অজয় দাশগুপ্ত ।। খােলা বাজার২৪।। সোমবার, ৩ জুলাই, ২০১৭: আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাঝে মাঝে এমনসব কথা বলেন আমার মতো মানুষদের তার মাজেজা বুঝতেই সময় চলে যায়। তবে এমন কথাও বলেন যা নির্জলা সত্যি। ১ জুলাই ছিল হলি আর্টিজান হামলার একবছর পূর্তি। বড় বেদনা, বড় অপমান আর বড় অন্যায়ের এই ঘটনা আমাদের দেশে আগে কোনোদিন ঘটেনি। আমরা আমাদের যৌবনে, এমনকি এই সেদিনও ভাবতে পারিনি বাংলাদেশে এমন কিছু হতে পারে। আগেও লিখেছিলাম অবাধ মুক্ত স্বাধীন প্রবাহকে নিতে হলে তার যোগ্য হতে হয় বৈকি। আমরা লায়েক হবার আগেই অনেককিছু নিয়ে ফেলি। আমাদের সমাজ ও দেশ এখন যেকোনো অর্থে অভিভাবকহীন। রাজনীতিতে প্রধানমন্ত্রীকে বাদ দিলে কারও কণ্ঠে, কারও কথায় আস্থার ছাপ আছে? কোনো দলে কোনো মানুষের কণ্ঠে না আছে দৃঢ়তা, না কোনো ভরসা? এমন সমাজে হলি আর্টিজানের ঘটনা ঘটবে, একবছরেও চার্জশিট জমা পড়বে না এটাই তো স্বাভাবিক।
হলি আর্টিজানের ঘটনার দায় যাদের বা যারা এই জঙ্গিবাদকে উসকে দেয় তারা আমাদের বিশ্বায়নের ফসলখোর। এরা ছিঁচকে চোর বা সাধারণ ডাকাত ছিল না। এদের টার্গেট, এদের কৌশল, এদের পোশাক এবং প্রস্তুতি বলে দেয় কত গভীরে ছিল সেই নেটওয়ার্ক। এরা যাদের টার্গেট করেছিল তাদের সবাই বিদেশি। যে কয়েকজন দেশি মারা গেছেন তারাও আমাদের সমাজের চোখে বিদেশি বৈকি। প্রচলিত ধারণা ও অন্ধত্বের বাইরে আমরা কি কাউকে এখন দেশি মানি? আমার ধারণা বিদেশি এবং দেশিয় আধুনিক মানুষের লাশের কারণে হলি আর্টিজান যতটা প্রচার পেয়েছে ততটাই অবহেলিত থেকে যেতে পারে আইন ও বিচার প্রক্রিয়ায়। যতদিন কোনো দেশের চাপ বা চোখ রাঙানি দেখা না যাবে ততদিন এই চার্জশিট হয়তো চার্জহীনই থেকে যাবে।
এতবড় ঘটনায় দেশ-বিদেশের মানুষের বুক কেঁপে উঠেছিল। যারা জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে তাদের উৎকণ্ঠিত রাত কেটেছিল গভীর দুশ্চিন্তায়। একবছর পর সেই ঘটনাও আর দশটি ঘটনার মতো থিতিয়ে গেছে। সরকারের কি ভূমিকা ছিল ১ জুলাই? কি ভূমিকা ছিল দেশের সচেতন সামাজিক সংগঠন ও বিবেক নামে পরিচিত মানুষের? কোথায় ছিল মানবাধিকার কর্মীরা? দায়সারার মতো করে আওয়ামী লীগ বা বিএনপির নেতারা গেলেই কি ঘটনার ঘনঘটা বা বিচারের গতি বোঝা যায়? রাজনীতিতে একদল নানাভাবে সন্ত্রাসকে প্রশ্রয় দেয়, আরেক দলের কাছে জঙ্গিবাদ পায় প্ররোচনা। ফলে ঘটনার বিচার বা আসল কাহিনী কি আসলেই জানা সম্ভব হবে কোনোদিন? যদি হতোই এ ঘটনার দিন সেই রেস্তোরাঁয় থাকা এবং নিরাপদে বেরিয়ে আসা মানুষ তাদের ভিডিও ভিন্ন ভিন্ন কথা বলত না। একবছর পর আমরা এই ঘটনাটিকে মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পেরেছি এবার। সামনের বার হয়তো মিডিয়া ভাববে দূর এ আর চলে না। হয়ে পড়বে দায়সারা গোছের কোনো নিউজ। ব্যস আর কি। চলে যাবে অন্তরালে পড়ে যাবে ধলি ধূসর ফাইলের ভেতর।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের কথা বলছিলাম। তিনি একটি মারাত্মক সত্য কথা বলেছেন। জঙ্গি নির্মূল হয়নি, দুর্বল হয়ে গেছে। জ্বি আমরাও সহমত। জঙ্গি-অজঙ্গি, বিচার-আচার এমনকি হলি আর্টিজানের বীভৎসতাও দুর্বল হয়ে পড়েছে আজল একদিন এই সমাজও দুর্বলতায় ভুগতে ভুগতে কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় সেটাই ভাবার বিষয়।
লেখক: সিডনি প্রবাসী, কলামিস্ট ও বিশ্ববিদ্যালয় পরীক্ষক