Wed. Apr 23rd, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

23kআহমদ রফিক । খােলা বাজার২৪।। রবিবার, ১১ জুন, ২০১৭: যুক্তরাষ্ট্রের সম্প্রতি নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঐতিহাসিক সৌদি আরব সফর অনেক আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। সম্প্রতি (২০ মে ২০১৭) সূচিত এ সফর ঐতিহাসিক তাৎপর্যের এ কারণে যে নির্বাচনী প্রচারের পুরো সময়টাতে তিনি ইসলামবিরোধী প্রচারণায় মুখর ছিলেন।
এবং তা বেশ কঠোর ভাষায়। তাতে বেশ আলোড়ন তৈরি হয় মুসলিম বিশ্বে।

এমনকি হোয়াইট হাউসে ক্ষমতায় আসীন হওয়ার পর নানা বাধাবিপত্তির মধ্যেও ট্রাম্প পূর্বোক্ত মূলনীতির কিছুটা হলেও প্রকাশ ঘটাতে চেষ্টা করেছেন। তাতে করে হয়তো দ্বিতীয় চিন্তায় বুঝতে পেরেছেন যে এর ফলে মধ্যপ্রাচ্য ও তার সম্পদ হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে। তাই নীতিবদল, সুরবদল, চতুর চাণক্য নীতি ও সাম্রাজ্যবাদী বিভাজক নীতির আশ্রয় গ্রহণ ডোনাল্ড ট্রাম্পের।

তাঁর এ সফর ঐতিহাসিক আরো একাধিক কারণে। তিনি ভেবেচিন্তেই এ সফরনামা তৈরি করেছেন বিপরীত স্রোতে ভাসবেন বলে। তাঁর নির্বাচনী প্রচার পর্ব থেকে এ পর্যন্ত তাঁকে ‘খ্যাপাটে’, ‘উন্মাদ’ ইত্যাদি যে চরিত্রে আখ্যায়িত করা হোক না কেন, আধিপত্যবাদী তালে তিনি ঠিকই মার্কিনি ঘরানার চিরাচরিত নীতির অনুসারী এবং তা কঠোর ধারায়। চাতুর্যেও তা পিছিয়ে নেই।

তাই মধ্যপ্রাচ্যের সর্বাধিক সম্পদশালী ও তেলভাণ্ডারি, তাঁবেদাররাজ্য সৌদি আরবকে সফরের বিশেষ টার্গেট হিসেবে বেছে নিলেন ট্রাম্প। অতীব রক্ষণশীল এ শাসকশ্রেণির সঙ্গে তাঁর চারিত্র্যমিল রয়েছে বলেই বোধ হয় এখানে প্রথম সফর। এবং রাজধানী রিয়াদে পৌঁছে তাঁর ভাষণে যথারীতি স্ববিরোধিতার প্রকাশ ঘটিয়েছেন একাধিক মাত্রায়। তিনি বলেছেন, ‘ভাষণ দেওয়ার জন্য এখানে আসেননি। ’ অর্থাৎ উচ্চ অবস্থান থেকে ‘উপদেশ-কুপোদেশ’ নয়।

কিন্তু কার্যত তিনি ভাষণই দিলেন, পরামর্শ দিলেন, উপদেশও দিলেন, ‘গোষ্ঠীগত দাঙ্গা’ উসকে দেওয়ার জন্য তিনি আইএসের পরিবর্তে ইরানকে দায়ী করে সৌদি-ইরান দ্বন্দ্বটাকেই উসকে দিলেন তাঁর বক্তব্যে। তাঁর এ উসকানিমূলক বক্তব্য রীতিমতো প্রবল সহিংসতার ধারায়। সৌদি রাজন্যবর্গ তা রীতিমতো গিলে নিয়ে তাঁর সঙ্গে একাত্মতায় মশগুল হলো। কারণ ট্রাম্প তাদের বিদেশনীতির তালে তাল দিয়ে যুদ্ধবাদী আহ্বান জানাতে দ্বিধা করেননি।

