খােলা বাজার২৪, শুক্রবার ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭: আমার অনেক উদ্ভট কল্পনার একটা হচ্ছে, ঢাকা-সিলেট-ঢাকা রুটে বাস বা কারে যাতায়াতের সময় মাননীয় সড়কমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পাশে বসে যাওয়া। না না, তাঁদের সঙ্গসুখ লাভ করে ভিআইপি ট্রিটমেন্ট পাওয়ার জন্য নয়। কারণ আমার সেই কাক্সিক্ষত ভ্রমণে মাননীয় মন্ত্রীদের পারিষদবিহীন অবস্থায়, দেহরক্ষী, পুলিশের প্রতিরক্ষণ গাড়ি, গাড়িতে ফিট করা ‘ভুভুজ্বালা’ (হ্যাঁ, ওই বস্তুটির বিকট ধ্বনি শ্রবণেন্দ্রিয়ে জ্বালাই সৃষ্টি করে বটে, যা শুনে মানুষ-গাড়িঘোড়া কেন, যমও বোধ হয় দায়িত্ব ছেড়ে পালায়!) ইত্যাদি ছাড়াই ‘পাবলিকের একজন’ হয়ে যেতে হবে। শুনেই হয়তো কেউ কেউ বলবেন, এটা কেমন কথা, মাননীয় মন্ত্রীরা কি পাবলিকের একজন নন? আমার বিনীত মন্তব্য : তাঁরা যত দিন মন্ত্রী/এমপি না হন তত দিন তাঁরা পাবলিকের একজন নিশ্চয়ই, তবে মন্ত্রী/এমপি হয়ে যাবার পর তাঁদের জীবন-যাপন প্রণালী দেখে কেউ বলবে না তাঁরা পাবলিক। তাঁরা তখন মাননীয় মন্ত্রী। কবি আব্দুল মান্নান সৈয়দের একটি লাইন মনে পড়ছে : ‘ছিলাম মানুষ, হয়েছি কবি’। (ভালো কথা, একদার নিভৃতচারী অথচ বিপুল শক্তিমান এই কবিকে কি আমরা ভুলতে বসেছি? ভুলতে বসেছি কি তিনি লেজুড়বৃত্তি করতেন না বলে?)
তা আমার এই অদ্ভুত খেয়ালের কারণটা কী? কারণ আর কিছুই না। গত ১৯৯৮ সাল থেকে ঢাকা-কুলাউড়া-ঢাকা, ঢাকা-সিলেট-ঢাকা রুটে আমি অজস্রবার দূরপাল্লার বাস-ট্রেনে যাতায়াত করেছি। আজও করি। তবে ইদানীং নিজের গাড়ি হওয়ায় স্ট্যাটাস একটু বেড়েছে। যাতায়াত কমেনি। অবশ্য বেশির ভাগ সময়ে তা ‘কারে’। আর এই ভ্রমণ যে কতটুকু ক্লান্তিকর, অনিশ্চিত ও সর্বোপরি ভীতিপ্রদ, তা একেবারে সরেজমিনে চক্ষু-কর্ণের বিবাদভঞ্জন করে বোঝানোর জন্যই মাননীয়দের একটু কষ্ট দিতে চাই। যানজট তো আছেই। ওটা এখন আমরা আমাদের ভবিতব্য বলে মেনে নিয়েছি। আমরা জানি, কখন যে গন্তব্যে পৌঁছাব তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। যানজটের ফলে কোনো বাসে বা কারে, এমনকি কোনো অ্যাম্বুলেন্সে, কোনো মৃত্যুপথযাত্রী মানুষের জানটা যানজটে পড়ে আছাড়ি-পিছাড়ি খাচ্ছে কি না, কোনো চাকরিপ্রত্যাশী তরুণ তার ইন্টারভিউ নামক সিঁড়িটি মিস করছে কি না, কোনো অশীতিপর বৃদ্ধ বা বৃদ্ধার নাভিশ্বাস উঠছে কি না—এসব খবর কে রাখে। মনে হয় যেন জাতি হিসেবে এর সব কিছু আমরা বাজে খরচের খাতায় লিখে রেখেছি। আর আমাদের অনুভূতিগুলো ভোঁতা হতে হতে একদম মরে গেছে।
দুই.
