Thu. May 1st, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খােলা বাজার২৪।। মঙ্গলবার, ২৩ মে, ২০১৭: 13সিঙ্গাপুরে ১৬ মার্চ থেকে ১৯ মার্চ পর্যন্ত লুব্রিকেন্ট নির্মাতা ‘শেল’ আয়োজিত শেল ইকো ম্যারাথন প্রতিযোগিতার এই আসরে দ্বিতীয় বাংলাদেশি দল হিসেবে অংশ নিয়েছিল ‘টিম রেড-এক্স’। প্রাকৃতিক জ্বালানী সম্পদের ঘাটতিকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে আয়োজিত প্রতিযোগিতাটির দুটো শ্রেণিতে বাংলাদেশ, ভারত, ভিয়েতনাম, কোরিয়া, চীন, ইন্দোনেশিয়াসহ মোট ২০টি দেশের ১২৩টি দল অংশ নেয়।

প্রতিযোগিতায় দুটো শ্রেণির মধ্যে একটি ছিল ‘প্রোটোটাইপে’ থ্রি হুইলার কার বা তিন চাকার গাড়ি আর অপরটি ‘আরবান কনসেপ্টে’ ফোর হুইলার কার বা চার চাকার গাড়ি। বাংলাদেশের আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের এ দলটি তাদের উদ্ভাবিত গাড়ি ‘ স্বাধীন-৭১’ নিয়ে আরবান কনসেপ্ট শ্রেণিতে অংশ নেয়।

অন্যান্য দেশের ১২৩ টি দলের মধ্যে বাংলাদেশের পেট্রোল ফিউয়েল সিস্টেমেচালিত গাড়ি ‘স্বাধীন – ৭১’ প্রথম ভ্যালিডিটি রান অর্জনসহ আরবান কনসেপ্ট গ্যাসোলিন শ্রেণিতে নবম ও সম্মিলিত আইসিই শ্রেণিতে ১৯ তম স্থান দখল করে। অন্যদিকে, দেশ হিসেবে দলটি ‘পঞ্চম’ অবস্থানে ছিল।

২০১৫ সালে এই প্রতিযোগিতায় প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ থেকে অংশ নিয়েছিল একই বিশ্ববিদ্যালয়ের দল অভিযাত্রিক-এর বানানো গাড়ি বিডি-৭১।

দলের ব্যবস্থাপক নাহিয়ান মুহাম্মদ নাফীস দলের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা প্রসঙ্গে বলেন, “২০১৭ সালের শেল ইকো ম্যারাথন প্রতিযোগিতার ভুল ত্রুটি কাটানোর পাশাপাশি পূর্ব অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে আগামী বছর ২০১৮’তে আবারও ওই প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে আরও ভাল ফলাফল অর্জন করতে চাই।”

নাহিয়ান মুহাম্মদ নাফীসের নেতৃত্বে ‘টিম রেড- এক্স’ দলের সদস্যরা হলেন – আজিজুল বারি জাবের, মুহাম্মদ আফনান মনির, মুহাম্মদ ফাহিম আহমেদ, আশিকুর রাহমান রাফি, প্রীতম ভৌমিক ও মেহরাব খান মুন।

প্রতিযোগিতা থেকে আসার পর, ‘টিম রেড–এক্স’র দল কী করছে জানতে চাইলে, সে প্রসঙ্গে নাহিয়ান বলেন, “অটো মোবাইল সেকশনে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে নতুন কারিগরী পরিকল্পনার মাধ্যমে কাজ করছি ও গবেষণা করে গাড়ির জ্বালানি দক্ষতা বাড়াতে কাজ করে যাচ্ছি।”

