খােলা বাজার২৪।। শুক্রবার, ২৮ এপ্রিল ২০১৭:আহমদ রফিক
আবার রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র বনাম সুন্দরবন প্রসঙ্গ সংবাদপত্রের শিরোনাম হয়ে উঠেছে। খুলনায় রামপালবিরোধীদের মহাসমাবেশ থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ না হলে ‘কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে’ (২০.৪.২০১৭)। কিন্তু সরকার এসব প্রতিবাদ কানে তুলছে না। স্বদেশ-বিদেশে এ বিষয়ে প্রতিবাদ বা ভিন্নমত তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হচ্ছে না। ক্ষমতার বিরুদ্ধে যুক্তির প্রতিবাদ সব সময় হালে পানি পায় না। ক্বচিৎ সাফল্যের ইতিহাস অবশ্য রয়েছে।
বুঝতে পারা কঠিন হচ্ছে সরকার রামপাল নিয়ে কেন এতটা কঠিন অবস্থানে। এটা তো ব্যক্তিগত হারজিতের প্রশ্ন নয়, প্রশ্ন জাতীয় স্বার্থের। সুন্দরবন নামক বিশাল ম্যানগ্রোভ বন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রতিরোধী প্রাচীর রক্ষার প্রশ্নে চলছে বিতর্ক। সরকারের বক্তব্য, বিদ্যুৎকেন্দ্রের ছাই ও বর্জ্যের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে, যাতে সুন্দরবন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।
কিন্তু কিভাবে, কোন পথে সে সম্পর্কে প্রযুক্তি জ্ঞানভিত্তিক তথ্যাদি যথেষ্ট স্পষ্ট নয়, এমন কথা বলতে চাইছেন বেসরকারি খাতের সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ। সুন্দরবন বাংলাদেশের জাতীয় সম্পদ বিধায় এ বিতর্কটি দূর থেকে বার্তা আদান-প্রদানের আওতায় না রেখে এ বিষয়ে দুই মতের বিশেষজ্ঞদের মুখোমুখি বিতর্কে বসা উচিত। যুক্তিতর্কের বাস্তবতায় ফয়সালা হওয়া দরকার। কিন্তু সরকার সে রাস্তায় হাঁটছে না।
যুক্তির পথটা বরাবরই আবেগের তুলনায় সঠিক পথ বিবেচিত হয়ে আসছে। ইতিহাস ও দর্শন তেমন কথাই বলে। তবে কেন আমরা সঠিক সে পথ এড়িয়ে চলছি? এড়িয়ে চলা ঠিক নয় এ কারণে যে একদেশদর্শী সিদ্ধান্তের ফলে যদি জাতীয় সম্পদের ক্ষতি হয়ে যায়, তা তো আর ফিরিয়ে আনা যাবে না। আর সে ক্ষতি যদি অপূরণীয় হয়, তাহলে তো কথাই নেই। তখন প্রশ্ন উঠবে, এ দায় কার?
আমরা তাই আবারও বলছি, রামপাল-সুন্দরবন বিতর্ক তথ্য ও যুক্তির মাধ্যমে সমাধান করা হোক। জাতীয় সম্পদ ঝুঁকির মুখে ঠেলে না দিয়ে। তেমন সিদ্ধান্ত নিতে পারা গেলে পরিণামে অন্তত আফসোসের কারণ থাকবে না। তা পরিণাম যেমনই হোক। নিরপেক্ষ দৃষ্টির যুক্তিতথ্যের সন্ধানে দৃষ্টি ফেরালে কিছু ভিন্ন চিত্রই উঠে আসে।
দুই.
বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার আমরা দেশ-বিদেশের ভিন্নমত তুলে বলতে চেয়েছি, যুক্তিতেই এ বিতর্কের সমাধান। আর উন্মুক্ত পদ্ধতির কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ স্থাপনা নিয়ে খোদ ভারতীয় আইনি সিদ্ধান্ত যেখানে এ জাতীয় প্রকল্পের বিরুদ্ধে যায়, সে ক্ষেত্রে কেন আপত্তিকর ভারতীয় প্রযুক্তি ও অর্থে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন?