এককথায় মধ্যপ্রাচ্যকেন্দ্রিক মুসলিম বিশ্বে শিয়া-সুন্নিভিত্তিক যুদ্ধের দামামা বাজালেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। এতে কার্যত এক ঢিলে দুই পাখি মারা। সৌদি বাদশাহদের সঠিক জায়গাটিতে উসকানি দিয়ে তিনি ইরানকে কোণঠাসা করার ব্যবস্থা নিলেন। অন্যদিকে আঞ্চলিক সংঘাতের জের হিসেবে অস্ত্র বিক্রির বাণিজ্যে শাণ দিলেন। সেই সঙ্গে পরোক্ষে ইসরায়েলি তোষণ।

তবে এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্রে শাণ হলো তাঁর মনোসহনের বিশেষ অভিপ্রায় পূরণ। আর সেটি হচ্ছে তাঁর পূর্বসূরির প্রতিটি নীতিগত সিদ্ধান্তের পথে পথে কাঁটা ছড়ানো। দেশের অভ্যন্তরে ওবামা কেয়ারের মতো জনবান্ধব স্বাস্থ্যনীতি থেকে আফগানিস্তান, ইরাক, সিরিয়া প্রভৃতি ক্ষেত্রে নমনীয় বিদেশনীতির বিরোধিতা এবং ব্যক্তি ওবামার সমালোচনা ট্রাম্পের প্রধান লক্ষ্য। হয়তো তাই রিয়াদে বসে তিনি সন্ত্রাসবাদ নির্মূলের কথা বলেছেন, কিন্তু আইএস উচ্ছেদের কথা বলেন না। কারণ সৌদি আরব আইএসের মতো নিষ্ঠুর সুন্নি জঙ্গিদের ঘোর সমর্থক।

নির্বাচনী প্রচারে ট্রাম্প তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী হিলারি ক্লিনটনকে পরোক্ষে যুদ্ধবাদী হিসেবে চিহ্নিত করতে চেষ্টা করেছেন। ন্যাটোকে ভেঙে দেওয়ার কথা বলে আপন ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার চেষ্টা চালিয়েছেন। প্রকৃত প্রস্তাবে তাঁর প্রতিটি বক্তব্যে এবং পদক্ষেপে আধিপত্যবাদের প্রকাশ ঘটে থাকে। তাঁর বর্ণবাদী চরিত্রের ঊর্ধ্বে অবস্থান করে তাঁর সহিংস যুদ্ধবাদী চরিত্র।

তিনি সফল বাণিজ্যিক ব্যক্তিত্ব। এখন রাজনীতির সর্বোচ্চ আসনে বসে তাঁর বাণিজ্যিক প্রতিভা অস্ত্র-বাণিজ্যে শাণ দিতে শুরু করেছেন। তার চমকপ্রদ প্রকাশ সৌদি আরবের সঙ্গে অস্ত্রচুক্তি, আর সেটাই তাঁর ইরানি নিন্দার নেপথ্য কারণ। বিশ্বকে অস্ত্রমুক্ত ও যুদ্ধমুক্ত করার বদলে এ দুটিতেই শাণ দিতে তেলসমৃদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যে ট্রাম্পের রিয়াদ সফর।

রবার্ট ফিস্কের ভাষায় বলতে হয় : ‘সৌদি আরবের সঙ্গে নির্লজ্জভাবে ১১ হাজার কোটি ডলারের অস্ত্রচুক্তি এবং তা কাতারের সামরিক সরঞ্জাম কেনার প্রস্তাবের পর। ’ আরো বলতে হয়, ‘প্রচুর পরিমাণ সুন্দর সামরিক সরঞ্জাম’ সরবরাহের মাধ্যমে ‘সুন্দরভাবে’ নরহত্যায় যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা বিশ্বে সর্বদাই এক নম্বরে। ‘মানুষ’ এই শব্দটির অভিধা যুদ্ধবাজদের কাছে যেমন অর্থহীন, তেমনি অর্থহীন শান্তির ধর্ম নিয়ে নীতিগত ভেদে, শিয়া-সুন্নি ভেদে রক্ত ঝরানো।

