খােলা বাজার২৪, শনিবার, ২৮ জানুয়ারি ২০১৭: যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান কর্মকর্তা হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের আসন গ্রহণ ও বারাক ওবামার আবেগাপ্লুত বিদায় পূর্বতন আসা-যাওয়ার ঘটনা বিচারে কিছুটা ব্যতিক্রমীই বলতে হয়। বিদায়কালীন ভাষণে ওবামার বিষণœ প্রকাশ এবং সেই সঙ্গে ট্রাম্পবাদবিরোধী ভূমিকাও ঐতিহ্য ধারা থেকে ভিন্ন। স্পষ্ট ভাষায় দুই পরস্পরবিরোধী রাজনৈতিক ধ্যান-ধারণার দ্বন্দ্ব চিরাচরিত ডেমোক্র্যাট-রিপাবলিকান দ্বন্দ্বের চেয়েও বেশি কিছু, ভিন্ন কিছু বার্তা ও চরিত্র নিয়ে প্রকাশ পেয়েছে।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের অপ্রত্যাশিত জয়ে ডেমোক্র্যাট জমানার দীর্ঘ শাসনের অবসান ঘটল আরেকটি ব্যতিক্রমী ঘটনার মধ্য দিয়ে। আর তা হলো ট্রাম্পের অভিষেক অনুষ্ঠানের তথা শপথ গ্রহণের বিরুদ্ধে হাজার হাজার মার্কিন নর-নারীর বিশেষত নারীদের বিক্ষোভ। ট্রাম্প বিরোধিতার সূচনা অবশ্য তাঁর বাছাই পর্বের নির্বাচনী প্রচারের সময় থেকেই। এর কারণ আর কিছুই নয়, এই ধনকুবের প্রার্থীর বাগাড়ম্বর, প্রথাবিরোধী উল্টাপাল্টা বক্তব্যের জন্য। তাঁর উগ্র অহমবাদী আচরণ ও নারীবিদ্বেষ, এবং বিভিন্ন ইস্যুতে তিক্ত কটুকথার মন্তব্যের প্রতিক্রিয়াও ট্রাম্প বিরোধিতার কারণ।
এরই মধ্যে চলেছে ট্রাম্পের মানসিকতা, তাঁর রাজনৈতিক চিন্তাভাবনা ও ঘোষণা, তাঁর ব্যক্তিত্ব, এমনকি পুতিন-সম্পর্ক নিয়ে রাজনৈতিক-মনস্তাত্ত্বিক বিচার-বিশ্লেষণ দেশ-বিদেশে। মার্কিন গণমাধ্যম ছাড়াও বিশ্ব গণমাধ্যমের বড়সড় অংশকেও দেখা গেছে ট্রাম্পকে নিয়ে নানা কোণ থেকে কাটাছেঁড়া করতে। এককথায় একজন অজনপ্রিয়, অগ্রহণযোগ্য প্রার্থী প্রেসিডেন্ট নির্বাচন-রেসে অংশ নিয়েছেন—এটাই বুদ্ধিবৃত্তিক মহলের গরিষ্ঠ অংশের উপলব্ধি ও অভিমত।
অদ্ভুত বিষয় হলো তা সত্ত্বেও গণমাধ্যমের বা জরিপের ভবিষ্যদ্বাণী মিথ্যা প্রমাণ করে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিজয়। আবার তাও আমেরিকার নির্বাচনব্যবস্থার উদ্ভটত্বের কারণে, যা নিয়ে এর আগে আলোচনা কম হয়নি। একটি বিষয়ে কমবেশি সবাই একমত যে ট্রাম্পের বিজয়ের পেছনে রয়েছে মার্কিনি শ্বেতাঙ্গ জাতীয়তাবাদকে উসকে দেওয়া, বর্ণবাদী ব্যবস্থার পক্ষে বক্তব্য, এমনকি মহৎ (গ্রেট) আমেরিকার ঐতিহ্য পুনরুদ্ধারের সংকল্প ঘোষণা।
ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারে কয়েকটি ঘোষণাই প্রকৃতপক্ষে আলোড়ন তুলেছিল বিশ্বব্যাপী সংস্কৃতিবান রাজনীতিমনস্ক মানুষের মধ্যে। সেগুলোর মধ্যে মুসলিমবিরোধী, হিস্পানিবিরোধী, কৃষ্ণাঙ্গবিরোধী ও অভিবাসীবিরোধী নীতি উল্লেখযোগ্য। তবে অধিকতর তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হলো, প্রকাশ্যে উচ্চবিত্তবান শ্রেণির স্বার্থরক্ষার পক্ষে ও এর বিপরীতে প্রেসিডেন্ট ওবামার মধ্যবিত্ত-নিম্নবিত্তবিষয়ক নীতির বিরুদ্ধে ঘোষণা যে তিনি প্রেসিডেন্ট হলে তাঁর কার্যদিবসের প্রথম দিনেই সেসব নাকচ করে দেবেন।
কথা রেখেছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যথারীতি প্রথম দিনেই এক নির্বাহী আদেশে বহুল আলোচিত ‘ওবামাকেয়ার’ স্থগিত করেছেন তিনি। তাতে কারো উল্লাস, কারো হতাশার কারণ হয়েছেন। এখানেই থেমে থাকেননি ট্রাম্প। সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার আমলে নিয়োজিত ৮০ জন রাষ্ট্রদূতকে স্বদেশে ফিরিয়ে আনার নির্দেশ দিয়েছেন। বোঝা যাচ্ছে ওবামানীতি যতটা পারেন ঝেড়েমুছে ফেলবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এতটা হয়তো কেউ ভাবেননি। কারণ নির্বাচনী ইশতেহার বা প্রচার অনেক সময় নানা বাস্তব কারণে কাজে পরিণত করা যায় না। যেমন উদাহরণ বর্তমান ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী।
কিন্তু ট্রাম্প ভিন্ন জাতের মানুষ, একেবারেই ভিন্ন সিরিজের তাস। তাই প্রতিক্রিয়ার কথা ভেবেচিন্তে কাজ করা অন্তত এ ক্ষেত্রে হয়তো তাঁর স্বভাবসুলভ নয়। তাই ‘আমেরিকাকে গ্রেট’ বানানোর শপথ বাস্তবায়নে যা নয় তাই হয়তো করতে পারেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। কারণ মার্কিন প্রেসিডেন্টের হাতে, ক্ষেত্র বিশেষে সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও বলতে হয় অসীম ক্ষমতা। সে ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন একাধিক মার্কিন প্রেসিডেন্ট। আইজেন হাওয়ার বা রোনাল্ড রিগ্যান থেকে নিক্সন বা বুশ সিনিয়র-জুনিয়র অনেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট তেমন উদাহরণ।
শপথ-উত্তর ভাষণে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যা বলেছেন, তাও বড় রকম স্ববিরোধী। আমেরিকাকে এখন থেকে নতুন পথে চালিত করার ঘোষণা উপলক্ষে ট্রাম্প বলেন যে ‘তিনি ক্ষমতা ফিরিয়ে দিচ্ছেন জনগণের হাতে। ‘ সেই সঙ্গে তাঁর ঘোষণা : এখন থেকে বিশ্বে আমেরিকাই সবার ওপরে থাকবে। আমেরিকা হবে বিশ্বের এক নম্বর রাষ্ট্র। জার্মান বংশোদ্ভূত এই মার্কিন নাগরিকের কণ্ঠে আমরা শুনতে পাচ্ছি সুপার জাতীয়তা ও সুপার রাষ্ট্রের নাৎসিবাদী শ্রেষ্ঠত্বের ঘোষণা।