এ প্রসঙ্গে অনেকেরই হয়তো চোখে পড়ে থাকবে সম্প্রতি ব্র্যাক সেন্টারে অনুষ্ঠিত আলোচনার বিষয়বস্তু ও উপস্থাপন। ভারতেরই একজন জ্বালানি ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞ যখন রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে সুন্দরবনের ক্ষতির আশঙ্কা প্রকাশ করছেন, তখন তা বিবেচনায় নেওয়াই তো সংগত। কারণ কোনো বিদেশি বিশেষজ্ঞেরই তাঁর স্বদেশের বিরুদ্ধে মত প্রকাশের কথা নয়, যদি যুক্তিতথ্য তাঁকে সমর্থন না করে।
বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়াচ্ছে ওই বিশেষজ্ঞের তথ্যনির্ভর সোজাসাপ্টা মতামতের পরিণাম। অর্থাৎ বর্তমান পরিস্থিতিতে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের কয়লা পোড়ার সঙ্গে সঙ্গে সুন্দরবনও পুড়তে থাকবে। গুরুতর সত্যটা প্রকাশ পাচ্ছে এমন তথ্যে যে ভারতীয় কয়লা থেকে উদ্ভূত ছাইয়ের পরিমাণ হবে কথিত ১২ শতাংশ নয়, বরং ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ। বিপুল পরিমাণ কয়লা বর্জ্যই সংকটের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়াবে।
কেননা এত পরিমাণ ছাইয়ের নিরাপদ গতি করা মুশকিলই হয়ে উঠবে। সেই সঙ্গে বিশেষজ্ঞমতে, বিষাক্ত পারদ ও ভারী ধাতব পদার্থের পরিমাণও একই হারে বেড়ে যাবে। ফলে আগের হিসাবমাফিক পরিবেশের শুদ্ধতা বজায় না থাকারই কথা। এ সম্পর্কে তাঁর মন্তব্য, বিশেষ করে সম্ভাব্য তেজস্ক্রিয়তা নিয়েও এমন : ‘এর যে পরিবেশগত প্রভাব ও সামাজিক ক্ষতি তা অবিশ্বাস্য। আমরা মধ্য প্রদেশে সমীক্ষা চালিয়ে দেখেছি, ঘরে ঘরে পারদ-দূষণে আক্রান্ত রোগী, কিডনি কার্যক্রম নষ্ট রোগী, স্নায়ুবৈকল্যে আক্রান্ত রোগী। ’
এসব তো দীর্ঘস্থায়ী পরিণাম। তাত্ক্ষণিক সমস্যা একাধিক মাত্রার। যেমন—সংলগ্ন নদ-নদীর দূষণ, পানি ও মাটির অম্লতা বৃদ্ধি, ফলে মাটির উর্বরতা হ্রাস, জলজ ও স্থলজ প্রাণবৈচিত্র্যের ঝুঁকি ইত্যাদি ঘটনা কম সামাজিক গুরুত্ব বহন করে না। পশুপাখি, মৎস্যকুল ও উদ্ভিদ, বিশেষভাবে বাদাবনের ওপর পড়বে বিরূপ প্রভাব।
এ প্রসঙ্গে আরো একটি কথা বলতে হয় যাকে বলে : দেখে শেখা, বুঝে শেখা, সবশেষে ঠেকে শেখা। প্রথম ক্ষেত্রে, এমনকি দ্বিতীয় ক্ষেত্রেও বিচক্ষণতার যে দিকনির্দেশ বা প্রতিফলন রয়েছে, আমরা তার বদলে তৃতীয় পন্থা অর্থাৎ ক্ষতির মধ্য দিয়ে শেখার পক্ষপাতী। তাতে যদি ক্ষতি হয়, তাহলে সে ক্ষতির দায় কার, সে ক্ষতিপূরণ কে করবে? সর্বোপরি ক্ষতি যদি অপূরণীয় হয় তাহলে?
