খােলা বাজার২৪।। রবিবার, ৪ জুন, ২০১৭: বনানী ধর্ষণ ঘটনা এখনও সবার মুখে মুখে। শুধু বনানীর ঘটনাই নয়, বলতে গেলে প্রতিদিনই এমন ধর্ষণের ঘটনা ঘটে যাচ্ছে চারপাশে। বনানীর মতো অভিজাত এলাকা থেকে শুরু করে গ্রামের শিশু পর্যন্ত রেহাই পাচ্ছে না ধর্ষণ নামক পৈশাচিক নিষ্ঠুরতা থেকে। আর এটার দায় দায়িত্ব আর দোষ সবই বর্তায় ধর্ষণের শিকার মেয়েটির উপরে।
কেন ধর্ষণ করা হয়েছে? কারণ মেয়েটি ছোট ছোট কাপড় পরে। কেন মেয়েটিকে দেখে ছেলেটির কাম জেগেছে? কারণ মেয়েটির মাথায় হিজাব ছিলো না। ঘুরে ফিরে আঙুল তুলে কোন না কোনভাবে বলা হয়েই যাচ্ছে যতো দোষ সব মেয়েটির। আর ছেলেটির? নাহ ছেলেটির কী দোষ! ছেলেটি শুধু তার লিঙ্গ ব্যবহার করেছে। চোখের সামনে হিজাব ছাড়া, পর্দা ছাড়া ঘুরে বেড়ালে লিঙ্গর কী দোষ?
ছেলেদের লিঙ্গ এমন ধাতু দিয়ে গড়া যে সেখানে দোষের কিছুই নেই, দোষ শুধু মেয়েদের অঙ্গের, কারণ এই অঙ্গ কামনা জাগায়, ধর্ষণের স্পৃহা জাগায়। একজন ২২/২৫ বছরের মেয়ে কামনা জাগাতে পারে, কিন্তু তিন বছরের শিশু কিভাবে কামনা জাগায় সেটাই বড় প্রশ্ন। এই মেয়ে কি তাহলে হিজাব পরবে? নাকি আপাদমস্তক ঢেকে বাইরে বের হবে? যে শিশু ঠিকমতো কথা বলাই শেখেনি, সেই শিশু কিভাবে হাসপাতালে ধর্ষণের আলামতের পরীক্ষা দেবে?
ধর্ষণের বিচার পায়নি দেখে বাবা তার মেয়েকে নিয়ে ট্রেনের নিচে লাফিয়ে পড়বে, সেটাই কি তাহলে আমাদের দৈনন্দিন চিত্র হয়ে দাঁড়াবে? কারণ কতো ধর্ষণই তো প্রতিদিন ঘটে, ভাত খাওয়ার মতো এটাও নিত্যকার ঘটনা। সাহস করে যে মেয়ে থানায় ধর্ষণের কথা বলে বিচার চাইতে অনেকবার ভাবে, সেখানে তিন বছর কিংবা পাঁচ বছরের শিশু কি বলে নিজের আতঙ্কের কথা বোঝাবে? নাকি আত্মহত্যাই পরিত্রাণের একমাত্র উপায়?
কেন মেয়েদের শরীরের দিকে তাকালেই ছেলেদের কাম জাগতেই হবে? কেন মেয়েদের শরীরের মাংসপিণ্ডের দিকে এতো লোভাতুর দৃষ্টি? কেন সমাজের ভয়, ধর্মের ভয় আর লজ্জার ভয় মেয়েদেরই করতে হবে? মেয়ে বলেই কি তাকে চেটে খেয়ে দেখতে হবে?
আর কতো ধর্ষণ হলে, আর কতো মেয়ে রক্তাক্ত হলে আমাদের দেশের আইন আর বিচার তার ক্ষমতা দেখাবে? নাকি তনুর মতো আরও অসংখ্য তনু বার বার প্রতিবার ধর্ষিতা হবে? বনানীর ঘটনার মতো অভিজাত ধর্ষণের ঘটনা আর কতো ঘটবে? নাকি উচ্চাবিলাস আর টাকা রাতের অন্ধকারে এভাবে আরও অনেক ধর্ষণের ঘটনার জন্ম দিয়েই যাবে? এ উত্তর দেবে কে?
লেখক: ফারজানা মিতু