আবদুল মান্নান । খােলা বাজার২৪।। শুক্রবার , ১২ মে, ২০১৭: ঢাকা বিমানবন্দরে বসে টের পেলাম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বহনকারী বাংলাদেশ বিমানের বোয়িং ৭৩৭ বিমান ‘মেঘদূত’ কক্সবাজার বিমানবন্দরে অবতরণ করেছে। আমাদের বিমানের এক কর্মকর্তা এসে জানালেন, প্রায় দুই ঘণ্টা বিমানবন্দরে অপেক্ষার পালা এখন শেষ হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর বিমান কক্সবাজার পৌঁছেছে। আমাদের বিমান ছাড়তে দেরি হবে তা তাদের কর্মকর্তারা মোবাইলে মেসেজ করে আগেই জানিয়েছিলেন। বেসরকারি সেবা খাত এখনো তাদের খদ্দেরদের কিছুটা সুবিধা তো দিয়েই থাকে। দেরি দেখে আমাদের সহযাত্রীদের অনেকেই একটু বিরক্ত হচ্ছিলেন। কারণ তাঁরা তো সপরিবারে কক্সবাজার যাচ্ছেন প্রমোদ ভ্রমণে। আমার পরিচিত কয়েকজন প্রধানমন্ত্রীর কক্সবাজার সফরকে সফল করতে দুই-এক দিন আগেই কক্সবাজার পৌঁছে গেছেন। তাঁরা প্রধানমন্ত্রীর কাছের মানুষ। আমার কক্সবাজার যাওয়াটা পেশাগত কাজে। বিরক্ত সহযাত্রীদের বাঝানোর চেষ্টা করি, কক্সবাজার বিমানবন্দরে প্রথমবার একটি বোয়িং বিমান অবতরণ করছে, তাও আবার প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে, দেরি তো একটু-আধটু হতেই পারে। তার পরও তাঁদের বিরক্তি কাটে না।
কক্সবাজার বিমানবন্দর ব্রিটিশরা তৈরি করেছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়। বার্মা ফ্রন্টের যুদ্ধ অনেক সময় কক্সবাজার থেকে পরিচালিত হতো। বার্মা ফ্রন্ট খ্যাত জেনারেল স্লিম (Slim) কক্সবাজারেই তাঁর ফরওয়ার্ড বেইস স্থাপন করেছিলেন। সে সময় তিনি তাঁর সদর দপ্তর কুমিল্লা থেকে কক্সবাজার আসতেন। কক্সবাজার ছাড়াও চট্টগ্রামের হাটহাজারী, ডুলাহাজারাসহ আরো কয়েকটি অঞ্চলে ছোট ছোট বিমানবন্দর স্থাপন করা হয়েছিল ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর জন্য। সবই ব্রিটিশ সামরিক বাহিনীর জন্য। কক্সবাজার বিমানবন্দর দীর্ঘদিন অব্যবহৃত ছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অনেক আগে আজকের কক্সবাজারে (তখন এর নাম ছিল পালনিক) ইস্ট ইন্ডিয়া কম্পানির একজন ক্যাপ্টেন হিরাম কক্স সুপারিনটেনডেন্টের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। জানা যায়, পলাশীর যুদ্ধের পর কম্পানির বড় কর্তা ওয়ারেন হেস্টিংস বাংলার গভর্নর হওয়ার পর তিনি হিরামকে কক্সবাজারের প্রশাসক নিয়োগ করেন। তাঁর কাজ ছিল এই অঞ্চলের সাধারণ মানুষের কাছ থেকে জোরপূর্বক খাজনা আদায় করে কম্পানির কোষাগার সমৃদ্ধ করা। এই কাজটি তিনি আরাকান পর্যন্ত বিস্তৃত করেছিলেন। একসময় কক্সবাজার চট্টগ্রামের একটি মহকুমা ছিল। মানুষের পেশা ছিল মাছ ধরা আর লবণ উত্পাদন। বর্তমানে এটি একটি শহর। গত দুই দশকে এই শহরে পর্যটনশিল্পের বেশ উন্নতি হয়েছে। অপরিকল্পিতভাবে হলেও গড়ে উঠেছে বেশ কিছু ভালো মানের হোটেল। একসময় শীতের সময় ছাড়া খুব বেশি পর্যটক এখানে আসতেন না। বর্তমানে বছরজুড়ে