আর যে কারণে প্রতিবেশী দেশের অনুরূপ কর্মকাণ্ডের উদাহরণ কয়লা-তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের অঘটন-ঘটন বিবেচনায় নেওয়া দরকার। ভারতের গুজরাটে, তামিলনাড়ুতে স্থাপিত তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিরূপ প্রভাবে জীববৈচিত্র্য ক্ষুণ্ন হয়েছে, বাদাবন মরেছে, মাছের সংখ্যা কমেছে ৬০ শতাংশ। বলতে হয়, মানুষের তৈরি প্রাকৃতিক বিপর্যয়। পূর্বোক্ত ভারতীয় বিশেষজ্ঞের মতে, পূর্বোক্ত ধরনের ক্ষতির মতো রামপালের কারণে সুন্দরবনের ক্ষতি আরো বেশি হবে।
তিন.
সন্দেহ নেই, বাংলাদেশে চাহিদামাফিক বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই নানা পন্থায় বিদ্যুৎ উত্পাদনের চেষ্টা চলছে। এ চেষ্টা যুক্তিসংগত বলাই বাহুল্য। তবে সংগতির বিচার নির্ভর করছে দুটি বিষয়কে কেন্দ্র করে। প্রথমটি পদ্ধতিগত। অর্থাৎ পদ্ধতিটি কতটা নির্দোষ, অক্ষতিকারকতার ওপর নির্ভর করছে পদ্ধতির গ্রহণযোগ্যতা, এর ভালোমন্দ দিক।
সামাজিক ক্ষতি ঘটিয়ে অর্থনৈতিক উন্নয়ন বা বিদ্যুৎ উত্পাদন কি যুক্তিসম্মত? এ প্রশ্নে যুক্তিবাদী মানুষের প্রতিক্রিয়া হবে নেতিবাচক। তাই সুন্দরবনের মতো প্রাকৃতিক প্রাচীর নষ্ট করে বিদ্যুৎ উত্পাদন যুক্তির ধারে বা ভারে কাটবে না। তবে বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র সুন্দরবন থেকে নিরাপদ দূরত্বে রয়েছে। তাই এতে ক্ষতির আশঙ্কা নেই।
এখানেও আরেক বিতর্ক, বিতর্ক নিরাপদ দূরত্বের প্রশ্ন নিয়ে। এ মতভেদ মীমাংসার ঊর্ধ্বে। তবে এ কথাও ঠিক যে বিকল্প পদ্ধতি বা ব্যবস্থা থাকার পরিপ্রেক্ষিতে রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন আঁকড়ে ধরে থাকার পেছনে সত্যিকার কোনো সদর্থক যুক্তি আছে কি? সৌরবিদ্যুৎ, বায়ুবিদ্যুৎ, জলবিদ্যুৎ ইত্যাদি সম্ভাবনা কাজে লাগিয়ে দেখলে হয় না কি?
দ্বিতীয় যে বিষয়টি এ ক্ষেত্রে অধিক বা সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ তা হলো কাদের জন্য, কিসের জন্য, কোন ধরনের উন্নয়নের জন্য, কোন শ্রেণির উন্নয়ন ও সুবিধার জন্য বিদ্যুৎ উত্পাদন? স্বাধীন বাংলাদেশে লক্ষ করা যাচ্ছে ভোগবাদী সামাজিক প্রবণতার। বিলাস-ব্যসনে, আভিজাত্যের প্রকাশে উন্নয়ন, আর যে স্বার্থে প্রভূত বিদ্যুতের ব্যবহার, যা জনপ্রয়োজনের বিচারে অপচয়ের পর্যায়ে পড়ে।
নীতিটা এখানে ‘সবার জন্য বিদ্যুৎ’ এমন নয়। দুর্বল বা দরিদ্র দেশ হয়েও বিশ্ব মহানগরের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আলোয় ঝলমল বিনোদন পার্ক, তেমনি সূর্যালোকিত দিনদুপুরেও আলোর ভুবনে সজ্জিত বিশালাকায় অত্যাধুনিক ‘শপিং মল’ প্রকারান্তরে বিদ্যুতের অপচয় বৈ কিছু নয়। আরো ছোটখাটো উদাহরণ, যেমন বিদ্যুৎ ঘাটতির দেশে বিয়ের অনুষ্ঠানে তিন দিন ধরে গলিপথ থেকে বসতভবন পর্যন্ত দিবারাত্রি আলোকসজ্জায় কোনো সরকারি বাধানিষেধ নেই, নিয়ন্ত্রণও নেই। পানি অপচয় বা গ্যাস অপচয়ের চেয়েও বিদ্যুতের এজাতীয় অপচয়ের উদাহরণ অনেক। এটা সামাজিক অভ্যাসে পরিণত কেন?
