খােলা বাজার২৪।। বৃহস্পতিবার, ৬ এপ্রিল ২০১৭:পরিবেশদূষণ রোধে সচেতনতা তৈরি ও পর্যটন সম্ভাবনা কথা তুলে ধরতে টেকনাফ থেকে খাগড়াছড়ি পর্যন্ত ৩৯০ কিলোমিটার পাড়ি দিচ্ছেন সাইক্লিস্ট মো. আবুল হোসেন। ছবিটি গতকাল শনিবার দুপুরে বান্দরবানের মেঘলা থেকে তোলা l ছবি: সংগৃহীতইতিমধ্যে ঘুরে এসেছেন ৪২টি দেশ। বাহন তাঁর দুই চাকা। শুধুই কি বিদেশ! চষে বেড়িয়েছেন দেশের নানা প্রান্ত। এখন পাড়ি দিচ্ছেন ৩৯০ কিলোমিটার। এই সাইকেল আরোহীর নাম মো. আবুল হোসেন। তাঁর বাড়ি গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার বনগ্রামে।
গত ২৭ মার্চ সকাল আটটায় আবুল হোসেন টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ থেকে সাইকেল অভিযান শুরু করেন। এখন তিনি অবস্থান করছেন বান্দরবানে। টেকনাফ থেকে শুরু করে কক্সবাজার, চকরিয়া, সাতকানিয়া হয়ে বান্দরবান পৌঁছান। ২ এপ্রিল (আজ) তাঁর রাঙামাটির উদ্দেশে রওনা হওয়ার কথা। এরপর রাঙামাটি হয়ে খাগড়াছড়িতে গিয়ে থামবে তাঁর সাইকেল। ভ্রমণের সময় তিনি বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের সম্ভাবনা ও সৌন্দর্য তুলে ধরার পাশাপাশি পরিবেশদূষণ, এইডস প্রতিরোধ, মাদক নির্মূল, দুর্নীতি রোধসহ নানা সামাজিক বিষয়ে লোকজনকে সচেতন করছেন।
গত ২৭ মার্চ বিকেলে কক্সবাজার সৈকতের লাবণী পয়েন্টে কথা হয় আবুল হোসেনের সঙ্গে। পরনে ‘দেখুন বাংলাদেশ-জানুন বাংলাদেশ টেকনাফ টু খাগড়াছড়ি’ লেখা টি–শার্ট। এই সময় তিনি ভ্রমণে আসা পর্যটকদের সঙ্গে কথা বলছিলেন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সৈকতের সঙ্গে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের তুলনা দিয়ে পরিবেশ রক্ষার বিষয়ে সচেতন করছিলেন।
আবুল হোসেন প্রথম আলোকে জানান, এ পর্যন্ত তিনি ভারত, ভুটান, নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম, লাওস, চীন, ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া, জাপান, কোরিয়া, মিসর, কাতার, ইতালি, অস্ট্রেলিয়া, নেদারল্যান্ডস, ফ্রান্স, স্পেন, পর্তুগাল, সুইজারল্যান্ডসহ ৪২টি দেশ ভ্রমণ করে বাংলাদেশের পর্যটন সম্ভাবনা, পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য রক্ষাসহ নানা বিষয়ে লাখো মানুষকে সচেতন করেছেন।
পেশায় ট্যুরিজম ব্যবসায়ী আবুল হোসেন নিজের খরচেই ঘুরে বেড়ান বিভিন্ন দেশ। ২০২১ সালের মধ্যে বিশ্বের ২০০টি দেশ ভ্রমণের ইচ্ছা তাঁর। ওই সব দেশেও বাংলাদেশকে তুলে ধরবেন। তখন কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতসহ বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ির রূপ লাবণ্য ছড়িয়ে পড়বে বিশ্বব্যাপী।
সাইকেল নিয়ে বিদেশ ভ্রমণ করার ক্ষেত্রে কখনো বাধার সম্মুখীন হয়েছেন? তিনি জানান, বিদেশের অচেনা পথঘাটে চলতে অনেক সমস্যা। তা ছাড়া আবহাওয়া, খাবার, ভাষা ও ভিসা–সংক্রান্ত নানা জটিলতা তো আছেই। তবে মনের জোরের কাছে এসব কখনো বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি।
আবুল হোসেন দুই চাকায় চক্কর শুরু করেন ১৯৯৭ সালের অক্টোবরে। ওই সময় ‘পথ যেন হয় শান্তির, মৃত্যুর নয়’—এই স্লোগানে দেশব্যাপী চলা সাইকেল শোভাযাত্রায় অংশ নেন তিনি। তখন তিনি আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজের ছাত্র। অবশ্য স্কুলজীবন থেকে সাইকেল চালানোতে পারদর্শী ছিলেন তিনি। রোভার স্কাউট ছিলেন তখন। বিদেশ সফর শুরু করেন ১৯৯৮ সালে। তাঁর স্লোগান ছিল, ‘স্থল মাইনমুক্ত পৃথিবী চাই’। এরপর ২০০০ সালে দ্বিতীয় দফায় বিদেশ ভ্রমণ শুরু করেন ‘এইডসমুক্ত বিশ্ব চাই’ স্লোগানে।
এ ছাড়া আবুল হোসেন নেতৃত্ব দেন ২০০৮ সালের ২৬ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি চত্বর থেকে বের হওয়া মাদকবিরোধী সাইকেল অভিযানের। প্রথম আলোর উদ্যোগে আয়োজিত এই কর্মসূচিতে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত মাদকবিরোধী বার্তা নিয়ে যান তিন তরুণ। তাঁদের স্লোগান ছিল, ‘মাদককে না বলো, জীবনের পথে এগিয়ে চলো’। ১৭ দিনে শেষ হয়েছিল ওই সাইকেল অভিযান।
গত ফেব্রুয়ারি মাসেও তাঁরা তিন সাইক্লিস্ট ৮৩ কিলোমিটারের টেকনাফ-কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভ সড়কে প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষার বিষয়ে পর্যটকদের সচেতন করতে সাইকেল শোভাযাত্রা করেছিলেন।
আবুল হোসেন বলেন, সরকার ২০১৬ সালকে পর্যটন বর্ষ ঘোষণা দিয়েছে। এরপর থেকে দেশি–বিদেশি লাখো পর্যটক কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙামাটি ও খাগড়াছড়ি ভ্রমণে আসছেন। তাই এখানকার জীববৈচিত্র্য, পরিবেশ ও প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষা খুবই জরুরি।
আবুল হোসেন ৩৯০ কিলোমিটারের অভিযান শেষ করে যাবেন ভারতের দিল্লিতে। সেখানে দক্ষিণ এশিয়ার শান্তি ও সম্প্রীতির চার দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সাইকেল শোভাযাত্রা চলবে। তাতে তিনি বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবেন। এরপর কক্সবাজার মেরিন ড্রাইভ সড়কে আন্তর্জাতিক মানের একটি সাইকেল শোভাযাত্রা করার উদ্যোগ নিচ্ছেন।