খােলা বাজার২৪।। রবিবার, ৯ এপ্রিল ২০১৭: কিডনির যেসব রোগ বের করা গেছে তার মধ্যে পাথর একটি পুরনো রোগ। পাথরগুলো কেবল কিডনিতে নয়, এর বিভিন্ন অংশে হতে পারে। কিডনিতে হতে পারে। কিডনির ভেতর থেকে বের হওয়া বৃক্ক নালীতে হতে পারে, প্রস্রাবের থলেতে হতে পারে এবং থলের থেকে বের হয়ে অনেক সময় পাথর মূত্রনালিতে আটকা পড়ে।পাথর কেন হয় এর উত্তর দেওয়া মুশকিল। কেননা বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে দেখেছেন অনেক ক্ষেত্রে কারণ জানাই যায় না। তবে এটা জানা গেছে যে প্রত্যেকের দেহে পাথর যাতে না হয় এমন কিছু নিরোধক পদার্থ রয়েছে। সেই উপাদানগুলো যদি কম থাকে সেসব ব্যক্তির পাথর হওয়ার প্রবণতা বেশি।
কিডনি মানুষের শরীরের পিছন দিকে মেরুদন্ডের কাছে সীমের বিচির আকৃতির দু’টি অঙ্গ। কিডনির সাথে মূত্রথলির সংযোগকারী নালী রয়েছে যাকে ইউরেটার বা কিডনিনালী বলে। এই কিডনিনালী ২৫ সেঃমিঃ-এর মত লম্বা। এর তিনটি জায়গায় একটু চাপা রয়েছে। প্রথমটি হল কিডনির পেলভিসের সাথে ইউরেটারের সংযোগ স্থল, দ্বিতীয়টি যখন পেলভিক ব্রীজ ক্রস করে এবং তৃতীয়টি যখন মূত্রনালী প্রস্রাবের থলিতে প্রবেশ করে। কিডনি থেকে যখন পাথর কিডনি নালীতে নেমে আসে তখন এই জায়গাগুলোতে পাথর আটকানোর সম্ভবনা থাকে। এখানে উল্লেক্ষ্য যে, মূত্রনালীর পাথর মূত্রনালীতে উত্পন্ন হয় না এটি কিডনিতে উত্পন্ন হয়ে কিডনি নালীর দিকে নেমে আসে। কিডনি নালীতে নেমে আসার সময় এটি কিডনি নালীকে সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে বন্ধ করে দিতে পারে। এর ফলে কিডনির ভিতর প্রস্রাব জমে কিডনি আকারে বড় হতে পারে যাকে বলা হয় হাইড্রোনেফ্রোসিস।
দীর্ঘদিন এই অবস্থা বিরাজমান থাকলে কিডনি ধীরে ধীরে নষ্ট হতে পারে। কিডনির পাথর ইউরেটারে নেমে আসলে দেহের পিছনে বক্ষ খাঁচার নীচে তীব্র ব্যথা অনুভূত হতে পারে। এই ব্যথা ক্রমশ নীচের দিকে যেমন তলপেট বা উরুর দিকে অনুভূত হতে পারে। ব্যথা ক্রমশ তীব্র হতে থাকে এবং আবার কমে আসে, এই ভাবে পুনঃ পৌণিক ভাবে ব্যথা চলতে থাকে। প্রস্রাব করার সময় ব্যথা হতে পারে। প্রস্রাব রক্তবর্ণ, ঘোলা ও দুর্গন্ধযুক্ত হতে পারে। কখনও কখনও কিছুক্ষণ পর পর প্রস্রাবের বেগ হতে পারে। যদি সংক্রমণ থাকে তবে বমি বমি ভাব, কাঁপুনি দিয়ে তীব্র জ্বর আসতে পারে। ইউরেটারে পাথরের অবস্থান পরিবর্তনের সাথে সাথে ব্যথার তীব্রতা ও অবস্থান পরিবর্তন হয়।
কিডনি পাথরের ঝুকির মধ্যে রয়েছে পারিবারিক ইতিহাস। পরিবারের একজনের পাথুরে রোগ হলে অন্যদের হবার সম্ভাবনা বেশী। বয়স্ক অর্থাত্ যাদের বয়স ৪০ বত্সরের বেশী তাদের মধ্যে এই রোগ বেশী দেখা যায়। তবে অল্প বয়স্কদের মধ্যেও এই রোগ দেখা যায়। মহিলাদের চেয়ে পুরুষরা এই রোগে আক্রান্ত বেশী হয়ে থাকেন। যারা গরম আবহাওয়াতে বসবাস করেন এবং পানি কম খান তাদের পানিশূণ্যতা দেখা