আর বিদ্যুতের সাশ্রয়ী ব্যবহারের নীতি যথাযথভাবে গৃহীত ও বাস্তবায়িত হলে বিদ্যুতের বাস্তব চাহিদা বিলাসী চাহিদার চেয়ে কমে আসে। সে ক্ষেত্রে বিদ্যুৎ পল্লী চাহিদা মেটাতে অনেক দূর যেতে পারে, পুরোটা যদি না-ও পারে। সর্বজনীন চাহিদা পূরণ যদি না-ও মেটে। উন্নয়নটাও সে ক্ষেত্রে হতে হয় সর্বজনীন চরিত্রের। মহানগরের বিদ্যুৎ ব্যবহার যদি সাশ্রয়ী চরিত্রের হতো, নীতিধর্মীয় হতো, তাহলে বর্তমান উত্পাদনের যেমন সঠিক বা সুব্যবহার হতো এবং তার বাড়তি অনেকটা যেতে পারত গ্রামে, এমনকি লাগতে পারত ক্ষুদ্র কুটির শিল্পের প্রয়োজনে। বিলাসিতা তারই মানায় নীতিগত প্রয়োজন মিটিয়ে যে সমাজের সে সামর্থ্য থাকে। বাংলাদেশের তা নেই কিন্তু বিলাসিতার আয়োজন আছে। উন্নত ভবিষ্যতের লক্ষ্যে সাময়িক কৃচ্ছ্র সাধন বাংলাদেশের স্বভাবে নেই। কিন্তু ওটা অভ্যাস করা দরকার।
অপরিমিতির প্রবণতায় অভ্যস্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা তাই যত্রতত্র যেমন-তেমন মূল্যে উন্নয়নের স্বপ্নে বিভোর। সে উন্নয়ন বলা বাহুল্য অনেকাংশে বিত্তবান শ্রেণির স্বার্থে। এবং এই ধারা বিদ্যুৎ উত্পাদন নীতি ও ব্যবস্থায় পরিব্যাপ্ত বলে যেকোনো মূল্যে বিদ্যুৎ উত্পাদন নীতিরূপে গৃহীত হয়েছে, তাতে জাতীয় ক্ষতিও গ্রাহ্যের মধ্যে নেই। রামপাল বিতর্ক তেমন একটি পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে।
চার.
