খােলা বাজার২৪।। শনিবার , ১০জুন, ২০১৭: জোড়াতালি দিয়ে চলছে দেশের অন্তত পাঁচটি বেসরকারি মেরিন একাডেমি। এসব প্রতিষ্ঠানে প্রয়োজনীয় শিক্ষক, পর্যাপ্ত ক্লাসরুম, ওয়ার্কশপ, গবেষণাগার- এসবের কোনো না কোনোটির ঘাটতি লেগেই আছে। মেরিন শিক্ষার নামে খুলে বসা এসব প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে কঠোর অবস্থান নিয়েছে নৌপরিবহন অধিদফতর। শিক্ষা এবং অবকাঠামো উন্নয়নে সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে। নির্ধারিত সময়ে কাক্সিক্ষত মান অর্জন করতে হবে। নইলে অন্তত চারটি একাডেমি বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
নৌপরিবহন অধিদফতরের মহাপরিচালক কমোডর সৈয়দ আরিফুল ইসলাম বলেন, উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত টিম কয়েকটি বেসরকারি মেরিন একাডেমি পরিদর্শন করে প্রতিবেদন দিয়েছে। যেসব প্রতিষ্ঠান গাইডলাইন পূরণে ব্যর্থ হয়েছে সেগুলোকে নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়েছে। ওই সময়ের মধ্যে শর্ত পূরণে ব্যর্থ হলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি জানান, ইতিমধ্যে মানসম্মত শিক্ষা দিতে পারেনি এমন কয়েকটি প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ রাখা হয়েছে।
যে চারটি প্রতিষ্ঠান ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে, সেগুলো হচ্ছে- ওয়েস্টার্ন মেরিটাইম একাডেমি, ওশান মেরিটাইম একাডেমি (ওএমএ), ন্যাশনাল মেরিন একাডেমি অব বাংলাদেশ এবং প্যাসিফিক মেরিটাইম একাডেমি। এ ছাড়া ইউনাইটেড মেরিটাইম একাডেমি প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণ করেনি।
মেরিন একাডেমির সংশ্লিষ্ট কয়েকজনের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, দেশি-বিদেশি বাণিজ্যিক জাহাজে বড় বেতনে চাকরির স্বপ্ন দেখিয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়েছিল। তাদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা টিউশন ও অন্যান্য ফি নেয়া হচ্ছে। কিন্তু বেশির ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক মানের নাবিক ও ক্রু তৈরি করতে পারেনি।
রাজধানীর উত্তরার ওয়েস্টার্ন মেরিটাইম একাডেমি কার্যক্রম নিয়ে নৌপরিবহন অধিদফতরের তিন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সরেজমিন পরিদর্শন করে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছেন। এতে ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোগত সমস্যা উঠে এসেছে। এতে বলা হয়, পাঁচতলা ভবনের ১৪ হাজার বর্গফুট ফ্লোর স্পেসে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। গাইডলাইন অনুযায়ী, একটি ক্যাম্পাসের সাইজ নূন্যতম ৩০ হাজার বর্গফুট হতে হবে। থাকতে হবে ওয়ার্কশপ ও ফায়ার ফাইটিং ট্রেনিং সুবিধা, ল্যাংগুয়েজ ল্যাব, প্যারেড গ্রাউন্ড ও খেলার মাঠ।
২০১২ সালে অনুমোদনপ্রাপ্ত এ প্রতিষ্ঠান ২০১৫ সালে ‘সি’ গ্রেড অর্জন করে। ২০১৬ সালে মানের আরও অবনতি হলে ‘ডি’ গ্রেড অর্জন করে। এসব বিষয়ে ওই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করেও কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এ প্রতিষ্ঠানটিকে আগামী ৯ আগস্ট পর্যন্ত সময় দিয়ে বলা হয়েছে, গাইডলাইনের শর্ত পূরণে ব্যর্থ হলে অনুমোদন বাতিল করা হবে। চট্টগ্রামের ফৌজদারহাটে ওশান মেরিটাইম একাডেমিকে (ওএমএ) আগামী ৯ আগস্টের মধ্যে শিক্ষার মান ও পরিবেশ উন্নত করতে সময়সীমা বেঁধে দিয়ে চিঠি দিয়েছে নৌপরিবহন অধিদফতর। অন্যথায় এ প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনার অনুমোদন বাতিল করা হবে। ২০১২ সালে অনুমোদন পাওয়া এ প্রতিষ্ঠান ২০১৫ ও ২০১৬ সালে প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের মানের গ্রেডিংয়ে সর্বনিন্ম ‘ডি’ পেয়েছে।
এই একাডেমির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মারুফ মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, নৌপরিবহন অধিদফতরের চিঠি পেয়েছি। সময়-সুযোগ পেলে অবকাঠামো ও প্রশিক্ষণ ব্যবস্থার আরও উন্নয়ন করব।
চট্টগ্রামের আরেক প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল মেরিন একাডেমি অব বাংলাদেশ এবং ঢাকার প্যাসিফিক মেরিটাইম একাডেমির পর্যাপ্ত প্রাতিষ্ঠানিক ও অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা নেই। প্রতিষ্ঠান দুটি বন্ধ করে দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে।
কিছুটা ভালো অবস্থানে থাকলেও গাইডলাইনের অনেক শর্ত পূরণ করতে পারেনি ইউনাইটেড মেরিটাইম একাডেমি। রাজধানীর এফডিসির পার্শ্বে এ প্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোগত সুবিধা ভালো। তবে এর সার্ভাইভাল ট্রেনিং একাডেমি, প্যারেড গ্রাউন্ড, খেলার মাঠ নেই। দুই বছরে এ প্রতিষ্ঠানের ১৩২ ক্যাডেট পাস করেছে। এর মধ্যে ৬১ ক্যাডেট জাহাজে চাকরি পেয়েছে। এ প্রতিষ্ঠানকে আগামী ৯ আগস্টের মধ্যে প্রয়োজনীয় সব শর্ত পূরণে সময় দিয়েছে নৌপরিবহন অধিদফতর। এ বিষয়ে ডেপুটি কমান্ড্যান্ট ক্যাপ্টেন জিল্লুর বলেন, এই ক্যাম্পাসে এসব সুবিধাদি তৈরির মতো স্পেস নেই। রাজধানীর সাঁতারকুলে আমাদের আরেকটি ক্যাম্পাস করা হচ্ছে, সেখানে সব সুবিধাদি নিশ্চিত করা হবে। যুগান্তর