আবদুল মান্নান ।। খােলা বাজার২৪।। শনিবার, ১৫ এপ্রিল ২০১৭: বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চার দিনের রাষ্ট্রীয় সফর শেষে সোমবার সন্ধ্যায় দিল্লি থেকে দেশে ফিরেছেন। নরেন্দ্র মোদি ভারতের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার পর এটি ভারতে শেখ হাসিনার প্রথম রাষ্ট্রীয় সফর। মাঝখানে প্রায় সাত বছরের ব্যবধান। এরই মধ্যে মোদি একবার ঢাকা সফর করে গেছেন। শেখ হাসিনা দিল্লি যাওয়ার আগে বিএনপির নেতা-নেত্রী, এক শ্রেণির বিজ্ঞ ‘সুশীল মহল’ ও মিডিয়া চায়ের কাপে নানা ধরনের ঝড় তুলেছে। বিএনপির আবাসিক দপ্তর সম্পাদক (সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব) রুহুল কবীর রিজভী আর দলের ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ঘোষণা করলেন, শেখ হাসিনা দিল্লি যাচ্ছেন সামরিক চুক্তির নামে বাংলাদেশকে ভারতের হাতে তুলে দিতে। ১৯৯৭ সালে শেখ হাসিনা পার্বত্য শান্তি চুক্তি করলে বেগম জিয়া বলেছিলেন, চুক্তি স্বাক্ষর হওয়ার পরপর ফেনী নদী পর্যন্ত ভারতের অংশ হয়ে যাবে। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম চিকিত্সার জন্য দেশের বাইরে ছিলেন। ত্বরিত দেশে ফিরে বললেন, দিল্লির সঙ্গে সামরিক চুক্তি করলে দেশের ১৬ কোটি মানুষ মানবে না। গত শনিবার যখন ভারত আর বাংলাদেশের মধ্যে ছয়টি চুক্তি আর ১৬টি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হলো তখন রিজভী এই চুক্তিকে ‘গোলামির দস্তখত’ মন্তব্য করে দেশের জনগণ তা বাস্তবায়ন করতে দেবে না বলে হুঁশিয়ার করে দেন। বাবু গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, যিনি একাত্তরের শহীদ বুদ্ধিজীবীদের নির্বোধ বলে এরই মধ্যে নিন্দিত হয়েছেন, জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, ‘পাকিস্তান ভাঙার জন্যই ভারত মুক্তিযুদ্ধে সহায়তা করেছিল। ’ আবার প্রমাণিত হলো, একাত্তরে পাকিস্তান থেকে একটি রক্তাক্ত মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীন হওয়াকে বিএনপি চার দশক পরও কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না।
ঠিক একই কায়দায় ২০০১-০৬ মেয়াদের চারদলীয় জোট সরকারের আমলে সংসদে দাঁড়িয়ে বেগম জিয়ার একজন দায়িত্বশীল মন্ত্রী মন্তব্য করেছিলেন, ‘ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় সাতটি রাজ্যে যারা বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন করছে, তারা আসলে স্বাধীনতার জন্য লড়াই করছে। বাংলাদেশের উচিত ১৯৭১ সালে ভারত বাংলাদেশকে যেভাবে সহায়তা দিয়েছিল ঠিক একইভাবে এই ‘স্বাধীনতা’ যোদ্ধাদেরও নৈতিক সমর্থন দেওয়া। ’ চারদলীয় জোট সরকারের আমলে এই বিচ্ছিন্নতাবাদীদের খালেদা জিয়ার সরকার শুধু নৈতিক সমর্থনই দেয়নি, তাদের অস্ত্র ও গোলাবারুদ দিয়ে সহায়তা করেছে। চট্টগ্রামের দশ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালান তার একটা বড় প্রমাণ। এর আগে এই বিচ্ছিন্নতাবাদীদের জন্য কয়েক হাজার রাউন্ড গুলির একটি চালান বগুড়ায় আটক করা হয়। খালেদা জিয়া সরকারের সময়ই উলফা নেতা অনুপ চেটিয়াকে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট পারভেজ মোশাররফের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ করে দেওয়া হয়। শেখ হাসিনা দিল্লি অবস্থান করার সময় খালেদা জিয়া বিবৃতি দিয়ে বলেন, দিল্লির সঙ্গে চুক্তি করে শেখ হাসিনা দেশ বিক্রি করে দিয়ে আসছেন। দেশে ফিরলে তাঁর নাকি বিচার হবে। শেখ হাসিনা ভারতের সঙ্গে কোনো কিছু নিয়ে কথা বললে অথবা চুক্তি করলে সব সময় দেশ বিক্রি করেন বলে খালেদা জিয়ার ধারণা। একটি দেশ কতবার বিক্রি করা যায় তা অনেকেরই প্রশ্ন। আর কেউ কেউ দাবি তুললেন, কী চুক্তি হচ্ছে তা আগেই জনসম্মুখে প্রকাশ করতে হবে। ২০০২ সালে খালেদা জিয়া সরকার চীনের সঙ্গে সামরিক চুক্তি করেছিল। সেই চুক্তিতে কী আছে তারা কখনো তা প্রকাশ করেনি। শেখ হাসিনার দিল্লি যাত্রার প্রাক্কালে দুটি বিষয় নিয়ে সব মহলে আলোচনা হয়েছে। প্রথমটি দিল্লির সঙ্গে সম্ভাব্য সামরিক চুক্তি, আর দ্বিতীয়টি ছিল তিস্তা নদীর পানিবণ্টন চুক্তি। বাস্তবে এই যাত্রায় দ্বিতীয় চুক্তি হওয়ার কোনো পক্ষেরই কোনো প্রস্তুতি ছিল না এবং তা হওয়ার কোনো সম্ভাবনাও ছিল না। যখনই আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার রাষ্ট্রক্ষমতায় থেকেছে, দুই দেশের সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধানরা একে অন্যের দেশ সফর করেছেন এবং তাঁদের সব সময় উষ্ণ ও আন্তরিকতার সঙ্গে গ্রহণ করা হয়েছে। প্রথমত, আমাদের মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় জনগণ ও সরকারের অকুণ্ঠ সাহায্য-সহায়তার কথা বাংলাদেশের জনগণ সব সময় কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করে। শেখ হাসিনা এবার যখন দিল্লি গেলেন, প্রথমে সবাইকে অবাক করে দিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে বিমানবন্দরে অভ্যর্থনা জানান। যা করার কথা ছিল একজন প্রতিমন্ত্রীর। সাধারণত সেই দেশের প্রজাতন্ত্র দিবসে কোনো রাষ্ট্র বা সরকারপ্রধান আমন্ত্রিত হয়ে এলে তাঁদের বিমানবন্দরে অভ্যর্থনা জানান ভারতের প্রধানমন্ত্রী। এযাবৎ শুধু মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, চীনের প্রেসিডেন্ট শি চিনপিং আর সংযুক্ত আরব আমিরাতের যুবরাজ শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদকে বিমানবন্দরে নরেন্দ্র মোদি অভ্যর্থনা জানিয়েছেন। অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী ম্যালকম টার্নবুল সোমবার চার দিনের সফরে ভারত পৌঁছেছেন। দিল্লির পালাম বিমানবন্দরে তাঁকে অভ্যর্থনা জানান ভারতের ইউনিয়ন মন্ত্রী রাজিব প্রতাপ রেড্ডি। শেখ হাসিনার এবারের সফরের সঙ্গে যোগ হয়েছে ভারতের