এ পরিস্থিতিতে ‘সবার জন্য বিদ্যুৎ’—এ নীতির পাশাপাশি বিদ্যুৎ উত্পাদন বিদ্যুৎ ব্যবহারের সাশ্রয়ী ও জনবান্ধব নীতিও সরকার গ্রহণ করবে—এমনটিই আমাদের প্রত্যাশা, আমাদের দাবি। এ সবই জাতীয় স্বার্থের অগ্রাধিকার বিবেচনায়। পানি ও গ্যাসের মতো বিদ্যুৎ ব্যবহারেও পরিমিতিবোধ চাই যেমন ব্যক্তিজীবনে, পারিবারিক ক্ষেত্রে তেমনি জাতীয় জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে। বিদ্যুতের ক্ষেত্রে তাতে যা সাশ্রয়, তা আমাদের জনসেবার কাজে লাগবে।
পূর্বোক্ত বিশেষজ্ঞ মহোদয় ভারত ও চীনের বিদ্যুিবষয়ক নীতি পরিবর্তনের কথা উল্লেখ করে ‘বিদ্যুৎ উত্পাদনে কয়লা যুগের অবসান’ ঘটানোর কথা বলেছেন। ভারত ও চীন এখন এ নীতি অনুসরণ শুরু করেছে। অথচ আমরা এদিক থেকে বিপরীত ধারায় চলছি। কেন? এটা ভেবে দেখার বিষয়। এ বিষয়ে আমাদের জ্বালানিবিষয়ক নীতিনির্ধারকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, যাতে তাঁরা এ বিষয়ে বৈশ্বিক বিশেষজ্ঞ মতামতগুলো ভাবনায় আনেন। তাহলে রামপাল বিতর্কের সহজ অবসান ঘটতে পারে।
এ ব্যাপারে সর্বশেষ কথা হচ্ছে, বিশ্বযোগে চলার পথে ঠিকই উন্নয়নের বিকল্প নেই। বাংলাদেশ এ পথেই চলছে উন্নয়নের স্লোগান তুলে। উন্নয়নের দরকার রাষ্ট্রের প্রয়োজনে, সমাজকল্যাণে—এ বিষয়েও দ্বিমতের সুযোগ নেই। কথাটা আমরা আগেও বলেছি, উন্নয়ন শ্রেণি-নির্বিশেষে সবার স্বার্থে, শ্রেণি বিশেষের স্বার্থে মুনাফার আকাঙ্ক্ষা মেটাতে নয়।
বাংলাদেশ নিজেকে গণতন্ত্রী বলে মনে করে। সংবিধানও তাই বলে, নামেই তার পরিচয় ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ’। সবাই মানেন, গণতন্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ শর্ত সর্বকাজে জবাবদিহি ও মুক্ত জনমত। কোনো মতেই তা ব্যাহত হতে না দেওয়া। আর উন্নয়নের গণতান্ত্রিক প্রকাশ তার সমতাভিত্তি তথা জনবান্ধব চরিত্র। অর্থাৎ উন্নয়নের সুফল সবাইকে সমানভাবে দিতে হবে। উন্নয়নের প্রক্রিয়ায় গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের ব্যবহার যেমন অপরিহার্য, তেমনি গুরুত্বপূর্ণ এর অন্তর্নিহিত মুনাফা বৃত্তি থেকে মুক্তি।
আর এ প্রসঙ্গে সে কথা এরই মধ্যে বলা হয়েছে সেটার পুনরুল্লেখে এ আলোচনায় ইতি টানি এই বলে যে উন্নয়নের সুফলে শ্রেণি বিশেষেরই নয়, সবার অধিকার মেটাতে হবে। না হলে উন্নয়ন হবে অন্ধ, একমুখী। আর এসব নীতিকথা ও আপ্তবাক্যের (এমনকি টেকসই উন্নয়নের স্বার্থেও) শেষ কথায় রামপাল প্রসঙ্গে বলতে হয়, বিতর্ক যুক্তিসংগতভাবে যদি এড়াতেই হয়, তাহলে এ বিষয়ে স্থানীয় গণমতামত অন্তত নেওয়া হোক, বিশেষজ্ঞ মতামত যখন উপেক্ষাই করা হচ্ছে। তাতে অন্তত রামপাল বিতর্কের গণতান্ত্রিক অবসান ঘটবে। আমরা জানি, সে মতামতের টানে সম্ভবত সুন্দরবনও রক্ষা পাবে। উল্লেখ্য, যুক্তরাজ্য কয়লাসচেতনতার প্রমাণ দিতে ২১ মে (২০১৭) একটি ঐতিহাসিক কয়লাবর্জিত দিন পালন করছে। এ সচেতনতা বাংলাদেশেও কাম্য। কাম্য রামপাল প্রসঙ্গে। বিশেষ করে কার্বন নিঃসরণ ও বৈশ্বিক উষ্ণতার মাত্রা কমাতে বিশ্ব যখন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন থেকে পিছু হটছে, তখন আমরা সেদিকে হাঁটছি কেন?