খােলা বাজার২৪।। বুধবার, ৫ জুলাই, ২০১৭: নাটোর নবাব সিরাজ-উদ দৌলা (এনএস) সরকারী কলেজে অনার্স শেষ বর্ষের ফরম পূরণের সময় শিক্ষার্থীদের কাছে থেকে বিনা রসিদে অর্থ নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। কলেজের বিভাগীয় প্রধানরা অতিরিক্ত চাপের কারনে টাকা নেওয়ার রশীদ দেওয়া সম্ভব না হওয়ার কারন উল্লেখ করে পরবর্তীতে প্রদান করা হবে বলে জানালেও কলেজ অধ্যক্ষ দুষলেন শিক্ষার্থীদের ।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীসহ সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা যায়, সম্প্রতি নাটোর এনএস সরকারী কলেজে অনার্স শেষ (চতুর্থ) বর্ষের শিক্ষার্থীদের ফরম পুরণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ওই ফরম পুরনের সময় রসিদ প্রদান ছাড়াই প্রকার ভেদে ৪শ’ থেকে সাড়ে ৪শ’ টাকা করে সেমিনার ফিসের নামে অর্থ আদায় করা হচ্ছে। মঙ্গলবার কলেজের অনার্স শেষ বর্ষের হিসাব বিজ্ঞান, ব্যবস্থাপনা,পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগ সহ বেশ কয়েকটি বিভাগের ফরম পূরণ করা হয়। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, এবার তাদের কাছে থেকে সেমিনার ফিস আদায় করা হলেও কোন রসিদ প্রদান করা হয়নি। অথচ গত বছরের শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে আদায়কৃত সেমিনার ফিসের বিপরীতে রসিদ প্রদান করা হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিক্ষার্থীদের কয়েকজন জানান, ফরম পূরনের সময় সেমিনার ফিস ছাড়াও বিভিন্ন ফিসের নামে প্রতি শিক্ষার্থীর কাছ থেকে বিভাগভেদে নানা অংকের টাকা নেওয়া হচ্ছে। এর পরিমান প্রায় তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা। তারা জানান, এই ফিসের বাহিরেও টার্ম পেপার জমাদানের সময় আরও অতিরিক্ত ২০০ টাকা জমা দিতে হয়। এসব অর্থ বাধ্য হয়েই দিতে হয় বলে শিক্ষার্থীরা জানিয়েছে।
এ বিষয়ে হিসাববিজ্ঞান বিভাগের অনার্স শেষ বর্ষের এক শিক্ষার্থী জানান, মঙ্গলবার সকালে ফর্ম জমা দেয়ার সময় সাড়ে চার শত টাকা চাওয়া হয় সেমিনার ফিস হিসেবে। আমরা কোন কথা না বলে বাধ্য হয়ে তা দিয়েছি। কিন্ত অন্যান্য বার এই টাকার বিপরীতে একটি রসিদ দেয়া হলেও এবার দেওয়া হয়নি।
অর্থনীতি বিভাগের অপর এক শিক্ষার্থী জানান, কয়েকমাস আগেও বিভাগীয় ফিস বাবদ তারা ১৫৫০ টাকা জমা দিলেও এর বিপরীতে কোন রসিদ পায়নি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একই বিভাগের আরেক ছাত্রী জানান, ফর্ম পূরণের রসিদের মতো সেমিনার ফিসের রসিদ না দেয়ায় বাড়িতে টাকার হিসাব দিতে পারিনি। এতে ক্ষুদ্ধ হয়েছেন বাবা-মা।
এনএস সরকারী কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক কলেজ শিক্ষার্থী শাহরিয়ার রিয়ন বলেন, হরহামেশাই এ ধরনের অভিযোগ আসে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের কথা শোনা যায়। শিক্ষকদের হাতে ইনকোর্স পরীক্ষার নম্বর থাকায় ভয়ে শিক্ষার্থীরা কোন প্রতিবাদ করে না। বিষয়টি খতিয়ে দেখা দরকার বলে মনে করেন তিনি।
তবে রসিদ ছাড়া অর্থ আদায়ের বিষয়টি সঠিক নয় বলে দাবী করেছেন হিসাববিজ্ঞান বিভাগের প্রধান আদ্দুল লতিফ মিয়া। তিনি জানান, সময় অভাবে ও জনবল সংকটের কারনে সেমিনার ফি আদায়ের সময় রশিদ দেয়া হয়নি। পরে তা শিক্ষার্থীদের দেয়া হবে । প্রতিটি শিক্ষার্থীই এই রসিদ পাবে বলে নিশ্চিত করেছেন তিনি। টার্ম পেপার জমাদানের বিপরীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিপত্র অনুযায়ী ১৫০টাকা নেয়ার কথা জানান।
তবে অর্থনীতি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ফরহাদ হোসেন এই টার্ম ফি বাবদ ২০০ টাকা নেয়ার কথা স্বীকার করে জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিপত্রের বাহিরে অতিরিক্ত কোন অর্থ আদায় করা হয়না। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিপত্র অনুযায়ি বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিলে টার্ম পেপার ফিসের যে ১০০ টাকা জমা দেওয়ার নির্দেশনা রয়েছে, তা ফরম পুরণের সময় তিন হাজার ৩শ’ টাকার মধ্যেই নেওয়া হয়েছে। অথচ কলেজ তহবিলে একশ টাকা জমা নিতে পরিপত্রে বলা আছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর সামসুজ্জামান সাংবাদিকদের জানান, ছাত্রদের বিনা রসিদে টাকা আদায়ের অভিযোগ বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। তিনি উল্টো শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে বলেন, তাদের কেউ কেউ কলেজের ফিস জমা দেয়ার নামে বাড়ি থেকে অতিরিক্তি অর্থ নিয়ে আসে এবং খরচ করে ফেলে। হিসাব দিতে না পেরে তারা কলেজের ওপর মিথ্যা অভিযোগ চাপিয়ে দেয়। ভর্তির সময় অনেক শিক্ষার্থী বিভাগীয় ফিস, সেশন চার্জসহ বিভিন্ন ফিস বকেয়া রাখে। শেষ বর্ষে এসে তা একসাথে জমা দেয়ার সময় টাকার অংক বেড়ে যায়। এভাবে তারা মিথ্যা অভিযোগ করে কলেজের সুনাম নষ্ট করছে। অথচ প্রতিবছরই নোটিশ দেয়া হয়। বিষয়টি জানতে চাওয়ায় তিনি এই প্রতিবেদকের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ছাত্রদের কাছে থেকে অতিরিক্ত অর্থ নিয়ে তারা খরচ করছেন এমন কথা পেপারে লিখে দেন।