তিনি আরও বলেন, “আমাদের প্রযুক্তিটি ব্যবহারের মাধ্যমে আগামীতে আরও জ্বালানিবান্ধব কার্যকরী গাড়ি তৈরি করার জন্যে চেষ্টা করে যাব। এ ছাড়াও আমরা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ করার পাশাপাশি দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় এবং কারিগরী কলেজগুলোতে আমাদের প্রতিযোগিতার ধারণা শেয়ার করে তাদেরকে উদ্বুদ্ধ করব।”

“অন্যান্য দেশে থেকে অংশ নেয়া গাড়িগুলো তাদের নিজ দেশের অটোমোবাইল প্রতিষ্ঠান থেকে কারিগরি সমর্থনের মাধ্যমে তৈরি হওয়ায় বাংলাদেশের চেয়ে বেশি ভাল ফলাফল পেয়েছে” মন্তব্য নাহিয়ান-এর।

“অ্যালুমিনিয়াম শিট মেটালে তৈরি ‘স্বাধীন-৭১’ গাড়ির গতি দেশে পরীক্ষণের সময় ঘণ্টায় প্রতি লিটার তেলে সর্বোচ্চ ৬০ কিলোমিটার হলেও প্রতিযোগিতার ফলাফল ঘণ্টায় প্রতি লিটার তেলে ৪২.৫ কিলোমিটার” বলেছেন দলের আরেক সদস্য মুহাম্মদ আফনান মনির।

‘স্বাধীন-৭১’ নামের ১৮৫ কেজি’র গাড়িটিতে ৮০ সিসির ফোর স্ট্রোক মটর সাইকেল ইঞ্জিন ও গাড়ির উন্নয়নে কার্বোরেটরের পরিবর্তে ইএফআই (ইলেকট্রনিক ফিউয়েল ইনজেকশন) কিট ব্যবহৃত হয়েছে।

গাড়িটি তৈরির কাজ ২০১৬ সালের নভেম্বরে শুরু হয়। ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে এটি বানাতে সক্ষম হয়েছিলেন নির্মাতারা। এটি নির্মাণে প্রায় তিন লাখ ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।

দলের আরেক সদস্য আজিজুল বারি জাবের সিঙ্গাপুরের প্রতিযোগিতা সম্পর্কে বলেন, “সিঙ্গাপুরে ট্র্যাকে নামার পর – ৪০ ডিগ্রির বেশি তাপমাত্রার কারণে গাড়ির ফিউয়েল সেকশনে অতিরিক্ত গরমে সব কিছুই লিক হবার অবস্থা দেখা দেয়, সবাই তখন হতাশ হয়ে পড়ছিল। সময় পার হওয়ার পাশাপাশি, আমাদের স্বপ্নগুলো ছোট হয়ে আসছিল। অবশেষে, তিন মাসের কষ্টের সাফল্য পেয়েছি। এটি আমাদের জন্যে সত্যিই একটা রোমাঞ্চকর ঘটনা।”

জাবের তার লক্ষ্য সম্পর্কে বলেন, ‘আমাদের দেশ অটোমোবাইল সেকশনে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর তুলনায় অনেক পিছিয়ে, বাংলাদেশকে বহুদূর এগিয়ে নিয়ে যেতে অটোমোবাইলে নিয়ে কাজ করে যেতে চাই।”

এই গাড়ি তৈরিতে আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সহকারী অধ্যাপক মো. জুবায়ের হোসাইন, সহকারী অধ্যাপক ড. মো. দেওয়ান হাসান ও প্রকোশলী মো. শাহ আলম-এর সহযোগিতা করেছেন বলে জানায় দলটি।

দলটির উপদেষ্টা অধ্যাপক মো. জুবায়ের হোসাইন বলেন, “বিশ্বের বৃহত্তম অটোমোবাইল প্রতিযোগিতা ‘শেল ইকো ম্যারাথনে’ দ্বিতীয়বারের মতো বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সফলভাবে অংশগ্রহণ করতে পারায় আমরা গর্বিত। আগামীতে যথাযথ তহবিল পেলে আমাদের ছাত্র ছাত্রীরা আরও ভাল কাজ করবে”।