রাষ্ট্রপতি ভবনে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের অতিথি হিসেবে শেখ হাসিনাকে থাকার আমন্ত্রণ জানানো। যা একটি দুর্লভ ঘটনা। শেখ হাসিনা শুধু রাষ্ট্রপতি ভবনে ভারতের রাষ্ট্রপতির অতিথিই হননি, তিনি নিজ হাতে প্রণব মুখোপাধ্যায়ের জন্য ভাপা ইলিশ রান্না করেছেন। শেখ হাসিনাকে যে বিরল সম্মান জানানো হয়েছে, এমন সম্মান শুধু তাঁর পিতা, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে ভারতের তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ১৯৭২ ও ১৯৭৪ সালে জানিয়েছিলেন।
বিএনপি আর কিছু সুশীলের বক্তব্য শুনে মনে হচ্ছিল, সামরিক চুক্তি হলে শেখ হাসিনা দেশে ফেরার আগেই ভারতের ইস্টার্ন কমান্ডের সদর দপ্তর কলকাতার ফোর্ট উইলিয়াম থেকে সরিয়ে বাংলাদেশের কোনো এক স্থানে স্থাপন করা হবে। যে বিষয়টি নিয়ে স্বাভাবিক কারণে সাধারণ মানুষের কাছে সবচেয়ে বেশি আলোচনা, সেটি হচ্ছে তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি। তিন দশক ধরে সমস্যাটি ঝুলে আছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে সমস্যাটি সমাধানের চেষ্টা করা হয়, আর ক্ষমতায় না থাকলে তা নিয়ে কেউ আর কথা বলেন না। ২০১১ সালে যখন ভারতের তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং বাংলাদেশ সফর করেন এই তিস্তা চুক্তি তখনই হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। সেই মতে, অন্তর্বর্তী সময়ের জন্য তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তির একটি খসড়াও প্রস্তুত করা হয়েছিল। কথা ছিল যেহেতুে তিস্তা পশ্চিমবঙ্গের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে, সেহেতু এই চুক্তি করার সময় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও চুক্তি স্বাক্ষরের সময় ঢাকায় উপস্থিত থাকবেন। মমতা ঢাকা আসছেন তা প্রায় নিশ্চিত। মনমোহন সিং ঢাকা আসার আগের দিন বাংলাদেশের তত্কালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি একধাপ এগিয়ে গিয়ে বললেন, বহু প্রতীক্ষিত তিস্তা চুক্তি হচ্ছে। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে এবং নিজের দেশের প্রধানমন্ত্রীকে পর্যন্ত অপমানিত করে মমতা শেষ মুহূর্তে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ঢাকা আসতে অস্বীকার করেন।
ভারত যেহেতু ফেডারেল কাঠামোর রাষ্ট্র, সেহেতু এক রাজ্যের সম্পদ অন্য রাজ্যের সঙ্গে বণ্টন করতে হলে সেই রাজ্যের সম্মতি লাগে। তবে এটি যে সব সময় মানা হয় তাও নয়। ভারতের একটি গুরুত্বপূর্ণ ও বড় নদী কাবেরী। মূল অংশ কর্ণাটকে। সেখানে বাঁধ দিয়ে তামিলনাড়ুকে দীর্ঘদিন এই নদীর পানির ন্যায্য হিসসা পাওয়া থেকে কর্ণাটকের রাজ্য সরকার বঞ্চিত করে আসছে। কিন্তু ভারতের সংবিধানের ২৫৩ ধারা অনুযায়ী কেন্দ্র সরকার যখন অন্য কোনো দেশের সঙ্গে চুক্তি করে, তখন রাজ্যের অনুমতি না নিলে