কিন্তু মুশকিল হচ্ছে সময়টা গত শতাব্দীর ত্রিশের দশক নয়। আর শুদ্ধরক্তের শ্রেষ্ঠত্বের দাবি ও আগ্রাসী তৎপরতা মার খেতে খেতে বহুজাতিক ও বহু বর্ণের সমন্বিত জাতিরাষ্ট্রের বাস্তবতাকে মেনে নিতে বাধ্য হচ্ছে। অন্তত সে ধারার সমর্থনে বিশ্বজনমত প্রবল। কিন্তু তা সত্ত্বেও ধনকুবেরদের মিলিত তৎপরতায় সৃষ্ট পুঁজিবাদী যুক্তরাষ্ট্র দ্বিদলীয় শাসনে জনস্বার্থমুখী প্রকৃত বহুজাতিক রাষ্ট্র হয়ে ওঠেনি। এদিক থেকে ডেমোক্র্যাট বনাম রিপাবলিকান শাসনের মধ্যে তফাত সামান্য। তবু কিছু তফাত ওবামার কিছু কাজে পরস্ফুিট। সে তফাত ব্যক্তিনির্ভর, দলীয় নীতিনির্ভর নয়।
ডেমোক্র্যাট শাসনও আধিপত্যবাদী বা আগ্রাসী বিদেশনীতির ক্ষেত্রে রিপাবলিকান শাসন থেকে ভিন্ন নয়। বহু উদাহরণ তেমন সত্য প্রমাণ করে। যেমন—আফগানিস্তান ইস্যু, ফিলিস্তিনবিরোধী ইহুদি সমর্থন ইস্যু। অন্যদিকে কিউবানীতি নিয়ে ওবামার ভিন্ন যাত্রা ব্যতিক্রম হিসেবে বিবেচ্য। স্ববিরোধিতায় আক্রান্ত বারাক ওবামা তাই নিজ দলে বামপন্থী হিসেবে পরিচিত বার্নি স্যান্ডার্সের বদলে বিতর্কিত প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনকে সমর্থন জানানো, যা তাঁর রাজনৈতিক চরিত্রের দোলাচলবৃত্তিরই পরিচায়ক।
তবে এসব ক্ষেত্রে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বা সদ্য নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মধ্যে রাখঢাক নেই, নেই লোকরঞ্জনের দায় মেটানোর চেষ্টা। তাই রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প একজন সুপার রিপাবলিকান, যার বিরুদ্ধে তাঁর নিজ দলের কিছু বিশিষ্ট রাজনীতিকের মধ্যে রয়েছে রীতিমতো ক্ষোভ। কিন্তু ট্রাম্প এসবের ধার ধারেন না। আসলে তিনি দলীয় রাজনৈতিক চরিত্র বহন করার চেয়ে ব্যক্তিক চরিত্র বৈশিষ্ট্যেরই ধারক হয়ে থাকতে চান।
তবে রাজনীতির নানা ক্ষেত্রে রিপাবলিকান রক্ষণশীলতার ধারক-বাহক হয়েও তাঁর ‘সুপার ইগো’ সব কিছুর ঊর্ধ্বে, সেখানে তিনি ক্ষেত্র বিশেষে দলীয় নীতিরও ঊর্ধ্বে। এ ক্ষেত্রে কেউ কেউ তাঁর পুতিন-নৈকট্যের বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলে থাকেন। এ ঘটনা সত্যি বিস্ময়কর। তবে এ ঘটনা কতটা সত্য আর কতটা লোকদেখানো বিতর্ক সৃষ্টিকারক, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। তাই বলা যায়, রাজনীতিতে বিতর্কের নাম ডোনাল্ড ট্রাম্প। সময়ই শুধু সত্য-মিথ্যার ভেদ ঘুচিয়ে দিতে পারবে।
দুই.
