খােলা বাজার২৪।। মঙ্গলবার, ২৫ এপ্রিল ২০১৭: রাষ্ট্রায়ত্ত জনতা ব্যাংকের নির্বাহী কর্মকর্তা পদে নিয়োগ পরীক্ষা ২৭ এপ্রিলের মধ্যে বাতিলের দাবি জানানো হয়েছে। ওই পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ তুলে তা বাতিল করে নতুন করে লিখিত পরীক্ষার তারিখ ঘোষণার দাবি করা হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক সমিতি কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে কঠোর শাস্তির দাবি জানানো হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিবেটিং সোসাইটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মো. রকিবুল হাসান।
প্রসঙ্গত, ২১ এপ্রিল শুক্রবার বিকেল তিনটা থেকে পাঁচটা পর্যন্ত জনতা ব্যাংকের নির্বাহী কর্মকর্তা পদের লিখিত পরীক্ষা হয়। রাজধানীর ইডেন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, লালমাটিয়া কলেজ ও সেন্ট্রাল রোডের আইডিয়াল কলেজে এ পরীক্ষা হয়। এই পরীক্ষায় ব্যাপক হারে প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে অভিযোগ তুলে পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। তবে পরীক্ষার দায়িত্বে থাকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ফরিদ উদ্দিন আহমেদ প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়নি বলে দাবি করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়,২০ এপ্রিল বৃহস্পতিবার রাত থেকেই সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকের ম্যাসেঞ্জারে এই প্রশ্নপত্র ছড়াতে শুরু করে। পরদিন শুক্রবার সকাল থেকে প্রশ্নপত্র ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে যায়। শেষ মুহূর্তে যাঁরা প্রশ্ন পেয়েছিলেন, তাঁদের অনেকেই চারটি অঙ্কের সমাধানসহ উত্তর লিখে সেটি নিয়ে পরীক্ষার হলে ঢুকেছেন। এসব প্রমাণ নিয়ে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিনের কাছে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি সাধারণ ছেলেমেয়েদের সঙ্গে দেখা করতে অস্বীকৃতি জানান। তিনি বলেন, পরীক্ষার আগে তাঁকে কিছু জানানো হয়নি। তাই এখন আর কিছু করার নেই।
প্রশ্নপত্র ফাঁসের কী কী প্রমাণ আছে—জানতে চাইলে সংবাদ সম্মেলনে রকিবুল হাসান বলেন, পরীক্ষার আগের রাতে এবং পরদিন সকালে ম্যাসেঞ্জার যেসব প্রশ্নপত্র ছড়িয়েছে, সময়সহ তাঁদের কাছে সেগুলোর স্ক্রিনশট আছে। আর পরীক্ষার হলে যে অনেকেই উত্তর লিখে নিয়ে গেছেন, সেটা যাঁরা পরীক্ষা দিয়েছেন, সবাই দেখেছেন। যে কেউ চাইলে তাঁরা এসব প্রমাণ দেবেন। আর তদন্ত করলেই এগুলো বেরিয়ে আসবে।
প্রশ্নপত্র ফাঁসের বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ফরিদ উদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘পরীক্ষার আগে আমাদের কাছে কেউ জানায়নি যে প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়েছে। এসএসসি, এইচএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র অনেক সময় ফাঁস হয়ে যায়, ভাইরাল হয়ে যায়, কিন্তু পরীক্ষা তো বাতিল হয় না। পরীক্ষার আগে কেউ যেহেতু জানায়নি, কাজেই এখন আমরা বিষয়টি আমলে নেব না।’
আপনারা কী বিষয়টি তদন্ত করে দেখবেন—এমন প্রশ্নের জবাবে ফরিদ উদ্দিন বলেন, ‘সাড়ে নয় হাজার পরীক্ষা দিয়েছে। আমরা অন্তত পাঁচ হাজার ছেলেমেয়েকে টেকাব।’ তাতে কি প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ বন্ধ হবে জানতে চাইলে তিনি পাল্টা প্রশ্ন করেন, ‘আগে কেন কেউ কোনো অভিযোগ করল না?’
সংবাদ সম্মেলনে রকিবুল হাসান বলেন, ‘আমরা নিয়মতান্ত্রিকভাবে আন্দোলন করছি। বঙ্গবন্ধুর আদর্শে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ যখন এগিয়ে চলছে, তখন দেশকে মেধাশূন্য করার জন্যই প্রশ্নপত্র ফাঁস হচ্ছে। যারা এই প্রশ্নপত্র ফাঁস করছে, তাদের বিরুদ্ধে সরকারকে ব্যবস্থা নিতে হবে। তা না হলে দেশের মেধাবী ছেলেমেয়েদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হবে। আর সাধারণ ছেলেমেয়েরা কখনো চাকরিও পাবেন না।’
২০১৬ সালের ১০ মার্চ ৮৩৪টি পদের বিপরীতে জনতা ব্যাংকের নির্বাহী কর্মকর্তা পদে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেয় ব্যাংকার্স সিলেকশন কমিটি। এটি ব্যাংকের সবচেয়ে বড় নিয়োগ পরীক্ষা। ২৪ মার্চ সকাল ও বিকেলে প্রাথমিক বাছাই (প্রিলিমিনারি) পরীক্ষা হয়। আড়াই লাখ প্রার্থী তাতে অংশ নেন। এর মধ্যে উত্তীর্ণ হন ১০ হাজার ১৫০ জন। শুক্রবার ৯ হাজার ৪০০ জন লিখিত পরীক্ষা দেন।