কোনো ক্ষতি নেই। কিন্তু রাজনৈতিক কারণেই কেন্দ্র সব সময় রাজ্য সরকারগুলোকে গুরুত্ব দিয়ে আসছে। যদিও শেখ হাসিনার এবারের তিস্তার পানিবণ্টন নিয়ে কোনো চুক্তি হওয়ার কথা ছিল না, তথাপি বরফ গলানোর জন্য দিল্লিতে শেখ হাসিনার অবস্থানকালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রণব মুখোপাধ্যায় ও নরেন্দ্র মোদি উভয়ই দিল্লিতে আমন্ত্রণ জানান এবং সেই আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে মমতা দিল্লিতে উপস্থিতও হন। শনিবার ছয়টি চুক্তি ও ১৬টি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হওয়ার পর দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর যৌথ সংবাদ ব্রিফিংয়ের সময় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে নরেন্দ্র মোদি বেশ জোরালোভাবে বলেন, তিস্তা চুক্তি হবে এবং তা তাঁর ও শেখ হাসিনার বর্তমান শাসনকালেই হবে। মোদির এই বলিষ্ঠ উচ্চারণ শুনে বাংলাদেশের মানুষ বেশ উত্ফুল্ল, আশান্বিত ও নিশ্চিত হয়েছিল। রাতে যখন শেখ হাসিনা আর মমতা তিস্তার পানিবণ্টন নিয়ে একান্ত বৈঠক করেন, মমতা অপ্রত্যাশিতভাবে সব কিছুর ওপর পানি ঢেলে দেন। বাইরে এসে সাংবাদিকদের বলেন, তিস্তায় পানি নেই, তার বদলে বাংলাদেশ ইচ্ছা করলে উজানের তোর্সাসহ ছোট ছোট আরো যে পাঁচটি নদী আছে, সেখান থেকে জল নিতে পারে। মজার কথা হচ্ছে, এই নদীগুলোর কোনোটিতেই বাংলাদেশে পানি দেওয়ার মতো পানি নেই, আর দু-একটা তো অনেকটা মরা। দ্বিতীয়ত, কোনো অবস্থায়ই ওই সব নদীর পানি তিস্তায় আনা যাবে না। আর ভারতে বাংলাদেশের যৌথ বিবৃতিতে তিস্তার পানিবণ্টনের কথা আছে, মমতার ফর্মুলার কোনো উল্লেখ নেই। এটি সবাই অনুধাবন করেছে তিস্তা যে মৃত্যুপথযাত্রী তা থেকে একজন মমতার কারণে দ্রুত পানিবণ্টন চুক্তি না হলে তাকে বাঁচানো যাবে না। মনে হলো এই বাস্তবতাটুকু বোঝার সক্ষমতা মমতার নেই। আর মনমোহন সিংয়ের আমলে তিস্তার পানিবণ্টনের জন্য যে খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছিল, সেখানে দুই দেশের মধ্যে তিস্তার পানিবণ্টনের কথাই ছিল, অন্য কোনো নদীর পানি নয়। বোঝা গেল, মমতা তাঁর ক্ষুদ্র রাজনৈতিক স্বার্থে বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থকে গুরুত্ব দিতে ব্যর্থ হয়েছেন।
আসলে অনেক বিশ্লেষকের মতে, মমতা নরেন্দ্র মোদিকে ব্ল্যাকমেইল করতে চান। তিনি ছিটমহল বিনিময়ের সময় যে রকম কেন্দ্র সরকারের কাছ থেকে ছিটমহলবাসীর পুনর্বাসনের জন্য বিপুল পরিমাণের অর্থ আদায় করে নিয়েছিলেন। আর দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে সাম্প্রতিককালে মমতার রাজ্য সরকারের বেশ কয়েকজন বাঘা মন্ত্রী আর নেতা-নেত্রী দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত। মমতা তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তিকে জিম্মি করে এসব অভিযোগ থেকে নিজের লোকজনের দায়মুক্তি