আসুন, এবার একটি ‘জার্নি বাই রোড—ফ্রম সিলেট টু ঢাকা’ রচনা লিখতে শুরু করা যাক। কষ্টের পয়সায় যখন গাড়ি একটা কিনেছি, আর যখন দুইজন মাননীয় মন্ত্রীকে পেয়েছি সহযাত্রী হিসেবে, তখন চলুন গাড়িতে করেই যাওয়া যাক। গাড়ি মানে মাননীয়দের শুল্কফাঁকি, থুড়ি শুল্কমুক্ত, হস্তীমার্কা ল্যান্ড রোভার বা প্রাদো জাতীয় কিছু নয়, একটি ছোটখাটো টয়োটা কার, যাকে পথের সব বৃহদাকৃতি যানবাহনকে সমীহ করে চলতে হয়।
রাস্তায় নেমে সিলেট শহরের বাইরে এসেই টের পাওয়া গেল আপাতদৃষ্টিতে মসৃণ পিচঢালা পথের একটু পরে পরেই লুকিয়ে আছে ‘চোরাবালি’। হ্যাঁ, নদীতে যেমন থাকে চোরাবালি, যার অবস্থান সম্বন্ধে আগে থেকে কিছুই বোঝা যায় না, তেমনি মসৃণ সমতল পথে হঠাৎই বলা নেই কওয়া নেই রাস্তাটি কোথাও রূপকথার গল্পের বুড়ির পিঠের মতো খানিকটা বেঁকে গেছে। ফলে স্বাভাবিক গতির গাড়িটিও আচমকা লাফিয়ে উঠবে, আর ভেতরের যাত্রীরা ‘কী হলো কী হলো’ বলে বেচারা ড্রাইভারকে বকাঝকা করতে শুরু করবে : কানা নাকি? দেখেশুনে চালাতে পারো না? ড্রাইভার কী বলবে। এর উত্তর দিতে পারবেন সড়ক-নির্মাতারা, যারা নির্মাণকাজের দায়িত্ব ঠিকাদারের হাতে ছেড়ে দিয়ে চোখ বুজে শুধু রানিং বিল, ফাইনাল বিল সই করে গেছেন।
আবার যেখানে ব্রিজ-কালভার্ট আছে, সেখানে অবশ্যই ধরে নেবেন সেতুর উপরিভাগ ও দুই পাশের সড়কের উচ্চতার মধ্যে কম করে হলেও ৫/৬ ইঞ্চি বেশকম আছে। ফলে একটু অসতর্ক হলেই আবার ধাক্কা। কর্তাব্যক্তিরা অবশ্য বলতে পারেন এরূপ লাফ দিয়ে ওঠা, ধাক্কা খাওয়া ইত্যাদি পরিকল্পিত। কী রকম? এর কারণ, যাত্রী বা যাত্রীরা যাতে সুমসৃণ পথচলায় নিদ্রিত না হয়ে পড়েন। (যারা জানেন না, তারা জেনে রাখুন, দুর্ঘটনা ঘটলে নিদ্রিত অবস্থায় মৃত্যুঝুঁকি জাগ্রত অবস্থার চেয়ে বেশি। নিদ্রিত অবস্থায় আপনার দেহের ‘রিফ্লেক্স অ্যাকশন’ কাজ করে না। )
কথা বলতে বলতে আমরা হাইওয়ে ধরে বেশ খানিকটা এগিয়ে গেছি। বিশ্বনাথ-তাজপুর-গোয়ালাবাজার-শেরপুর পার হয়ে এখন আমরা হবিগঞ্জ জেলায়। এদিকে সন্ধ্যাও নেমে এসেছে। এ অবস্থায় হাইওয়েতে যানবাহনগুলোর ‘ডিম লাইট’ জ্বালিয়ে চলার কথা। কিন্তু না, কারো সেদিকে খেয়াল নেই। একটু পরে তারা হেডলাইট জ্বালাবেন। সেটা আবার কখনও কমানো-বাড়ানো করবেন না। সামনে থেকে আসা কোনো গাড়ির চালকের চোখ ধাঁধিয়ে গেলেও না। মন্ত্রী মহোদয়দের পেছনের সিটে বসিয়ে আমি বসেছি ড্রাইভারের পাশের সিটে। অনেকটা প্লেনের নেভিগেটরের মতো। সারাক্ষণ এটা-ওটার দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে ড্রাইভারকে সজাগ রাখা আমার কাজ। এটা আমি হাইওয়েতে সব সময়ই করি। পাছে ড্রাইভারের তন্দ্রা আসে, পাছে সে ঝুঁকি নিয়ে ‘ওভারটেক’ করে, এসব দুর্ভাবনা নিয়ে কি আর আরাম করে পেছনে বসা যায় বা চোখ বোজা যায়।
