Tue. Sep 23rd, 2025
Advertisements

খােলা বাজার২৪, মঙ্গলবার, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭:  49মুক্তিযোদ্ধারা সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ সন্তান এই উক্তিটি শুধু এখন কাগজ কলমে থাকায় সম্প্রতিতে মুক্তিযোদ্ধাদের পুনরায় যাচাই-বাচাই তালিকা চুড়ান্ত করে তালিকা প্রকাশ করেছে বগুড়ার শেরপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা যাচাই কমিটি। এতে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে ২৫৫ জন বাতিল পড়ায় গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ তালা দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই কমিটির সভাপতি স্থানীয় সাংসদ হাবিবর রহমানের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছে বঞ্চিত মুক্তিযোদ্ধারা।
জানা যায়, শেরপুর উপজেলার মুক্তিযোদ্ধা সংসদের আওতাধীন সরকারী ভাতাপ্রাপ্ত ১৮৯ জন ও মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রনালয়ে পুনরায় চুড়ান্ত তালিকা প্রাপ্তির সাপেক্ষে অনলাইন আবেদনকৃত ১৩৭ জন মুক্তিযোদ্ধাদের গত ১১ ফেব্রুয়ারি যাচাই-বাচাই সম্পন্ন করেন উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা যাচাই কমিটির ৭ সদস্যের কমিটি। কমিটির সভাপতি স্থানীয় সাংসদ বীরমুক্তিযোদ্ধা হাবিবর রহমান, সদস্য সচিব উপজেলা নির্বাহি অফিসার একেএম সরোয়ার জাহান, জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের প্রতিনিধি আব্দুস সোবাহান, জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল(জামুকা)’র প্রতিনিধি মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল বারী, মোফাজ্জল হোসেন, নরোত্তম সরকার ও বর্তমানের উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ওবায়দুর রহমান। উক্ত যাচাই-বাচাইকালে কমিটির সভাপতি হাবিবর রহমান তার ব্যক্তিগত সহকারী কথিত জামায়াত কর্মী ফরহাদুজ্জামান শাহীনের সমন্বয়ে মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রনালয় প্রদত্ত যাচাই সংক্রান্ত নীতিমালার প্রজ্ঞাপন উপেক্ষা করে উপজেলার সরকারী ভাতাপ্রাপ্ত কোন মুক্তিযোদ্ধাদের সুনিদিষ্ট ( গেজেট তালিকা, লাল মুক্তিবার্তা, সবুজ মুক্তিবার্তা) সহ অন্যান্য কাগজপত্র না দেখেই কমিটির সভাপতি’র রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করতে গেজেটভুক্ত ১২০ জনের মধ্যে ১৭জন, লালমুক্তিবার্তায় ৬৯ জনের মধ্যে ৫৩জন ও অনলাইনে আবেদনকৃত ১৩৭জনের মধ্যে ১জন সহ মাত্র মোট ৭১জন মুক্তিযোদ্ধাদের চুড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করেন। প্রকাশিত তালিকার মধ্যে সাবেক সাংসদ আমানউল্লাহ খান, জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মজিবর রহমান মজনু, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল জলিল, বাংলাদেশ ব্যাংক বগুড়া’র সহকারী পরিচালক আব্দুর রউফ খান সহ ভাতাপ্রাপ্ত ও অনলাইন আবেদনকৃত ২৫৫ জন বাদপড়া মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়ে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কার্যালয় তালাবদ্ধ করে। এসময় তারা যাচাই কমিটির সভাপতি সাংসদ হাবিবর রহমানের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন। এসময় উপজেলা পরিষদ এলাকায় বাদপড়া মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সন্তানদের মধ্যে কথাকাটাকাটির এক পর্যায়ে অভিযোগকারী এক মুক্তিযোদ্ধা লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনায় উত্তেজনা তৈরী হলে থানা পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। তবে বাদ পড়া মুক্তিযোদ্ধাদের বিক্ষোভ চলাকালীন সময়ে উপজেলা নির্বাহি অফিসার ব্যতিত মুক্তিযোদ্ধার কমান্ডার ওবায়দুর রহমান ও কমিটির অন্যান্য সদস্যদের দেখা মেলেনি। এ ব্যাপারে যাচাই কমিটির সভাপতি সাংসদ হাবিবর রহমান প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা কিনা সংশয় রয়েছে বলে বিক্ষুদ্ধ মুক্তিযোদ্ধাদের অধিকাংশরাদের মধ্যে মৌখিক অভিযোগ তুলেছেন।
এ প্রসঙ্গে মুক্তিযোদ্ধা তালিকা থেকে সদ্য বাদ পড়া বগুড়া জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব মজিবর রহমান মজনু বলেন, পূর্ব পাকিস্থানের সময় শেরপুর থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও বঙ্গবন্ধু সংগ্রাম পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলাম, মুক্তিযুদ্ধ করে গেজেটভূক্ত হলেও আমাকে সহ অন্যান্যদের বাদ দেয়া হয়েছে। এটি রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও ব্যক্তি আক্রোশ ছাড়া আর কিছুই নয়।
এ প্রসঙ্গে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাচাই কমিটির সভাপতি বগুড়া-৫ এর সাংসদ আলহাজ্ব হাবিবর রহমান বলেন, মুক্তিযোদ্ধা পুন যাচাইকল্পে মহামান্য রাষ্ট্রপতি’র দেয়া সার্কুলার অনুযায়ী যাচাই-বাচাই কমিটির অন্যান্যদের পরামর্শক্রমে করা হয়েছে। যদি কোন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা বাদ পড়ে থাকেন তার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয় ও আদালত রয়েছে আশ্রয় নিতে পারবে। তবে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বক্তব্যে তিনি বলেন, এটি যদি কেউ ভেবে থাকেন, তাহলে এটা তাদের মনগড়া আবিস্কার ছাড়া আর কিছুই নয়।