Wed. Sep 17th, 2025
Advertisements

Untitled-1 copy

খােলা বাজার২৪।। সোমবার , ১৫ মে, ২০১৭: মুক্তিযুদ্ধ মুক্তির নিমিত্তে যুদ্ধ। এই মুক্তি যে কারোরই অধিকার বা তার সত্তার মুক্তি। কিন্তু আমাদের মুক্তিযুদ্ধ বলতে বোঝায় পশ্চিম পাকিস্তানের স্বৈরশাসকদের শোষণের হাত থেকে মুক্তি লাভ। মূলত এটা ছিল আমাদের ভৌগোলিক স্বাধীনতা। বাংলাদেশের স্বাধীনতার মাধ্যমে আমরা পাকিস্তানীদের বৈষম্যের হাত থেকে মুক্তি পেয়েছি। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ এখনো অব্যাহত আছে। এই প্রত্যয় আমাদের পাথেয়।
মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যাশা মূলত তিনটি- সাম্য,মানবিক মর্যাদা, আর্থনীতিক ও সামাজিক ন্যায়বিচার। যা আমরা পাকিস্তানী শাসকদের কাছ থেকে পাই নি। যা আমরা উপনিবেশিক শাসনকালে বঞ্চিত হয়েছি। এখানে সাম্য বলতে সামাজিক চুক্তি- রাষ্ট্র বনাম জনগণের মধ্যে চুক্তি। রাষ্ট্র জনগণের অধিকার প্রদানে এবং জনগণ রাষ্ট্রের দায়িত্ব পালনে বাঁধিত হবে। এই ভিত্তিতে রাষ্ট্র ও জনগণের মধ্যে যে বৈষম্য তা দূরীভূত করা। মানবিক মর্যাদা- মানুষ হিসেবে মানুষের মূল্যায়ন অর্থে বিবেচনা। সামাজিক ন্যায়বিচার হল- সমাজে বিদ্যমান সকল বৈষম্যের উর্ধে উঠে সত্যের ভিত্তিতে বিচার করা বোঝায়। এককথায়- সাম্য,মানবিকতা এবং ন্যায়বিচার ইত্যাদি মুক্তিযুদ্ধের প্রথম চাওয়া-পাওয়া।

সত্যি কথা বলতে গেলে মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যাশা সামগ্রিকভাবে পূরণ হয় নি। সকল ক্ষেত্রে আংশিক সফলতা অর্জন করতে পেরেছে। মূলত আমরা প্রথম হোঁচট খেয়েছি স্বাধীনতা পরবর্তী প্রথম চার বছর। আমার দৃষ্টিতে এই চার বছর ছিল হাহাকারের সময়। যা রফিক আজাদ তার কবিতার মাধ্যমে প্রকাশ করেছেন-  ভাত দে হারামজাদা নইলে,মানচিত্র চিবিয়ে খাব। কবি ’৭৪ এর মন্বন্তরের কথা বলেছেন। আসলে, সময়টা ছিল অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ যা, জাতি রাষ্ট্র গঠনের জন্য যথেষ্ট ছিল বলে আমি মনে করি। আমরা এখানে হোঁচট খেয়েছি। জাতি রাষ্ট্র গঠনে আমরা ব্যর্থ হয়েছি। পারিবারিক শাসনের উর্ধে উঠতে পারি নি। রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যক্তিকরণ করা হল। চলল একনায়কতন্ত্র।

2zs44raপরবর্তী ১৯৭৬-৮১ ছিল বাংলাদেশের স্বর্ণযুগ। বাংলাদেশের ইতিহাস রচনার সূত্রপাত এই সময়েই। আবির্ভূত হল জাতীয়তাবাদের দামাল স্লোগান নিয়ে বাংলাদেশের নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ জিয়াউর রহমান। আর এই জাতীয়বাদই হয় বাংলাদেশের জাতীয় ঐক্যের মুখ্য প্রতীক। আমরা বাঙ্গালি থেকে বাংলাদেশী হলাম। বাংলাদেশের নিজস্ব সত্তার জন্ম হল। তাজউদ্দীন (সমাজতন্ত্রী), মোশতাক(পুঁজিবাদী),ভাসানী(পিকিংবাদী) ইত্যাদি আদর্শের মৃত্যু হল। বাংলাদেশী জাতীয়বাদের আদর্শিক নেতা হলেন জিয়া। সামাজিক,সামরিক ও অর্থনৈতিক শিল্পের উন্নয়ন হল। রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের স্বতন্ত্র অস্তিত্ব বিরাজ করল আন্তর্জাতিক পর্যায়ে। এই ছিল স্বাধীনতার পর আমাদের প্রাপ্তি।

মুক্তিযুদ্ধ এক শ্রেণীর নিকট পৈতৃক সম্পত্তিতে পরিণত হয়েছে। তারা মুক্তিযুদ্ধকে বিতর্কের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। যা আদৌ কামনা ছিল না। আমি একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে এটা কখনো কামনা করি নাই। মুক্তিযুদ্ধকে পুঁজি করে এক শ্রেণীর শাসক মহল ব্যক্তি স্বার্থকে প্রাধান্য দিচ্ছে। ফলে, আমাদের নতুন প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধকে হেঁয়ালি মনে করে এবং মুক্তিযোদ্ধাকে প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। আমাদেরকে এই প্রবণতা থেকে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত আদর্শকে উদ্ধার করতে হবে।

স্বাধীনতার এই দীর্ঘদিন পর- আমার প্রত্যাশা হল মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত আদর্শকে বর্তমান প্রজন্মের নিকট উপস্থাপন করা। আর তা করার জন্য জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে জনগণের অধিকার জনগণের হাতে ফিরিয়ে দেওয়া। এই সত্য প্রতিষ্ঠার জন্য আবার আমাদের জাতীয় স্বার্থে জাতীয়তাবাদকে সামনে রেখে সম্মুখ দিকে এগিয়ে যেতে হবে।

লেখক,আকরামুল হাসান মিন্টু

সাধারন সম্পাদক

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল কেন্দ্রীয় কমিটি।