Thu. Mar 13th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খােলা বাজার২৪।। শনিবার, ১৮ মার্চ ২০১৭: জয়পুরহাট সদর উপজেলার প্রত্যন্ত ও ভারত সীমান্ত ঘেঁষা কল্যানপুর গ্রাম। এই গ্রামের নামানুসারে কল্যানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রায় ২ যুগ সময় ধরে চলছে মাত্র ১ জন শিক্ষক দিয়ে পাঠদান। অবশ্য মাঝে মধ্যে মৌসূমী পাখির মত ২/১ জন শিক্ষক কিছু দিনের জন্য এখানে যোগদান করলেও তারা চলে যান তদবির করে।

শিশু, প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম এই ৬ টি শ্রেণির ১৫০ জন ছাত্র-ছাত্রীর সব ক’টি বিষয় ভিত্তিক ক্লাস নেওয়া ছাড়াও দাপ্তরিক কাজ সবই করতে হয় এক শিক্ষককেই।

একই গ্রামের ময়জুল হোসেন, কামাল হোসেন চৌধূরীসহ এলাকাবাসীরা এমন তথ্য দিয়ে আরো জানান, মাঝে মধ্যে দু’ এক জন শিক্ষককে প্রেষণে (ডিপোটেশনে) পাঠানো হলেও কাঁচা রাস্তা-ঘাটসহ খারাপ যোগাযোগ ব্যবস্থার কারনে কেউ থাকেনা বেশী দিন। ফলে এক শিক্ষক দিয়ে পাঠদানের কারনে ব্যাহত হচ্ছে স্কুলটির শিক্ষা কার্যক্রম।

জেলা শহর থেকে ২২/২৩ কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা পেরিয়ে যেতে হয় কল্যানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। জয়পুরহাট সদর উপজেলার ০১ নং ধলাহার ইউনিয়ন, ডাকঘর-কড়িয়া, ক্লাষ্টার-বিষ্ণুপুর, জে এল নং-০১, বিদ্যালয় নং-০৯ এবং বিদ্যালয়টি বি গ্রেডের।

জয়পুরহাট সদর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান বলেন ১৯৫৭ সালে শিক্ষানুগারী কিছু এলাকাবাসীর দানে ৪৯ শতক জায়গার উপর বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। তারপর ১৯৯৪ সালে মূল ভবনটি নির্মাণ করা হয়।

বিদ্যালয়ে মোট ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ১৫০ জন, এর মধ্যে প্রাক-প্রাথমিকে-২৫ জন, ১ম শ্রেনী-২৯ জন, ২য় শ্রেনী-২১ জন, ৩য় শ্রেনী-২৪ জন, ৪র্থ শ্রেণী-২৭ জন, ৫ম শ্রেণী-২৪ জন।

২০১৬ সালে ১৭ জন ছাত্র-ছাত্রী প্রাইমারী স্কুল সার্টিফিকেট (পিএসসি) পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ১৭ জনই পাশ করে, এর মধ্যে ১ জন ছাত্রী জিপিএ-৫ পেয়েছে।

বিদ্যালয়ে ১৯৭৮ সালে নূরুন্নাহার নামে একজন শিক্ষিকা যোগদান করেন, তারপর যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে বাধ্য হয়েই তিনি বিদ্যালয় সংলগ্ন গ্রামের একজনকে বিয়ে করেন, পরবর্তীতে পদোন্নতি পেয়ে তিনিই প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন, ২০১৫ সালের জানুয়ারীতে তিনি অবসরে গেলে এখনও পর্যন্ত বিদ্যালয়ে কোন প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়নি।

পর্যায়ক্রমে প্রেষণে (ডিপোটেশনে) শাহীন হোসেন ৩ মাস, মাহফুজার রহমান ৬ মাস এই রকম অনেক শিক্ষককে সেখানে যোগদান করা হলেও তারা কেউই বেশীদিন বিদ্যালয়ে থাকে না।

সর্বশেষ জতীন মুর্মূ নামে একজন শিক্ষককে দেওয়া হলেও তিনিও ২০১৬ সালের ৩১ শে ডিসেম্বর দেড় বছরের জন্য প্রাইমারী শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট এ ট্রেনিংয়ে চলে যান।

ছাত্র-ছাত্রীদের কথা চিন্তা করে গ্রামের অনার্স পড়–য়া দুইজনকে প্যারা শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন তারা মাঝে-মধ্যেই তাদের ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে বিদ্যালয়ের ক্লাস পরিচালনা করেন।

বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণীর ছাত্র আহসান হাবিব, ছাত্রী সাবিনা বেগম ও ৫ম শ্রেনীর ছাত্রী সুরাইয়া আক্তার জানায়, একজন শিক্ষকই বাংলা, ইংরেজী, অংকসহ সব বিষয়ই পড়ান, আমাদের আরও শিক্ষক লাগবে।

বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণীর ছাত্র রুমিত হাসান, ৫ম শ্রেণীর ছাত্র কিরণ চৌধূরী, ১ম শ্রেণীর ছাত্র সোহান বাব’ুর বাবা এরশাদ আলীসহ অনেক অভিভাবক জানান, আমরা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকেই দেখি আসছি শিক্ষক আসে শিক্ষক যায়, কেউ দীর্ঘদিন থাকে না, স্কুলে যোগদান করার দুই-তিন মাসের মধ্যে তদবির করে অন্য বিদ্যালয়ে চলে যান।

বিদ্যালয়ের এসএমসি পরিচালনা কমিটির সভাপতি আব্দুস সাত্তার বলেন, বার বার অফিসে যোগাযোগ করার পরও শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয় না, ফলে আমাদের কোমলমতি শিশুদের লেখা-পড়ার প্রচুর সমস্যা হচ্ছে, প্রধান শিক্ষকসহ আরো কমপক্ষে ৩ জন শিক্ষকের প্রয়োজন আমাদের প্রতিষ্ঠানে।

কল্যানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একমাত্র শিক্ষক রেজাউল করিম জানান, যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে কোন শিক্ষক এখানে আসতে চান না, আসলেও তদবির করে চলে যান সুবিধামত স্কুলে।

জয়পুরহাট সদর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান বলেন, বাস্তবতা স্বীকার করে স্কুলটিতে যতদ্রুত সম্ভব প্রয়োজনীয় সংখ্যক শিক্ষক নিয়োগের আশ্বাস দেন।

কর্তৃপক্ষের অবহেলা আর শিক্ষকদের অনীহার কারনে দীর্ঘদিন ১ শিক্ষক দিয়ে খুঁড়িয়ে চলা এই বিদ্যালয়টিতে লেখাপড়া ব্যাহত হচ্ছে দীর্ঘ প্রায় ২ যুগ ধরে। এই অচলাবস্থার অবসান ঘটিয়ে দ্রুত এই বিদ্যালয়ে প্রয়োজনীয় সংখ্যক শিক্ষকের ব্যবস্থা করে পাঠদান স্বাভাবিক হোক এমন দাবী করেছেন অভিভাবকসহ এলাকাবাসীরা।