দেয়। এই পানি শূণ্যতা কিডনিতে পাথর রোগের প্রকোপ বাড়ায়। কিছু কিছু খাদ্য দ্রব্য যেমন অতিরিক্ত প্রোটিন, চিনি ও লবণ কিডনিতে পাথরের ঝুঁকি বাড়ায়। মোটা মানুষের ক্ষেত্রে এই পাথুরে রোগের প্রকোপ বেশী দেখা দেয়। কিছু কিছু রোগ যেমন গ্যাষ্ট্রিক, বাইপাস সার্জারী, ইনফ্লামেটরি বাউল ডিজিস, ক্রণিক ডায়রিয়া, হাইপার প্যারাথাইরয়েড, মূত্রনালীর সংক্রমণ ইত্যাদি কিডনি পাথর রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
চিকিত্সার ক্ষেত্রে মূত্রনালীতে পাথরের অবস্থান, আকার ও কি ধরণের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে তা বিবেচ্য। সাধারণত ৫ মিঃমিঃ আয়তনের পাথর পানি বেশী খেলে নিজে নিজে প্রস্রাবের সাথে বের হয়ে যেতে পারে। এই ক্ষেত্রে তুলসি পাতার রস খেলে কার্যকরী ফল পাওয়া যায়।
কিডনির পাথর গলে বেরিয়ে যাবে তুলসি পাতার রসে
তুলসী সবুজ রঙের গুল্মজাতীয় একটি উপকারী উদ্ভিদ। এ গাছের পাতায় বহু রোগ সারানোর উপকারী গুণ রয়েছে। তুলসীপাতার রস বা চা প্রতিদিন একগ্লাস করে পান করলে, আমাদের কিডনিতে পাথর হওয়ার শঙ্কা কমে যায়। আর যদি কিডনিতে পাথর জমে তাহলে তুলসী পাতার রস টানা ৬ মাস পান করলে সেই পাথর গলে প্রস্রাবের সঙ্গে বেরিয়ে যায়।
এছাড়া সর্দি, কাশি, কৃমি, প্রস্রাবে জ্বালা কমায়, হজমকারক ও কফ গলাতে দারুণ কাজ করে তুলসীপাতা। এটি ক্ষত সারাতে এন্টিসেপটিক হিসেবেও কাজ করে।
তুলসিপাতা দিয়ে চা ও মিশ্রণ তৈরির কয়েকটি প্রস্তুত প্রণালী পাঠকদের সামনে তুলে ধরা হলো:
তুলসী পানি
উপকরণ : দুই কাপ পানি ও কয়েকটি পাতা।
প্রস্তুত প্রণালী : একটি পাত্রে দুই কাপ পানি নিন। এর সঙ্গে কয়েকটি তুলসিপাতা সিদ্ধ করুন। ফুটে উঠলে নামিয়ে পান করতে পারেন। এই মিশ্রণটি গলা ব্যথা ও খুসখুসে কাশি কমিয়ে আপনাকে আরাম দেবে।
তুলসী-চা
উপকরণ : ১০-১৫টি তুলসীপাতা, গুড়, পানি ও লেবুর রস।
প্রস্তুত প্রণালী : প্রথমে গুড় ও তুলসীপাতা বেটে নিন। এর মধ্যে দেড় কাপ পানি ও এক চামচ লেবুর রস মিশিয়ে চুলায় বসান। মিশ্রণটি ফুটে উঠলে নামিয়ে ফেলুন। এই চা পান করলে আপনার শরীর উষ্ণ থাকবে।
ভেষজ তুলসী-চা:
উপকরণ : এক টুকরো আদা, গোলমরিচ, লবঙ্গ, তুলসীপাতা, দারুচিনি, এলাচ পরিমাণ মতো।
প্রস্তুত প্রণালী : পরিমাণমতো পানিতে উপরের উপকরণগুলো মিশিয়ে জ্বাল দিন। ১০ মিনিট পর নামিয়ে ছেকে পান করতে পারেন।
এই ভেষজ তুলসী-চা আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং ডেঙ্গু ও ম্যালেরিয়া রোগ থেকে বাঁচানোর ক্ষমতা রাখে।
হার্বাল জুস
উপকরণ : আজওয়াইন, তুলসীপাতা, জিরা, আমচুর গুঁড়া, লবণ এবং পুদিনা পাতা পরিমাণ মতো।
প্রস্তুত প্রণালী : চার কাপ পানিতে উপরের উপকরণগুলো মিশিয়ে ১০-১৫ মিনিট জ্বাল দিন। এরপর পান করুন। এই জুস প্রতিদিন পান করলে হজমশক্তি বাড়বে এবং পানিশূন্যতা থেকেও আপনাকে রক্ষা করবে।