Thu. Mar 13th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খােলা বাজার২৪।। বুধবার, ২২ মার্চ ২০১৭: 15সুজন সারোয়ার : এক সময়ের অনিয়ম, ঘুষ, দূর্ণীতি, জনহয়রানী ও স্বজনপ্রীতিতে আকন্ঠ নিমজ্জিত গাজীপুর সদর উপজেলা ভূমি অফিসের চিত্র পাল্টে গেছে। গত জানুয়ারী মাসে সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে মোঃ রাশেদুর রহমান যোগদানের পর ক্রমশ দূর্ণীতির এ চিত্র ফিকে হতে থাকে। এখন যথাসময়েই সেবাপ্রার্থীরা তাদের কাংখিত সেবা পাচ্ছেন। বিগত সময়ে এ অফিসের যাবতীয় দূর্ণাম গোচাতে এখন ব্যস্ত এ কর্মকর্তা।
জানা যায়, কোনাবাড়ী, মির্জাপুর, সালনা, বাসন, পূবাইল, বাড়ীয়া ও গাজীপুর পৌর-এ সাতটি তহসিল নিয়ে গাজীপুর সদর উপজেলা ভূমি অফিসের কার্যক্রম। নামজারী, মিস মোকদ্দমা, বিভিন্ন মামলার তদন্ত প্রতিবেদন ও ব্যক্তিমালিকানার সাথে সরকারী স্বার্থ সংশ্লিষ্ট সম্পত্তির সীমানা নির্ধারণ সংক্রান্ত বিষয়সহ অন্যান্য বিষয়ে প্রতি কার্যদিবসে গড়ে প্রায় দেড় থেকে দুই’শ সেবাপ্রার্থীর আগমন ঘটে এ অফিসে।
অফিস সূত্রে জানা যায়, এখানে বছরে প্রায় ২০-২২ হাজার নামজারীর আবেদন নিষ্পত্তি হয়ে থাকে। আবেদন প্রাপ্তির পর সেগুলো সংশ্লিষ্ট তহসিলে প্রেরণ করা হয়। তহসিল অফিস কাগজপত্রে মালিকানা ও দখল যাচাই বাছাই করে নিষ্পত্তির জন্য পুনরায় উপজেলা অফিসে পাঠায়। সাতটি তহসিল নিয়ে গঠিত এই ভূমি অফিসটিতে নামজারী, মিস মোকদ্দমা, বিভিন্ন তদন্ত প্রতিবেদন ও ব্যক্তিমালিকানার সাথে সরকারী স্বার্থ সংশ্লিষ্ট সম্পত্তির সীমানা নির্ধারণ সংক্রান্ত বিষয়ে কাজের চাপ প্রচুর। ফলে অনেক ক্ষেত্রেই নির্ধারিত সময়ে সেবাপ্রার্থীরা তাদের কাংখিত সেবা থেকে বঞ্চিত হতেন। সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে সৎ, দক্ষ ও কর্মঠ কর্মকর্তা মোঃ রাশেদুর রহমান গত ৩১ জানুয়ারী এ অফিসে যোগদান করেন। তাঁর যোগদানের পর হতে অফিসটির দূর্নীতির চিত্র ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে। তাঁর যোগদানের পূর্বে প্রায় ১০ হাজার নামজারী ও মিস মোকদ্দমার নথি নিষ্পত্তির অপেক্ষায় পড়ে ছিল। বর্তমানে প্রতিদিনই তা নিষ্পত্তি হয়ে প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে।
বিপ্লব নামে একজন সেবাপ্রার্থী জানান, দেশে ভূমিসংক্রান্ত বিষয়গুলো অনেকেরই অজানা। এ কারণে সেবাগ্রহীতারা দালালের দ্বারস্থ হতে বাধ্য হন। ভবনের বাইরের দেয়ালে সাঁটানো আছে সিটিজেন চার্টার। যেখানে একজন সেবাপ্রার্থী কিভাবে তাঁর মূল্যবান সম্পত্তির যাবতীয় কাজ একা করতে পারবেন ধাপে ধাপে তার নির্দেশনা দেওয়া আছে। মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির জন্য সিটিজেন চার্টার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। একসময় দালালের সাহায্য ছাড়া জমির নামজারী ও মিস মোকদ্দমাসহ কোনো কাজই সম্ভব হতো না। এখন সেখানে জমির মালিক নিজেই সব কিছু করতে পারছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, অফিসে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নির্দিষ্ট সময়ে হাজিরা নিশ্চিত করার জন্য ডিজিটাল হাজিরা মেশিন রয়েছে। এছাড়াও ভূমি অফিসের বাহিরে ‘সেবাকুঞ্জ’ চালু করা হয়েছে। এখানে এসিল্যান্ড সেবাপ্রত্যাশীদের সেবা পাওয়ার উপায়গুলো বুঝিয়ে দেন। পুরো অফিসকে জনমুখী করতে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপই নিয়েছেন তিনি। তবে নামজারী ও জমাভাগ নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে জারীকৃত পরিপত্র পালনে আরো সচেষ্ট হওয়ার দাবি জানিয়েছে সেবাপ্রার্থীরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অন্য একজন সেবাপ্রার্থী বলেন, মন্ত্রণালয়ের পরিপত্র অনুযায়ী সিরিয়াল ভঙ্গ করে নামজারী অনুমোদন করা যাবে না। এই পরিপত্রটি শতভাগ পালন করলে দূর্ণীতি মুক্ত জনসেবা বৃদ্ধি করা সম্ভব। এক্ষেত্রে এসিল্যান্ড আরো যতœশীল হবেন বলেই আশা করি। পূর্বে কর্মরত একাধিক কর্মকর্তা সিরিয়াল ভঙ্গ করে আবেদন নিষ্পত্তি করায় এখন সেগুলো সমন্বয় করতে গিয়ে কিছু কিছু ক্ষেত্রে জটিলতার সৃষ্টি হচ্ছে। তবে খুব শীঘ্রই এ জটিলতা কাটিয়ে উঠা সম্ভব হবে।
রাজধানীর পাশের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা হওয়ায় এখানে জমির দাম অনেক বেশি। তাই জমি সংক্রান্ত বিষয়ে বিভিন্ন ঝামেলাও রয়েছে। বর্তমান এসিল্যান্ড মোঃ রাশেদুর রহমান দায়িত্ব নেয়ার পর ভূ-মালিকরা নিরাপদে আছেন। কেবল তাঁর দায়িত্বশীল বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে প্রভাবশালীরা সাধারণ মানুষকে ঠকানোর সুযোগ পাচ্ছে না। দালালমুক্ত করাসহ উপজেলা ভূমি অফিসে সর্বসাধারণের প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
অফিসটিকে দূর্নীতি, জনহয়রানী ও দালাল মুক্ত করার জন্য কর্মরত সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ইতিমধ্যেই পরিচয়পত্র প্রদান করা হয়েছে। নিরাপত্তার জন্য নামজারী অনুমোদনের কাগজপত্র একটি সুদৃশ্য সেবাখামের ভিতর ভরে প্রদান করা হচ্ছে। এছাড়াও অতীতে অফিসটিতে রেকর্ডরুমের অব্যবস্থাপনায় ফাইলপত্র যত্রতত্র পড়ে থাকত। রেকর্ড রুমটি ঢেলে সাজানো হয়েছে। ন্যায় বিচারের লক্ষে গণ শুনানীর জন্যও একটি স্থাপনা নির্মাণের কাজ এগিয়ে চলছে।