Thu. May 1st, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

6রিচার্ড ওলফ : খােলা বাজার২৪।। রবিবার, ২১ মে, ২০১৭: সব কিছুতেই ট্রাম্পের বড়টা দাবি করা চাই। তিনি সর্বোচ্চ দালান নির্মাণ করেন। তিনিই সফলতম ব্যবসায়ী। তাঁর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানেই বেশি লোক হয়। যত ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে বলা হোক, প্রয়োগ করা হোক যত রকমের বিশেষণ—এসব দাবির সামান্যতম ভিত্তিও নেই।

তবে রাশিয়াকে কথিত অতি গোপনীয় গোয়েন্দা তথ্য দেওয়ার ঘটনার পর তিনি নিজেকে যেকোনো গদিনশিন প্রেসিডেন্টের চেয়ে সেরা দাবি করতেই পারেন। তিনি গর্দভের চেয়েও বড় গর্দভ। এখানে তিনি বুশ থেকেও এগিয়ে, যিনি কিনা ভেবেছিলেন, ইরাক দখলের কাজটি হবে সহজ। স্থূলতার কারণে যুক্তরাষ্ট্রের যে প্রেসিডেন্ট হোয়াইট হাউসের বাথটাবে আটকে গিয়েছিলেন তাঁর চেয়েও তিনি স্থূল!

ট্রাম্প তাঁদের যে কারো তুলনায় বেশি দেশপ্রেমহীন, বেশি বেপরোয়া, বেশি অজ্ঞ, বেশি অক্ষম। কেউ যতই বলুক, তিনি তো অ্যাপ্রেনটিস, নবিশ, আসল সত্যি হচ্ছে ট্রাম্প দ্য বিগেস্ট লুজার!

যু্ক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট পৃথিবী নামক গ্রহটির সবচেয়ে অবিশ্বস্ত দেশটিকে ইসলামিক স্টেট (আইএস) নিয়ে সবচেয়ে স্পর্শকাতর তথ্য যে দিয়েছেন, এর পক্ষে খুব কম যুক্তিই দাঁড় করানো যাবে। ওয়াশিংটন পোস্ট প্রতিবেদন দিয়েছে যে আইএসের একটি হুমকির বিষয়ে ট্রাম্প রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও রাষ্ট্রদূতকে তথ্য দিয়েছেন। অথচ তথ্যটি এমন ছিল যে যুক্তরাষ্ট্র তাদের মিত্র দেশগুলোর কাউকেই জানায়নি। পরে হোয়াইট হাউস অতি নাতিদীর্ঘভাবে ঘটনাটি অস্বীকার করল, যা ছিল আরো বেদনাদায়ক।

প্রশ্ন হচ্ছে, ট্রাম্প কিভাবে এই মাপের গর্দভ হতে পারেন? এটা অসম্ভব যে তিনি মনের অজান্তে কথার ছলে অতি গোপনীয় তথ্যটি জানিয়ে দিয়েছেন! কারণ রুশ বন্ধুদের তিনি তথ্যটি অনেক গর্বভরে বলছিলেন। অতি গোপনীয় তথ্য অন্যকে জানিয়ে দেওয়ায় দোষের কিছু নেই, ট্রাম্প নিশ্চয়ই এমনটাও বিশ্বাস করেন না। নির্বাচনী প্রচারাভিযানে নেমে তিনি কর্মী-সমর্থকদের বহুবার বলেছেন, হিলারি ক্লিনটনকে গোপনীয় তথ্য ফাঁস করে দেওয়ার শাস্তি পেতেই হবে।

আসলে ট্রাম্প রাশিয়াকে এতটা আপন করে নেওয়া, যুক্তরাষ্ট্রে আমাদের যেসব গোপনীয় গোয়েন্দা তথ্য আছে সেগুলো তাদের সঙ্গে শেয়ার করা—এর কোনোটিতেই কোনো দোষ দেখেন না। তিনি রাশিয়ার মন জয় করতে গিয়ে এমন মরিয়া হয়ে গিয়েছিলেন যে কোনটা যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ, কোনটা তাঁর নিজের, সে কথাও ভুলে গিয়েছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রই সবার আগে অর্থ হচ্ছে ট্রাম্প সবার আগে। রিচার্ড নিক্সন একটি কথা বলতে পছন্দ করতেন, যদি কোনো কাজ প্রেসিডেন্ট করেন, তার মানেই হচ্ছে কাজটি অবৈধ নয়।