ওভারটেক করা সম্বন্ধে দুটো কথা না বললেই নয়। হাইওয়েতে বাস-ট্রাক-মাইক্রোবাস ইত্যাদির সীমা লঙ্ঘনকারী চালকরা এ ব্যাপারে পুরোপুরি গোঁয়ার। এরা বোধ হয় জীবনে কখনও পবিত্র কুরআনের সেই আয়াতটি পড়েননি বা শুনেননি, যেখানে আল্লাহ সুস্পষ্টভাবে বলেছেন, নিশ্চয়ই তিনি সীমা লঙ্ঘনকারীদের পছন্দ করেন না। ওভারটেক বা সামনের গাড়িকে অতিক্রম করে যাওয়ার আগে চালককে অবশ্যই নিশ্চিত হতে হবে সামনে যে ফাঁকটুকু আছে তা গলিয়ে তিনি সহজে গাড়িকে পার করতে পারবেন কি না। তিনি যদি দারুণ রকম ‘রিস্ক-টেকার’ (কথ্য বাংলায় বলা যেতে পারে ঝুঁকি নেওইন্যা বা ঝুঁকিলেনেওয়ালা) হন, আর মনে করেন যেখানে প্রয়োজনীয় জায়গাটুকু নেই সেখান দিয়েও তিনি, চালকদের ভাষায়, ‘টান মেরে’ বের হয়ে যেতে পারবেন, তবে তা হবে সীমা লঙ্ঘনের কাজ। দুঃখের বিষয়, আমাদের মহাসড়কগুলোতে ড্রাইভাররা এটা করেন পান্তাভাত গেলার মত। আর মহাবিক্রমশালী ট্রাক-বাস ড্রাইভার তো নিজেকে মনে করেন রাস্তার মালিক বা বাদশাহ নামদার।
সবচেয়ে বিপজ্জনক হলো এটা যখন তারা করেন রাতের বেলা। মাননীয় মন্ত্রী মহোদয়গণ, এখন রাত বাজে আটটার একটু বেশি। আমরা এখন ভৈরব-নরসিংদী-ঢাকা মহাসড়কে। চারদিক নিস্তব্ধ নিঝ্ঝুম। হঠাৎ দেখুন, সামনে গাড়ির হেডলাইট দেখা যাচ্ছে। একটা দু’টা নয়, পরপর ৪/৫টা। যেন সম্রাট আকবরের মশালবাহী অশ্বারূঢ় সৈনিকের দঙ্গল। এর মধ্য থেকে একটি গাড়ি লাইন থেকে বেরিয়ে বেলাইনে গিয়ে সামনের গাড়ি বা গাড়িগুলোকে ওভারটেক করে উন্মাদের মতো ছুটে এল সামনের দিকে। সঙ্গে সঙ্গে আমি সাবধান করে দিলাম আমাদের ড্রাইভারকে। ওই ‘সন্ত্রাসী’ গাড়িটা শাঁ করে বেরিয়ে গেল আমাদের পাশ দিয়ে। আর কয়েক ইঞ্চি হলেই আপনি আমি হয়ে যেতাম মরহুম অমুক তমুক। ওভারটেকের এই স্বেচ্ছাচারিতা চলে দিনরাত, যত্রতত্র।
একটুক্ষণ পর সামনে পড়ল একটা বাজারমত। সেখানে আবার রাস্তার মাঝখানে ‘ডিভাইডার’। কিন্তু রাতের বেলা কিছুতেই বোঝার উপায় নেই ওখানে কিছু আছে। কোনো বাতি বা অন্য কোনো চিহ্ন তো দূরের কথা, ওটা এমনভাবে রাখা আছে ওখানে যেন একটা মৃত্যুফাঁদ। যে কোনো গাড়ি ওটাতে ‘উষ্ঠা’ খেয়ে ৃ। থাক, বাকিটুকু বলে আর আপনাদের ভয় দেখাতে চাই না। হাজার হোক, আজ রাতের সফরে আপনারা আমার মেহমান। সারা পথে কোথাও রাস্তার ওপর অবৈধভাবে দাঁড় করানো গাড়িঘোড়া, কোথাও নির্মাণসামগ্রীর স্তূপ, কোথাও মাস্তানদের বসানো দোকানপাট-হাটবাজার। যে কোনো যানবাহনচালককে ওই পথে যেতে হয় ময়-মুরব্বির পা না মাড়িয়ে চলার মতো সাবধানে।
মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আমরা বেশ কিছুদিন যাবৎ ‘হাইওয়ে প্যাট্রল’ নামক একটি সংস্থার কথা শুনে আসছি। আপনি বিশ্বাস করুন, গত বিশ বছরে বিশ দিনও হাইওয়েতে এদের সাক্ষাৎ পাইনি আমি। এই যে আমরা ভুলতা-তারাবো পার হয়ে সুলতানা কামাল ব্রিজের কাছে পৌঁছে গেলাম, কই, চোখে পড়েছে এদের অস্তিত্ব?
