খােলা বাজার২৪।। বুধবার, ২৮ জুন, ২০১৭: আপনাকে জিরো জিরো সেভেন সিরিজের চলচ্চিত্রের মত দুর্ধর্ষ গুপ্তচর হতে হবে না। তাছাড়াই আপনি হতে পারেন একটি ক্ষুদ্র সাবমেরিনের মালিক। ভাবুন একবার নিজের সাবমেরিনের ভেতরে আপনি বসে সাগরের গভীর তলদেশে ৩৬০ডিগ্রিতে চারপাশের বিস্ময়কর সব দৃশ্য দেখছেন।
সেই কবে ১৮৭০ সালে জুল ভার্ন তার ‘টুয়েন্টি থাউজেন্ড লিগস আন্ডার দি সি’ বইকে নটিলাস নামে কল্পিত সাবমেরিনের গল্প বলেছিলেন। এরপর ১৯৫৪ সালে চলচ্চিত্রে জুলভার্নের সেই সাবমেরিনের ছবি দেখানো হয়। এখন তা সত্যি। ছোট একটি লিভারে বাম হাতে চাপ দিলেই ১৬ ফুট দীর্ঘ সাবমেরিনটি সাগরের তলদেশে ডুব দিতে শুরু করবে। আপনার ডানদিকে যে যান্ত্রিক দ-টি আছে তা দিয়ে যেদিকে খুশি সাবমেরিনটির গতি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। সাগরের গভীর তলদেশে আপনি আপনার নিজস্ব অনুসন্ধান মিশনে নামতে পারবেন। এধরনের সাবমেরিনের ব্যবহার জেমস বন্ড চলচ্চিত্রে দেখা গেছে।
বেশ কয়েক ধরনের ক্ষুদ্র সাবমেরিন রয়েছে বাজারে। এধরনের একটি ‘ডিপ ফ্লাইট ড্রাগন’ সাবমেরিনের দাম ১৫ লাখ ডলার। ছোটখাট প্রশিক্ষণ নিতে হবে আপনাকে এ সাবমেরিনটি নিয়ে সাগরে ডুব দেওয়ার আগে। এধরনের আরো কয়েকটি সাবমেরিনের নাম হচ্ছে স্কুবসটার, ট্রাইটন,সিম্যাজিন, ইগো-কমপ্যাক্ট, সিব্রিচার এক্স ইত্যাদি। এসব সাবমেরিনের কোনোটি সাগরের গভীর জলে কিংবা আংশিক গভীর জলে বিচরণ করতে পারে। সিব্রিচার এক্স’এর দাম ৮০ হাজার ডলার।
প্রযুক্তির উন্নয়ন ও সংস্কারে এধরনের সাবমেরিনের দাম কমে আসছে। তবে ধাতব কাঠামোয় নির্মিত সাবমেরিনের বড় শত্রু হচ্ছে সাগরের লোনা জল। মরিচা পড়ে যাতে নষ্ট না হয় সেজন্যে অন্য এক বিকল্প কম্পোজিট ব্যবহার করা হচ্ছে এধরনের সাবমেরিন তৈরিতে। ৭ ইঞ্চি পুরু কার্বন ফাইবার যা বোয়িং বিমানে ব্যবহার হয় তাও ব্যবহার শুরু হচ্ছে এমন সাবমেরিন নির্মাণে। প্যাডেল কিংবা বৈদ্যুতিক মটর ব্যবহার করে সাবমেরিনগুলো চালানো যাবে।
এধরনের সাবমেরিনের গতি ৪’শ ফুট গভীরে ঘন্টায় ৫ মাইল। শক্তিশালী আলো রয়েছে যা ব্যবহার করে আপনি অনেক দূর পর্যন্ত দেখতে পারবেন। এতদিন চলচ্চিত্রে এধরনের সাবমেরিন দেখা গেলেও তা হলিউডের চালাকি বা বাস্তব নয় বলেই স্বীকার করতে হয়েছে। কিন্তু এখন বাস্তবেই এমন সাবমেরিন নিয়ে গভীর জলে ডুব দিতে পারবেন আপনি। তবে ডিপফ্লাইট ধরনের সত্যিকারের সাবমেরিন নির্মাণের প্রতিষ্ঠাতা ওশান ইঞ্জিনিয়ার গ্রাহাম হক্স কিন্তু জেমস বন্ড চলচ্চিত্রে ব্যবহৃত ‘ম্যানটিস’ নামের সাবমেরিনটির নক্সা তৈরি করেছিলেন।
এসব সাবমেরিন নিয়ে মুগ্ধ হলেও তা নিয়ে সাগরের তলে বেশিরভাগ অজানা প্রতিকূল পরিবেশে কতটা সম্ভব হবে সে নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। কারণ হ্রদে কিংবা সাগরের তলদেশে মানুষের পক্ষে বিশেষ কিছু যন্ত্রপাতি ছাড়া বেশিক্ষণ অবস্থান সম্ভব নয়। তবে মহাকাশের মত সাগরের তলদেশে রকেট নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। সহজেই ডুব দেওয়া সম্ভব।
বিখ্যাত বিজ্ঞান লেখক আর্থার সি ক্লার্ক একবার লিখেছিলেন, প্রত্যেকের পক্ষেই সাগরের তলদেশে গিয়ে সৌখিন বিজ্ঞানী হওয়া সম্ভব হবে। এখন প্রযুক্তির উৎকর্ষতাকে ধন্যবাদ দিতেই হয় এজন্যে যে, অনেকে এই অসাধ্য সাধনে তৎপর হয়ে উঠবেন। সিএনএন