Thu. Mar 13th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খােলা বাজার২৪,শুক্রবার, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭: 17এটা স্বস্তির বিষয় যে প্রখ্যাত চলচ্চিত্রকার তারেক মাসুদ ও সাংবাদিক মিশুক মুনীরসহ পাঁচজন সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতের মামলায় বাসচালক জামির হোসেনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। সাধারণত সড়ক দুর্ঘটনার কোনো মামলায় অভিযুক্তের সাজা হওয়ার দৃষ্টান্ত কম। সেদিক থেকে এই রায় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। তবে এখনো অনেক আইনি ধাপ পার হতে হতে হবে। শেষ পর্যন্ত সাজা যাতে বহাল থাকে সেটি নিশ্চিত করতে হবে।
গতকাল বুধবার দুপুরে মানিকগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক আল-মাহমুদ ফাইজুল কবীর এ রায় দেন। প্রায় পাঁচ বছর ধরে বিচার চলার পর আলোচিত এ মামলার রায় ঘোষণা হলো। বাসচালক জামিরকে ৩০৪ ধারায় অবহেলাজনিত মৃত্যুর জন্য দোষী সাব্যস্ত করে আদালত সর্বোচ্চ সাজা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন। এছাড়াও তাকে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো দুই বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।

২০১১ সালের ১৩ আগস্ট মর্মান্তিক এ দুর্ঘটনা ঘটে। মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার শালজানা গ্রামে কাগজের ফুল সিনেমার সুটিংস্পট দেখে তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীরসহ কয়েকজন মাইক্রোবাস যোগে ঢাকায় ফিরছিলেন। এসময় মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছিল। পথিমধ্যে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের জোকা এলাকায় তাদের বহনকারী মাইক্রোবাসের সঙ্গে বিপরীতমুখি চুয়াডাঙ্গা ডিলাক্স পরিবহনের সংর্ঘষ হয়। কিছু বুঝে উঠার আগেই প্রাণ হারান তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীরসহ পাঁচজন। নিহত অন্য তিনজন হলেন- তারেক মাসুদের চলচ্চিত্র প্রডাকশন সহকারী ওয়াসিম ও জামাল এবং মাইক্রোবাস চালক। এ ঘটনায় ঘিওর থানা পুলিশের তৎকালীন এসআই লুৎফর রহমান বাদী হয়ে একটি দুর্ঘটনাজনিত মামলা দায়ের করেন। পরে ডিবি ইন্সপেক্টর আশরাফ-উল ইসলাম মামলার তদন্ত করে চুয়াডাঙ্গা ডিলাক্সের বাস চালক জামির হোসেনের বিরুদ্ধে ২৭৯,৩৩৭,৩৩৮(ক),৩০৪ ও ৪২৭ ধারায় আদালতে চার্জশিট দেন।
সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু শুধু একটি পরিবারে গভীর শোক, ক্ষত সৃষ্টি করে না, আর্থিকভাবেও পঙ্গু করে ফেলে ওই পরিবারকে। কোন কোন দুর্ঘটনায় পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিটি প্রাণ হারান। তখন ওই পরিবারের যে কী অবস্থা হয় তা বলার অপেক্ষা রাখে না। আর যারা পঙ্গুত্ববরণ করে তাদের পরিবারের অবস্থা আরও করুণ, আরও শোচনীয়। এক পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, সড়ক দুর্ঘটনার ফলে বছরে গড়ে বাংলাদেশের জিডিপির শতকরা দেড় ভাগ নষ্ট হয়, যার পরিমাণ পাঁচ হাজার কোটি টাকা। বিগত ১৫ বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৫৫ হাজার মানুষ। আর দুর্ঘটনাজনিত মামলা হয়েছে প্রায় ৭৭ হাজার। এসব কারণে সড়ক দুর্ঘটনা এখন অন্যতম জাতীয় সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। গত ১৩ দিনে সড়ক দুর্ঘটনায় সারাদেশে প্রাণ হারিয়েছেন ১৪৩ জন। সঙ্গতকারণেই এই সমস্যা থেকে মানুষজনকে মুক্ত রাখার সার্বিক পদক্ষেপ গ্রহণকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখা জরুরি।
সড়ক দুর্ঘটনা হয় না এমন দেশ নেই। কিন্তু দুর্ঘটনার সংখ্যা এবং ক্ষয়ক্ষতি যত কমিয়ে আনা যায় সেটিই লক্ষ্য হওয়া উচিত। ভাল যান, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চালক, সড়ক ব্যবস্থা উন্নতকরণ, সিগন্যালিং ব্যবস্থা আধুনিক ও যুগোপযোগী করার বিষয়গুলো তো রয়েছেই। এর সঙ্গে দুর্ঘটনায় পতিতদের ত্বরিত চিকিৎসা পাওয়ার বিষয়টিও অত্যন্ত জরুরি। এর সঙ্গে কারো কোনো গাফিলতি জনিত কারণে দুর্ঘটনা ঘটলে সেজন্য কঠোর শাস্তির বিকল্প নেই।