আরো একটি প্রশ্ন হচ্ছে, রাশিয়ার বিষয় নিয়ে তদন্তের ঘটনায় যেদিন ট্রাম্প কোমিকে বরখাস্ত করলেন, ওই দিনই রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও রুশ রাষ্ট্রদূত ওভাল অফিসে কী করছিলেন? ট্রাম্পের বোঝা উচিত ছিল না যে এ নিয়ে পরে অনেক কথা উঠবে? কারণ রুশ-মার্কিন গোপন ষড়যন্ত্রের অভিযোগ অনেকেই করছে।

সহজ উত্তরটি হচ্ছে, রুশদের সঙ্গে গোপন সম্পর্কে জড়ানোর কর্মটিতে ট্রাম্প কোনো ভুল দেখছেন না। এ কারণে তিনি এমনকি রুশ ফটোগ্রাফারকেও ওভাল অফিসে আমন্ত্রণ জানাতে পারেন।

এ ছাড়া ‘কোমিগেট’ কেলেঙ্কারি নিয়েও আবার চাপের মুখে পড়েছেন ট্রাম্প। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইয়ের প্রধান জেমস কোমিকে বরখাস্ত করার খবরে নিউ ইয়র্ক টাইমস লিখেছে, কোমি ট্রাম্পের সঙ্গে প্রতিটি সাক্ষাতের পর কথোপকথন লিখে রাখতেন, এবার তারই অংশবিশেষ ফাঁস হয়ে গেছে। ট্রাম্প সরাসরি কোমিকে বলেছিলেন, রাশিয়ার সঙ্গে গোপন যোগাযোগের অভিযোগে সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইকেল ফ্লিনের বিরুদ্ধে যে তদন্ত চলছে, তা বন্ধ করে দাও। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি ফ্লিন বরখাস্ত হওয়ার পরের দিন ট্রাম্প নাকি কোমিকে বলেন, ‘আই হোপ ইউ ক্যান লেট দিস গো। ’ শুধু তা-ই নয়, সংবাদমাধ্যম রাশিয়ার সঙ্গে তাঁর টিমের সদস্যদের যোগাযোগ সম্পর্কে গোপন সরকারি তথ্য ফাঁস করে দেওয়ায় ট্রাম্প উল্টো সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য কোমির ওপর চাপ সৃষ্টি করেন, এই ট্রাম্পই যখন নিজে তথ্য ফাঁস করেন তখন?

তবে কি সাবেক প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের ভাগ্য বরণ করতে যাচ্ছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প! এ আলোচনা এখন যুক্তরাষ্ট্র ছাপিয়ে বিশ্বজুড়েই। ডেমোক্রেটিক দলের কমপক্ষে দুজন কংগ্রেশনাল সদস্য ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিশংসন প্রস্তাব আনার দাবি করেছেন। তবে এখনো এ উদ্যোগে জোর হাওয়া লাগেনি। প্রতিনিধি পরিষদের সাবেক স্পিকার ডেমোক্র্যাট ন্যান্সি পেলোসি এ প্রসঙ্গে বলেছেন, এ আহ্বান ওই সদস্যদের নিজস্ব।

লন্ডনের অনলাইন দ্য টেলিগ্রাফে একটি প্রতিবেদন লিখেছেন সাংবাদিক ক্রিস গ্রাহাম। শিরোনাম ‘ক্যান ডোনাল্ড ট্রাম্প বি ইমপিচড ওভার দ্য রাশিয়া অ্যান্ড কোমি স্ক্যান্ডালস?’ অর্থাৎ রাশিয়া কানেকশন ও কোমি স্ক্যান্ডালে কি ডোনাল্ড ট্রাম্পকে অভিশংসিত করা যাবে? এতে এফবিআইয়ের ওই মেমোকে নতুন এক বিস্ফোরক বলা হয়েছে। এটি ফাটবে কি না, ফাটলে কখন, অপেক্ষা করতে হবে বৈকি!

লেখক : ব্রিটিশ-মার্কিন সাংবাদিক

লেখ্যসূত্র : গার্ডিয়ান