দেশি-বিদেশি পর্যটকের ভিড় লেগেই আছে। একশ্রেণির মানুষের হাতে অর্থ এসেছে। তারা পরিবার নিয়ে বছরে একবার হলেও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বেড়াতে যায়। এটি অত্যন্ত প্রশংসনীয় উদ্যোগ। মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর বেড়ানোর পছন্দের তালিকায় আছে কক্সবাজার। চট্টগ্রাম থেকে ঘণ্টাচারেকের পথ। ঢাকা থেকে রাতে রওনা হয়ে ভোরে কক্সবাজার পৌঁছা যায়। বিলাসবহুল শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাসও আছে। দিনে একাধিকবার বিমান আসে ঢাকা থেকে। পর্যটনশিল্পের বিকাশের কথা চিন্তা করে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ২০০৯ সালেই ঘোষণা দিয়েছিলেন, এই শহরকে তিনি আধুনিক সুযোগ-সুবিধা দিয়ে একটি আদর্শ পর্যটন নগর হিসেবে গড়ে তুলবেন। এর অংশ হিসেবে কক্সবাজার বিমানবন্দরের ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল বছরদুয়েক আগে। এরই মধ্যে রানওয়ে বড় করা হয়েছে। সেই রানওয়েতে শনিবার প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে ‘মেঘদূত’-এর অবতরণ। বঙ্গবন্ধুকন্যা কক্সবাজার আসবেন তাতে সারা জেলায় কয়েক দিন ধরেই বেশ সাড়া পড়ে যায়। গত ৯ বছরে এটি তাঁর পঞ্চমবার কক্সবাজার আসা। বিশ্বের দীর্ঘতম মেরিন ড্রাইভ উদ্বোধন ছাড়াও তিনি একাধিক প্রকল্পের ফলক উন্মোচন করবেন এবং অপরাহ্নে কক্সবাজার স্টেডিয়ামে জনসভায় ভাষণ দেবেন।
দুপুর দেড়টায় কক্সবাজার বিমানবন্দরে নেমে দেখি ভিআইপি লাউঞ্জ নিরাপত্তাকর্মীদের নিয়ন্ত্রণে। কক্সবাজার বিমানবন্দরকে প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হয়ে উঠতে আরো অনেক কাজ করতে হবে। এতে বিমানযাত্রীর ধারণক্ষমতা বাড়াতে হবে। এখনো এই বিমানবন্দরে যাত্রীদের মালামাল চেক ইন বা বুঝে নেওয়ার কোনো ভালো ব্যবস্থা নেই। বিমানবন্দরের কর্মকর্তাদের দক্ষতার বড় অভাব রয়েছে। হোটেলের পথে দেখি নানা রঙের টুপি পরে মানুষজন দলে দলে প্রধানমন্ত্রীর জনসভার দিকে রওনা দিয়েছে। যত মানুষ রাস্তায় দেখি এর অর্ধেকও যদি সামনের নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে ভোট দেয় তাহলে আওয়ামী লীগের বিজয় ঠেকানো কঠিন। কিন্তু অতীতে এই শহরে দলের কোন্দল মাথায় রেখে শঙ্কিত হই। সেই কোন্দল এখনো কম-বেশি আছে বলে সবাই জানাল। এমন পরিস্থিতি দেশের অনেক জেলায় এখন বাস্তবতা। সবার বিশ্বাস, শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপে পরিস্থিতির কিছুটা হলেও উন্নতি হবে। কিন্তু একজন শেখ হাসিনা কতটুকু করতে পারবেন? তাঁরও তো একটা সীমা থাকা উচিত। শুধু শেখ হাসিনা নির্ভর আওয়ামী লীগ হলে তা দলের জন্য মঙ্গল নয়। দল সংগঠননির্ভর হওয়া ভালো।