আসলে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ব্যক্তিত্ব বিশ্লেষণে এমন সিদ্ধান্তই হয়তো সংখ্যাগরিষ্ঠ বুদ্ধিজীবী মেনে নেবেন যে ব্যক্তি ট্রাম্পকে রাজনীতির কোনো নির্দিষ্ট পরিচয়ে চিহ্নিত করা যাবে না। রিপাবলিকান মনোনীত প্রার্থী হয়েও ট্রাম্প একান্তভাবেই একজন ব্যক্তি ডোনাল্ড ট্রাম্প, আপন বৈশিষ্ট্যচিহ্নিত অরিপাবলিকান রাজনীতিক। রাজনীতিও হয়তো এই ধনকুবেরের কাছে একধরনের ব্যবসা, যেকোনোভাবে সাফল্যই সেখানে মূলকথা।
এমন এক মনস্তত্ত্বের কারণে মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী বা বিজয়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট তাঁদের রাজনীতির মহামূল্যবান সামরিক হাতিয়ার ‘ন্যাটো’কে অচল মুদ্রা হিসেবে চিহ্নিত করতে পারেন। একই সঙ্গে তিনি সিআইএকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে চান না, গণমাধ্যমকে অনায়াসে বিতর্কিত করে তোলেন। এ সবকিছুই তাঁর ব্যক্তিগত ভাবমূর্তিতে ইতি বা নেতির ছোপ লাগার পরিপ্রেক্ষিত বিবেচনায়। সফল ব্যবসায়ী মেধাই তাঁর চিন্তাভাবনা বা কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।
একধরনের ‘হামবানিজমে’র শিকার ডোনাল্ড ট্রাম্প রাজনীতি ও রাষ্ট্রনীতিতে কতটা সফল হবেন, তা নির্ভর করছে তাঁর কথা ও কাজের ভেদ দূর করতে বিচক্ষণ ও দূরদর্শী মেধা কতটা ভূমিকা রাখতে পারে তার ওপর। তা না হলে তিনি একজন উদ্ভট মানসিকতার খেয়ালি প্রেসিডেন্ট হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবেন। তাঁর বিতর্কিত বক্তব্যগুলো চমক সৃষ্টির উদাহরণ হিসেবে ইতিহাসে ধরা থাকবে।
যেমন—ন্যাটো সম্পর্কে তাঁর বিতর্কিত বক্তব্য কারো কারো বিচারে চমকেরই তুল্য। কারণ সফল ব্যবসায়ী ধনকুবের ডোনাল্ড ট্রাম্প হয়তো ব্যবসার খাতিরে শান্তি পছন্দ করছেন, আর সে কারণে মার্কিন অর্থনীতি চাঙ্গা করতে ‘ন্যাটো’র পেছনে ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় ‘অপচয়’ হিসেবে গণ্য করেন, অন্ততপক্ষে বক্তৃতায় বলেন। আবার এ কথাও ঠিক, যুদ্ধ অস্ত্র ব্যবসার বাড়বাড়ন্ত ঘটায়। একজন সফল ব্যবসায়ী হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প বোঝেন যুক্তরাষ্ট্রকে ‘গ্রেট’ বানাতে গেলে তার অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড আরো শক্ত, আরো পাকাপোক্ত করে তুলতে হবে। হয়তো তাই বর্তমান অর্থনৈতিক সংকট থেকে মুক্তির অন্যতম প্রধান উপায় হিসেবে তিনি বাণিজ্য ক্ষেত্রে সংরক্ষণ নীতি গ্রহণের পক্ষে, যা বহির্বিশ্বে যত বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করুক না কেন।
যুক্তরাষ্ট্র তো বরাবরই আত্মস্বার্থের পথ ধরে চলেছে অবশিষ্ট বিশ্বের ভালোমন্দ নিয়ে বিবেচনা না করে। হয়তো প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তেমন কিছুই করতে চান অর্থনীতি ক্ষেত্রে আমেরিকার এক নম্বর রাষ্ট্রের অবস্থান নিশ্চিত করার প্রয়োজনে। হয়তো লক্ষ্য, তাঁর ঘোষিত ‘আমেরিকাকে আবার গ্রেট’ বানানো নিশ্চিত করা।