ভেদ-বুদ্ধির রক্তপাতে উৎসাহী ট্রাম্প যখন ওই সফরে প্রদত্ত ভাষণে ‘শুভ-অশুভ দ্বন্দ্বে’ তাঁর ইতিবাচক উদ্দেশ্যের কথা বলেন, তখন তা বাস্তবিকই বড় হাস্যকর শোনায়। তাঁর গোটা বক্তব্যই ভণ্ডামি বলে মনে হয়। তাতে মানুষ হত্যার অস্ত্র ব্যবসা বাড়াতে সফল একজন ঘাতক বা হন্তারকের চরিত্রই বড় করে তোলে। এ ব্যাপারে পরাশক্তিগুলোর দানবীয় প্রকৃতির তুলনা মেলে না।

ভালো লাগছে দেখে যে দু-চারজন সাহসী সাংবাদিক নানা উপলক্ষে এবং বিশেষভাবে এজাতীয় অস্ত্রচুক্তি ও অস্ত্র সরবরাহ উপলক্ষে কথা বলতে পারছেন, পারছেন এমন নির্মম সত্য উচ্চারণ করতে যে ‘যুক্তরাষ্ট্র মানবাধিকারের বিষয়ে কিছু করবে না। মানবতাবিরোধী অপরাধ মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্র কিছুই করবে না। ’ কারণ এরা গণতন্ত্রের মুখোশধারী জাদুকর। মানুষ হত্যার রক্তে এদের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি এবং রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠা।

‘ভাষণ দিতে আসিনি’ বলে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাঁর বক্তৃতায় যেভাবে আঞ্চলিক যুদ্ধের তাড়না উসকে দিয়েছেন, তা একজন হিটলারের মতো নিষ্ঠুর যুদ্ধবাজের কণ্ঠে মানায়। মানিয়েছে জার্মান বংশোদ্ভূত যুদ্ধবাজ প্রেসিডেন্টের কণ্ঠে। ‘দি ইকোনমিস্ট’ পত্রিকার প্রতিবেদনে বিষয়টির ব্যবচ্ছেদ ভালোভাবেই সম্পন্ন হয়েছে, কৌতুকে ও বিদ্রূপে।

তাঁদের মতে, ট্রাম্পের বক্তব্যের সারাৎসার হলো : ‘মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর এই আশায় বসে থাকলে চলবে না যে মার্কিনরা তাদের শত্রুদের গুঁড়িয়ে দেবে। আপনারা নিজেরাই সন্ত্রাসী ও চরমপন্থীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন এবং তাতেই আপনাদের উন্নত ভবিষ্যৎ তৈরি হবে। ’

কথাগুলোর ইঙ্গিতার্থ খুব স্পষ্ট। ইরাক দখলের মতো ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্র এখানে তার নিজ রক্ত ঝরাবে না। তার স্বার্থ রক্ষিত হবে অন্যদের পরস্পরের বিরুদ্ধে লড়িয়ে দিয়ে। কিন্তু কাদের তিনি সন্ত্রাসী হিসেবে অভিহিত করেছেন। বলা বাহুল্য, তা অবশ্যই আইএস নয়, সুন্নি সন্ত্রাসীরা নয়। তারা সিরিয়ায়, ইরাকে, লেবাননে, ইয়েমেনে আপন অধিকারের জন্য যুদ্ধরত শিয়া সেনা।

ইকোনমিস্ট উল্লেখ করেছে যে ট্রাম্প তাঁর বক্তৃতায় একটি কথা পাঁচবার বলেছেন, আর তা হলো ‘এদের তাড়িয়ে দিন’। অস্থিরচিত্ত এই প্রেসিডেন্টের ইচ্ছা সৌদি নেতৃত্বে সুন্নি সন্ত্রাসীরা শিয়া যোদ্ধাদের উচ্ছেদ করুক, ইরানের হাত দুর্বল করুক। যাতে ইরানের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা শক্তির সুবিধাজনক অবস্থান নিয়ে চালানো যায়।

দুই.

মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে পরস্পর বিরোধিতা ও সংঘাত কিংবদন্তিতুল্য এবং ঐতিহাসিক চরিত্রের। এ বিরোধিতা শুধু আরবি ও ইরানিদের মধ্যেই নয়, এ সংঘাতের প্রকাশ খোদ আরবীয় ভাষিক জাতিসত্তার স্বতন্ত্র ভূখণ্ডভিত্তিক এবং তা দীর্ঘকাল থেকে। মূল নেপথ্য কারণটা রাজনৈতিক। কে পুরো মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলের রাজনৈতিক প্রধান হবে, তাই নিয়ে দ্বন্দ্ব, অর্থাৎ দ্বন্দ্ব শক্তির ও শাসন কর্তৃত্বের। আরো স্পষ্ট ভাষায়, মধ্যযুগীয় খিলাফত কর্তৃত্বই মূল বিষয়। ইতিহাস পাঠক স্মরণ করতে পারেন, কারবালার ট্র্যাজিক যুদ্ধের অন্তর্নিহিত কারণ।

সেই ট্র্যাডিশন অব্যাহত ধারায় চলেছে রাষ্ট্রিক ভাঙাগড়ার মধ্যেই। একই ভাষাভাষী, একই জাতিসত্তা সত্ত্বেও রাজনৈতিক রাষ্ট্রনৈতিক স্বার্থের সংঘাত এ অঞ্চলে কম রক্ত ঝরায়নি। পবিত্র ভূমি মক্কা-মদিনার সুবাদে খিলাফত-উত্তর কাল থেকে সৌদি বেদুইন বাদশাহদের আমল পর্যন্ত সৌদি আরবের কর্তৃত্বের দাবি চলে আসছে। ইরান বরাবরই তা মেনে নেয়নি। পরবর্তী সময়ে মেনে নেয়নি ইরাক, সিরিয়া, মিসর, লিবিয়ার মতো কিছুসংখ্যক আরব রাষ্ট্র।

এরা মধ্যযুগীয় রাজতন্ত্রবিরোধী, প্রগতিশীল জাতীয়তাবাদী, কেউ গণতান্ত্রিক সমাজবাদী। এরা রাজতন্ত্রের পতন ঘটিয়ে দেশে ধর্মান্ধতাবিরোধী আধুনিক রাষ্ট্র গড়ায় বিশ্বাসী। কিন্তু শাসন কর্তৃত্ব নিয়ে রক্তাক্ত দ্বন্দ্বের অবসান ঘটাতে পারেনি এসব দেশের শাসকরা। সহিংসবিরোধ যেন মধ্যপ্রাচ্যের নিয়তি। নেপথ্য কারণ, প্রথম দিকে রাষ্ট্র বা রাজ্য ক্ষমতা নিয়ে দ্বন্দ্ব, পরে তাদের ভূগর্ভস্থ বিশাল তেলভাণ্ডারই তাদের শত্রু হয়ে দাঁড়ায়। এবং তা পরাশক্তির কূট রাজনীতির কারণে। পরস্পরকে লড়িয়ে দেওয়ার কূটবুদ্ধি। আন্তর্জাতিক শক্তির সমীকরণ ও তেলসম্পদ, প্রধানত এ দুই কারণে মধ্যপ্রাচ্যের যত দুর্গতি, পরস্পরবিরোধী সহিংসতা, পরিণামে আরব স্বার্থের বিনাশ।

মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতি বুঝতে এর রাজনৈতিক পূর্ব ইতিহাস জানা জরুরি। জরুরি সেখানে ইঙ্গ-মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের স্বার্থপর কূটনীতি ও ক্ষমতার দাপট বিবেচনা। ইরান প্রতিক্রিয়াশীল ইসলামী বিপ্লবের মাধ্যমে হলেও ইঙ্গ-মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের প্রত্যক্ষ প্রভাব থেকে নিজেদের মুক্ত রাখতে পেরেছে। পেরেছিল রাজতন্ত্র থেকে মুক্ত হয়ে মিসর, ইরাক, সিরিয়া ও লিবিয়া। কিন্তু তাদের কারোরই শেষ রক্ষা হয়নি। এদের মধ্যে ট্র্যাজিক পরিণতির প্রকাশ ঘটেছে বিশেষভাবে ইরাক ও লিবিয়ায়; সিরিয়ায় এখনো গৃহযুদ্ধ চলছে। আর নাসেরের মিসর দীর্ঘদিন থেকে মার্কিন পরাশক্তির তাঁবেদার।

তিন.