এই সুলতানা কামাল ব্রিজটি হওয়ায় জনগণের নদী পারাপারের ঝামেলা কমেছে ঠিকই, কিন্তু ওটি পার হয়ে যাত্রাবাবাড়ীর গোল চত্বরে পৌঁছতে গেলে যে রাস্তা দিয়ে যেতে হয়, তার চেহারা-ছবিটি আপনারা স্বচক্ষে দেখে যান। এটা কি একটা রাস্তা, না খানা-খন্দকে ভরা লাউ-কুমড়া লাগানোর সব্জিক্ষেত্র? একে তো সরু, তার ওপর এই মাটির রাস্তাটির খাল-বাকল মনে হয় কারা খাবলে-খুবলে উঠিয়ে নিয়ে গেছে। এর চেয়ে বোধ হয় ডেমরার ওখানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে ফেরি পারাপারই ভালো ছিল। আর কিছু না হোক, দু’জন কামলা লাগিয়ে রাস্তাটিকে মাঝে মাঝে ড্রেসিং করে তো রাখা যায়।
এই যে রাস্তায় এত পুরনো ট্রাক-বাস চলে, তার শতকরা ৯০টিরই ‘ব্যাকলাইট’ বলে কোনো বস্তু নেই। এদের চেহারা-সুরত দেখলে মনে হয়, এরা সারা জীবন কুষ্ঠ রোগে ভুগছে। এরা কতটুকু ফিট তা না দেখে ‘ফিটনেস’ সার্টিফিকেটটি কিন্তু বছর বছর ঠিকই দেওয়া হচ্ছে। চালকদের লাইসেন্সও শোনা যায় ক্ষেত্রবিশেষে সহজলভ্য। দূরপাল্লার অনেক বাস-ট্রাক চালকের, বিশেষ করে নৈশকালীন চালকদের বিরুদ্ধে মাদকাসক্তির অভিযোগ শোনা গেলেও পথে কোথাও আচমকা থামিয়ে পুলিশ কর্তৃক তাদের ‘ব্রেথ-টেস্ট’ (নিশ্বাস-প্রশ্বাস পরীক্ষা) ও প্রয়োজনে রক্ত পরীক্ষার মত অন্যান্য ‘টেস্ট’-এর কোনো ব্যবস্থা নেই। হাইওয়ে পুলিশ বিভাগ উটকো ঝামেলা মনে না করলে বিবেচনা করে দেখতে পারেন, এটা চালু করা যায় কি না। কয়েকটা যন্ত্রপাতি কেনা ও কিছু মামুলি প্রশিক্ষণের জন্য খরচ খুব একটা বেশি পড়বে বলে মনে হয় না।
কোনো রকম কষ্টে-কুষ্টে, কুতিয়ে-মুতিয়ে যাত্রাবাড়ী পার হওয়া গেছে। এখন মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারে উঠতে পারলে বাঁচা যায়। না, সেটিও অত সহজে হতে দেবেন না আপনারা। প্রথমত, কোনো দিকনির্দেশনামূলক সাইনবোর্ড-টোড নেই। লোকজনকে জিজ্ঞেস করে যাও রাস্তা পেলেন, তার অবস্থা সেই সুলতানা কামাল ব্রিজের ডেমরা অংশের মত। গাড়ি একবার তিন হাত লাফ দেয় শূন্যে, তো আবার ৪৫ ডিগ্রি কাত হয় ডানে বা বাঁয়ে। ফ্লাইওভারে ওঠা ‘ডিসকারেজ’ করতে চান বোধ হয় কর্তৃপক্ষ!