আদায় করে নিতে চান। তবে নরেন্দ্র মোদির বক্তব্যের ওপর বাংলাদেশের মানুষ আস্থা রাখতে চান। কারণ তিনি ড. মনমোহন সিংয়ের মতো অতটা দুর্বল প্রধানমন্ত্রী নন। মনমোহন সিংকে একটি জোট সরকারের নেতৃত্ব দিতে হয়েছে এবং তিনি সব সময় সোনিয়া গান্ধীর ছায়াতলে কাজ করতে বাধ্য হয়েছেন। সম্প্রতি বিভিন্ন রাজ্যসভার নির্বাচনে বিজেপির বিজয় নরেন্দ্র মোদির অবস্থানকে আরো শক্তিশালী করেছে। মমতার পক্ষে মোদির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেশি দূর যাওয়া তেমন একটা সম্ভব হবে বলে মনে হয় না। বাংলাদেশের মানুষ বিশ্বাস করতে চায়, হাসিনা-মোদির আমলেই তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি হবে। তাহলে দুই প্রধানমন্ত্রী আবারও তাঁদের দূরদর্শিতার স্বাক্ষর রাখতে পারবেন, যেমনটি তাঁরা ছিটমহল বিনিময় চুক্তি ও সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়ন করে দেখিয়েছিলেন।
বিএনপির প্রত্যাশা অনুযায়ী কোনো সামরিক চুক্তি হয়নি। হয়েছে সামরিক সহযোগিতার সমঝোতা চুক্তি। যার ফলে দুই দেশের সামরিক প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানগুলো একে অন্যকে সহায়তা করবে। সমঝোতায় আরো আছে, ভারত বাংলাদেশকে সামরিক খাতে ব্যয় করার জন্য ৫০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ দেবে। এই ঋণ ভারত থেকে সামরিক সরঞ্জাম ক্রয়ের জন্য ব্যবহার করা যাবে, আবার রাশিয়া বা অন্য কোনো দেশ থেকেও সামরিক খাতে কেনাকাটা অথবা প্রশিক্ষণের জন্য ব্যয় করা যাবে। ভারতের ঋণ দেওয়ার অঙ্গীকারের অর্থ এই নয় যে তা নিতেই হবে। বাংলাদেশ চাইলে নেবে, না চাইলে নেবে না। ভারতের কাছ থেকে বিএনপি আমল থেকেই সেনাবাহিনীতে ব্যবহার করার জন্য যানবাহন ক্রয় করা হয়। উভয় দেশের সেনা কর্মকর্তারা একে অন্যের দেশে প্রশিক্ষণ নেয়। প্রয়োজনীয় তথ্য আদান-প্রদান করে। সামরিক ক্রয় অর্থ শুধু অস্ত্র আর গোলাবারুদ ক্রয় বোঝায় না। আর বর্তমান বিশ্বে চুক্তি বলি আর সমঝোতা, কোনোটাই মানা বাধ্যতামূলক নয়। আর যেসব বিষয়ে চুক্তি ও সমঝোতা হয়েছে তার মধ্যে আছে মুক্তিযোদ্ধাদের পাঁচ বছর মেয়াদি ভিসা প্রদান, বিনা খরচায় তাঁদের চিকিত্সা, তাঁদের সন্তানদের লেখাপড়া করার জন্য বৃত্তি ইত্যাদি। সাধারণ মানুষ এসব জটিল সমীকরণ বোঝে না বলে বিএনপি ও তার মিত্ররা জনগণকে এত সহজে বোকা বানানোর চেষ্টা করে। তবে সবশেষে নরেন্দ্র মোদির কথার প্রতিধ্বনি করতে চাই। তিস্তা চুক্তি হবে এবং তা শেখ হাসিনা আর নরেন্দ্র মোদিই করবেন, তা যেন সত্য হয়। আর তা করতে ব্যর্থ হলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে ভারত। কারণ ২০১৮ সালের শেষে বাংলাদেশে একটি সাধারণ নির্বাচন হওয়ার কথা। সেই নির্বাচনে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা কত টাকা খরচ করবে, তা আন্দাজ করাও কঠিন।
লেখক : বিশ্লেষক ও গবেষক
[সংকলিত]