হোটেলের লবিতে ঢুকতেই দেখা হলো আমার পূর্বপরিচিত ফজল মিয়ার সঙ্গে। প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় উপস্থিত থেকে তাঁর বক্তব্য শুনবেন বলে তিনি টেকনাফ থেকে এসেছেন। লবণের ব্যবসা করেন। বয়স আশির ঘরে। এখনো বেশ শক্ত আছেন। পড়ালেখা তেমন একটা করেননি। এক মেয়েকে ডাক্তার বানিয়েছেন। এতে তিনি বেশ গর্বিত। ১৯৭০ সালের নির্বাচনের আগে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শুনতে দুই দিন আগে কক্সবাজার এসে এক আত্মীয়ের বাসায় উঠেছিলেন। আঞ্চলিক ভাষায় বললেন, শেখ সাহেব ছিলেন বাঘের বাচ্চা। সে সময় নাকি তাঁর মনে হয়েছিল, শেখ সাহেবের নির্বাচনী বক্তৃতা টেকনাফের পাড়া-মহল্লায়ও শোনা গেছে। আমার কাছে তারা সবাই বঙ্গবন্ধুর অন্ধ অনুসারী। কোনো লোভ-লালসার হাতছানি তাদের কখনো বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে বিচ্যুত করতে পারেনি। দুর্ভাগ্য হচ্ছে বাংলাদেশে ফজল মিয়াদের সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে কমছে। দিনে আওয়ামী লীগ আর রাতে জামায়াত-বিএনপির সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে তেমন মানুষের সংখ্যা জ্যামিতিক হারে বাড়ছে বলে অনেকে মনে করেন। এরা সবাই হাইব্রিড। কোনো কোনো গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে, আগামী নির্বাচনে দলীয় ১০০ সংসদ সদস্য এবার মনোনয়ন না-ও পেতে পারেন। তেমনটি যদি হয় তখন দেখা যাবে কতজন বিদ্রোহী প্রার্থী হচ্ছেন আর কতজন বিএনপি-জামায়াতে যোগ দিচ্ছেন। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে একজন বড় মাপের ছাত্রলীগ নেতা আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে বিএনপিতে যোগ দিলেন। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী, তখন বিরোধীদলীয় নেত্রী, দুঃখ করে বলেছিলেন, ওই ছেলেটাকে এত ওপরে না তুলে দুটি রামছাগল পুষলে অনেক বেশি লাভ হতো।
বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা কক্সবাজারে বক্তৃতা করবেন তা তো ফজল মিয়াকে শুনতেই হবে। বললেন বয়স হয়েছে। আর একবার শেখ হাসিনার বক্তব্য শোনার সৌভাগ্য তো না-ও হতে পারে। সাধারণ কর্মীরাই যে এখনো আওয়ামী লীগের শেষ ভরসার জায়গা তা না বোঝার কোনো কারণ নেই। এই সাধারণ কর্মীদের কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই। শুধু আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় দেখতে চায় তারা। শেখের বেটি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তা দেখেই তাদের তৃপ্তি। কিন্তু বেশির ভাগ নেতা তাদের নিজ স্বার্থে ব্যবহার করা ছাড়া দলের কোনো কাজে লাগাতে চান না। নেতারা সব সময় চাটুকারবেষ্টিত থাকতে পছন্দ করেন। ব্যতিক্রম অবশ্যই আছে। ফজল মিয়া জানালেন, বঙ্গবন্ধু কক্সবাজারকে ভালোবাসতেন শুধু তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য নয়, এই এলাকার মানুষের আতিথেয়তার জন্যও।