যাক, কাসুন্দি বাড়িয়ে আর লাভ নেই। মাননীয় মন্ত্রীরা তো সবই দেখলেন, বুঝলেন। কিন্তু এর পরও কাজ হবে কি? নাকি ট্রাক-বাস মালিক সমিতির নায়ক-মহানায়ক, যাদের ওপর রাজনৈতিকভাবে আপনারা দারুণ নির্ভরশীল, যাদের বেশির ভাগ নেতা-ফেতারা আপনাদেরই দল/সংগঠনের লোক এবং চালকগোষ্ঠীও আপনাদেরই এক প্রভাবশালী সহকর্মীর পেয়ারের বান্দা—এসব বিবেচনায় এনে ‘কুল্লু খালাস’ করে দেবেন? দিন। আপত্তি নেই। কিন্তু আজরাইলের ভাণ্ডারে রোজ যে পরিমাণ সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে, তাতে জাতীয় সংসদে না হোক, একদিন যে পাবলিক রাজপথে নেমে জানতে চাইবে না ট্রাক-বাসের মালিক কারা, চালকদের ম“দাতা কে, সড়কমৃত্যু নামক ট্র্যাজেডিতে কুম্ভকর্ণের ভূমিকা কার, তার নিশ্চয়তা কী? ভালো কথা। দুষ্ট লোকে বলে, মাননীয় সড়কমন্ত্রী নাকি তাঁর দলের মহাসচিব হওয়ার পর সড়ক দুর্ঘটনা অনেক বেড়ে গেছে। স্যাবোটাজ করার মতলবে কোনো মতলববাজ চামচা এ ধরনের সেলিব্রেশনের পথ বেছে নেয়নি তো? এই সব-সম্ভবের-দেশে সবই সম্ভব, মাননীয় মন্ত্রী।
থাক, অনেক হয়েছে। ইনাফ ইজ ইনাফ। আপনাদের দাওয়াত দিয়ে এনে অনেক বে আদবি করেছি। এর বেশি বললে আপনাদের ‘অপমান নষ্ট’ করার দোষে দোষী হয়ে যাব। শেষ করি একটা গল্প দিয়ে। এটা এই জার্নি শেষে আপনাদের জন্য সামান্য ভেট।
তিন.
বিরাট লম্বা লাইনে পাবলিক দাঁড়িয়েছে বেহেশত আর দোজখে যাওয়ার জন্য। প্রথমেই এক ষণ্ডামার্কা পঞ্চাশোর্ধ্ব লোক, উসকোখুসকো চুল, দুই চোখে যেন ইট ভাটার আগুন, গা থেকে ভুটভুটে গন্ধ বেরোচ্ছে মদের। তার রেজাল্ট জানা গেল : জান্নাতুল ফেরদৌস। রেজাল্ট শুনে লোকটা যেমন চমকে উঠল, লাইনের সবাইও মুখ চাওয়া-চাওয়ি করতে লাগল। এর পরের ব্যক্তি একজন সুফী দরবেশ। দীর্ঘ ৫০ বছর ইমামতি করেছেন জামে মসজিদে। কোনো দিন তাহাজ্জুদও মিস হয়নি। হুকুম : থ্রি স্টার বেহেশত। শুনে হুজুর খুব বিচলিত হয়ে জিজ্ঞেস করলেন ওখানকার দায়িত্বপ্রাপ্ত এক কর্মচারীকে, এমনটি হলো কেন? ওই ব্যাটা তো সকলেই জানে একটা পাঁড় মাতাল। সে ফাইভস্টারেরও বেশি, আর আমিৃ? সেই আমলা জবাব দিলেন : দেখুন হুজুর, আপনি ৫০ বছর ইমামতি করেছেন। লক্ষ লক্ষ লোকে আপনার পেছনে দাঁড়িয়ে নামায পড়েছে। কিন্তু আপনি কি জানেন, আপনার পেছনে দাঁড়িয়ে তাদের প্রায় সবাই হয় নিজের ব্যবসায় কেন লস যাচ্ছে, কোন ফাইলটা আটকাতে হবে, কাকে বন্দুকযুদ্ধে মারতে হবে, কার জমিটা দখল করতে হবে—এই সব চিন্তায় মগ্ন থাকত। আর রেকর্ড বলছে, তিরিশ বছর ঢাকা-সিলেট লাইনের ওই বাস ড্রাইভার সায়েদাবাদ থেকে গাড়ি ছাড়লেই তার পেছনে বসা প্যাসেঞ্জাররা সবাই জিকির-আজকারে মশগুল থাকত। এখন বলুন, সে বড় বুযুুর্গ, আলেম, না আপনি?
লেখক : সাবেক সচিব, কবি