আরব দুনিয়ার বড় ট্র্যাজেডি হলো এর মার্কিন তাঁবেদারি এবং অভ্যন্তরীণ বিরোধ। সেই তাঁবেদারির সর্বোচ্চ প্রকাশ সৌদি আরবসহ শেখতন্ত্রী ও রাজতন্ত্রী দেশগুলোতে। কুয়েত, কাতার, আবুধাবি, জর্দান ইত্যাদি। এদের পারস্পরিক বিরোধের কারণে, ঐকমত্যের অভাবে ফিলিস্তিনি আরবদের দুর্ভাগ্যের অবসান ঘটেনি। অবিশ্বাস্য হলেও অভাবিত নয় এমন ঘটনা যে সম্প্রতি মিসরের সামরিক প্রেসিডেন্ট আল সিসি রিয়াদে এমন মন্তব্য করতে পেরেছেন যে ‘ট্রাম্প এক অনন্য ব্যক্তিত্ব। তিনি অসম্ভবকে সম্ভব করতে পারেন’ (উদ্ধৃতি, দি ইকোনমিস্ট-এক)।

হ্যাঁ, চাণক্যবৃত্তির মাধ্যমে, লেনদেনের মাধ্যমে অনেক কিছুই বাগে আনতে চাচ্ছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। ক্ষমতার প্রয়োজনে স্বদেশ স্বার্থ, সামাজিক স্বার্থ বিসর্জন দিতে যেসব শাসকের বাধে না, তারাই এখন আরব দুনিয়ার প্রভুত্ববাদী শাসক, ব্যতিক্রম নেই বললে চলে। ব্যতিক্রমীদের উচ্ছেদ ঘটেছে ইঙ্গ-মার্কিন পরাশক্তির আধিপত্যবাদী দাপটে।

তাই রিয়াদে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের রাজকীয় সংবর্ধনা এবং ট্রাম্পের দুরভিসন্ধিমূলক ভাষণ সেখানে হালে পানি পেয়েছে। সৌদি বাদশাহর দুর্মূল্য উপহার পকেটে পুরে ট্রাম্পের বিজয়ী বেশে ইসরায়েল ও গাজা ভূখণ্ডে আগমন। মেরুদণ্ডহীন ফিলিস্তিনি নেতা মাহমুদ আব্বাসকে মিথ্যা স্তোকবাক্যে আশ্বস্ত করেন ট্রাম্প এই বলে যে মধ্যপ্রাচ্যে শান্তির জন্য তিনি ‘সব কিছু’ করবেন।

এ প্রতিশ্রুতি যে অর্থহীন সে কথা বুঝলেও আব্বাস না বোঝার মনোভাব প্রকাশ করেছেন এমন আশায় যে যদি আশ্বাসের দানে কিছু ফল মেলে। কিন্তু জেরুজালেমে ট্রাম্পের বক্তৃতায় তেমন দৃঢ় সম্ভাবনার প্রকাশ ঘটেনি। আসলে যত দিন ইসরায়েল তার প্রভুত্ববাদী ও আগ্রাসী মনোভাব ত্যাগ না করবে তত দিন গাজা এলাকায় শান্তির একটি পাতাও নড়বে না, সুবাতাস বওয়া তো দূরের কথা।

এখন দেখার বিষয়, রিয়াদ সফরের পর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পুনরায় নির্বাচিত নমনীয় ধারার ইরানি প্রেসিডেন্ট রুহানির সঙ্গে কেমন আচরণ করেন। ওবামার অনুসৃত ইরানবিষয়ক নমনীয় নীতি অনুসরণ করবেন, নাকি পূর্বসূরিদের বাজপাখিনীতিসুলভ পথ ধরে চলবেন। এবং সৌদি শাসকদের ইরানের বিরুদ্ধে কাজে লাগিয়ে ফায়দা তুলবেন।

শিগগিরই বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যেতে পারে। অথবা অতি চতুর ট্রাম্প গোটা বিষয়টি তাঁর আস্তিনে ঢুকিয়ে অনিশ্চয়তাকেই প্রধান করে তুলবেন দাবার দীর্ঘচিন্তার চালের মতো। এ সম্পর্কে এই মুহূর্তে শেষ কথা বলার সময় হয়নি। তবে আশার খুব একটা কারণ আছে বলে মনে হয় না।

লেখক : কবি, গবেষক, ভাষাসংগ্রামী
[সংকলিত}