্যে মুক্ত স্বাধীন শৈশব ফিরিয়ে দিতে হবে। অতিরিক্ত লেখাপড়ার চাপ কমাতে হবে। মুক্ত পরিবেশে ফুটবল, ক্রিকেট, হাডুডু, ব্যাডমিন্টন, মোরগ লড়াইসহ সব ধরনের খেলাধুলার সুযোগ দিতে হবে। আধুনিক প্রযুক্তি ইন্টারনেট, ফেসবুক, মোবাইল ফোন ইত্যাদির ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। বিভিন্ন টিভি সিরিয়াল দেখে কিশোররা অপরাধ করা শেখে। সেই সিরিয়াল থেকে তাদের দূরে রাখতে হবে। সবার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কর্তৃপক্ষ ও অভিভাবকদের সতর্ক অবস্থানে থেকে কিশোরদের নৈতিক শিক্ষায় গড়ে তুলতে হবে।
মো. আবদুর রাজ্জাক নাছিম
রায়গঞ্জ, সিরাজগঞ্জ।
► ঢাকার উত্তরার ‘গ্যাংবাজি’ করা কিশোররা অন্যকে ভয় দেখিয়ে আনন্দ পেত। পোলিশ সমাজতাত্ত্বিক জিগমুন্ত ব্যোম্যানের ভাষায় : তোমার ভয়ই আমার আনন্দ, আমার ক্ষমতা। ভয়ের শাসনের দাপট পরিবার থেকে সমাজ ও রাষ্ট্র পর্যন্ত বিস্তৃত। ক্রসফায়ার, গুম-হত্যা ও নির্যাতনের রাষ্ট্রীয় চর্চারই নকল করে সন্ত্রাসীরা। ‘গ্যাং কালচার’ ভয়ের শাসনেরই কৈশোরিক প্রতিরূপ। শুধু বড়লোকপাড়া নয়, গরিব-মধ্যবিত্ত পাড়ার তরুণদের মাঝেও দাপুটে ‘গ্যাংবাজি’ ছড়াচ্ছে। উঠতি বয়সের কিশোররা দাপুটে মাচো বা ‘ব্যাটাগিরি’ দেখাতে ভালোবাসে। তারা বীর নায়ক হতে চায়। সুস্থ সমাজে তাদের এই অভিলাষ পূরণ হয় সুস্থ পথে। তাই কিশোর অপরাধ নিয়ন্ত্রণে সমাজকে আগে সুস্থ করতে হবে।
মুফতি মুহাম্মদ আবদুল্লাহ আল হাদী
ব্যাংক কলোনি, সাভার, ঢাকা।
► নেশাগ্রস্ত শিশু-কিশোরদের মধ্যে অপরাধপ্রবণতা বেশি। বাংলাদেশ শিশু-কিশোর অধিকার ফোরামের মতে, বাংলাদেশের ৮৫ শতাংশ শিশু-কিশোরই কোনো না কোনোভাবে মাদক সেবন করে। এর মধ্যে ১৯ শতাংশ হেরোইন, ৪৪ শতাংশ ধূমপান, ২৮ শতাংশ বিভিন্ন ট্যাবলেট ও ৮ শতাংশ ইনজেকশনের মাধ্যমে নেশা করে থাকে। অভিভাবকদের কঠোর হতে হবে। স্কুল-কলেজের প্রাতিষ্ঠানিক নিয়মনীতি কঠিন হতে হবে, যেন কেউ ক্লাস ফাঁকি দিতে না পারে।
এস আর শানু খান
শালিখা, মাগুরা।
► পারিবারিক, বিশেষ করে মা-বাবার, সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয় সচেতনতা কিশোরদের অপরাধপ্রবণতা থেকে আমাদের মুক্তি দিতে পারে। কিশোরদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানমুখী করতে হবে। প্রকৃত জ্ঞানের চর্চা নিশ্চিত করতে হবে। ২০১৫ সালের এডুকেশনওয়াচ প্রতিবেদন মতে, জাতীয় সংগীত গাওয়া হয় না ২৩ শতাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয় না ৯ শতাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। ৮৮ শতাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নেই গ্রন্থাগার। ৪৫ শতাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হয় না বার্ষিক সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা, ৪১ শতাংশ প্রতিষ্ঠানে হয় না বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা এবং স্কাউটিং হয় না ৭০ শতাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়েও একই হাল! অনেকের বিপথে গমনের যাত্রা এখান থেকেই শুরু হয়। তাহলে কিভাবে জাগবে শিক্ষার্থীদের দেশপ্রেম, মানবিক মূল্যবোধ? তাদের পক্ষে জঙ্গি হয়ে ওঠা, নানা রকম অপরাধ কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়া কিভাবে বন্ধ হবে? সময় এসেছে দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ গ্রহণের।
আলমগীর ইমন
চট্টগ্রাম।
► পরিবারকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। স্কুল-কলেজে নৈতিকতার শিক্ষা দিতে হবে।
মাসুম আহমেদ
ময়মনসিংহ।
► মা-বাবার সচেতনতা কিশোর অপরাধ রোধের প্রধান হাতিয়ার। সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় উদ্যোগও প্রয়োজন। সেই সঙ্গে দারিদ্র্য দূরীকরণের ব্যবস্থা নিতে হবে। নিশ্চিত করতে হবে নৈতিকতার শিক্ষা।
অনিত্য চৌধুরী
চকবাজার, চট্টগ্রাম।
► সন্তানকে আদর্শিকতায় গড়ে তোলার প্রথম কারিগর মা-বাবা। তাঁদের সে দায়িত্ব পালন করতে হবে।
ইয়াছিন খন্দকার লোভা
সিলোনীয়া বাজার, উত্তর জায়লস্কর, ফেনী।
► মা-বাবা সচেতন হলে কিশোর অপরাধপ্রবণতা কমে যাবে। কিশোরদের মেধা ও মননের পরিপূর্ণ বিকাশও ঘটাতে হবে।
মোহাম্মদ শেখ সাদী
চট্টগ্রাম আইন কলেজ, চট্টগ্রাম।