Fri. Sep 19th, 2025
Advertisements

28খােলা বাজার২৪।। শুক্রবার, ১৭ মার্চ ২০১৭:  গাইবান্ধায় পাঁচ পাই ডাক্তার নামে যে মানুষটিকে এক নামে সবাই চেনেন তিনি হলেন হোমিও ডাক্তার নুরুল ইসলাম সরকার। সেই ৪৯ বছর আগে এক পুরিয়া ওষুধের দাম পাঁচ পয়সা নিয়ে চিকিৎসা শুরু করেন। তখন থেকেই মানুষ তাকে পাঁচ পাই ডাক্তার হিসেবে চেনেন । আর এই নাম নিয়ে গর্ববোধ করেন তিনি।

গাইবান্ধা শহরের পুরাতন বাজারে তার এই হোমিও চিকিৎসালয়।জেলার সাত উপজেলা ছাড়াও জেলার বাহিরে থেকে মানুষ ছুটে আসেন তার কাছে চিকিৎসা নিতে। তার জনপ্রিয়তা দিনদিন জেলা শহর থেকে অন্যান্য উপজেলা ও জেলা শহরগুলোতেও বাড়ছে। তার চিকিৎসালয়ে আসার আগেই রোগীদের ভীড় জমে থাকে সেখানে।

চিকিৎসালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, শিশু, নারী, পুরুষ ও বৃদ্ধদের উপচেপড়া ভীড়। রোগীর কাছ থেকে রোগের বর্ণনা শুনে রোগ নির্ণয় করে ওষুধের নাম লিখছেন তিনি। আর তার সহকারিরা পাউডার জাতীয় হোমিও ওষুধের পুরিয়া তৈরি করে রোগির হাতে দিচ্ছেন। প্রায় প্রতিদিন দুই থেকে আড়াইশো রোগির চিকিৎসা দিয়ে চলেছেন তিনি। কিন্তু ওষুধের দাম ছাড়া কোন ফি নেন না। বর্তমানে ওষুধের দাম দশ টাকা থেকে বিশ টাকা করে নেন তিনি।

শুক্রবার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার মীরগঞ্জ বাজারের কাপড় ব্যবসায়ী আফসার আলী(৫৫) ওসুধ নিতে এসেছেন তার কাছে।তিনি বলেন,৪০ কিলোমিটার দুর থেকে পাঁচপাই ডাক্তারের কাছে এসেছি আমাশার ওসুধ নিতে।অল্প টাকায় ভাল ওসুধ এখানে পাওয়া যায়।আমার পরিবারের সকল সদস্যরা এখান থেকে ওসুধ নেয়।

নুরুল ইসলামের পারিবারিক সুত্রে জানা গেছে, গাইবান্ধা সদর উপজেলার খোলাহাটি ইউনিয়নের পশ্চিম কোমরনই গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি।বর্তমান বয়স ৯৫ বছর।১৯৫০ সালে তিনি মেট্রিকুলেশন পাস করেন। স্ত্রী জমিলা খাতুন গৃহিনী। পিতা রজ্জব উদ্দিন সরকার ও মাতা নয়াবিবি অনেক আগেই মারা গেছেন। পাঁচ ছেলে, দুই মেয়ে। বড় ছেলে জহুরুল হক এইচএসসি পাশ করে পিতার পেশায় নিয়োজিত। দ্বিতীয় ছেলে শামিম বিএ পাশ করে হোমিও চিকিৎসক ও ব্যবসা করেন। তৃতীয় ছেলে হাবিবুল হক ইংরেজীতে এম.এ পাশ করে ঢাকায় চাকরি করছেন। চতুর্থ ছেলে ছামিউল হক গাইবান্ধা এটিআই ও পঞ্চম ছেলে মনছুরুল হক কুড়িগ্রাম টেকনিক্যাল কলেজের ছাত্র। দুই মেয়ে রায়হান সুলতানা ও রাফেয়া সুলতানা বিবাহিত।

নুরুল ইসলাম সরকার বলেন, ১৯৬৭ সালে ইউপি মেম্বার নির্বাচিত হওয়ার আগে শহরের একটি কাপড়ের দোকানে চাকরি করতাম। পরে দোকানে সময় দিতে পারিনি বলে মালিক আমাকে চাকরি থেকে বাদ দেন। ফলে ১৯৬৮ সাল থেকে হোমিও চিকিৎসা পেশা শুরু করি। নিজের চেষ্টা ও বই পড়ে চিকিৎসক হয়েছি।প্রথমে পাঁচ পয়সা,তারপর দশপয়সা,দেশ স্বাধীনের পর থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত তিন থেকে পাঁচটাকা,এরপর থেকে দশ,পনের টাকা রোগীদের কাছ থেকে নেয়া হতো।বতমানে বিশ টাকা নেয়া হচ্ছে। যতদিন বেঁচে থাকবো, মানুষকে সেবা দিয়ে যাবো। তিনি বলেন, যারা ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা ফি দিয়ে এ্যালোপেথিক চিকিৎসকের কাছে যেতে পারেন না। তারাই আমার কাছে বেশি আসেন।