Thu. Mar 13th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

7kখােলা বাজার২৪।। শনিবার, ১ এপ্রিল ২০১৭: লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার পলাশি ইউনিয়নের মহিশা শহর বে-সরাকরি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ঝড়ের কবলে পরা প্রতিষ্ঠানটির নিয়মিত পাঠদানের অভ্যাস সকল শিক্ষক সমাজকে পাঠদানে আগ্রহী হবার উজ্জল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।

সভ্যতার ক্রমবিকাশে নারীদের অগ্রনী ভুমিকা সমাজের কারো অস্বীকার করার নয়। তার পরেও নারীরা হচ্ছে লাঞ্চিত, অপমানিত এবং শোষিত। এতো কিছুর পরেও তারা পিছিয়ে নেই। আর এই নারীদের এগিয়ে নেবার দায়িত্বে যারা নিয়োজিত তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে লালমনিরহাটের একটি বিদ্যালয়ের বর্তমান প্রেক্ষাপট নিয়ে সচেতন মহলের দৃষ্টি কামনা করেছেন বিদ্যালয়ের শিক্ষকসহ গুণীজন ও শিক্ষার্থীরা।

বিদ্যালয়টির নাম মহিশা শহর এনইউ বে-সরকারি প্রাথমিক বালিকা বিদ্যালয়। যার শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয় ২০০২ সালে। নদী বিধৌত বঞ্চিত চরাঞ্চলের প্রায় ২০০ জন ছাত্রী নিয়ে (১ম থেকে ৫ম) শিক্ষার যাত্রা শুরু করে এ বিদ্যালয়টি। যাদের নেই কোন উপবৃত্তি, নেই সরকারি সাহয্য সহযোগিতা। শিক্ষকগন স্বেচ্ছাশ্রমের মধ্যদিয়ে স্থানীয় ছাত্রীদের মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেবার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শিক্ষার প্রতি সব সময় ইতিবাচক সাড়া ছিল। তাদের ধারনা হয়ত কোন একদিন বিদ্যালয়টি সরকারি হবে এ আশায় আছেন বিদ্যালয়টির স্বেচ্ছাশ্রম দেয়া শিক্ষকগণ।

বিদ্যালয়টিতে ছাত্রীদের পড়া লেখা খুবই সন্তোষজনক। ২০০২ সালের পর থেকে এ বিদ্যালয়টিকে কখনই পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। শিক্ষকগণ শিক্ষার্থীদের শিক্ষার মশাল উজ্জীবিত করার জন্য যা যা করার, তা তারা করেই আসছে। বিদ্যালয়টির ছোট ছোট শিক্ষার্থীরা গরীর হলেও যথেষ্ঠ পরিশ্রমী, উদ্দমী এবং সাহসী। অভাবের তাড়নার কথা বললেও ভুল হবেনা বৈকি। তাদের নেই মিডডে মিল, নেই কোন উপবৃত্তি। ২০১২ সাল থেকে বিদ্যালয়টিতে প্রতিদিন নিয়মিত ক্লাশ চলে আসলেও ৫ম শ্রেণীতে কেউ পরীক্ষায় অংশ গ্রহন করেনি। আর এটিই তাদের কাল হয়ে দ্বাড়ায়। ২০১৩ সাল থেকে ২০১৬ মোট ৫টি ডি আর মতে পরিক্ষায় অংশগ্রহন করে। এ যাবত কাল কেউই ৫ম শ্রেণির সমাপনি পরীক্ষায় অনউত্তির্ণ হয়নি।

গত ২৪ মার্চ প্রচন্ড শিলা-বৃষ্টি এবং ঝড়ে ছিন্ন-বিছিন্ন হয়ে যায় টিন সেডের ওই বিদ্যালয়টি। শতভাগ পাশ করা এই প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার্থীদের এখন ক্লাস করতে হয় খোলা মাঠে, তাদের মাথার উপরের ছাদ এখন পর্যন্ত উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের কোন কর্মকর্তা প্রতিষ্ঠানটিকে সহযোগীতা করেনি বা কোন কর্মকর্তা সেখানে পরিদর্শনেও যায়নি।

বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক আব্দুল মোতালেব বকুল দুঃখ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে এ প্রতিনিধিকে জানান, আমরা অভাবে থাকলেও অনেকের চেয়েও সাবলম্বি। যে কারনে শিক্ষার ব্যপারে আমি এবং আমার শিক্ষকবৃন্দ ছ্ত্রাীদের পড়াশুনার ব্যাপারে অত্যান্ত আন্তরিক।

স্কুল মাঠে পাঠদানের ব্যাপারে জানতে চাইলে শ্রেণি শিক্ষক আরজুমান আরা বলেন, বিদ্যালয়ের সমস্ত ক্লাসরুমের টিন ঝড়ে নষ্ট হওযায় এখন বাহিরেই ক্লাস নিতে হচ্ছে। খোলা আকাশের নিচে স্কুল মাঠে পাঠদানরত শিক্ষিকা মমতাজ বেগম বলেন, মাথার উপর টিন নেই তো কি হয়েছে। আমরা আমাদের শিক্ষার্থীদেরকে নিজের সন্তানের আদলে পাঠদান দিয়ে থাকি। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও বুক বেধে আছে একদিন না একদিন তাদের বিদ্যালয়টি সরকারি হবেই।

সরেজমিনে গেলে দেখা যায় বৃষ্টিতে ভিজে স্যাতস্যাতে রুমের মধ্যেই কচি-সবুজ শিশুরা শিক্ষা গ্রহন করছে। অথচ পরনে নেই কোন ভাল কাপড়। নেই কোন শহুরে বাচ্চাদের মতো স্কুল ব্যাগ। তবুও থেমে নেই তাদের পড়া-লেখা। অবাকদৃষ্টিতে তারা তাদের শিক্ষকদের পাঠদানরত ব্লাকবোর্ডের দিকে তাকিয়ে থেকে অভিজ্ঞতা অর্জন করছে।

আদিতমারী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ইয়াছিন আলীর নিকট জানতে চাইলে তিনি জানান, বিদ্যালয়টির ব্যাপারে আমি জানি। সরকার পর্যায়ক্রমে উক্ত প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলোকে জাতীয়করণের আওতায় আনা হবে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার নবেজ উদ্দিন বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষনা মতে কোন স্কুলই বে-সরকারি থাকবে না। তাছাড়া আদিতমারী উপজেলার সচেতন মহলও চায় অচিরেই মহিশা শহর এনইউ প্রাথমিক বিদ্যালয়টি জাতীয় করনের আওতায় নেয়া হোক। তাহলে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের দীঘদিনের দুঃখ দুর্দশা লাঘব হবে। বিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি পলাশী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবু হেনা মোস্তফা কামাল জানান, প্রায় ১৫ বছর যাবত অনেক কষ্ট করে আমার শিক্ষকরা যতেœর সহিত শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। সৃষ্টিকর্তা একদিন তাদের দিকে অবশ্যই তাকাবেন।