ইদানীং কক্সবাজার সদর সার্বিকভাবে বিশৃঙ্খল। একটি মাত্র সড়ক। তাতে রাজ্যের গাড়ি, রিকশা, আর ব্যাটারিচালিত রিকশা। দুই পাশে অসংখ্য হোটেল আর রেস্টুরেন্ট। চলাচল মাঝেমধ্যে প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। মানুষ এখন ইনানীর দিকে ছুটছে। ইনানী যেতে হলে এখন সহজ পথ মেরিন ড্রাইভ। সড়কটি এর আগেও সেনাবাহিনী করে দিয়েছিল। সমুদ্রের ভাঙনে তার অনেক অংশ বিলীন হয়ে গেছে। বর্তমান ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ অসাধারণ সড়কটিও সেনাবাহিনী নির্মাণ করেছে। এই সড়কপথে সোজা টেকনাফ যাওয়া যাবে। প্রধানমন্ত্রী ঢাকায় ফিরে যাওয়ার পর রাতে সেই সড়ক দিয়ে বেশ খানিকটা দূর পর্যন্ত গিয়ে মনে হলো, এটির কোনো কোনো অংশ ভাঙনের মুখে পড়তে পারে। সড়ক রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব সড়ক ও জনপথের। তারা কতটুকু তা করতে পারে তা ভবিষ্যতে দেখা যাবে।
১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ের পর শেখ হাসিনা কক্সবাজারে এসে দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে ত্রাণকাজে অংশ নিয়েছিলেন। এক দ্বীপ থেকে অন্য দ্বীপে ঘুরে বেড়িয়েছেন। কখনো নৌকায়, কখনো লঞ্চে। তখন এক সাংবাদিক আমাকে জানিয়েছিলেন, মহেশখালী যাওয়ার পথে ছোট পাটাতনের ওপর দিয়ে হেঁটে শেখ হাসিনা বেশ সহজে লঞ্চে উঠে গেলেন। সাংবাদিকদের কেউ কেউ ইতস্তত করছিলেন। তখন তিনি তাঁদের দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললেন, ‘আমার হাত ধরো। ’ তাঁরা তো অবাক। তিনি আরো বললেন, বাংলাদেশের মানুষ যদি নদী আর সমুদ্রকে ভয় পায় তাহলে তো চলবে না! সাংবাদিকরা অবাক। শেখ হাসিনা এত সহজে মানুষের কাছে আসতে পারেন, তাঁদের বিশ্বাস হচ্ছিল না। সে জন্যই তো তিনি বঙ্গবন্ধুকন্যা। এই সেদিন প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে পড়ুয়াদের মধ্যে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের ‘প্রধানমন্ত্রী গোল্ড মেডেল’ বিতরণ শেষে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের সিঁড়িতে সবার গ্রুপ ছবি তোলা হবে। মোট ২৩০ জন। সবাই যখন লাইন করতে ব্যস্ত ঠিক তখন একটি মেয়ে এসে আবদার করে বলল, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনার বুকে একটু মাথা রাখি?’ তিনি মেয়েটাকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন। অন্য মেয়েদের মধ্যে তা খানিকটা সংক্রমিত হলো। নিরাপত্তাকর্মীরা তাদের সরাতে চাইলে তিনি বলেন, ‘থাক না। ওরা তো আমার সন্তানতুল্য’। সবাই অভিভূত। এই গুণটা কয়জনের আছে? কক্সবাজারের মেরিন ড্রাইভের ফলক উন্মোচন হলো ইনানী বিচের কাছে। তখন বৈশাখের রোদের কারণে প্রচণ্ড তাপ। সংক্ষিপ্ত বক্তৃতা শেষে সবাইকে অবাক করে কয়েকজন দলীয় নেতাকর্মীকে নিয়ে খালি পায়ে তিনি হঠাৎ নেমে পড়লেন পাশের ইনানী বিচে। নিরাপত্তাকর্মীরাও অপ্রস্তুত। তাঁরা আর বুট খোলার সময় পেলেন না। বুট পরেই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বঙ্গোপসাগরের নোনা জলে নেমে পড়লেন। সে এক অভাবনীয় দৃশ্য। প্রধানমন্ত্রীর সেই ছবি এখন বাংলাদেশের একটি পত্রিকা ছাড়া