খােলা বাজার২৪।। রবিবার, ৯জুলাই, ২০১৭: সাংবাদিকতায় আমার খুব কাছের বন্ধু ফারুক আলমকে কদিন ধরেই বলছিলাম আমার কেন যেন ভয় হচ্ছে বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা করতে গিয়ে হয়তো আমার বিরুদ্ধেও ৫৭ ধারায় মামলা হতে পারে।
মূলত চারদিকে ৫৭ ধারায় সাংবাদিকদের উপর মামলার খড়গ নেমে আসা দেখে আমার ভিতর এই উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। দৈনিক সকালের খবরের সিনিয়র সাংবাদিক আজমল হক হেলাল ভাইয়ের উপর ৫৭ ধারা মামলায় আমার সেই ভয় সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছে।
কোনো নিউজ না করে স্রেফ একটি সংবাদ মাধ্যমের নিউজ নিজের ফেইসবুক ওয়ালে শেয়ার করার কারণে যে দেশে মামলা হয় সে দেশে কারো দুর্নীতি, অনিয়ম, অন্যায়ের বিরুদ্ধে নিউজ করলে কী হবে ভাবছি।
অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলেও নিউজ করা যাবে না। নিউজ করলে উল্টো অভিযুক্ত ব্যক্তি আপনার বিরুদ্ধে ৫৭ ধারায় মামলা দিয়ে মহা আয়েশে দাবিয়ে বেড়াবেন। এই হচ্ছে ৫৭ ধারার সুফল। সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতার নমুনা। স্বাধীন মত প্রকাশের উদাহরণ।
৫৭ ধারা বাতিলের দাবি আদায়ে যেসব সাংবাদিক বা সাংবাদিক নেতারা নিরব আছেন-মনে রাখবেন যে কোনো সময় আমি বা আপনি যে কেউ ৫৭ ধারায় গ্রেফতার হতে পারি। তাই এখনই সময় সব ‘পন্থি’ এক হয়ে ৫৭ ধারা বাতিলে রাস্তায় নামতে হবে। এই ধারা বাতিলে সরকারকে বাধ্য করতে হবে।
না হয় ইতিহাস বলছে, আপনি যে দলেরই হোন না কেন যেকোনো সময় আপনিও ৫৭ ধারায় গ্রেফতার হতে পারেন। এই ভাবনার কোনো সুযোগ নেই যে, আপনি সরকার দলীয় সমর্থক সাংবাদিক বলে পার পেয়ে যাবেন।
দেখা যাচ্ছে, সরকার দলীয় নেতাকর্মীদের দ্বারাই সরকার দলীয় সমর্থক সাংবাদিকরা আরো বেশি নির্যাতিত হচ্ছেন। সাংবাদিক প্রবীর সিকদার তার উদাহরণ। তাই শঙ্কা মুক্ত ভাবে যেন এই পেশাই কাজ করতে পারি, তার জন্য সরকারের কাছাকাছি থাকা সাংবাদিক নেতাদেরকেই সেই উদ্যোগ নিতে হবে।
বলা বাহুল্য অধিকার ও স্বাধীনতাহীন সমাজে শুধু বিরোধী লোকজনই অত্যাচারিত হয় না বরং নিজেকে ক্ষমতাধরদের সঙ্গী মনে করা লোকজনও বিপদে পড়ে। কাজেই এখনই ৫৭ ধারাসহ সব নিপীড়ক আইন বাতিলের দাবি জানাতে হবে।
সিনিয়র সাংবাদিক মনজুরুল আলম পান্না ভাই ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, অবাধ তথ্য প্রবাহের নামে হয় সাংবাদিকতা নিষিদ্ধ হোক, না হয় জুজুর ভয়ের নামে ৫৭ ধারা বাতিল হোক। ভন্ডামীর একটা সীমা থাকা উচিত।
৫৭ ধারা নিয়ে বিশিষ্ট আইনবিদ ড. কামাল হোসেন বলেছেন, আমাদের সংবিধান যেসব মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করেছে এর মধ্যে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা অন্যতম। সংবাদপত্রের অধিকারসহ অনেকগুলো ব্যাপারে আইসিটি আইনের ৫৭ ধারা চরম হুমকি হিসেবে কাজ করছে।
এটাতো বলার অপেক্ষাই রাখে না, সংবিধান যে অধিকার দিয়েছে, কোনো আইনই তা হরণ হতে পারে না। সংবিধানের আলোকে আইন প্রণয়ন নিশ্চিত করতে হবে। বিধিও করতে হবে সেই নিরিখেই। আইসিটি আইনের যে সব ধারার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, সেগুলো বাতিল করার বিকল্প নেই।
সারা বিশ্ব যখন মুক্তবুদ্ধির চর্চা চলছে। তখন আমাদের দেশে ৫৭ ধারা নামে একটি কালো আইন আমাদেরকে প্রতিবন্ধী বানিয়ে রেখেছে।
তাই এই ধারা বাতিল করে অবিলম্বে আজমল হক হেলাল ভাইসহ সকল সাংবাদিকদের মামলা প্রত্যাহার করে নিয়ে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে।
তা না হলে সেদিন বেশি দূরে নয় ভবিষ্যতে এই ধারায় আমিও গ্রেফতার হতে পারি।
লেখক: গণমাধ্যম কর্মী।