এ ক্ষেত্রে আমার প্রশ্ন : আমেরিকা কি কখনো ‘গ্রেট’ তথা ‘মহৎ’ রাষ্ট্র হিসেবে নিজেকে তুলে ধরতে পেরেছে? দাসশোষণ ও দাসনির্যাতন, স্থানীয় আদিবাসী উচ্ছেদ ও জঘন্য বর্ণবাদী চেতনার মতো মানবতাবিরোধী মানসিকতা নিয়ে যে সমাজ ও রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা তার চরিত্রে ‘মহতের’ তকমা লাগানো তো অসম্ভব ব্যাপার। দু-একজন প্রেসিডেন্ট যদিও ব্যতিক্রম এবং মানবিক চরিত্রের প্রকাশ ঘটিয়েছেন তাঁদের নীতি ও কর্মে। তা ছাড়া উপনিবেশবাদী শক্তির ক্ষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পুঁজিবাদনির্ভর সাম্রাজ্যবাদী চরিত্রের নগ্ন প্রকাশও তো ঐতিহাসিক সত্য, বিশেষভাবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর থেকে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ‘গ্রেট’ তথা ‘মহৎ’ বানানোর কাজে যে দু-একজন প্রেসিডেন্ট কয়েক পা এগোতে পারতেন তাঁরা সে পথে পা বাড়াননি। বরং অভ্যন্তরীণ সমস্যা নিয়েই তাঁরা ব্যস্ত সময় কাটিয়ে গেছেন। একজন তো অমানবিকতার বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে আততায়ীর হাতে প্রাণই দিলেন। অন্যজনের একই পরিণতি তাঁর উদার ও কিছুটা বর্ণবাদবিরোধী ভূমিকার কারণে। তাঁর অন্বিষ্ট কাজ কি প্রগতিবাদী রাজনীতির সঙ্গে সম্পর্কহীন একজন ধনকুবের প্রেসিডেন্টের পক্ষে সম্ভব?
সে পথে পা বাড়াতে হলে দরকার মানবকল্যাণী অর্থনীতিতে বিশ্বাস, দরকার অস্ত্রশিল্প ও অস্ত্রভাণ্ডারকে গুরুত্বহীন করে শান্তিবাদী বিদেশনীতিতে আস্থা স্থাপন। অস্ত্রের ভাষায় নয়, মানবিক যুক্তির ধারায় কথা বলা। সর্বোপরি লক্ষ্য হবে বিশ্বকে নিরস্ত্রীকরণ, বিশেষত আণবিক নিরস্ত্রীকরণের পথে পরিচালিত করা। এবং তা মানবিক আদর্শকে মূলধন করে। ডোনাল্ড ট্রাম্প এমন ধারণার প্রতিনিধিত্ব করেন বলে মনে হয় না। হোয়াইট হাউসের চার দেয়ালের অহমবোধ ও আত্মস্বার্থের রক্ষণশীলতা তেমন আদর্শবাদী রাজনীতিকে গ্রহণ করে না, প্রশ্রয়ও দেয় না। তাই সমাজতন্ত্র নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্টদের মহা-আতঙ্ক। আসলে ডোনাল্ড ট্রাম্প যে ‘গ্রেট আমেরিকা’র কথা বলেছেন ও বলছেন, তা প্রকৃতপক্ষে অর্থনৈতিক-রাষ্ট্রনৈতিক পরাশক্তি চরিত্রের যুক্তরাষ্ট্র, যার নির্দেশে চলবে গোটা বিশ্ব। এমন প্রভুত্ববাদী যুক্তরাষ্ট্রই মনে হয় ডোনাল্ড ট্রাম্পের স্বপ্নের দেশ। সর্বোপরি একজন রাষ্ট্রনীতিক হিসেবে তিনি যে যুদ্ধবিরোধী ও শান্তিবাদী তেমন প্রমাণ তাঁর বক্তব্যে কোথাও মেলেনি।
সবশেষ কথা, সময়ই বলবে ডোনাল্ড ট্রাম্পের রাজনৈতিক চরিত্রের কোন দিকটা আসল সত্য, তাঁর এ তাবত প্রদত্ত বক্তব্যের কোনটা ঠিক, কোনটা বেঠিক—এমন মন্তব্য পোপ ফ্রান্সিসের। আমাদের বিবেচনায় যুক্তরাষ্ট্র তার পুঁজিবাদী, বৈষম্যবাদী, আধিপত্যবাদী ভূমিকা অব্যাহত রেখে কখনোই মহৎ রাষ্ট্র হিসেবে ‘গ্রেট’ পদবাচ্য হয়ে উঠতে পারবে না।