সব পত্রিকা বেশ গুরুত্ব দিয়ে ছেপেছে। সামাজিক গণমাধ্যমে তা ভাইরাল হয়েছে। তবে সবাই যে শেখ হাসিনার পানিতে নামার ছবিকে সহজে নিয়েছেন তা নয়। কারো কারো মন্তব্য হাওরে বানভাসি মানুষদের রেখে প্রধানমন্ত্রী জলকেলি করছেন! একজন আবার মশকরা করে লিখেছেন, এই ছবিটি প্রধানমন্ত্রীর অফিশিয়াল ছবি করা হোক। এই মানুষটিই একবার লিখেছিলেন, সজীব ওয়াজেদ জয়টা যেন কে? তাঁরা আবার কোনো কারণ ছাড়া ইরানের সাবেক প্রেসিডেন্ট আহমাদিনেজাদের রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে নামাজ পড়ার ছবি শেয়ার করতে করতে ক্লান্ত হয়ে যান। গাড়ির মধ্যে নামাজ পড়লে তাঁর তো কোনো অসুবিধা ছিল না। ব্রিটেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের পাতাল রেলে চড়ার ছবিটা এখনো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল। অনেকে মন্তব্য করেছেন, শেখ হাসিনা কেন এ রকম সাধারণের মতো চলতে পারেন না। এই অর্বাচীনরা ভুলে যান শেখ হাসিনার মতো ডেভিড ক্যামেরনকে একটা বুলেট তাড়া করছে না।
বৃহত্তর চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের সঙ্গে শেখ হাসিনার অনেক স্মৃতি। সেদিন তিনি এই সব স্মৃতির কিছুটা রোমন্থন করেছেন। ১৯৬২ সালে কক্সবাজার এসেছিলেন বাবার হাত ধরে। ১৯৫৮ সালে আইয়ুব খান সামরিক শাসন জারি করলে বঙ্গবন্ধু ইনানীতে বন বিভাগের একটি রেস্ট হাউসে দুবার কিছুদিনের জন্য অবস্থান করেছিলেন। সে সময় এলাকার কিছু ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী বঙ্গবন্ধুকে আপন করে নিয়েছিলেন। সম্ভবত সে কারণেই ইনানী বিচের বালু আর জলরাশি কিছু সময়ের জন্য বঙ্গবন্ধুকন্যাকে সেদিন ভুলিয়ে দিয়েছিল যে তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। খালি পায়ে সৈকতের পানিতে নামতে বাধ্য করেছিল। মাঝেমধ্যে শেখ হাসিনার অনেক আচরণ দেখে মনে হয়, তিনি যে বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষের শুধু প্রধানমন্ত্রীই নন বরং বর্তমান বিশ্বে একজন স্বীকৃত স্টেটসম্যান তা ভুলে যান। হয়ে যান কারো বুবু বা আপা। একজন তো এক বড় অনুষ্ঠানে তাঁকে দাদি বলে বেশ জোর গলায় সম্বোধন করলে আমি খানিকটা অবাক হয়ে যাই। মেয়েটির বয়স ষোলোর কম হবে না।
সোমবার কক্সবাজার থেকে ফেরার সময় বেশ কয়েকজনের সঙ্গে আলাপ করে মনে হলো, তাঁরা চান বঙ্গবন্ধুকন্যা বারবার কক্সবাজারে আসুন। শেষ করি মৌসুমী ভৌমিকের একটি গানের কয়েকটি কলি দিয়ে।
‘আমি শুনেছি সে দিন তুমি সাগরের ঢেউয়ে চেপে নীল জল দিগন্ত ছুঁয়ে এসেছ …
আমি শুনেছি সেদিন তুমি নোনাবালি তীর ধরে, বহুদূর বহুদূর হেঁটে এসেছ…
আমি কখনো যাইনি জলে, কখনো ভাসিনি নীলে, কখনো রাখিনি চোখ ডানামেলা গাঙচিলে…
আবার যেদিন তুমি সমুদ্রস্নানে যাবে, আমাকেও সঙ্গে নিও, নেবে তো আমায়, বলো নেবে তো আমায়?’
মানুষের অন্তরে বেঁচে থাকুন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা।
লেখক : বিশ্লেষক ও গবেষক